Logo

আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং : সমস্যা ও সম্ভাবনা

অনিন্দ্য বাংলা
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১২, ২০২০
  • শেয়ার করুন

আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং : সমস্যা ও সম্ভাবনা

লেখক – শরীফ নিজাম

ডাটা এন্ট্রি, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশনের মতো আইসিটিতে আমাদের এগিয়ে যাবার অনেক সুযোগ এসেছে ’৯০-এর দশক থেকে। কিন্তু নানা কারণে আমরা এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারিনি। এ দেশের মানুষ যখন আইসিটির মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তনের আশা ভঙ্গের বেদনা বুকে লালন করছে ঠিক তখন বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তোলার ঘোষণা আসে। গত দুই বছর থেকে কল সেন্টার নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে কিন্তু দূর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, কাক্সিক্ষত সাফল্য আসছে না। আউটসোর্সিং নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে- তবুও স্বপ্ন দেখার মতো বিষয় হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ে আমরা ধীরে ধীরে হলেও এগিয়ে যাচ্ছি। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে অনেক স্বপ্নের কথা বলা হচ্ছে- প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। আসলে কি আমরা পারব আউটসোর্সিংয়ে ভাল কিছু করতে? সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে আউটসোর্সিংয়ে আমরা এগোতে পারব না। আউটসোর্সিং অবকাঠামো তৈরি যদি সরকার করে না দেয় তাহলে ডাটা এন্ট্রি, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশনের মতো মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে! ’৮০-র দশকের শুরু থেকে গার্মেন্টস শিল্পের বিপ্লব শুরু হয়। তারপর গার্মেন্টস শিল্পই হয়ে উঠে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম নিয়ামক। কিন্তু তখন অনেকেই বলেছিল বাংলাদেশ থেকে কেউ কাজ করিয়ে নেবে না। কারণ আমাদের কান্ট্রি ইমেজ নেই।

বাংলাদেশের কোন ব্র্যান্ডিং নেই যে এখান থেকে বিদেশীরা আমাদের কাজ দেবে। এমন ধরণের নানা কথাই শুনতে হয়েছিল সে সময়। বাস্তবতা হচ্ছে এই, গার্মেন্টস সেক্টরই পরবর্তীতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত। ইউরোপ, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, কানাডায় আমাদের তৈরি পোশাকের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। আউটসোর্সিং সেক্টরও হতে পারে আমাদের জন্য তেমনি একটি বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত। প্রয়োজন এ খাতকে উন্নয়নের জন্য সঠিকভাবে অবকাঠামো তৈরি করা। এ বিষয়ে আউটসোর্সিং সেক্টরে কাজ করে চলেছেন এমন অনেকের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের আলোচনায় উঠে এসেছে এ সেক্টরের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা।

বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তি নির্ভর যেসব ব্যবসা বিশ্বে বেশ আলোচিত তার মধ্যে অন্যতম আউটসোর্সিং, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং, ডিপিও বা ডকুমেন্ট প্রসেস আউটসোর্সিং, কল সেন্টার ধারণাসহ প্রযুক্তিসহায়ক কাজ আমাদের পাশের দেশ ভারত বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে। আর আমরা আউটসোর্সিংয়ের জগতে অনেক দেরিতে প্রবেশ করেছি এবং এ সেক্টরে কাক্সিক্ষত কোন সফলতাও আসেনি। আউটসোর্সিং বা বিপিও’র ক্ষেত্রে আমাদের পিছিয়ে পড়ার অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে। এ সব সমস্যা সমাধানের জন্য এ সেক্টরের উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন যাবত দাবি তুললেও কোন সমাধান হয়নি। আউটসোর্সিংয়ের মতো প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায় আমাদের অনেক ভাল করার থাকলেও আমরা পারছি না সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য। দেশে যে হারে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে- এতে দিন দিন বেকার সমস্যার ভারে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আউটসোর্সিংয়ের মতো শিল্প হয়ে উঠতে বেকার সমস্যা সমাধানের অন্যতম উপায়।

