Logo

অগ্নি বাতাসে পুড়ে গেলো নেত্রকোনার হাজারো কৃষকের কপাল

অনিন্দ্য বাংলা
বুধবার, এপ্রিল ৭, ২০২১
  • শেয়ার করুন

মজিবুর রহমান শেখ মিন্টু:  হঠাৎ গরম বাতাসে পুড়ে গেলো নেত্রকোনার হাজারো কৃষকের কপাল। ৪ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো নেত্রকোনার উপর দিয়ে বয়ে গেছে গরম বাতাস। থেমে থেমে চলে কয়েক ঘণ্টা। এতে স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয় আতঙ্ক। সোমবার সকালেই দেখা যায় সর্বনাশের চিহ্ন। সূর্যের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথেই মরতে দেখা যায় মাঠ ভর্তি বোরো ধানের শীষ।

গরম বাতাসে হাওরাঞ্চল নেত্রকোনার আটপাড়া, কেন্দুয়া, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুরী উপজেলার বুরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলতে পারেননি কৃষি কর্মকর্তারা। 

লুনেশ্বর ইউনিয়নের খিলা গ্রামের দরিদ্র কৃষক কাকন শেখ বলেন, “অনেক ঋণ-ধার কইরা ৪০ কাঠা জমিতে ধান চাষ করসিলাম। গরম বাতাসে আমার কপাল পুইরা গেলো, সব ধান নষ্ট হয়া গেলো। এই ঋণ আমি কেমনে শোধ করবাম?”। এ অবস্থা শুধু কাকন শেখের একার নয়, আটপাড়ার শত শত কৃষকের ধান নষ্ট হওয়ায় এমন বিপাকে পড়েছেন, তাদের এখন মাথায় হাত, তাদের এখন সর্বনাশ।

এই বিষয়ে নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক হাবিবুর রহমান অনিন্দ্যবাংলাকে জানান, চলতি বোরো মৌসুমে আটপাড়া উপজেলায় ১২ হাজার ৪০৫ হেক্টর, খালিয়াজুরী উপজেলায় ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর, মদনে ১৭ হাজার ৩৪০ হেক্টর এবং মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১৭ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলন অনেক ভালো। কিন্তু রবিবারের গরম দমকা হাওয়ায় তা ভেস্তে গেল। কৃষি বিভাগ খবর পেয়ে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে মাঠে নেমেছে।

আটপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ অনিন্দ্যবাংলাকে বলেন, আটপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সুখারি ও লুনেশ্বর ইউনিয়নে। চলতি বোরো মৌসুমে আটপাড়া উপজেলায় ১২ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমির ফসলের মধ্যে ৫৫০ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এই দুই ইউনিয়নের ফসল বেশি নষ্ট হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, বাতাসে তাপমাত্রা ছিলো ৩৬° সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় যেকোন ফসলের ক্ষতি হতে পারে। ঝড় ও গরম বাতাসের সাথে যদি বৃষ্টি থাকতো তাহলে এতো ক্ষয়ক্ষতি হতো না। 

যেসব জমির ধান সবেমাত্র বের হচ্ছিল (ফ্লাওয়ারিং স্টেজ) অথবা ধানে চাল গজাচ্ছিল (মিল্কিং স্টেজ)- সেসব জমিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুখারি ও লুনেশ্বর ইউনিয়নের ধান ফসল ফ্লাওয়ারিং স্টেজে থাকার কারণে ব্রি-ধান ২৯ এবং হাইব্রিড জাতের ধান খেতই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ব্রি-ধান ২৮ মোটামুটি পেকে আসায় সেগুলোতে তেমন একটা ক্ষতি হয়নি।

মঙ্গলবার ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিনিধি দল কেন্দুয়া ও মদন উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়াঞ্চল পরিদর্শন করে ক্ষতির প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করেছেন। দলটির প্রধান ‘ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট’ এর প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মোহাম্মদ নাজমুল বারী হাওড় পরিদর্শন শেষে বলেছেন, ‘এটি এক ধরনের হিট শক।

নেত্রকোনা জেলার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু এমপি মঙ্গলবার বিকেলে মদন উপজেলার মাঘান ও গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বোরো ফসলের ক্ষতির বিষয়টি কৃষিমন্ত্রীসহ সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের সরকারীভাবে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেয়া হবে। 

নেত্রকোনা জেলায় অন্তত ১৪ হাজার ৯শ’ ৭০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। আর এই পরিমাণ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার জেলায় অন্তত ৮৬ হাজার ৫শ’ ২০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন কম হবে- যার বিরূপ প্রভাব পড়বে মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার ওপর। মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে আনুমানিক ২শ’ ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চাষীদের মতে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে বলে মনে করেন।

এদিকে চাল-ডাল-তেল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছেই। সামনে পবিত্র রমজান-ঈদ। দরিদ্র কৃষকরা কিভাবে দিন যাপন করবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। এমতাবস্থায় দ্রুত সরকারী অনুদানের পাশাপাশি সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা।