আইসোলেশন কি ডিটেনশন?
একজন নারী চিকিৎসক, ৩৯ বিসিএস, চম্পকনগর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পদায়িত, ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় স্যাম্পল কালেক্ট করেছিলেন বিজয়নগর এর এক রোগীর। গত সোমবার এর আগের সোমবার সেই রেগীর টেস্ট পজিটিভ হয়, কদিন পর রোগী মারা যায়। তাকে বলা হয় কোয়ারেন্টাইনে থেকে নিজের পরীক্ষা করানোর জন্য।
সে নিজের স্যাম্পল পরীক্ষা করতে দিয়ে তার স্বামীর কাছে ময়মনসিংহে চলে আসে কারন তার শ্বশুর এর বয়েস ৭২ সিওপিডির রোগী, আর শ্বাশুরীর ডায়াবেটিস। তাঁদের ঝুঁকিতে ফেলা সে কোনভাবেই সমীচিন মনে করেনি। সে ট্যাক্সিতে করে মুখে মাস্ক পরেই স্বামীর কাছে চলে এসেছে।হোম কোয়ারেন্টাইন ওখানেও যা এখানেও তাই। চিকিৎসক হিসাবে তার এই সিদ্ধান্ত মানবিক এবং যৌক্তিক।
সেই নারী চিকিৎসক এর কোন উপসর্গ নাই কিন্তু তার টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ।
ঠিক এই কারণে মমেকহা তে কর্মরত তার স্বামী, ৩৩ বিসিএস এর মেডিকেল অফিসার, যে নাকি ১৪ নম্বর নিওরোলজি ওয়ার্ডে রেসিডেন্সিতে আছে, তারও স্যাম্পল নেয়া হয়েছে। কোন উপসর্গ নাই, কিচ্ছু নাই।
এলাকার জনগণ, কাউন্সিলর, পুলিশ, মেয়র সবাই মিলে তাকে জোর করে আইসোলেশনে পাঠিয়েছে। সে বাসায় থাকতে চেয়েছিলো, সে বারংবার বলেছে ভালো আছে, সুস্থ্য আছে।
কতগুলা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে,,
মৃদু সংক্রমণ বা উপসর্গহীন কাউকে কোথায় চিকিতসা করার নিয়ম কানুন আদৌ কি জানা আছে তাদের?
নাকি পজিটিভ হলেই তাকে ঘাড়ে ধরে আইসোলেশনে ভরবেন?
সেই নারী চিকিৎসক এর কি স্যাম্পল কালেকশনে যাওয়াটাই ভুল ছিলো? আক্রান্ত হয়ে বিরাট পাপ করে ফেলেছেন?
যেটা সুরক্ষা সামগ্রী পরে গিয়েছিলো সেটা কি মানসম্মত পিপিই ছিলো?
সে তো স্যাম্পল কালেকশন টীম এ ছিলো। ওর কেন আলাদা থাকার ব্যবস্থা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হয়নি?
সাতদিন ওখানে আইসোলেশনে থাকলে এতটা এক্সপোজার হতো?
সেই নারী চিকিৎসক থাকতে চাইলেই কোথায় থাকতেন?
শ্বশুরবাড়ীতে যেহেতু দুইজন হাইরিস্ক রোগী, তার আলাদা কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা কি কতৃপক্ষ করেছিলেন?
তার স্বামী তরুণ চিকিৎসক এর কান্নাভেজা ফোন পেলাম। বলল ভাই, আমি তো ডাক্তার, লক্ষণ থাকলে তো আমিই যেতাম, জোর করে এস কে হাসপাতালে পাঠায় দিছে, খাবার ব্যবস্থা ভালো না।
স্টিগমা কোন লেভেলে গেছে ভাবা যায়?
বাড়ীতে লাল পতাকা টানিয়ে দিচ্ছেন?
করোনা রোগী, করোনা বাড়ী, করোনা পাড়া ট্যাগ দিচ্ছেন!
ছি! ছি! করোনা-১৯ এ আক্রান্তরা কি খুনী না ধর্ষন মামলার আসামী?
সেবা করতে গিয়ে রোগ আক্রান্ত হয়েছেন তারা। সম্মান করুন, আশ্বস্ত করুন, খোঁজ নিন, ভরসা দিন, ভালোবাসুন। না পারলে চুপ করে দু আ করুন।
দুঃখিত, অমানুষ জানোয়ার এর মত আচরণ তাদের প্রাপ্য না।
ও বলল সিভিল সার্জন স্যার অবশ্য গাড়ী দিয়েছেন, মুন কে মতি ভাইকে বলেছি সব কিছুর খোঁজ রাখতে, খাবার, শোবার সব ব্যবস্থা দেখতে।
যারা জবরদস্তি করে ওদের আইসোলেশনে পাঠালেন, আপনারা কি ট্রিটমেন্ট প্রটোকল জানেন?
নিজের ঘরে একটা লক্ষণ উপসর্গ ছাড়া ডাক্তার দম্পতিকে থাকতে দিলেন না! অথচ এটাই নিয়ম।
আপনি বরং পিপিই পরে রাস্তায় মাইকিং করেন, ব্যাংকে টাকা তুলেন, এক সের চাল পাঁচজনে কষ্ট করে দাঁতের কাছাকাছি নিয়ে ছবি তুলেন। বাকিরা বিরাণীর প্যাকেট নিয়া এস কে হাসপাতালে দৌড় দেন। নিউজ “এই মাত্র মানবতার ডেকচি নিয়ে ডাক্তার দম্পতিকে খাওয়াতে যাচ্ছে অমুক,,,,”
একটা কথা বলি?
Someday you will find no shoulder to cry on.
শুভ অনেক শুভ নববর্ষ
(এই লিখাটি লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা। মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়)
মতামত লিখুন :