Logo

সমকালীন ভাবনা ।। পাবলিক ভার্সিটি বনাম প্রাইভেট ভার্সিটি : অহংকার ও মর্যাদার লড়াই

অনিন্দ্য বাংলা
মঙ্গলবার, মে ১৯, ২০২০
  • শেয়ার করুন

ওপেন মেসেজ : মতামত

( লিখায় ভাবনা, বোধ, চেতনা ও মতামত লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত। বিষয়টি কারো সাথে মতের অমিল হলে সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী নয়)

উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম বা উত্তর পশ্চিমাংশ এগুলো নিয়ে কথা বলবো না। বলবো কিছু মানুষের মানসিকতা নিয়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমলা কামলা দারোয়ানের ছেলে, কৃষক মজুর গার্মেন্টসকর্মীর মেয়েরা পড়ে। তার সাথে সাথে পড়ে হাজার হাজার মন্ত্রী, সচিব, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, চাকরিজীবীর ছেলেমেয়ে।

প্রথমত, বাপের হেডম, মোটা ব্যাংক একাউন্ট, বাড়ি গাড়ির সাথে পড়াশোনার কী সম্পর্ক আমার জানা নাই। হ্যাঁ অবশ্যই জীবনের একটা বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ সময় আমরা কোথায় কাটাচ্ছি, আর কাদের সাথে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে নিচ্ছি সেটা আমাদের ব্যাপার। তুমি যদি পাবলিকের পুরান বিল্ডিঙে, সমাজের সব স্তর থেকে আসা মানুষের সাথে মিলেমিশে পড়াশোনা করতে না পারো, তাহলে সেটা তোমার ব্যর্থতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যাই জ্ঞান ভাগাভাগি করে নিতে, কার বাপের কতো টাকা সেটা হিসাব করতে না। আর গ্রামের খ্যাত থেকে উঠে আসা, যেটাকে আমরা বলি জীবনের কঠিন সংগ্রামের সাথে লড়াই করে প্রতি মুহূর্তে নিজের মেধা আর যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে দিয়ে নিজের পরিচয় গড়ে তোলা মানুষগুলোর সাথে জীবনের কোনো একটা সময় কাটিয়েছি, সেটা তো আমার অর্জন। তাদের গল্পগুলো যুদ্ধের, তাদের গল্পগুলো অর্জনের, তাদের গল্পগুলো অকৃত্রিম আনন্দের। সেই গল্পগুলো আর কোথায় মিলবে বলো?

আর তুমি যদি মনে করো বাপের ব্যাংক ব্যালেন্স দেখে ক্লাস জাস্টিফাই হয়, তাহলে ভাই তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দরকারটা কী? তোমার বাপকে দেখে তোমার ক্লাস ডিসাইড হয় তাই না? ভাই নিজের পরিচয় তৈরি করা শিখ। কেউ বলে নাই পাবলিকে না পড়লে পরিচয় হয় না, বা জীবনে যুদ্ধ না করলে পরিচয় হয় না। অবশ্যই হয়। তুমি যেখানেই পড়, নিজের মেধাবিকাশ করো, গুণগুলো প্রতিষ্ঠা কর, নিজে থেকে কিছু অবদান রাখ, বংশ পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নিজে কিছু করো। আর সেটায় বিশ্বাসী না হলে যেখানেই পড়, সারাজীবন অন্যের নামেই চলতে হবে, বাবা-মা, চাচা-মামা সে যেই হোক।

তুমি সারাজীবন এসির বাতাসে আরাম করে ঘুমিয়ে, হাই ফাই গাড়িতে চলাফেরা করে, পিঙ্ক সিটিতে শপিং করে বড় হইস। যাদের বাসায় দিনে ২২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না, মাইলের পর মাইল হেঁটে যারা কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে, যাদের বাবা মা গায়ে খেটে দুই ঈদে কোনরকমে নতুন জামা কিনে দিতে পেরেছে, অনেক সময় পারেও নি, তাদের ক্লাস ডিসাইড করার তুমি কে? তারা নিজের যোগ্যতায় বাংলাদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বাবা মাকে যেই গৌরব সম্মান এনে দিয়েছে, তাদের ক্লাস ডিসাইড করার তুমি কে? অক্ষম, গরীব, নিরক্ষর মা বাবার মুখে গর্বের হাসি ফোটাতে পেরেছে, তাদের ক্লাস ডিসাইড করার তুমি কে? তাদের বাবা মা তাদের জন্য যে পরিশ্রম করেছেন, যে কষ্ট স্বীকার করেছেন, তার প্রতিদান তারা দিয়েছে এবং দিয়ে যাচ্ছে। তাদের ক্লাস ডিসাইড করার তুমি কে? তাদের গ্র্যাজুয়েশনে যে টাকা লাগে সেটা নাকি তোমার পকেট মানির সমান। তাহলে যেই টাকা দিয়ে তারা গ্র্যাজুয়েট হয়ে নিজেদের জীবনের ভার নিজেরা বহন করার যোগ্যতা অর্জন করে, সেই টাকা তোমরা গ্লোরিয়া জিন্সে এক ফুঁয়ে উড়ায় আসো। বলি গর্ব টা কার? তোমার না তাদের?

আর যখন বল বিসিএস ঘুষখোরের চাকরি, তখন আসলে কিছু না বলে হেসে দেওয়াটাই উত্তম। ঠিকই তো, কোটিপতি বাবার সন্তান হয়ে ঘুষ খাওয়া চিনবে কী করে তুমি? এই যে তুমি, টাকা পয়সার তোলায় মানুষের ক্লাস আর মর্যাদা বিচার করো, তোমার বিবেচনা আর মানসিকতার মূল্য কত? বড়ই সস্তা। “সস্তা পাবলিক” এ পড়া বড় বাপের পোলাপানের অভাব নাই। এমনকি, তারা এটাকে নিজেদের গৌরবের ব্যাপার মনে করে। এই যে এতরকম মানুষের সাথে নিজেকে একাত্ম করে ফেলার সুযোগ, এর জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে। তোমার মতই লাখ টাকার গদি থেকে উঠে এসে পুরান পুরান বিল্ডিং এর ছোট ছোট ক্লাসরুমের নড়বড়ে বেঞ্চগুলোতে বসে নেহায়েত সাধারণ ছেলেমেয়েদের সাথে পড়াশোনা করে। তাদের মূল্যবোধ সম্মানবোধ তোমার চেয়ে অনেক মূল্যবান। তাদের আত্মমর্যাদা তোমার চেয়ে বহু উঁচুতে অবস্থান করে।

[এই ধরণের পোস্ট কখনো দিতে হবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে এখন এরকম একটা ব্যাপার নিয়ে আমাদের লড়াই করতে হবে। পাবলিক প্রাইভেট কোনো ভার্সিটির সাথে আমার কোনো দুশমনি নাই। আমার অনেক কাছের বন্ধু এসব জায়গায় পড়াশোনা করে এবং আমি তাদের অত্যন্ত সম্মান করি, ভালোবাসি। শুধু এরকম ক্ষুদ্র মানসিকতার মানুষদের জন্য আমি বিন্দুমাত্র সমবেদনা অনুভব করি না!]

লিখেছেন :  পূবির্তা