আউটসোর্সিং কি?
উন্নত বিশ্বের মানুষ তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গতিশীলতা এনেছে অনেক আগে থেকেই। আমেরিকার অর্থনীতির সঙ্গে তাদের শ্রমের মূল্যও অনেক বেশি। আমেরিকার একজন কর্মী এক ঘণ্টার কাজের জন্য ২৫ থেকে ৩০ ডলার দিতে হয়। কিন্তু ভারতে একই কাজ এক ঘণ্টায় করিয়ে নিতে খরচ পড়বে ৬ থেকে ৭ ডলার, ফিলিপিনে ৫ থেকে ৬ ডলার। এদিকে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে বিশ্বজুড়ে। উন্নত বিশ্বে বড় বড় শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক ছাঁটাই চলছে, পাল্লা দিয়ে চলছে কস্ট কাটিং। তাই উন্নত বিশ্বের কাজ তারা উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে করিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে ভারত হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ের জন্য শীর্ষে। ভারত বর্তমানে অন্য যে কোন সেক্টর থেকে এ সেক্টর বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করছে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করছে।

আউটসোর্সিং সম্ভাবনা
আউটসোর্সিংয়ে আমাদের ভাল করার অনেক সুযোগ রয়েছে প্রথমতঃ আমাদের শ্রম বাজার সস্তা, দ্বিতীয়তঃ দক্ষ জনশক্তি। দু’টোই আমাদের রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আউটসোর্সিংকে সেক্টরকে এগিয়ে নিতে পারলে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথ যেমন এগিয়ে যাবে। তেমনি বেকার সমস্যার সমাধানও হবে। বিশ্বব্যাপী আউটসোর্সিংয়ের বিশাল বাজার রয়েছে, এ বাজার বিশাল বাজারের শীর্ষ ভাগ ভারতের হাতে, ভারতে বর্তমানে আউটসোর্সিং কাজের মূল্য বেশি হওয়ায় অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, ফিলিপিনের মতো দেশ আউটসোর্সিং কাজের বড় অংশে ভাগ বসিয়েছে। এ বাজারে আমাদের ভাগ বসাবার সুযোগও রয়েছে। আমাদের দেশের প্রাইভেট সেক্টরের কিছু মেধাবী মানুষ এ সেক্টরকে এগিয়ে নেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হচ্ছেন- এখন প্রয়োজন তাদেরকে সহযোগিতা করা।

সম্প্রতি আমস্টার্ডামভিত্তিক সার্ভে প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি তাদের সার্ভে রিপোর্টে বাংলাদেশকে উদীয়মান আউটসোর্সিং দেশ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আউটসোর্সিং সার্ভিসে ভারতের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপিন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম এশিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে।

রিপোর্টে বলা হয়, এশিয়া-ওশেনিয়ায় আগামীতে বিশ্বের আউটসোর্সিংয়ের মোট কাজের ৭৪.৫% কাজ এশিয়ায় আসবে। এশিয়ার ১৫টি দেশই মূলত আউটসোর্সিংয়ে এগিয়ে থাকবে। যার মধ্যে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কাজের মূল্য অন্যদের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের দক্ষ যুবকশ্রেণী আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রির দিকে ঝুঁকছেন- বাংলাদেশের অবকাঠামোগত সমস্যা ঠিক করতে পারলে বাংলাদেশ এশিয়ায় আইটি ও বিপিওতে নেতৃত্ব দিতে পারে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে অবস্থানরত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত এইনার এইচ জেনশেন বাংলাদেশের আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রি পরিদর্শন করে মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ খুব ভালভাবেই শুরু করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের প্রায় ২০টি আউটসোর্সিং কোম্পানি ডেনমার্কের কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সফটওয়্যার এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কাজ করছে।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়, ডেনমার্ক এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আইটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮ হাজার বাংলাদেশী সফটওয়্যার ডেভেলপার কাজ করছে। যার ক্লায়েন্ট হচ্ছে জাপানসহ বিশ্বের উন্নত দেশসমূহ।

