Logo

করোনা ক্রাইসিসঃ মাঠপর্যায়ে দেখার অভিজ্ঞতা

অনিন্দ্য বাংলা
রবিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২০
  • শেয়ার করুন

করোনা ক্রাইসিসঃ মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি৷

আগামী ৩০ দিনে বাংলাদেশের অন্তত ৫ লক্ষ লোক করোনা আক্রান্ত হবে। প্রতিদিন যদি টেস্টের সংখ্যা বাড়িয়ে ৭০০০ ও করে সরকারি হিসেবে আক্রান্ত হবে ২ লক্ষ৷

আমার কথা অবাস্তব মনে হয়? আজ থেকে ১৫ দিন আগে বলেছিলাম ডেইলি দুইশ আক্রান্ত হওয়ার দিন আসছে। এখন এটা আমি বলেদিলাম এবং এর জন্য দায়ী একমাত্র দায়ী সরকার নয় আমাদের অসচেতন, অশিক্ষিত, অস্বশিক্ষিত বাঞ্চোদ জনগণ।

গ্রামে কি হইতেছে আসেন দেখি। দুপুরের পর পোলাপাইন লকডাউন না মেনে মাঠে খেলতেছে৷ মুরুব্বি মানুষেরা চায়ের দোকানে গোল হয়ে বসে “পাকিস্তান আমলে দেশ কত ভালো ছিলো” সেইটার গবেষণা করতেছে। মসজিদে ম্যাক্সিমাম জামাত চলতেছে৷ এদের কে কোনো ইয়াং জেনারেশনের ছেলে বুঝাতে গেলে তাকে নাস্তিক, বেয়াদপ ইত্যাদি গালি দেয়া হচ্ছে৷

তাহলে আমাকে বুঝান মসজিদে করোনা আক্রান্তের ভয় না থাকলে করোনা রোগীর জানাযায় কেন হুজুর খুঁজে পাওয়া যায়না? আমাকে বুঝান। সেটাওত একটি ধর্মীয় কাজ?

অনেকে বলতেছে ঈমানি জোরের কথা। কিসের ঈমানি জোরের কথা বলেন ভাই? পাকিস্তানে তবলীগ জামাতের দল থেকে লাহোরে করোনা ছড়াইছে। মালয়শিয়াতে তবলীগ জামাতের দল কে সরকার ডিটেক্ট করেছে করোনার জিরো গ্রাউন্ড হিসেবে৷ দিল্লীতে তাবলিগ জামাতের প্রোগ্রাম থেকে আউটব্রেক হয়েছে। কোথাকার কোন ঈমানী হিসাব মারান ভাইয়েরা? কত হাদিস দিয়ে দেখাতে হবে আপনাদের এমন কি, নবীজি (সাঃ) ও বলেছেন মহামারীর সময় দুরত্ব বজায় রাখতে এবং ঘরে নামাজ পড়তে৷

তাহলে আপনারা এইটাও কথা দেন করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে যাবেন না। আপনেরা হুজুরের পানি পড়া খাবেন৷ রাজি আছেন৷

আপনারা ভাবতেছেন ইসলামের সাথে আমাদের শত্রুতা তাই আমরা এমন বলছি৷ তার মানে কি আপনারা বলতে চান ইরান, সৌদি, কাতার, কুয়েতের মত দেশগুলোও ইসলামের শত্রু? আপনাদের কানের কাছে কয়শ বার মাইক বাজাবো করোনা ভাইরাস বাংলাদেশের কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে৷ এ দেশে আমেরিকার সাথে পাল্লা দিবে ভাইরাস৷ হাতজোড় করি ঘরে নামাজ পড়েন৷

অনেকে বলেন বাজার খোলা ব্যাংক খোলা খালি মসজিদের দোষ! মাথার মধ্যে সামান্যতম ঘিলু থাকলে বুঝতা বাজারেও খুব দরকার ছাড়া না যেতে অনুরোধ করেছে সরকার।

এবার আসি বাজারের ক্ষেত্রে, প্রতিদিন বাজার না করলে কিছু বাঙালীর পেট ভরেনা৷ কারওয়ান বাজারে এখনো প্রতিদিন অন্তত দুই লক্ষ লোক বাজারে যাচ্ছে৷ কারওয়ান বাজার বাদ দিলাম মফস্বলের বাজারে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লক্ষ লোক বাজারে যাচ্ছে৷ কারো মানা শুনতেছে না।

এমন কি অনেক পয়সাওয়ালা লোক এদের স্বভাব হইল ডেইলি বাজার করা। আধা লিটার তেল কিনবে, আধাকেজি সব্জি কিনবে। এত ইতর কেন আপনেরা? ঘরে ফ্রিজ রেখেও এক কেজি মাছ কিনেন। এত ঘাড়ত্যাড়া কেনো আপনারা?

