Logo

এখন দেখতে পারেন যেসব সিনেমা

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, এপ্রিল ২০, ২০২০
  • শেয়ার করুন

মহামারির সময়ে মানুষ গৃহবন্দী। যত দিন যাচ্ছে গৃহবন্দী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মানুষের মনে উঁকি দিচ্ছে হতাশা, দুশ্চিন্তা বা বিষণ্নতা। অনেক সময় আমরা হতাশাগ্রস্ত থাকি, কিন্তু জীবনের এই সময়টা মনে হয়, এর আগে আর কখনো আসেনি। এ যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। কেউ জানে না, কাকে, কখন কোন অবস্থায় পড়তে হয়। কারও জানা নেই, এই অবরুদ্ধ বিচ্ছিন্নতার অবসান কবে হবে? অ্যামেরিকার ইতিহাসে এমন বিচ্ছিন্নতা কখনোই আসেনি। কর্মহীনতার কারণে দুশ্চিন্তায় আছেই পাশাপাশি ঘরবন্দী থাকা অবস্থায় মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগতে পারে। আর এই দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতেই সিনেমা দেখে সময় কাটাতে পারেন। সিনেমা শুধু সময় কাটানোর জন্যই নয়, সিনেমার মধ্যে অদ্ভুত কিছু জীবন লুকিয়ে আছে। সিনেমা পারে মানুষকে হাসাতে, মন ভালো করে দিতে। হতাশাগ্রস্ত মানুষকে পারে সুন্দর নতুন জীবন দিতে।
বাসায় বন্দী থাকা অবস্থায় প্রতিদিন প্রায় ৩-৪টি সিনেমা দেখা হচ্ছে। সেই সিনেমা থেকেই হতাশা মুক্ত থাকতে কয়েকটি সিনেমার তালিকা করলাম—

১. দ্য গুড লাই (The Good Lie)
সিনেমাটির অর্ধেক প্রেক্ষাপট আফ্রিকা ও অর্ধেক আমেরিকা। আফ্রিকার সুদানের একটি দরিদ্র পরিবারের করুন কাহিনি। গৃহযুদ্ধের তছনছ হয়ে যাওয়া পরিবার, মা-বাবাকে হারিয়ে ভাই-বোন মিলে ৭৮৫ মাইল পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে পৌঁছায় কেনিয়ার কাকুরুমা রিফুজি ক্যাম্পে। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সময় তাদের বড় ভাইকে আফ্রিকার সন্ত্রাসী বাহিনী ধরে নিয়ে যায়।
কেনিয়ার শরণার্থী শিবির থেকেই লটারি পেয়ে তারা সবাই চলে যায় আমেরিকা। ভাই-বোনের অসীম ভালোবাসা, পরিশ্রম করে দরিদ্রকে জয় করা, কৃতজ্ঞতার ও ত্যাগের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয় সিনেমাটিতে। নিজের জীবন নিয়ে খুব চিন্তিত, বাসায় বসে বসে আর ভালো লাগে না, হতাশ হয়ে পড়েছেন, ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট ব্যয় করে ছবিটি দেখলে হতাশা দূর হবেই হবে।
ছবিটির প্রথম অংশ দেখে চোখ ছলছল করবে দ্বিতীয় অংশ আশা জাগানিয়া আর শেষের অংশ দেখে আপনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাবেন।

২. দ্য পারসুট অব হ্যাপিনেস (The Pursuit of Happy Ness)
পিতা–পুত্রের জীবনযুদ্ধের গল্প। ১৯৮১ সালে সান ফ্রান্সিসকোর বিক্রেতা ক্রিস গার্ডনার তার সারা জীবনের সঞ্চয় এক নতুন ব্যবসায় ব্যয় করে ফেলে। তবে এ ব্যবসায় সে খুব বেশি সুবিধা করে উঠতে পারে না। এক সময় গার্ডনার হতাশ হয়ে পড়ে। দারিদ্র্য তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলতে থাকে, স্ত্রী লিন্ডা দূরে সরে যায়। শিশু সন্তান ক্রিস জুনিয়রের ভরণপোষণের দায়িত্ব এসে পড়ে তার ওপর। কিন্তু প্রতিনিয়ত টানাপোড়েনের মধ্যে থাকা ক্রিস আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় সন্তানকে অভাব অনটনের বিন্দুমাত্র বুঝতে না দেওয়ার। কিন্তু তারপরেও একসময় অভাব অনটনে সে দেউলিয়া হয়ে যায়। ভিক্ষুক ও বাস্তুহারাদের সঙ্গেও এক সময় আশ্রয়কেন্দ্রে রাত্রিযাপন করতে হয় তাদের।
কী তারপর করে নিঃস্ব অবস্থায় আশ্রয়কেন্দ্রে জীবন পার করা ক্রিস আমেরিকার সবচেয়ে সফল একজন ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত মন ভালো করে দেবে সিনেমাটি।

