Logo

কওমী মাদ্রাসায় অনুদান এবং অামার ভাবনা।। 

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, মে ১, ২০২০
  • শেয়ার করুন

কওমী মাদ্রাসায় অনুদান এবং অামার ভাবনা।।

একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্যে দরকার হলো- দক্ষ ডাক্তার, মানবিক ধর্মীয় নেতৃত্ব এবং কৌশলী অর্থনীতিবিদের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কতৃর্ক কওমী মাদ্রাসাগুলোতে প্রদত্ত অনুদানকে অামি পজেটিভলিই দেখতে চাই এবং অভিনন্দন জানাই অাপনাকে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’।
পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসাগুলো যখন প্রায় বেড়ারা হয়ে যাচ্ছিলো তখন বামফ্রন্ট মাদ্রাসাগুলোতে অর্থের যোগান দিয়ে রাষ্ট্রের জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে অাসে। এটির ফলাফলও পশ্চিমবঙ্গ ভোগ করছে। পশ্চাৎপট শিক্ষাব্যবস্থা থেকে সরে এসে মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষাব্যবস্থার অাধুনিকায়ন হয়েছে। হিন্দু ছেলেরাও এখন মাদ্রাসায় পড়ে।

৭৫ পরবর্তী সময়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে নামে বেনামে অনুদান পেয়ে কতিপয় কওমী মাদ্রাসা ফুঁলে-ফেপে উঠে। তথাকথিত অালেমরা অর্থ পেয়ে ঠান্ডা হয়ে সামরিক সরকারগুলোকে ডিস্টার্ব করা থেকে বিরত থাকে। বুদ্ধিবৃত্তির এ কাজে সব থেকে এগিয়ে ছিলেন এরশাদ সাহেব। বাংলাদেশ তাঁর মতো চতুর রাষ্ট্রপতি দ্বিতীয়জন হয়তো দেখবে না! ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন অধার্মিক এবং নারী প্রেমী! কিন্তু রাষ্ট্রের কিসে কাতুকুতু তা বুঝে ট্রিটমেন্ট ভালোই দিয়েছিলেন।

সরকারি জবাদিহিতার বাইরে থেকে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে রিক্রুটমেন্ট কিন্তু বন্ধ থাকেনি। অপেক্ষাকৃত অস্বচ্ছল এবং এতিম বাচ্চাদেরকে তারা নিজেদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে নিয়োজিত করেছেন। কাজটি যে ভালো নয় তাও নয়। সমাজের এই দরিদ্র এবং অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর দায়িত্ব কওমী মাদ্রাসাই নিয়েছে! রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সমাজপতিদের কেউ এই কাজে মনযোগ দেয়নি। কিন্তু সমাজের এই অনগ্রসর বাচ্চাগুলোর অধিকার ছিলো মূল স্রোতে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবার এবং মাথা উঁচু করে করে বাচঁবার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর অাগে কওমীদের সনদকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাদের জন্যে সরকারি চাকুরীতে মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে অংশগ্রহণের দরোজা খুলে দেয়া নিঃসন্দেহে অনেক বড় অর্জন রাষ্ট্রের জন্যে। কওমী মাদ্রাসায় একসময় বিজ্ঞান পড়ানো হতো। দেওবন্দে এখনো পড়ানো হয়। অামাদের কওমী মাদ্রাসাগুলো দেওবন্দ এবং মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কারিকুলামকে অনুসরণ করে। পার্থক্য শুধু অামাদের দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলো শুধু একটি ফেকাল্টি নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে তাঁরা ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। এখনো মাদ্রাসাগুলোতে অনেক উঁচু মানের মেধাবী শিক্ষক রয়েছেন। তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান-গরিমা রয়েছে। বৃটিশ বিরোধী অান্দোলনে কওমী মাদ্রাসাগুলোর অবদান অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসার অালেমরা রাষ্ট্রব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ চান। তারা মনেকরেন শরীয়া অাইন অনুসারেই রাষ্ট্রের শাসন হবে। এটি অনেকটা মধ্যযুগীয় চিন্তা। তাদের চিন্তার পৃথিবীর সাথে অাধুনিক পৃথিবীর অনেক ফারাক! সমস্যা হলো এটি তাঁরা বুঝবেন না। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রকে বুঝতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে যারা পরিচালনা করবেন তারা ধার্মিক-অধার্মিক, সাদা-কালো, মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান- ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সবাইকেই শাসন করবেন এবং পথ দেখাবেন। সবার সমান সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করবেন। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে জাতিকে সামনের দিকে অগ্রসর করবেন।

কিন্তু! অামাদের একটা বড় সমস্যা হলো- কাউকে ট্র্যাকে তুলতে গিয়ে নিজেরাই ট্র্যাক হারিয়ে ফেলি! ক্যানভাসটাকে অামরা বড় করতে পারি না। বড়জোর হিসাবায়ন করি পরবর্তী ভোটের! দৃষ্টির এই সীমাবদ্ধতার জন্যে অনেক বড় মাশুল গুনতে হয় অামাদের।।

-তুহিন তালুকদার
ময়মনসিংহ।।