অন্তত এক মাসের বাজার কালকের মধ্যে করে ফেলেন। আই রিপিট এক মাসের বাজার। রেশন করে খাওয়া দাওয়া করেন। এক আইটেম দিয়ে খান৷ এক মাসের বাজারে যেনো দুই মাস চলে।

এবার আসি এ জাতির আরো কিছু ইতরামিতে৷ পাড়ার ছোট দোকানগুলো শাটার নামাইয়া রমরমা ব্যাবসা করতেছে।
রাস্তার মাথার এক ছেলেকে কিছু বকশিশ দিয়ে রাখছে৷ সে ছেলে পাড়ায় পুলিশের গাড়ি ঢুকলে মোবাইলে কল দিয়ে বলতেছে
শাটার নামান,লাইট অফ করেন, পুলিশ ঢুকছে।

বাঞ্চোদের বাচ্চারা পুলিশ, আর্মি তো তোদের ভালোর জন্যই বলছে।

ত্রান নিয়ে ত্রান চোরদের গল্প আমরা শুনছি৷ এবার আসেন শুনি এ দেশের গরীবের মধ্যেও কয় লেভেলের ইতর আছে।

নিজে ত্রান নেয়, তারপর ছেলেকে পাঠায়, ছেলের বৌকে পাঠায়, নাতিকে পাঠায়৷ এভাবে ঘরের মধ্যে অন্তত বিশ পরিবারের ত্রান স্টক করতেছে। এদের মধ্যে এই মনুষ্যত্ব বোধ নাই যে ত্রান সবার লাগবে৷ আমি একাই যদি এতটা নেই তাহলে অনেক পরিবার ত্রান পাবেনা।

আমরা ত্রানচোরদের খবর নিতে গিয়েছিলাম দরিদ্র মানুষের সাথে কথা বলতে৷ ত্রান না পাওয়ার করুণ কাহিনী যেমন শুনেছি,তেমন অনেক কে দেখেছি, ত্রান পেয়েছে কিন্তু আরো পাওয়ার আশায় মিথ্যা বলতেছে ” না আমরা ত্রান পাইনি”।
অনেকে ঘরে স্টক করে বাইরে বলতেছে দুইবেলা পেটে ভাত পড়েনি কিছু দেন।

আর্মিকে নাকি মানুষ ভয় পায়৷ গ্রামের বাজারে বাজারে আর্মি পা ধরার বাকি রাখতেছে ঘরে যাওয়ার জন্য। আর্মিকে দেখাতে হাটা ধরছে আবার আর্মি চলে গেলে ফেরত আসছে।

অন্যদিকে অনেক জায়গায় ত্রানের জন্য ভীড় করতেছে শত শত মানুষ যেটা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

আরো একটা ব্যাপার লকডাউনের নির্দেশ ইয়াং জেনারেশন বেশী মানছে৷ ফেসবুকিং করে, মুভি দেখে কোনমতে ঘরে আছে। কিন্তু বয়স্ক মানুষেরা কারো কথা শুনতেছে না। এরা বাজারে যাচ্ছে, চা দোকানে আড্ডা দিচ্ছে, মসজিদে যাচ্ছে। কালকে দেখলাম নামাজ পড়া শেষে বাইরে আড্ডাও দিচ্ছে৷ এদের আলোচনার বিষয়
এ দেশ কতটা ব্যার্থ?