৩.চিল্ডেন অব হ্যাভেন (Children of Heaven)
এই ছবিটি মনে হয় সবার দেখা হয়ে গেছে। এই ছবির সঙ্গে আমাদের অনেকের শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
মন ভালো করার জন্য কোন ছবি যদি কেউ খুঁজে থাকেন, তাহলে বসে পড়ুন এই ছবিটি দেখতে। এ এমন এক সিনেমা, যা দেখে আপনি যেখানে যেভাবেই আছেন চিন্তা করবেন আহা আমি কতই না সুখে আছি। ইরানি এই ছবির মূল চরিত্রে ভাই আলী বোন জারা এবং এক জোড়া জুতা। জারার জুতা হারিয়ে ফেলেছিল আলী। অভাবের সংসার এক জোড়া জুতা কেনা সহজ কথা নয়। ভাই-বোনের অদ্ভুত ভালোবাসা এবং এক জোড়া নতুন জুতার জন্য যে হাহাকারটা খেলা করে আলী ও জারার মনে, সেটা আপনার হৃদয়কে অবশ্যই নাড়া দেবে।

৪. অ্যাপোক্যালিপ্টো (Apocalypto)
ছয় শ বছর আগের মায়া সভ্যতার পটভূমিতে নির্মিত মেল গিবসনের ছবি অ্যাপোক্যালিপ্টো। মায়ান রাজ্যে এক গ্রামে বাস করে জাগুয়ার পাও। হঠাৎ তাদের গ্রামে আক্রমণ করে একদল দস্যু। আক্রমণকারীদের হাতে নির্যাতিত হয়ে বন্দী জাগুয়ার পো এবং তার গ্রামের প্রাপ্ত বয়স্ক সবাই। ক্রীতদাস ও দেবতার বলির জন্য তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিকে জাগুয়ারকে বলি দেওয়ার আগ মুহূর্তে সূর্যগ্রহণের আবির্ভাব হলো। প্রথম মিনিট থেকে একেবারে শেষ মিনিট পর্যন্ত এক সেকেন্ডের জন্য হলেও আপনি বিরক্ত হবেন না।

৫. ওয়ান হান্ড্রেড টুয়েন্টি সেভেন আওয়ারস (127 Hours)
অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় অ্যারন লি পেশায় একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। অ্যাডভেঞ্চার যার খুবই পছন্দ, আর এ জন্যই সে অ্যাডভেঞ্চার করতে যায় গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে। একাকী সেই অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপে তাঁর হাত আটকা পড়ল এক পাথরের ফাঁকে। শত চেষ্টা করেও সে সেখান থেকে বের হতে পারে না। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগর কোন মাধ্যম নেই। সঙ্গে আছে একটি ভিডিও রেকর্ডার। গিরিখাতের পাথরে আটকা পড়া অ্যারল লি’কে উদ্ধারে মাঝেমধ্যে মাথার ওপর দিয়ে বিমান উড়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। বেঁচে থাকার চেয়ে বড় কিছুই যে নেই, সেটা বুঝতে এই সিনেমাটি অবশ্যই দেখবেন।

৬. দ্য পিয়ানিস্ট (The Pianist)
পৃথিবীর সব চাইতে বড় সন্ত্রাসী কে বলুন তো? তার নাম হিটলার। হিটলারকে নিয়ে এই সিনেমাটি তৈরি হয়নি, কিন্তু হিটলারের নাৎসিবাহিনী যে কত ভয়ানক ছিল, কত নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে পৃথিবীজুড়ে তা ছবিটিতে অতি সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। বাস্তব ঘটনা নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি অস্কারসহ জিতে নিয়েছে অসংখ্য পুরস্কার।

