Logo

আমঝুপি নীলকুঠির অজানা কথা : সাজ্জাদুল হাসান

অনিন্দ্য বাংলা
শনিবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০২১
  • শেয়ার করুন

সংক্ষিপ ভ্রমণ কাহিনী 

২৭ শে নভেম্বর মেহেরপুরের আমঝুপি নীলকুঠি দেখতে যাই। উনিশ শতকের প্রথম ভাগে মেহেরপুর অঞ্চলে ব্রিটিশদের দ্বারা স্থাপিত স্থায়ী ব্যবসায়িক ও প্রশাসনিক কাঠামোর অন্যতম হলো আমঝুপি নীলকুঠি। ব্রিটিশ আমলে নীল চাষের উদ্দেশ্যে ইংরেজরা ৭৪ একর জমির উপর এই কুঠিবাড়ি গড়ে তোলে। মেহেরপুর অঞ্চলে ১৭৭৮ সালে কেরল ব্রোম নামে এক ইংরেজ ব্যক্তি তৎকালীন নদীয়া জেলার বর্তমানে মেহেরপুরের আমঝুপির কাজলা নদীর তীরে ৩০০ বিঘা জমির উপর নীল কুঠি স্থাপন করেন। যে নদীটি এখনো বহমান।
নীল চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় ১৭৯৬ সালে এখানে নীল চাষ শুরু হয়। মেহেরপুর বেশ কয়েকটি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয় তম্মধ্যে আমঝুপি, গাংনীর ভাটপাড়া, বামুন্দী নীলকুঠি অন্যতম। ঐতিহাসিক আমঝুপি নীলকুঠি ব্রিটিশ শাসনের পরেই কুঠিবাড়ির দায়িত্ব নেন মেদিনীপুরের জমিদার। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ইংরেজরা চলে যাবার সময় পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) সরকারের কাছে হস্তান্তর করে যায় এই কুঠিবাড়ির ভূসম্পত্তি। ১৯৫১ সালের ১৭ ডিসেম্বর জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে দায়িত্ব বর্তায় জেলা প্রশাসনের কাছে।
নীল গাছ পচা পানি জ্বালিয়ে তৈরি করা হতো নীল রং। এক বিঘা জমিতে ২.৫ থেকে ৩ কেজি নীল উৎপন্ন হতো। উৎপাদন করতে ব্যয় হতো ১২ থেকে ১৪ টাকা অথচ চাষিরা পেতো মাত্র ৩ থেকে ৪ টাকা। কথিত আছে রবার্ট ক্লাইভ প্রায় সময় কাটানোর জন্য আমঝুপি নীলকুঠিতে আসতেন। নীলকুঠিতে তার ব্যবহার্য সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ভূসম্পত্তি সহ এই কুঠিবাড়ির মধ্যে রয়েছে একটি কুঠি ভবন। স্নেইক(snake) প্রুফ রুম, নাচঘর, রেকর্ডরুম, ঘোড়ার আস্তাবল, কয়েদখানা, কাচারি ঘর ও নাইবদের (তহসিলদার) আবাসন ও মৃত্যু কূপ। প্রচলিত রয়েছে, যদি কোন প্রজা খাজনা কিংবা নীলচাষে অনীহা প্রকাশ করতো তাহলে তাকে হত্যা করে মৃত্যুকূপে নিক্ষেপ করা হতো। স্নেইক(snake) প্রুফ রুমটি এতই মসৃণ, সাপ কিংবা পিপড়া চলতে পারে না বলে লেখা রয়েছে। গাঢ় সবুজ রং এর পিচ্ছিল ফ্লোর স্বচক্ষে দেখে তাই মনে হলো। কয়েকটি নীল গাছও সেখানে দেখতে পেলাম।
আমঝুপি নীলকুঠির মূল ভবনটি আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত করা হয়েছে। এটির দৈর্ঘ্য ৩৭.৬৪ মিটার এবং প্রস্থ ২২.২৫ মিটার। এ ভবনে ছোট-বড় ১৩টি কক্ষ এবং সামনে ও পিছনে একটি করে বারান্দা রয়েছে। নীলকুঠির অভ্যন্তরভাগে গরম রাখার জন্য একটি ফায়ারপ্লেস (Fire Place) রয়েছে। ১৯৭৮ সালের ১৩ ই মে তারিখে খুলনা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ডের সভায় আমঝুপি নীলকুঠিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়।
সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে এর কার্যক্রম এখন পরিচালিত হচ্ছে। ইংরেজ কুঠিয়াল কেনি, সিম্পসেন, ফার্গুসেনের সতীর্থদের অত্যাচার ও শোষণের স্মৃতি বহন করে মেহেরপুরে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক আমঝুপি নীলকুঠি।
লেখক : সাবেক সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও চেয়ারম্যান বাংলাদেশ বিমান পরিচালনা পর্যদ।