আউটসোর্সিং কাজের এত সম্ভাবনার কথা আমাদের সরকারের সবচেয়ে বেশি উপলব্দি করা উচিত।

আউটসোর্সিংয়ে সমস্যা
অনেকগুলো সমস্যার পাহাড় ডিঙিয়ে আমাদের আউটসোর্সিং কাজ করার মতো উপযোগী একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সমস্যা আছে কিন্তু সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং পাশাপাশি এর সঠিক সমাধানও বের করতে হবে। সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ী এ সরকারকে। আউটসোর্সিং সেক্টর নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, বিদ্যুত সমস্যা হচ্ছে এ সেক্টরের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা তারপর হচ্ছে উচ্চগতির ইন্টারনেট আউটসোর্সিং সেক্টরের জন্য অত্যাবশ্যক। আউটসোর্সিংয়ের জন্য আলাদা জোন তৈরি করা, আউটসোর্সিং কাজ পাবার জন্য আমাদের বিদেশে অবস্থানরত মিশনগুলোকে কাজে লাগানো, প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাধ্যমে আউটসোর্সিং মার্কেটিং করা, বিদেশে আউটসোর্সিং ফেয়ারে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা, রোড শো’ করা- অর্থাৎ উন্নত বিশ্ব যেন বাংলাদেশকে চিনতে পারে। এর ফলে আমাদের কান্ট্রি ইমেজ তৈরি করবে যা আমাদের আউটসোর্সিং সেক্টরের জন্য সহায়ক ভ’মিকা রাখবে।

নতুনপ্রজন্ম আউটসোর্সিং
আউটসোর্সিং ও বিপিও সম্পর্কে প্রজন্মের ধারণা খুব স্পষ্ট না হলেও ধীরে ধীরে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। আউটসোর্সিং সম্ভাবনা নতুন প্রজন্মের জন্য আশির্বাদ হয়ে উঠতে পারে। আমরা প্রতিবেদন তৈরি করতে পিক্সেলনেট টেকনোলজিস-এর সিইউ হাসান শাহরিয়ারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এ সেক্টরে আমাদের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের বেকার সমস্যার সমাধানে আউটসোর্সিং বিশাল ভ’মিকা রাখতে পারে। প্রয়োজন অবকাঠামো তৈরি এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। তিনি ২০০৭ সালে শুরু করে বর্তমানে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন।

একজন ফ্রিল্যান্সারের কথা
লাবিব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্টে অনার্স করছে। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসাবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছে বিগত চার বছর যাবত। লাবিবের কাজের মধ্যে বিভিন্ন ত্রিমাত্রিক এনিমেশনের মাধ্যমে মডেল তৈরি করা, যার ক্লায়েন্ট হচ্ছে রয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় কোম্পানি। লাবিব বলেন, আমরা যারা ফ্রিল্যান্স কাজ করছি আমাদের বিদেশ থেকে অর্থ নিয়ে আসতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিদেশে অবস্থানরত তৃতীয় কোন ব্যক্তির একাউন্টের মাধ্যমে দেশে অর্থ আনতে হয়। এ সমস্যার সমাধান করা না গেলে নতুনদেরকে অনুপ্রাণিত করা যাবে না। তাই সরকারের কাছে তার প্রত্যাশা পে-পালের মতো জনপ্রিয় অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম চালু করা।

আউটসোর্সিং কাজ
আউটসোর্সিংয়ের কাজের শেষ নেই। দিন যত যাচ্ছে নতুন নতুন কাজ তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তির বদৌলতে আউটসোর্সিং কাজেরও ভিন্ন আসছে। ডাটা এন্ট্রি, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশনের পর এখন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, আইপি এ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল কনটেন্ট, কার্টুন, প্রিন্টিং ওয়ার্ক, ব্রুশিয়ার ডিজাইন, ব্যাক অফিস ওয়ার্ক, ডকুমেন্ট প্রসেস আউটসোর্সিং, টু-ডি, থ্রি-ডি এনিমেশন, আর্কিটেকচারাল ওয়ার্কসহ নানা ধরণের কাজ আসছে বাংলাদেশে।

আউটসোর্সিংয়ে ক্যারিয়ার
আউটসোর্সিং হচ্ছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে স্মার্ট জব। ক্যারিয়ার গড়তে হলে প্রথমে তথ্য প্রযুক্তি টেকনিক্যাল এক্সপার্ট হতে হবে। নিজের মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি থাকতে হবে। ইংরেজিতে কমিউনিকেট করার ভাল দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। এ সেক্টরে অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে- যে যে শাখায় এক্সপার্ট সে শাখায় কাজ করা উচিত। ভাল কাজ করতে পারলে এবং কমিউনিকেশন যোগ্যতা থাকলে তাহলে এ সেক্টরে নিজে নিজেই অনেক অর্থ উপার্জন করা যায়।

সাক্ষাৎকার

এমএসহাসানশাহরিয়ার
প্রধাননির্বাহীকর্মকর্তা, পিক্সেলনেটটেকনোলজিস

রিপোর্টার: আউটসোর্সিংয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যত কি?
এমএস হাসান শাহরিয়ার : আমরা আসলে সবকিছুতে পিছিয়ে। অন্যরা অনেক আগে শুরু করলেও আমরা শুরু অনেক পরে। তারপরও আমরা আশাবাদী আউটসোর্সিং এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতের কথা বললে অবশ্যই বলব আউটসোর্সিং কাজ করার মতো কোয়ালিটি অবকাঠামো তৈরি করতে হবে- তাহলেই আউটসোর্সিংয়ে আমরা ভাল ফল পাব। সরকারের উচিত এদিকে নজর দেয়া।

রিপোর্টার: আপনারা কোন দেশের সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন এবং কি কি ধরণের কাজ করছেন?
এমএস হাসান শাহরিয়ার : আমরা মূলত আমেরিকা ও ইউকের সঙ্গে কাজ করছি।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজ করতে গিয়ে কি কি সমস্যা বা সঙ্কট রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
এমএস হাসান শাহরিয়ার : প্রথমত দক্ষ জনশক্তি সঙ্কট। দক্ষ জনশক্তি পাওয়া গেলেও কমিউনিকেশন স্কিলড ম্যানপাওয়ারের সমস্যা রয়েছে। আবার দেখা যাচ্ছে দক্ষ যারা আউটসোর্সিংয়ের কাজে তাদের প্রপারলি ইউটিলাইজড করা যাচ্ছে না। ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত ব্যবস্থা থাকতে হবে না হলে আউটসোর্সিংয়ের যে স্বপ্ন আমরা দেখছি সেটি বাস্তবায়ন হবে না।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
এমএস হাসান শাহরিয়ার : আউটসোর্সিং কাজের ক্ষেত্র বর্তমানে অনেক কিন্তু নিয়মিতভাবে যোগাযোগ করা, কাজ পাওয়ার পর ক্লায়েন্টদের কোয়ালিটি সার্ভিস দেয়া। এসব বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশে আউটসোর্সিংয়ের কাজ এমনিতেই আসবে। আউটসোর্সিং কাজের জন্য যে অবকাঠামো দরকার তা আমাদের দেশে নেই- সরকারকে অবিলম্বে কোয়ালিটি অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করা উচিত। বিদেশে বিভিন্ন ফেয়ারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের কাজের মান, সক্ষমতা- এসব তুলে ধরতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থানরত বাঙালীদের কাজে লাগানো যেতে পারে।

রিপোর্টার: আপনাদের কাজ সম্পর্কে ক্লায়েন্টরা কেমন সন্তুষ্ট?
এমএস হাসান শাহরিয়ার : আমরা কাজের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস- কোয়ালিটি, কায়েন্টটের রিকুইয়্যারমেন্ট, সময়মতো ডেলিভারির বিষয়ে খুবই কেয়ার নেই। যার ফলে ক্লায়েন্ট সন্তুষ্ট।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজের অর্থ বাংলাদেশে আনতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়- এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
এমএস হাসান শাহরিয়ার : আমরা কাজ করি অর্থের জন্য। আবার সে অর্থ দেশের নয় বিদেশের- অথচ বিদেশ থেকে টাকা আনব সেখানেও জটিলতা। এ হচ্ছে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমাদের এক মুহূর্ত দেরি না করে সরকারের উচিত এ বিষয়টি নিয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমাদের দেশে প্রচুর ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিং কর্মী রয়েছে, তারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পে-পাল-এর মতো অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম আমাদের পাশের দেশগুলোতে থাকলেও আমাদের দেশে নেই।
_______________________________________________________________________
তৌহিদহোসাইন
অর্থপরিচালকবাংলাদেশএসোসিয়েশনঅফকলসেন্টারএন্ডআউটসোর্সিং

