Logo

কবি আসাদ উল্লার তিনটি কবিতা

অনিন্দ্য বাংলা
মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৪, ২০২০
  • শেয়ার করুন

কবি আসাদ উল্লার তিনটি কবিতা

১.  পৃথিবী হয়ে গেছে ঘর

মহামারী অসুখে পৃথিবী হয়ে গেছে এক ঘর
তবু চলে গেছে মানুষ বহুদূর পরস্পর,
হৃদয় ছুঁয়ে না দাঁড়ালে ভালো লাগে কার
কে চায়, কে চায় এমন বিবর্ণ পৃথিবী আর?

পথে কাঁদে ক্ষুধার্ত কুকুর, পাখিটির জল ছলছল চোখ
বুকের ভেতর ঝরাপাতা মাধবীর করুণ ক্লান্ত মুখ।

মৃত মানুষের জনপদে ছিলো স্বজনের নরম মিছিল
কান্নাভেজা মাটি গড়াগড়ি জোছনার ভাঙা আলো,
মহামারীর কালে মানুষ হয়েছে ভুত, ভুল পুষ্প-প্রেম
পথে-ঘাটে-মাঠে গ্রীবা উপচানো গা ছমছম কালো!

২. যেনো কেউ না যায়

মৃত্যু হোক ধুঁমায়িত এক কাপ চায়ের চুমুকের মতো
গাঁয়ের হালট ধরে শাহী মেজাজে হেঁটে যাওয়া
হাফপেন্ট পরা দিনের সুখ, অথবা-
মাধবীর কান্তিমান মুখ উজ্জ্বল দিনে ফাল্গুনের হাওয়ায়
পার্কে পার্কে হৃদয় খুলে উড়িয়ে দেয়ার মতো-
মৃত্যু হোক চিনা বাদামের খোসার আড়ালে দীঘল কেশ
আর চিকন চিবুক ছুঁয়ে সবুজ পাতা
র উৎসব

মৃত্যু হোক আড্ডা ভেঙে একাকী পথে আনন্দ বাড়ি ফেরা।

হা ঈশ্বর, উটকপালি করোনা করুণ এই দেশে
যেনো আর কেউ না যায় ওপারে শীতল খেয়ায় ভেসে।

৩. আমি অথবা মা ডাকলে

অমি যখন মাকে ডাকি অথবা মা আমাকে ডাকেন
তখন, তখন পৃথিবী জেগে উঠে এবং
আন্তনগর ট্রেনের শীতোতাপ নিয়ন্ত্রিত কামরায়
একদল ভ্রমণপিয়াসী কফি আর প্রিয় জার্নালে পর্যটনে বেরিয়ে পড়ে।
আমি যখন মাকে ডাকি অথবা মা আমাকে, তখন-
পাড়ায় পাড়ায় নেমে আসে পহেলা বৈশাখ
চাল ধোয়া হাতের মতো সজিব ফুল, মাধবীলতা
হেসে উঠে বাগানে বাগানে;
জলকলো গানে নাচে অর্ধমৃত নদী
চরে পড়ে থাকা নিষ্প্রাণ ডিঙি মাছরাঙা হয়ে যায়।
আমি যখন মাকে ডাকি অথবা মা আমাকে, তখন-
বিবাহ প্রস্তাবে চঞ্চল কিশোরীর মতো হাওয়া দোল খায় শস্যময় মাঠে
কয়েকটি চাঁদ এসে গোল হয়ে বসে যায় উঠোনে,
খুচরো কয়েন জমা আনন্দে লাফায় জামা ও পেন্টের পকেটে বিলগেটস্-
মোড়ের দোকানে এতো বিক্রিবাট্টা শুরু হয়
যেনো কতোকাল পর দুর্ভিক্ষে রুক্ষ দিনের অবসান
যেনো কতোকাল পর বিদায় নিলো সভ্যতা খেকো লকডাউন।

মা মারা যাওয়ার আগে ঘাড় ঘুরিয়ে বারবার দেখছিলেন আমায়
যেনো তার প্রিয় পৃথিবী দেখছেন,
ভাঙাচোরা ভবঘুরে প্রিয় পৃথিবী-
অযত্নে জঙ্গলাকীর্ণ
এখানে সেখানে এতো খুঁড়খুড়ি, ক্ষত ও ক্ষতি
স্নেহ ও ভালোবাসার বদলে দাহের দাগ!
সূর্যালোকে রৌদ্র নেই-
তবু পুড়ে যায় কিছু কিছু গাছের রঙ,
এক ফালি চাঁদ ডুবে যাচ্ছে দূর বনে
অথচ পথিক তখনো পায়নি বাড়ির পথ
মা দেখছেন তার পৃথিবী ইস্টিশনের মলিন চায়ের দোকানে
এক কাপ লিকারে কী সুন্দর নিরুদ্বিগ্ন বসে আছে
নিজ গৃহে নিলাজ সন্ন্যাসী।

আমি যখন মাকে ডাকতাম অথবা মা আমাকে ডাকতেন
তখন, তখন পৃথিবী জেগে উঠতো পৃথিবীর মতো
আহা! কতোকাল হয়ে গেলো মাকে ডাকি না
কতোকাল হয়ে গেলো মা আমাকে ডাকেন না!