বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রধান সালমা আলী বলেন, এখন আর আলাদা করে গৃহিণী শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নেই। কারণ নারীদের কোনও না কোনও কাজে বাসার বাইরে বড় একটা সময় পার করতেই হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে তার ঘরের কাজ কমেনি। বাইরের কাজের সঙ্গে ঘরের কাজও যোগ হয়ে বরং তার কাজ এখন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সারাদিনের বেশিরভাগ অংশ কাজে ব্যয় করলেও সেই কাজ মূল্যায়িত হয় না। নারীর অধিকার রক্ষায় এ ধরণের কাজের মূল্যায়ন করা জরুরি।
নারীর কাজের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ার এই বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সিপিডি ও ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এর যৌথ উদ্যোগের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নারীরা ঘরে সম্পাদন করেন, এমন কাজের প্রাক্কলিত মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর ৭৬.৮ শতাংশের সমান। চলতি মূল্যে তা ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। গবেষণায় ৬৪টি জেলায় নমুনা জরিপ চালিয়ে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নারীরা যেসব হিসাব বহির্ভূত কাজ করে থাকেন, তার পরিমাণ জনপ্রতি প্রতিদিন গড়ে ৭.৭ ঘণ্টা। একজন পুরুষের ক্ষেত্রে তা মাত্র আড়াই ঘণ্টা। নারীরা এ ধরনের যতো কাজ করে থাকেন, তা নিজেরা না করে অন্যকে দিয়ে করালে কত খরচ হতো, তা হিসাব করলে (এটিকে বলা হয় প্রতিস্থাপন পদ্ধতি) দেখা যায় যে, এর মোট পরিমাণ জিডিপির প্রায় ৭৬.৮ শতাংশ। অন্যদিকে এসব কাজ অন্য কেউ করতে বললে তার বিনিময়ে নারীরা কত পারিশ্রমিক নিতেন, সেই আলোকে হিসাব করলে (গ্রহণযোগ্য মূল্য পদ্ধতি) সেসবের প্রাক্কলিত আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় জিডিপির ৮৭.২ শতাংশ। এর অর্থ দাঁড়ায়-নারীর এসব কাজকে জিডিপির পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হলে জিডিপির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ ধরে হিসাব করতে হতো।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, চাইলেই বা ইচ্ছা করলেই পরিবারের মধ্যে নারীকে অমর্যাদা করার প্রবণতা রয়েছে। সমাজের এ মনমানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। নারীর কাজের মূল্যায়ন হলে এবং যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হলে নারীর প্রতি সহিংসতাও কমবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, সন্তান লালন-পালনসহ সংসার সামলাচ্ছেন নারী। তবে নারীর এসব গৃহস্থালির কাজের মূল্যায়ন না থাকার ফলে জাতীয় আয়ে নারীর অবদানের কোনো প্রতিফলন ঘটে না। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন করলেই গৃহিনীরা আসলে কী অবদান রাখে তা স্পষ্ট হবে।
মতামত লিখুন :