রিপোর্টার: আউটসোর্সিংয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যত কি?
তৌহিদ হোসাইন : আউটসোর্সিং কাজের বিপুল সম্ভাবনা ছিল কিন্তু আমাদের অবকাঠামোগত অনেক সমস্যা রয়েছে যার ফলে আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছি না। সরকার যদি সঠিক রোডম্যাপ নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলে ভবিষ্যত আউটসোর্সিং ও কল সেন্টার শিল্পের অবস্থা অনেক উজ্জ্বল। অতীতে আমরা অনেক সুযোগ হারিয়েছি- এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ী সরকার অবশ্যই আমাদের কথা শোনবেন বলে আশা করতেই পারি।

রিপোর্টার: আপনারা কোন দেশের সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন এবং কি কি ধরণের কাজ করছেন?
তৌহিদ হোসাইন : আমরা ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার সঙ্গে কাজ করছি। আসলে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গেই আমরা কাজ করতে পারি- এ ক্ষেত্রে আমাদের সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রবাসী টেকনিক্যাল এক্সপার্টদেরও কাজে লাগানো যায়। আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে এনআরবিরা ভাল ভূমিকা রাখতে পারে।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজ করতে গিয়ে কি কি সমস্যা বা সঙ্কট রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
তৌহিদ হোসাইন : বাংলাদেশে কল সেন্টারের বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দক্ষ জনশক্তির অভাবে এ শিল্পে আমরা কিছু করতে পারছি না। আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রেও তাই অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে যেমন- বিদ্যুত সমস্যা, ইন্টারনেট-এর স্পিড সমস্যা হচ্ছে প্রধান। আমাদের আরও একটি সাব মেরিন ক্যাবল দরকার।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
তৌহিদ হোসাইন : আমি নিশ্চিত আমাদের সরকার যদি একটু ডিজিটাল মানসিকতার হয়ে অবকাঠামো তৈরি করে দেয় তাহলে বাকি কাজটা উদ্যোক্তারা করে নিবে। আউটসোর্সিং কাজের অর্থ দেশে আনার প্রক্রিয়াটা জটিল- এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে।

রিপোর্টার: আপনাদের কাজ সম্পর্কে ক্লায়েন্টরা কেমন সন্তুষ্ট?
তৌহিদ হোসাইন : ভারতে আউটসোর্সিংয়ের কাজের রেট আমাদের চেয়ে বেশি তাই অনেক কাজ বাংলাদেশে আসার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া ভারতের চেয়ে আমাদের কাজের কোয়ালিটি কোন অংশে কম নয়, আমাদের কোয়ালিটি প্রোগ্রামারের অভাব নেই। তাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে আউটসোর্সিং শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা করতে হবে। আমাদের ক্লায়েন্টরা আমাদের কাজের কোয়ালিটি সম্পর্কে সন্তুষ্ট। যার ফলে দিন দিন কাজের অর্ডার আসছে।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজের অর্থ বাংলাদেশে আনতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়- এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
তৌহিদ হোসাইন : এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বিদেশ থেকে আউটসোর্সিং কাজের অর্থ আনতে যেন কোন ধরণের ঝামেলা পোহাতে না হয়। বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে পে-পল গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখছে, বিশ্বের ১৯০টি দেশে পে-পাল চালু থাকলেও আমাদের দেশে নেই। পে-পালের ব্যাপারে অনেকের ধারণা মানিলন্ডারিংয়ের বিষয় জড়ানো ঠিক নয়, প্রয়োজনে পে-পাল চালু করা হয় ‘রিসিভ অনলি’ সিস্টেমে। তাহলে অন্তত আমাদের দেশের ছোট ছোট আউটসোর্সিং ফার্ম এবং ফ্রিল্যান্সারদের ঝামেলা লাঘব হবে পাশাপাশি দেশে বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের পথ সুগম হবে।
_______________________________________________________________________
তানভীর হাসান তুরান
সিইওটেকডোমেইন

