Logo

আহমেদ স্বপন মাহমুদের পাঁচটি কবিতা

অনিন্দ্য বাংলা
শনিবার, অক্টোবর ৩০, ২০২১
  • শেয়ার করুন

আহমেদ স্বপন মাহমুদের পাঁচটি কবিতা

# স্বপ্নের রং

বিকালের ঘুম স্বপ্নময়।
স্বপ্নে তোমার সাথে দেখা।
স্বপ্নের রং সবুজ। তারপর হালকা গোলাপি।
তোমার পরনের শাড়ির মতন। সুন্দর।
তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছিল।
তুমি বসেছিলে। পাশ দিয়ে চলে যাবার সময় আমরা দেখেছিলাম পরস্পর।
তোমাকে ঘেঁষে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। তোমাকে দেখছিলাম। না-দেখা প্রেমের সুন্দরতার মতন।
তুমি স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখার অনেক সমস্যা।
স্বপ্নের কোনো রং থাকে না।
তোমাকে ভালোবাসবার রং সবুজ ও গোলাপি।
 

# বায়ুর সিংহাসন

তুমিও শিকার।আমি তার লব্ধ কারিগর।
তোমাকে তুলে এনে বাগানে রেখেছি।
প্রাকৃতিক। মায়ের শাল দুধের মতন নতুন।
অভিজ্ঞতাময়। শিহরিত অমূল্য রত্নধন।
আমি সুস্বাস্থ্যে তোমারে চেয়েছি, আপন।
পাই নাই রূপ, নিজের অরূপ কেমনে মেলে ধরি
তুমি এমন কারিগর, নিরুদ্দেশে, আজব শিকারি!
বসে থাক, অরূপ ছায়া ধরে, ভাণ্ডে-ব্রহ্মাণ্ডে গোপন
নিরাকারে, তোমাকে আমায় দেখি, বায়ুর সিংহাসন।
 

# ঘুম

একা একটা আকাশ মাথা বেয়ে পুকুরে এসে পড়েছিল। আমি দেখি নি! তার তীরে কিছুক্ষণ গল্পগুজব শেষে পাতা দেখছিলাম, গাছ দেখছিলাম। নৈবেদ্যসহ মায়াদেবীর মন খারাপ করা হাঁটুমোড়া ছায়া ছিল দেখছিলাম! সারা রাত কাল ছায়ারা ঘুরেছে একা।না দেখার তৃপ্তি আছে, দেখার আনন্দের চেয়েও। আমরা গাছ দেখি, পাতা দেখি— গাছের কষ্ট দেখি না। শেকড়ের আর্তনাদ দেখি না। পাতার শিরায় যেসব দুঃখরেখা সেসব দেখি না। এমনকি ভাবিও না তাদের অবহেলা ও উপেক্ষার কথা। আমরা সবাই ফুটফুটে বাচ্চার মুখের হাসির মতো আমাদের মুখ দেখতে চাই।আমরা জানি না, বেদনার শতমুখ আমাদের মুখে বসে কেমন মাতম করছে! কাল রাতে ছায়ারা জেগেছিল। তোমাকে ঘুমাতে না দেয়ার অজুহাতে। তুমি ছিলে মাটির নিচে শিকড়ের নীরবতার মত গহন ও বিস্তৃত ঘুমে।
 

