Logo

বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক পেলেন ময়মনসিংহের এডিসি পারভেজুর রহমান

অনিন্দ্য বাংলা
শনিবার, জুলাই ২৩, ২০২২
  • শেয়ার করুন

মজিবুর রহমান শেখ মিন্টু :    প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক’ পেলেন প্রশাসনের ২৭ জন কর্মকর্তাসহ ৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান। শনিবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে পদক তুলে দেওয়া হয়।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদকপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

এ বছর ১০টি শ্রেণিতে এ পদক দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন পদকের ইতিহাসে প্রথম গবেষণা শ্রেণিতে পদক পেয়েছেন বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান এবং ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পারভেজুর রহমান।

তারা মূলত ৭ই মার্চ ভাষণের সাহিত্যে উপাদান ও ব্যাকরণগত ভাষা শৈলি নিয়ে 7 march 1971 Historic Speech : A comparative Examination of Rhetoric and Textual Qualities  শিরোনামে গবেষণা করেন। তাদের গবেষণা পত্রটি নিউইয়র্ক, অস্ট্রেলিয়া, কাতার ও ভারত ভিত্তিক নাসা ইন্ডেক্সধারি সংস্থা International Organisation of Scientific Research এর বিখ্যাত জার্নাল I OSR Journal of Humanities and Social Science এ এটি ৭ ই মার্চ ভাষণের উপর একটি ল্যান্ড মার্ক গবেষণা হিসেবে গণ্য করে ফেব্রুয়ারি ২০২২ সংখ্যায় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়।

 এ গবেষণার পূর্বে ৭ মার্চের ভাষণের সাহিত্যিক অলংকারের উপর কোনো গবেষণা করা হয়নি। পৃথিবীর অন্যান্য বিখ্যাত ভাষণ যেমন মার্টিন লুথার কিং, জন এফ কেনেডি, আব্রাহাম লিংকনের ভাষণের সাহিত্য মূল্য নিয়ে অনেক গবেষণা রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য হিসেবে পড়ানো হয়। গবেষকেরা এই ভাষণে অ্যারিস্টোটলের Three Basic Rhetorics : Ethos, Logos and Pathos  এর ব্যবহার দেখান। তাছাড়া এ ভাষণের ক্লাসিকাল অরেসন,  শেক্সপেরিয়ান অলংকরণ এবং ব্যাকরণগত ভাষা শৈলির উপর বিস্তারিত আলোচনা করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এ গবেষণায় প্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর Ethos – নীতি, Logos-যুক্তি এবং Pathos – আবেগের সর্বত্র ব্যবহারের মাধ্যমে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান গঠনে এবং অন্যান্য সাহিত্যে উপাদানগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা ও সাহিত্য পড়ানোর সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে।

সর্বোপরি আদর্শিক ভিত্তি ছাড়া রাষ্ট্র চলতে পারেনা। আর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শের মূল ভিত্তি ৭ই মার্চের ভাষণে নিহিত। যার চর্চা ইতিমধ্যে হচ্ছে, যা এই ভাষণের তাৎপর্য মূল্যায়নে যথেষ্ট নয়। আর এই ক্ষেত্রে এই গবেষণা সেই শূণ্যতার অনেকটা ঘাটতি পুরণ করবে।

জনপ্রশাসনে কর্মরত কর্মচারীদের সৃজনশীল ও গঠনমূলক কার্যক্রম উৎসাহিত করার মাধ্যমে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়নে উৎসাহিতকরণ ও সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অধিকতর গতিশীল করতে সরকার ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই প্রথমবারের মতো জনপ্রশাসন পদক দেয়।

২৩ জুলাই জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবসের অনুষ্ঠান উদযাপনের অংশ হিসেবে এই পদক দেওয়া হয়। পদক দিতে ‘জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা ২০১৫ (২০১৬ সালে সংশোধিত)’ করা হয়। এ বছর সেই নীতিমালা বাতিল করে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা, ২০২২’ প্রণয়ন করা হয়।

পুরস্কার হিসেবে একটি স্বর্ণপদক (২১ ক্যারেট মানের ১৫ গ্রাম ওজনের) এবং রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সংবলিত সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যক্তিগত অবদানের জন্য ২ লাখ টাকা, দলগত অবদানের জন্য ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। দলগত অবদানের ক্ষেত্রে দলের সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ৫ জন। দলের প্রত্যেক সদস্যকে স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট দেওয়া হয় এবং নগদ পুরস্কারের ৫ লাখ টাকা সদস্যদের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করা হবে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বর্ণপদক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি/দলের অন্তর্ভুক্ত কর্মচারীরা এবং এর আগে জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক প্রাপ্ত ব্যক্তি/দলের অন্তর্ভুক্ত কর্মচারীরা নামের শেষে ‘পাবলিক অ্যাডমিস্ট্রেটিভ অ্যাওয়ার্ড’ এর সংক্ষিপ্তরূপ ‘পিএএ’ টাইটেল ব্যবহারের পরিবর্তে সরকারি আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে পোশাকের সঙ্গে সরকার অনুমোদিত বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকের মনোগ্রাম ব্যবহার করতে পারবেন বলে নতুন নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

পুরস্কার প্রদান পর্বটি পরিচালনা করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম। তিনি জানান, ‘পরিবেশন উন্নয়ন’ এবং ‘সামাজিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ ক্ষেত্রে মানসম্মত আবেদন না পাওয়ায় এ দুটি ক্ষেত্রে এবার পদক দেওয়া হচ্ছে না।

অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ব্রিটিশ আমলের প্রশাসনের পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সরকারি কর্মচারীরা এখন আর জনগণের শাসক নন, তারা এখন জনগণের সেবক। সুশাসন ও জবাবদিহিতা এখন প্রশাসনের মূলমন্ত্র।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জনপ্রশাসন পদকের মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার স্বীকৃতি পাচ্ছেন। এ পুরস্কার তাদের মধ্যে উদ্দীপনা সঞ্চার করছে।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পারভেজুর রহমান  গবেষণায় দলগতভাবে পদক লাভ করায় এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন,  এ পদক আমার কর্মকালীন সময়ে কর্মস্পৃহা ও কাজের গতিবৃদ্ধিতে  অনুপ্রেরনা যোগাবে। প্রশাসনে থেকে  জনসাধারণের  দোরগোড়ায় সহজ ও হয়রানীমুক্তভাবে সেবাপ্রদান করাই আমার ব্রত।