রিপোর্টার: আউটসোর্সিংয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যত কি?
তানভীর হাসান তুরান : বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচুর আউটসোসিং কাজ হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়েও আউটসোসিং এর কাজ করছে অনেকে। সবচে আশার কথা দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে। আমি মনে করি তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে আউটসোসিং এর মাধ্যমে আমাদের ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। এটা শুধু আশা জাগানো কথা নয়। ইতিমধ্যে আমাদের তথ্য প্রযুক্তিবিদরা তার প্রমাণও রেখেছেন এবং রাখছেন। তাই আমার মতে আউটসোসিং এর ভবিষ্যত আমাদের দেশে খুবই উজ্জল।

রিপোর্টার: আপনারা কোন দেশের সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন এবং কি কি ধরণের কাজ করছেন?
তানভীর হাসান তুরান : আমরা মূলত ইউএস এর দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করি। একটি হলো পিবিএসএম ও আরেকটি কোম্পানী হলো নাজদাক। মূলত ওয়েব বেইজড সলুশনই আমরা প্রোভাইড করি। আমাদের স্পেশালিটি আসলে ওয়েবে তাই এধরনের কাজই আমরা বেশী করে থাকি।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজ করতে গিয়ে কি কি সমস্যা বা সঙ্কট রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
তানভীর হাসান তুরান : কাজ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে টেশনিক্যাল কিছু সমস্যা হয় তবে তা ওখানকার এক্সপার্টদের সহযোগীতায় সমাধান করা হয়। আউটসোসিং কাজের ক্ষেত্রে আমরা মূলত যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হই তাহলো দক্ষ প্রফেশনালদের অভাব। আমদের পাটনার কোম্পানীগুলো এমন কিছু টেকনিক্যাল রিকুয়ারমেন্ট থাকে যেগুলোর রেডি এক্সপার্ট আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। আর আমাদের দেশের অবকাঠামোগত সমস্যা তো রয়েছেই। বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট তো এক বিরাট সমস্যা।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
তানভীর হাসান তুরান : কাজের ক্ষেত্র তৈরী করতে আমি মনে করি সবার আগে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রয়োজন ও এগুলো সহজলভ্য করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আউটসোসিং এর কাজ করে অনেক ছেলেমেয়ে এখন প্রচুর অর্থ উর্পাজন করছে এবং অনেকে চেষ্টা করছে। এদের জন্য ইন্টারনেট আরো সহজলভ্য করা প্রয়োজন। ছোট ছোট কোম্পানীগুলোর বিকাশের জন্য সরকারের উপরোক্ত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে প্রয়োজন তাহলো নতুন নতুন টেকনোলজীর উপর আমাদের প্রফেশনাল ট্রেনিং। এটিও আউটসোসিং এর ক্ষেত্রে আমাদের দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে।

