Logo

করোনা সংক্রমণ-প্রচার ও বাস্তবতা : ব্রিগেডিয়ার নাসির উদ্দিন আহমেদ

অনিন্দ্য বাংলা
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৬, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা : ফেসবুকে নিজের ওয়ালে ‍‌করোনা সংক্রমণ-প্রচার ও বাস্তবতা, কোয়ারেন্টিন নতুন উপলব্ধির পথ শীরোনামে একটি বিশেষ বার্তা প্রচার করেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সুযোগ্য পরিচালক ব্রিগেডিয়ার নাসির উদ্দিন আহমেদ। করোনা ভাইরাস নিয়ে আতংক ও আশংকার এই সময়ে  এই রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা গোটা সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে হুবুহ পোস্টটি অনিন্দ্যবাংলাতে প্রকাশ করা হলো।

আশ্বস্ত মানুষের সাথে থাকলে আস্থা বাড়ে, আশ্বস্ততা বাড়ে
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় সুহৃদ!

যখন চারপাশে বিভ্রান্তি থাকে, ভুলের ছড়াছড়ি থাকে, আতঙ্কের ছড়াছড়ি থাকে, তখন মানুষ আশ্বস্ত হতে চায় এবং আমরা আমাদের আশ্বস্তের জায়গা তৈরি করতে পেরেছি। এবং আমরা যে নিজেরা আশ্বস্ত, এই ব্যাপারে আমাদের কারো মনেই কোনো সংশয় নাই। স্বাভাবিকভাবেই আশ্বস্ত মানুষের সাথে যত একজন মানুষ থাকবে, তার আস্থা-আশ্বস্ততা তত বাড়বে। এবং এজন্যেই সৎসঙ্ঘে একাত্ম থাকার, সৎসঙ্ঘে মিশে থাকার গুরুত্ব এত!

আতঙ্কের গ্রামার
আসলে আতঙ্কের একটা গ্রামার আছে। কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে প্রথমে জিনিসটা যে কত ভয়াবহ, ওখানে কত লোক মারা গেছে, কত ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, কত ধ্বংস হয়েছে, কত অসহায় হয়ে গেছে- এটাকে প্রচার করা। এবং এটাকে শুধু ফোলাতে ফাঁপাতে থাকা।

ভবিষ্যতে কত ভয়াবহ হতে পারে!
কিন্তু যখন বেশি ফুলতে ফুলতে জিনিসটা ফেটে যায়, আসল সত্যটা বেরিয়ে আসে, তখন আবার বলা শুরু হয় যে ভবিষ্যতে কত ভয়াবহ হতে পারে! কত ক্ষতি হতে পারে! যাতে বাস্তব সত্য জানার পরও সে আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে।

করোনাভাইরাস : বাস্তব তথ্যের আলোকে
তো করোনার ব্যাপার যদি আমরা দেখি- বাস্তব সত্যটা কী? ডিসেম্বরে চীনে প্রথম করোনা ধরা পড়ল।

তিনমাস পর WHO এটাকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করল এবং চীনে কত লক্ষ লোক মারা যেতে পারে… কত কোটি লোক মারা যেতে পারে… নানানরকম জল্পনা কল্পনা হলো! সারা পৃথিবী আতঙ্ক শুরু হলো। বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেল এবং বিদেশ থেকে কেউ এলেই কোয়ারেন্টাইন। অনেক দেশে স্কুল-কলেজ সব বন্ধ।

তো বাস্তব কী? আজকে কত মার্চ? ২১শে মার্চ।

২১শে মার্চ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে সারা পৃথিবীতে ২,৭৬,৬৬৫ জন মানুষ। মারা গেছেন ১১,৪১৯ জন। রিকভার করেছেন ৯১,৯৫৪ জন। এটা হচ্ছে বাস্তব তথ্য।

বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইটালি

করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮,৭৬৩ জন। মারা গেছে ২৫৮ জন। ব্রিটেনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯৮৩ জন। মারা গেছেন ১৭৭ জন। ফ্রান্সে আক্রান্ত হয়েছেন ১২,৬১৫ জন, মারা গেছেন ৪৫০ জন। ইটালির অবস্থাটা ইউরোপের মধ্যে একটু খারাপ। সেখানে মারা গেছেন ৪০৩২ জন।

