Logo

আমাদের বাসার ছাদবাগানে “মে ফ্লাওয়ার” : ডাক্তার প্রদীপ কর

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, জুন ১, ২০২০
  • শেয়ার করুন

আফ্রিকা মহাদেশের এক ফুল গাছ কবে কার হাত ধরে গাঙ্গেয় এ-বদ্বীপটিতে এসে পৌঁছেছিল কে জানে! কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপারটি ঘটে যায় যখন সেই ফুলের ছোট্ট চারাগাছটি কোনো এক অবসরে আমাদের ছাদবাগানে ঠাঁই করে নেয়, যখন এপ্রিলের শেষেরদিকে কোনো একদিন সবার অগোচরে টবের মাটি ফুঁড়ে স্কুলের সুবোধ বালকটি যেমন শিক্ষকের মনযোগ আকর্ষণ করার জন্য ডান বাহুটি উঁচিয়ে ধরে, ঠিক তেমনি আলোর আহ্বানে একটি লকলকে মৃণাল বাহু সে বাড়িয়ে দেয় উপরের দিকে, আর তারপর কঠোর নিয়ম মেনে মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই সেই ডগায় মেলে ধরে কারুকাজ খচিত এক বলের মতো ফুল- মে ফ্লাওয়ার!

কী অপূর্ব এক সুন্দর ছকে বাঁধা জীবন! সারা বছর কিচ্ছুটি বোঝার উপায় নেই। এক খন্ড আদার মতো কন্দ,শুরু করে মাটির গহীন অন্ধকারে দীর্ঘ এক অপেক্ষার প্রহর গোণা। জুন থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি। তারপর প্রকৃতি ডাক পাঠায় তার এই প্রতীক্ষমানার প্রতি। একদিন এপ্রিলের শেষ দিকে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে সেই আপাত কঠোর কন্দের বুক থেকে জন্ম নেয় সবুজ ঋজু এক চারা। দ্রুত বাড়তে থাকে সে। সময়ক্ষেপণ করার মতো সময় যে তার নেই! দ্রুত, আরও দ্রুত! দশ মিটার মতো উঁচু হয় সে। বাড়তে বাড়তেই ডগায় ধারণ করে ফুলের কুঁড়ি, মে মাসের প্রথম দিকেই যা পুরোপুরি প্রস্ফুটিত হয় এক অপরূপা হয়ে। লাল একটি বল, একটি বোঁটা থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়া কেশরের মতো দল, কী মোলায়েম! কী তুলতুলে! কেশরের মাথায় হলুদ রেণু!

শুধু মে মাসেই ফুটে বলে তার এই নাম। এছাড়াও ফায়ার বল লিলি, পাউডার পাফ লিলি, ক্যাথেরিন হুইল, আফ্রিকান ব্লাড লিলি কত নামে ডাকা হয় তাকে! একটি ডাঁটায় একটি মাত্র ফুল একমাসের জন্য এসে আবার মে মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মিলিয়ে যাওয়া, এমন কি গাছটিরও আর কোনো অবশেষ না থাকা- একটি বছর মাটির নীচে চোখের আড়ালে থেকে আবার পরবর্তী বছর একই সময় একই নিয়মে বের হয়ে আসা, আবার ফুল দেয়া, আবারো হারিয়ে যাওয়া! কী বিচিত্র এই প্রকৃতি! কত বিস্ময় এর প্রতি ভাঁজে ভাঁজে!

গতকাল মে মাস শেষ হলো। ঝড়ে গেলো মে ফ্লাওয়ার; মনে রেখে গেলো আনন্দ-বেদনার স্মৃতি।

ডাক্তার প্রদীপ কর
সেবাঙ্গণ, ময়মনসিংহ