রিপোর্টার: আপনাদের কাজ সম্পর্কে ক্লায়েন্টরা কেমন সন্তুষ্ট?
তানভীর হাসান তুরান : আমাদের কাজের গুনগতমান নিয়ে তারা সন্তুষ্ট । কাজের পরে সাপোর্টেও তারা ভালো সন্তুষ্ট । তবে একটি সমস্যা যেটি আমরা ফেস করি তাহলো সবসময় সময়মতো কাজ ডেলিভারী দিতে না পারা । বিদ্যুৎ সংকট এর একটি অন্যতম কারণ। আরেকটি হলো দক্ষ প্রফেশনাল এর অভাব।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজের অর্থ বাংলাদেশে আনতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়- এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
তানভীর হাসান তুরান : কথায় বলে – ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’। আউটসোসিং এর ক্ষেত্রে আমাদের শেষ অংশটা ভালো হয় না । অর্থাৎ সঠিকভাবে/ সঠিক সময়ে এদেশে টাকা আনাটা আসলেই সমস্যা। সরকারের উচিৎ আউটসোর্সিং-এর টাকা যত দ্রুত সম্ভব দেশে আনার ব্যবস্থাটি সহজতর করা। কোম্পানি হিসেবে আমরা হয়তো টাকাটা আনতে পারছি কিন্তু আমি জানি, আমার কাছে অনেক ছেলেরা আসে যারা অনলাইনে কাজ করে কিন্তু পে-পল বা বিদেশী একাউন্ট থেকে দেশে টাকা আনতে পারছে না। আমার মতে এ পদ্ধতিটি দ্রুত সহজতর করা প্রয়োজন। এতে করে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার অর্জন আরো বৃদ্ধি পাবে।
_______________________________________________________________________
আশিকুর রহমান
পরিচালক, টেকনিক্যাল (ওয়েব), ইকারা সইনফো টেকলিমিটেড

রিপোর্টার: আউটসোর্সিংয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যত কি?
আশিকুর রহমান : In the running IT সেক্টরে একমাত্র আউট সোর্সিং ই এনে দিতে পারে সফলতা ।

রিপোর্টার: আপনারা কোন দেশের সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন এবং কি কি ধরণের কাজ করছেন?
আশিকুর রহমান : আমরা মূলত USA এবং সুইডেনের সাথে কাজ করি ।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজ করতে গিয়ে কি কি সমস্যা বা সঙ্কট রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
আশিকুর রহমান : আমরা যেহেতু নতুন এবং Govt. support একেবারেই নেই তাই ভালো Programmer এবং ভালো Buyer পাওয়া দুটোই কষ্টকর ।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
আশিকুর রহমান : আমাদের Programmerদেরকে আবশ্যই Standerd Quality সম্পন্ন কাজ শিখতে হবে । Govt. সাপোর্ট দরকার for loan without interest ।

রিপোর্টার: আপনাদের কাজ সম্পর্কে ক্লায়েন্টরা কেমন সন্তুষ্ট?
আশিকুর রহমান : আমরা এত কম টাকায় ভালো কাজ দিচ্ছি সুতরাং অনেক Client Bangladesh Invest করতে আগ্রহী ।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজের অর্থ বাংলাদেশে আনতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়- এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
উত্তর : ব্যাংকগুলোর সাথে সরকারের সমঝোতা করে money transfer methodology easy করা দরকার।
_______________________________________________________________________
তুহিন
পরিচালকএফওয়ান আইটি ফার্ম

রিপোর্টার: আউটসোর্সিংয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যত কি?
তুহিন :বর্তমানে আউটসোর্সিং আমাদের মত মধ্যবিত্ত কম্পিউটার ফার্মের জন্য একটি অত্যাবসকিয় অঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে। দেশে বসে সাড়া পৃথিবীর কাজ এটা যে কত বড় পাওয়া একজন সফ্টওয়্যার ইন্জিনিয়ারের কাছে তা অনস্¦িকার্য। বর্তমানে দেশীয় সফ্টওয়্যার পাশা পাশি বিদেশীদের চাওয়ার উপর নির্ভর করে আমরা বিদেশীদের সমকক্ষ হতে পারছি। একসময় ছিল বিশ্ব সফ্টওয়্যার বাজারে ভারতীয় কিংবা মার্কিনিদের একচেটিয়া প্রভাব-এখন তা আমরা বাংলাদেশীরা দখল করতে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। ফলে আউটসোর্সিংয়ের বাজার বাংলাদেশের জন্য অনেক ভালো এবং বড় প্রাপ্তি। আউটসোর্সিংয়ের সাইট গুলোর সাথে যোগাযোগ করে যা জানতে পেড়েছি- ভবিষ্যতে এর প্রসার এতই বাড়বে যে বড় বড় গার্র্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি বা কর্পোরেট কোম্পানি গুলোর হিসাব বা অভ্যন্তরীন কাজের জন্য হয়তো খরচ করে কোটি টাকার উপরে , সেখানে একটা আউটসোর্সিং ফার্ম নিমিষেই খুব কম খরচে তাদের কাজ করে দিবে ফলে পৃথিবী সমস্ত ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিংয়ের সাথে জরিত হবে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় এই শিল্পের ভবিষ্যত অনেক ভাল যদিও আমাদের দেশে বোশর ভাগ শিক্ষিত মানুষজনই এ বিষয়ে অজ্ঞ।