৮১ শতাংশের জন্যে হাসপাতালেও যাওয়ার প্রয়োজন হয় না
এবং বাস্তব সত্য হচ্ছে- করোনাভাইরাসে যারা আক্রান্ত হন, তাদের ৮১ শতাংশ মাইল্ড অসুস্থ হন। যেটার জন্যে হাসপাতালে যাওয়ারও কোনো প্রয়োজন হয় না! ১৪ শতাংশ অসুস্থ হন, তাদেরকে হাসপাতালে নিতে হয়। বাকি ৫ শতাংশ ক্রিটিকেল। ইনটেনসিভ কেয়ারে নিতে হয়। তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট লাগবে। এটা হচ্ছে নিউইয়র্ক টাইমসের ১৮ই মার্চের রিপোর্ট।

তাহলে যেই রোগের ৮১ শতাংশের জন্যে হাসপাতালেও নেয়ার প্রয়োজন হয় না; মাইল্ড, সেটাকে সর্দি-কাশি-জ্বর মানে ফ্লু ছাড়া আর কী বলা যায়! রোগ যেমন কিছু কিছু বছর পর পাল্টায়, আতঙ্কটাও কিছু কিছু বছর পর পর শুরু হয় আর বাস্তব সত্য হচ্ছে যে, করোনাভাইরাসের নামে যে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে এটা ফ্লুরই একটিভ ভ্যারিয়েশন। যেটা কখনও সার্স নামে, কখনও সোয়াইন ফ্লু নামে, কখনও আরেক ফ্লু নামে- বিভিন্ন সময়ে নতুন নামকরণ, কারণ প্রত্যেকটা রোগের ধরণ কিছু কিছু বছর পরে পাল্টায় এবং আতঙ্কটাও এই কিছু কিছু বছর পরে শুরু হয়, যে যখন একটা নতুন নামকরণ করা যায় তখন।

ভারত : আক্রান্ত মাত্র ২৭১!
ভারতের ব্যাপারে যেটা হচ্ছে এখন সবচেয়ে বেশি মনে করা হচ্ছে যে ভারতে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ হুমকি যে, “রোগের সুনামিতে ৩০ কোটি লোক আক্রান্ত হতে পারে!” ‘হতে পারে’ কিন্তু। খেয়াল রাখবেন- কথাটা কিন্তু ‘হতে পারে’। বাস্তবে কতজন আক্রান্ত হয়েছে? ভারতে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ২৭১ জন। মারা গেছেন তিনজন। (এবং এটা ইকনমিক টাইমস, ২১ মার্চ ২০২০ সালের রিপোর্ট) মানে ২৭১ জন যেখানে আক্রান্ত হয়েছে সারাদেশে, সেখানে বলছে ‘৩০ কোটি লোক আক্রান্ত হতে পারে!’ এবং WHO এর আগেও দেখেছেন যে- তারা সোয়াইন ফ্লু নিয়ে কি কাণ্ড করেছিল! সেই সোয়াইন ফ্লু কিন্তু এখন নরমাল ফ্লু-র রূপ নিয়েছে।

প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জায় মারা যায় এর চেয়ে বেশি মানুষ!
আসলে আমরা যেটাকে জ্বর-সর্দি-কাশি বলি, ইউরোপ আমেরিকাতে এটাকেই ফ্লু বলা হয়, ইনফ্লুয়েঞ্জা বলা হয়। অর্থাৎ এই জিনিসটা হচ্ছে নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, শীতকালের রোগ। শীত আসা এবং শীত যাওয়ার সময়।

আমরা যদি দেখি- ২০১৬-১৭ সালে মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে দুই কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে পাঁচ লক্ষ জনকে, মারা গেছে ৩৮ হাজার। ২০১৭-১৮-তে আক্রান্ত হন সাড়ে চার কোটি আমেরিকান। হাসপাতালে ভর্তি আট লক্ষ ১০ হাজার। মৃত্যু ৬১ হাজার। ২০১৮-১৯-এ আক্রান্ত হন সাড়ে তিন কোটি আমেরিকান। হাসপাতালে ভর্তি চার লক্ষ ৯০ হাজার ৬০০ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৪ হাজার ২০০ জন। এটা Center for Disease Control and Prevention এর ওয়েবসাইট থেকে নেয়া। এবং করোনায়, একটু আগে আমরা বলেছি- আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৭৬৩ জন এবং মারা গেছেন মাত্র ২৫৮ জন। গত তিন বছরের তুলনায় করোনার যদি মৃত্যুর হার আমরা দেখি, এটাতো উল্লেখ করার মতন কিছু না।

ব্রিটেনে কী অবস্থা? পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর ইংল্যান্ডে ১৭ হাজার মানুষ সিজনাল ফ্লু-তে মারা যায়। ২০১৪ সালে ২৮ হাজার ৩৩০ জন মারা গেছেন। এবছর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯৮৩ জন, মারা গেছেন ১৭৭ জন। (২১শে মার্চ দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট ২০২০ এর রিপোর্ট)। আমরা তুলনা করলেই কিন্তু বুঝতে পারি যে ফ্লু-তেও করোনার চেয়ে প্রত্যেক বছর কত বেশি পরিমাণে মারা যায়!