এ দেশ ব্যার্থ কারণ আপনারা সিনিয়র সিটিজেনরা ব্যার্থ৷ ইতালিতে সিনিয়র সিটিজেনরা বলছে
আমরা ঘরে আছি৷ করোনা হলে হবে৷ তবে অবস্থা খারাপ থাকলে যেন আমাদের জায়গায় তরুণদের চিকিৎসা দেয়া হয়। ওদের দেশকে অনেক দেয়ার আছে৷

আর আমাদের দেশের ম্যাক্সিমাম বয়স্ক মানুষের কাজ হলো ইয়াং জেনারেশন কে গালি দেয়া, বেয়াদপ বলা, নিজেরা অসচেতন থাকা৷ এদেশে করোনা সবচেয়ে বেশী ছড়াচ্ছে বয়স্ক মানুষের বাইরে ঘোরাফেরা, আড্ডার জন্য।

আরো মজার ব্যাপার এ পর্যন্ত দেশে যে কয়জন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরেও মিথ্যা কথা বলে, লুকিয়ে গ্রাম, মহল্লা পরিবার কে বিপদে ফেলেছে সবকয়টা সিনিয়র সিটিজেন বা মধ্যবয়স্ক মানুষ। কুমিল্লায় এক মুফতি সে নাকি হুজুর,করোনা আক্রান্ত হয়ে তথ্য লুকিয়ে মানুষের সাথে মিশে, মসজিদে জামাত করিয়ে, পুরো একটা গ্রাম কে কোয়ারেন্টাইনে পাঠাইছে।

মোটকথা যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে৷ করোনা নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত বিশেষজ্ঞদের মতামত যাচাই করলে জানা যায় করোনা ছড়ানো রোধ করাটা ৭০% মানুষের সচেতনতা, সরকারের নির্দেশ মানা, ঘরে থাকার উপর নির্ভর করে। বাকি ৩০% টেকনিক্যাল দিক সরকারের উপর নির্ভর করে৷

আর এই ৭০% ভূমিকা যে সাধারণ মানুষের রাখার কথা সে মানুষেরা চা দোকানে আড্ডা দিয়ে সরকারের সমালোচনা করছে৷ বাজারে যাচ্ছে, মসজিদে যাচ্ছে, মানুষের সাথে মিশতেছে৷

আই টেল ইউ সরকারের এখন পর্যন্ত যত ব্যার্থতা আছে সেগুলা না থাকলেও এ দেশে করোনা আউটব্রেক হইত৷ কারণ সাধারণ মানুষ করোনা মোকাবেলার ন্যাশনাল গাইডলাইন মানতেছে না। আপনারা কয়জন জানেন করোনার মোকাবেলার সরকারি গাইডলাইন সরকার আরো দু মাস আগেই দিয়ে দিয়েছে?

দা ড্যামেজ হেড বিন ডান৷ এই অশিক্ষিত, ইতর জাতি নিজেরাই নিজেদের কবর খুড়েছে৷ জাস্টিন ট্রুডো কেনো, পুতিন আইসাও এই অতিচালাক বদমাশদের কন্ট্রোল করতে পারত না।

এখন শুধু সংখ্যা গুণতে থাকেন৷ উই আর ডুমড৷

এখন শুধু একটা কাজ করার বাকি৷ কে খাইয়া মরবে কে না খাইয়া মরবে এই চিন্তা বাদ দেন ১৪৪ জারি করেন৷ এ দেশের মানুষ স্বভাবে গরিব৷ একজন রিকশাওয়ালাও লকডাউনের আগে দিনে এক হাজার কামাত৷ না খেয়ে মরার মত মানুষ এ দেশে খুব কম আছে৷
ঠেকায় পড়লে একটা পেয়াজ দিয়াও ভাত খাওয়া যায়৷ আধপেট খেয়ে মানুষ বছরের পর বছর বাঁচে৷

৭১ এ শরণার্থীরা না খেয়ে ছিলোনা? কেউত বলে নাই যুদ্ধ থামান খানা দেন৷

অনেক পাবলিক সেন্টিমেন্ট কে পাত্তা দেয়া হইছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৪৪ জারি করেন৷ পায়ে রাবারের গুলি করার আর কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার নির্দেশ দেন৷

বৃহত্তর স্বার্থে দশ পনেরো হাজার অসচেতন বদমাইশ কে পঙ্গু করলে আমাদের কিছু যায় আসেনা৷ প্লিজ অর্ডার ওয়ান ফরটিফোর(১৪৪)। দাঙ্গা পুলিশ নামান। মানবাধিকার কর্মীরা চিল্লাইবে আরে মানুষ না বাঁচলে মানবাধিকার কিসের?

লেখাঃ Warish Azad Chowdhury