রিপোর্টার: আপনারা কোন দেশের সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন এবং কি কি ধরণের কাজ করছেন?
তুহিন : আমরা মানে এফ ওয়ান আইটি ফার্ম ইতিমধ্যে বেশ কিছু দেশের বাইরের কাজ করেছি যার মধ্যে অন্যতম ইউ এস এ, কানাডা, বেলজিয়াম,সুইডেন, ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই। আমরা সাধারনত ওয়েব সাইট ডিজাইন,রাইটিং, সফ্টওয়্যার ডেভেলাপমেন্টের কাজ বেশি করে থাকি।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজ করতে গিয়ে কি কি সমস্যা বা সঙ্কট রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
তুহিন : বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আউটসোর্সিংয়ের কাজের ক্ষেত্রে অনেক গুলো সমষ্যা আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে অন্যতম বিদ্যুত, ইন্টারেনেটের এখনো ভালো সাপোর্ট পাওয়া যায়না। পে পাল সিস্টেম এখনো বাংলাদেশে চালু না হওয়ায় টাকা উত্তলনের ক্ষেত্রে খুব সমস্যায় পরতে হয়। ওয়্যার ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকার বিষয়টি জানেই না, আর সবচেয়ে বড় সমস্যা পর্যাপ্ত সফ্টওয়্যার প্রোকৌশলির অভাব। যদিও প্রতি বছর হাজার হাজার কম্পিউটার শিক্ষার্থী পাশ করে বের হচ্ছে কিন্তু কাজ পাচ্ছেনা।অথচ দেখুন বাংলাদেশের প্রতিটি সফ্টওয়্যার ফার্মে দক্ষ লোকের অভাব। আর এর মূল কারন শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেটের জন্য পড়ছে যা মখস্থ বিদ্যা। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে একেবারেই দূর্বল। মনে রাখতে হবে কোন আইটি ফার্ম সার্টিফিকেট দেখে লোক নেয় না, কাজ করার লোককে নেয়।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
তুহিন : অবশ্যই প্রতিটি আউটসোর্সারের কম্পিউটারের পাশা পাশি ইংরেজীতে দক্ষ হতে হবে। বিদ্যুৎ সমস্যা দুর করতে হবে। পে পাল চালু আজকেই করা দরকার। নিরবচ্ছিন্ন ভাল ব্যান্ড উইথ সহ ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা দূর করতে হবে। আর সবচেয়ে বেশী দূর করা দরকার ভূয়া বাংলাদেশী বায়ার ও কোডার যারা এর মাধ্যমে প্রতারনা করছে-তাদের কে চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান করার জন্য একটা এসোসিয়েশন করা দরকার।

রিপোর্টার: আপনাদের কাজ সম্পর্কে ক্লায়েন্টরা কেমন সন্তুষ্ট?
তুহিন : প্রথম দুটি কাজে আমরা ঠিক মত কমিউনিকেট করতে পারিনি-কিন্তু আমাদের রেটিংস অবশ্যই ভালো তার মানে ক্লাইন্ট আমাদের কাজে বর্তমানে সন্তুষ্ট।এমন ক্লাইন্ট ও আছে যে আমাদের সাথে গত দেড় বছর যাবত বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে।

রিপোর্টার: আউটসোর্সিং কাজের অর্থ বাংলাদেশে আনতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়- এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
তুহিন : এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখবো কিন্তু এর সমস্যা উপলব্ধি করতে পারবো না , তা হয় না। আমি আগেও বলেছি যদি বাংলাদেশে পে-পাল আজকে চালু করা যায় তা হলে আজকেই চালু করা উচিত। অথচ এটির জন্য কোটি কোটি বৈদেশিক রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সৌজন্যে : টেক টাউন