ইটালিতে মৃত্যু কেন এত বেশি?
বলা হচ্ছে যে, ইটালি এবং স্পেনের পরে ফ্রান্সের অবস্থা সবচেয়ে মারাত্মক। ফ্রান্সে করোনায় মারা গেছেন এ পর্যন্ত ৪৫০ জন, আক্রান্ত ১২,৬১২ জন। অথচ ফ্রান্সে প্রতিবছর ফ্লু-তে আক্রান্ত হন ২০ লাখ থেকে ৬০ লাখ মানুষ। ২০১৬-১৭ সালে শীতকালীন ফ্লুতে মারা যান ১৪ হাজার ৪০০ জন। ২০১৭-১৮ সালে ১৩ হাজার জন এবং গত বছর ৯ হাজার ফরাসি ফ্লুতে মারা গেছেন।

ইটালির অবস্থা কী? ওখানে সিজনাল ফ্লু সবসময়ই বেশি। কারণ ইটালিতে বয়স্ক লোকদের সংখ্যা হচ্ছে পৃথিবীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম। এবং করোনার ঝুঁকির চেয়েও ঝুঁকি কিন্তু হচ্ছে যদি তার আগে ক্যান্সার থাকে, লিভারের প্রবলেম থাকে, কিডনির প্রবলেম থাকে, ডায়াবেটিস থাকে, হার্টের প্রবলেম থাকে। অর্থাৎ আগে থেকে যারা রোগগ্রস্ত এবং বয়স্ক।

ভারত : সোয়াইন ফ্লু বনাম করোনাভাইরাস ভারতের অবস্থা কী? ভারতে কিন্তু সোয়াইন ফ্লু-কে ‘নরমাল ফ্লু’ বা ‘সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা’ হিসেবে ক্লাসিফাই করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ভারতে সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হন ৩৮,৮১১ জন। মারা গেছেন ২২৭০ জন। ১৮ তে আক্রান্ত হন ১৫,২৬৬। মারা গেছেন ১২১৮ জন। এবং ১৯ সালে আক্রান্ত হন ২৮,৭৯৮। মারা গেছেন ১১৮২ জন। আর এবছর (২০২০) জানুয়ারি থেকে পহেলা মার্চ পর্যন্ত দুই মাসে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৬৯ জন, মারা গেছেন ২৮ জন। আর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৭১ জন এবং মারা গেছেন তিনজন। (২১ মার্চ, ২০২০) এই যে সোয়াইন ফ্লুতে এতজন মারা গেল, ভারতে কি এটার নিউজ হয়েছে! মিডিয়া এটাকে নিউজ করেছে!

তাইওয়ান যেভাবে সংক্রমণ প্রতিহত করেছে
মজার ব্যাপার যেটা হচ্ছে- WHO বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে, চীনের পরে চীনের কাছাকাছি চীনের আরেকটা ভাই আছে। সেটা হচ্ছে তাইওয়ান। কারণ তাইওয়ান আপনারা জানেন যে, চীনের অংশ ছিল একসময়। তো তারা বলছিলেন যে তাইওয়ানে সিচুয়েশন হবে সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ কাছাকাছি। দেখতে শুনতে একরকম। খাওয়াদাওয়া একরকম। ২১শে মার্চ পর্যন্ত তাইওয়ানে আক্রান্ত হয়েছে ৭৭ জন। মারা গেছেন ১ জন। এবং তাইওয়ানকে আমরা অভিনন্দন জানাই। যে কেন? সেখানে সরকার খুব দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছিল। গুজবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় তাইওয়ান!
যখন এই অপপ্রচার শুরু হলো এবং অপপ্রচার কী পরিমাণ? যে চীনে করোনা ছড়ানোর পরেই অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়া তারা গুজব ছড়ায় যে, দক্ষিণ তাইওয়ানে ট্রাকে ট্রাকে লাশ চুল্লিতে নিয়ে গিয়ে পোড়ানো হচ্ছে।