৭. টুয়েলভ ইয়ারস আ স্লেভ (12 Years a Slave)
এই ছবিটি অস্কারে ২০১৪ সালে ৪টি বিভাগে পুরস্কার জিতে নিয়েছে। সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পার্শ্বচরিত্র, সেরা অভিনেত্রী ও সেরা চিত্রনাট্য—এই চারটি বিভাগ ছাড়াও সে বার নমিনেশন পেয়েছিল আরও চারটি বিভাগে। আঠারো শতকের একজন ক্রীতদাস, সলোমন নরথাপের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা ‘টুয়েলভ ইয়ারস আ স্লেভ’। আমেরিকার দাস প্রথা নিয়ে অসাধারণ সিনেমাটি দেখে নিজেকে একজন ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী মানুষ হিসেবেই কল্পনা করবেন। আমরা কতই না সুখে আছি।

৮. দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন (The Shawshank Redemptions)
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সিনেমার তালিকা করতে গেলে যে কয়েকটা সিনেমার নাম প্রথমেই মাথায় আসবে, তার মধ্যে এই সিনেমা অন্যতম। ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেইসে (IMDB) পৃথিবীর সব সিনেমার মধ্যে এটি আছে এক নম্বরে।
জেলখানার ভেতরে যে আলাদা একটা দুনিয়া আছে, সেটি এই সিনেমা না দেখলে বোঝার উপায় নেই। মূলত জেলখানা থেকে মুক্তিই সিনেমার মূল বক্তব্য নয়। এখানে যেন বলা হচ্ছে জীবন থেকে বাঁচো। জীবনকে তার চাহিদার পথে উন্নীত করো। আশায় বাঁচো। কখনো হাল ছেড়ে দিয়ো না। এই সিনেমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্ত হচ্ছে, শেষের ২০ মিনিট। একের পর এক মজা আসবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই সিনেমাটি দেখতে মোটেও ভুল করবেন না।

৯.কাস্ট অ্যাওয়ে (Cast Away)
এই সিনেমাটি দেখতে গিয়ে পদে পদে জীবনের অর্থটা খুঁজে পাবেন। এই সিনেমাটি আপনাকে শেখাবে কোন কিছুতে হার মানতে নেই। বেঁচে থাকতে হবে, হতাশ হলে হবে না। হলিউডের ছবি দেখেন আর টম হ্যাঙ্কসকে চেনেন না, এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল। পুরো ছবিতে প্রথম ১০ মিনিট এবং শেষের পাঁচ মিনিট ব্যতীত বাকি অংশে টম হ্যাঙ্কস ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাবেন না। কিন্তু ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিট দৈর্ঘ্যের এর ছবিটি দেখতে বসে এক সেকেন্ডের জন্য হলেও ঘাড় ঘোরানো সময় পাবেন না। হতাশা দূর করতে এখনই ছবিটি দেখা শুরু করেন।

১০.লাইফ অব পাই(Life of Pi)
সমুদ্রপথে কানাডার উদ্দেশে যাত্রা। যাত্রাপথে ঝড়ের কবলে পড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পাই এই পরিবার। ভাগ্যক্রমে কিশোর পাই বেঁচে যায়। বিশাল সমুদ্রে কিশোর পাইকে বাঁচানোর কেউ নেই। ছোট্ট নৌকায় আশ্রয় নেওয়া পাইয়ের বেঁচে থাকা আর দুর্বিষহ হয়ে উঠে, যখন সেই নৌকাতেই আশ্রয় নেয় একটি হিংস্র বাঘ। একদিকে হিংস্র বাঘ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা, অন্যদিকে সেই হিংস্র বাঘকেও মরতে না দেওয়ার চেষ্টা। এ এক অদ্ভুত মেলবন্ধন মানুষ এবং হিংস্র প্রাণী বাঘের। সাহসিকতা আর মানবিকতার এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে লাইফ অব পাই ছবিটিতে।
এই ১০টি সিনেমা ছাড়াও দেখতে পারেন, Into The Wild, Forest Gump, Life Is Beautifu, Unbroken ও The Impossible. যারা টরেন্ট বোঝেন বা গুগলে বিভিন্ন সিনেমার নাম লেখে সার্চ করেন, তারা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কীভাবে বিনা মূল্য দেখবেন। কিন্তু যারা বোঝেন না, তারা YouTube কিংবা iTunes ব্যবহার করে দেখতে পারেন। YouTube Movies অ্যাকাউন্টে প্রায় সব কটি সিনেমা পাবেন। তা ছাড়া যাদের Netflix আছে তারা Netflix এ পাবেন।