# ইচ্ছা

কবিতাও শাওয়ারে যাইতে চায় তোমারে শাওয়ারে দেখতে ইচ্ছা করে। সন্ধ্যার শাওয়ার নরম হয় কিনা। কতকিছু ইচ্ছা হয় হাওয়ামুখর সন্ধ্যায়। বেল ফল হিসাবে অনেক ভালো, সু্স্বাদু, পরোপকারী; তারে চামড়াসহ খাইতে কত শখ, আজো মিটে নাই। তোমরে দেখার কত বাসনা! মিঠাপুকুর কেন যাওয়া হয় নি আজো তারও কোন কারণ নাই; অথচ দিল্লী, লরা দত্ত, আফ্রিকা, গ্রেভসের কালো কালো উত্তাপ, রাজ্য ও রাষ্ট্রে কত শাদা প্রেম রাষ্ট্র হয় জানা হয় নাই। এতকিছু না হওয়ার সাথে তোমারে দেখতে চাওয়ার যেসব মিল তারাও পরাবাস্তব, উড়ালপ্রিয় বৃষ্টির আগে-পরে।আগে পরে কত প্লেন উঠানামা করে, কত মন ক্ষয় হয় পূর্ণ বিষাদে, কত জন প্রিয়াঙ্গনে জড়ায়া ঘুমাতে যায়। আর তোমারে, বিউটি লাক্স, দূরন্ত কসমেটিক্স, উড়ন্ত বডি স্প্রে, খয়েরি লিপস্টিক, মাসকারার আনন্দ আর কত রকমের জেল, প্রিয় রেভলন সামগ্রী, আহা জেলি ফিশ, কত ভাব লয়া ঘনিষ্ট ভাবে কত উপাচারে দেখে দেখে খুশিতে ক্লান্ত হয়! এইসব সুগন্ধে তাজা ভাব জাগে, মনকাড়া কবিতাও টাওয়ারে উঠে শাওয়ারে যাইতে চায়;- এই চাওয়া নিরপরাধ, ঘনিষ্ট, আপনায়- তোমারে শাওয়ারে চায়। অথচ আমি কোনোদিন একটাও ধরি নাই চড়াই, শালিকের লেজ।আর তোমার উত্তেজে দ্বিত্ব সত্তায় পরাবাস্তব শরীরের দিকে হেলে পড়ি, সমুদ্রজলের উচ্ছ্বাসের সমান তোলপাড়, পাড়ে পাড়ে ফেনার সমান মনে তোমার শাওয়ার আমারে ভাসায়া ডুবায়া কই থিকা কই লয়া যায়! আমার আর কিচ্ছু ইচ্ছা করে না তোমারে শাওয়ারে ছাড়া।
 

# লীলা

আমি লীলা পরাই ছন্দে ছন্দে ভাব; আমি মরি মরি হেসে। পরাই ছন্দে হাসি, নৃত্যে ছড়াই গান সন্ধ্যাভাব বিলাসে।আমি লীলা আমার পায়ে পায়ে মদ, মত্ত চোখের উন্মাদনা আমার কণ্ঠে উথাল ঢেউ, গন্ধে বর্ণ ভাসাই অভিলাষে।আমি লীলা আনীলা পরানসখি, জড়াই বায়ু দেহে, সস্নেহে বিষ পুড়াই অন্তর, ভাব অভিনব, উড়াই অনায়াসে।আমি লীলা দুর্লভ সংকেতে রেখে যাই সবুজ চিহ্ন, আগুন, আন্ধার, আলোর তিয়াসে। আমি লীলা সর্বনামে আপনায় আপন মদে, আপনার মাঝে আমি অরূপে রূপরে সাজাই সকাশে।আমি লীলা করি। হাসি। ভাসিয়া বেড়াই।
 
লেখক পরিচিতি: আহমেদ স্বপন মাহমুদের জন্ম ২১ মাঘ ১৩৭২ বঙ্গাব্দ, নেত্রকোণা জেলায় হবিবপুর গ্রামে। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘদিন, পাশাপাশি সাংবাদিকতা। বর্তমানে ঢাকাভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী দায়িত্বে নিয়োজিত। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: অতিক্রমণের রেখা (২০০০), সকল বিকেল আমাদের অধিকারে আছে (২০০৪), অবিচল ডানার উত্থান (২০০৬), আদি পৃথিবীর গান (২০০৭), আগুন ও সমুদ্রের দিকে (২০০৯), আনন্দবাড়ি অথবা রাতের কঙ্কাল (২০১০), অতিক্রমণের রেখা, নির্বাচিত কবিতা (২০১১), ভূখণ্ডে কেঁপে ওঠে মৃত ঘোড়ার কেশর (২০১৩), রাজার পোশাক (২০১৪), অনেক উঁচুতে পানশালা (২০১৪), প্রেম, মৃত্যু ও সর্বনাম (২০১৪) উল্লেখযোগ্য। গদ্যগ্রন্থ : সমূহ সংকেতের ভাষা (২০০১), কলমতালাশ : কবিতার ভাব ও বৈভব (২০১৪)। এছাড়াও উন্নয়ন নীতিগবেষণা বিষয়ে রয়েছে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচিত কিছু গ্রন্থ। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বেশকিছু পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে বগুড়া লেখকচক্র স্বীকৃতি পুরস্কার ২০১৫, শব্দগুচ্ছ সম্মাননা ২০১৬, লোক সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭, বইপত্তর সম্মাননা ২০০০, কলকাতা।