এই গুজব ঠেকানোর জন্যে তাইওয়ানে টিভি এবং রেডিও- মিডিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবং করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, সংক্রমণ ঠেকানোর উপায় কী-এটা তারা খুব ইতিবাচকভাবে প্রচার করে। ফলে মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে আশ্বস্ত হয় এবং সময়মতো প্র্যাকটিকেল পদক্ষেপ তারা নিয়েছে। কোয়ারেন্টাইন যেভাবে নিশ্চিত করেছে তাইওয়ান আর তা নেয়ার ফলে যেটা হয়েছে ওখানে বিদেশফেরত প্রত্যেককে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে দিয়ে দিয়েছেন। আসলে সরকারের সাথে সবসময়ই সাধারণ মানুষের সহযোগিতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে। এবং স্বেচ্ছাসেবীদের ভূমিকাটা এইখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা কোয়ারেন্টাইনে কি করেছেন? প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর তিনি বাসায় আছেন কিনা- এটা নিশ্চিত করা হয়েছে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মধ্য দিয়ে। এবং কঠোর জরিমানার ব্যবস্থা। এক দম্পতি মনের আনন্দে কোয়ারেন্টাইন ভেঙে বেরিয়ে গেছে এবং তাদেরকে এইজন্যে গুণতে হয়েছে মাত্র দশ হাজার মার্কিন ডলার। এবং যেটা হচ্ছে তিরিশ লক্ষ তাইওয়ানি ডলার। এবং এরপরে আর কেউ কোয়ারেন্টাইন ছেড়ে বাইরে যান নি আর কি। এবং সেখানে প্রত্যেকটা এপার্টমেন্ট, প্রত্যেকটা শপ- সব খোলা। শুধু হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।

যেটা আমরা আমাদের ল্যাবে ঢোকার জন্যে করে রেখেছি ‘বাংলা সাবান’ দিয়ে। কারণ বাংলা সাবানের মতন এরকম চমৎকার পরিষ্কারক আর কিছু নাই। কারণ বাংলা মানেই হচ্ছে খাঁটি। তো সেখানে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হোটেল-রেস্টুরেন্ট সব ওপেন। এন্ড টোটালি কন্ট্রোলড। যেখানে মনে করা হচ্ছিল যে- চীনের পরে তাইওয়ানে হবে সবচেয়ে বড় ডিজাস্টার। Nothing happened. ৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, একজন মারা গেছেন। অতএব আমাদের চিন্তার কোনো কারণ নাই।

পরিচ্ছন্নতা শুদ্ধাচার আসলে শুধুমাত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত যে শুদ্ধাচার এই শুদ্ধাচার, এই শুদ্ধাচার যদি আমরা অনুসরণ করি এবং আমরা অধিকাংশই এটা অনুসরণ করি। যে কারণে আমাদের এখানে করোনার সুযোগ করতে পারার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। যদি আমরা একটু সচেতন হই এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আর যেটা ডক্টররা বলছেন, মানে সরকার বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছেন যে হাতটাকে ভালোভাবে ধোয়া এবং কারো হাঁচি-কাশি বা এই জাতীয় কোনোকিছু দেখলে তার থেকে দুই ফিট/তিন ফিট দূরত্ব মেইনটেইন করা। তার বডি-টাচের মধ্যে না যাওয়া। এটা একটা সুন্দর পদক্ষেপ।

দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের জুড়ি নেই। আর আমাদের যেটা সবচেয়ে বড় শক্তি হলো, বাঙালির যেটা সবচেয়ে বড় শক্তি- সেটা হচ্ছে আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। যে-কোনো ক্রাইসিসকে কাটিয়ে ওঠার যে ক্ষমতা, আমাদের যে ব্রেন পাওয়ার- কারণ সবসময় দুর্যোগের মধ্যে আমরা বসবাস করে এসছি… আমাদের পূর্ব পুরষরা এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের কোনো জুড়ি নেই। কারণ আমরা বীরের জাতি। আমরা সাহসী জাতি। এবং করোনাকে এই জাতির ভয় পাওয়ার কিছু নাই। তো আমরা শুধু সতর্কতামূলক যে ব্যবস্থা সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।

প্রবাসীদের_প্রতি_মনোভাব
আসলে বিদেশফেরত যারা আছেন বিদেশে তারা অনেক পরিশ্রম করেছেন। অনেক মেহনত করেছেন এবং মেহনত করে দেশের পরিবার-পরিজনের জন্যে তারা অর্থ প্রেরণ করেছেন। পরিবার-পরিজনকে ভালো রেখেছেন। এবং সেই পরিবার পরিজনের উচিত তাকে সেইভাবে সেবাযত্ন করা এই সময়ে।

