Logo

ময়মনসিংহে সম্পন্ন হলো খ্রীস্টরাজার পর্ব ও ওয়ানগালা উৎসব ২০২১

অনিন্দ্য বাংলা
মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৩, ২০২১
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা : ময়মনসিংহে আনন্দময় পরিবেশে উদযাপিত হলো খ্রীস্টরাজার পর্ব ও ওয়ানগালা উৎসব ২০২১। গারো আদিবাসী ও খৃষ্ট ধর্মালম্বীদের আয়োজনে ময়মনসিংহ ভাটিকাশর সেন্ট প্যাট্রিক ক্যাথিড্রাল গির্জায় ২১ নভেম্বর রবিবার সকাল ১০টায় এই ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রেভা ফাদার বাইলেন চাম্বুগং। প্রধান অথিতি ছিলেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ পনেন পল কুবি। সং নকমা ছিলেন মিঃ স্বপন রংখেং।

গারোদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের নাম ‘ওয়ানগালা’; যাতে দেবতা মিসি আর সালজং এর উদ্দেশ্যে উৎপাদিত ফসল উৎসর্গ করা হয়। উল্লেখ্য ওয়ানগালা না হওয়া পর্যন্ত মান্দিরা নতুন উৎপাদিত ফসলাদি খেত না। আশ্বিন মাসে একেক গ্রামের মানুষদের সামর্থ্যানুযায়ী সাত দিন কিংবা তিনদিন ধরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হতো। অতীতে গারোরা সবাই তাদের নিজস্ব ধর্ম পালন করত। তাদের আদি ধর্মের নাম ‌’সাংসারেক’।

১৮৬২ সালে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণের পর থেকে বর্তমানে ৯৮ ভাগ গারোরাই খ্রীষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণের পর থেকে তাদের সামাজিক নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠানে বেশ পরিবর্তন এসেছে। গারোদের প্রধান দেবতার নাম তাতারা রাবুগা। এছাড়াও অন্যান্য দেবতারা হলেন- মিসি সালজং, সুসমি, গয়ড়া প্রমুখ। বিভিন্ন গবেষকগণ বিভিন্ন সময়ে গবেষণা করে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গারো বর্ণমালা আবিষ্কার করেছেন। সেগুলো উচ্চ গবেষণার জন্য বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি-তে সংরক্ষণ করা আছে। বাংলাদেশি গারোরা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল,শূকর প্রভৃতি খায়। মদ তাদের অপরিহার্য পানীয়। বর্তমানে গারোরা লেখাপড়া ও চাকুরি করার সুবাদে বিভিন্ন স্থানে গমন এবং দেশীয় লোকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠাই দেশীয় খাবারগুলো নিজস্ব সংস্কৃতির পাশাপাশি খাবার খেতে ভালোবাসে। গারোদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার হচ্ছে-নাখাম কারি। যা পুটি মাছের শুটকি দিয়ে তৈরি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শুকুরের মাংস গারোদের অতি প্রিয়।

বাংলাদেশে বসবাসকৃত বর্তমান গারোদের ৯০% ধর্মান্তরিত খিষ্ট্রান। প্রায় ২% মুসলিম ও হিন্দু এবং বাকি ১০% ঐতিহ্যবাহী ধর্ম পালন করে(২০০৮ সালের তথ্যমতে)। গারোদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মের নাম সংসারেক। এর অর্থ কেউ জানে না। তবে গবেষকদের মতে সম্ভবত বাংলা সংসার থেকে সংসারেক শব্দটি এসেছে। গারোরা হিন্দু ধর্মালম্বীদের মত পূজা করে থাকে। তাদের প্রধান পূজা ‘ওয়ানগালা’। সালজং(Saljong) তাদের উর্বরতার দেবতা এবং সূর্য সালজং এর প্রতিনিধি। ফসলের ভালোমন্দ এই দেবতার উপর নির্ভর করে বলে তাদের বিশ্বাস। সুসাইম(Susime) ধন দৌলতের দেবী এবং চন্দ্র এই দেবীর প্রতিনিধি। গোয়েরা(Goera) গারোদের শক্তি দেবতার নাম। কালকেম(Kal Kame) জীবন নিয়ন্ত্রণ করে বলে গারোদের বিশ্বাস।

গারো ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় ও বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়। ভারতে মেঘালয় ছাড়াও আসামের কামরূপ, গোয়ালপাড়া ও কারবি আংলং জেলায় এবং বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ছাড়াও টাঙ্গাইল, সিলেট, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ঢাকাও গাজীপুরজেলায় গারোরা বাস করে। গারোরা ভাষা অনুযায়ী বোডো মঙ্গোলীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। জাতিগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে অনেক গারোই নিজেদেরকে মান্দি বলে পরিচয় দেন। গারোদের ভাষায় ‘মান্দি’ শব্দের অর্থ হল ‘মানুষ’।[২] গারোদের সমাজে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রথা প্রচলিত।