কোয়ারেন্টাইন_এ_আল্লাহ_তায়ালার #রাসুল_(স)#যে_ধারণার_প্রবর্তন_করেন । তারা যদি জ্বর-কাশি-সর্দি এটাতে আক্রান্ত হন তাহলে যে ১৫ দিন কোয়ারেন্টাইন, এটা থাকবেন। আর যদি না হন… তবে আমার কাছে মনে হয় যে- এই কোয়ারেন্টাইনে থাকার সুযোগ সবারই গ্রহণ করা উচিত। It’s a wonderful thing এবং তাদের জন্যে কোয়ারেন্টাইনটা আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করা উচিত জীবনের জন্যে। কারণ মানুষ আসলে খুব কম সময় পায়, সুযোগ পায় এইরকম নির্জন থাকার। একা থাকার। কোয়ারেন্টাইনে থাকার।

আসলে যদি আমরা খুব সহজভাবে বলি যে- রসুলুল্লাহ (স) হচ্ছেন কোয়ারেন্টাইনের পথ প্রদর্শক। রসুলুল্লাহ (স) এর নির্দেশ ছিল যে- যখন কোনো এলাকায় কোনো মহামারী ছড়ায়, ছোঁয়াচে রোগ ছড়ায় সেখানে কেউ যাবেও না, সেখান থেকে কেউ বেরও হয়ে আসবে না। পাশ্চাত্যের কোয়ারেন্টাইনের ধারণা আসে এরও ৭০০ বছর পর!

সিরিয়ার প্লেগ এবং হযরত আবু উবায়দা
এবং কোয়ারেন্টাইনের শুধু ধারণাই যে তিনি দিয়েছেন তা না; ওনার সাহাবীরা এটা পালনও করেছেন। রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এক পর্যায়ে সিরিয়াতে প্লেগ দেখা দিল। যে শহরে প্লেগ দেখা দিয়েছিল সেখানে আবু উবায়দা তখন কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন। হযরত উমর তাকে ওখান থেকে ডেকে পাঠালেন যে ওখানে থাকলে তো সে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু আবু উবায়দা খুব বিনয়ের সাথে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন- যে না। আমি রসুলুল্লাহ (স) এর হাদিস স্পষ্টভাবেই শুনেছি যে, “যদি আক্রান্ত হয়, আক্রান্ত এলাকায় কেউ প্রবেশ করবে না এবং আক্রান্ত এলাকায় যে থাকবে সে ওখান থেকে বেরিয়েও আসবে না।” এবং তিনি প্রথম কোয়ারেন্টাইন পালনকারী সাহাবী এবং তার সাথে যে সৈন্যদল ছিল কেউই ওখান থেকে বেরিয়ে আসে নাই। কোয়ারেন্টাইন চমৎকার উপলব্ধির পথ হতে পারে এখন বুঝতে পারছেন যে কাজের নির্দেশ রসুলুল্লাহ (স) দিয়েছেন সেটা পালন করা, অনুসরণ করা কতটা পুণ্যের, কতটা সওয়াবের, কতটা উপকারি! অতএব আপনি যখন কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন, আপনি আল্লাহর রসুলের একটা নির্দেশ পালন করার সুযোগ পাচ্ছেন, সৌভাগ্যবান হচ্ছেন- এই আনন্দিতচিত্তে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এবং এই কোয়ারেন্টাইন আপনার জন্যে আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হতে পারে। সেটা হোম-কোয়ারেন্টাইন হোক অথবা ক্যাম্প-কোয়ারেন্টাইন হোক বা হসপিটাল-কোয়ারেন্টাইন হোক।

আপনি এই সময়টা নিজের মতো করে, নিজের আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্যে, নিজের মনের পরিশুদ্ধির জন্যে, মননের পরিশুদ্ধির জন্যে, সৃজনশীলতার পরিশুদ্ধির জন্যে এবং ব্রেনটাকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্যে এই সময়টা ব্যয় করতে পারেন। এবং এই সময়ে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে প্রাণায়ামের চর্চা করা, মেডিটেশনের চর্চা করা এবং আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের সান্নিধ্য চাওয়া।

যারা সনাতন ধর্মাবলম্বী রয়েছেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রয়েছেন, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী রয়েছেন- ঐসময়ও তারা তাদের একাগ্র নিমগ্ন প্রার্থনায় ডুবে গিয়ে একটা নতুন মাত্রা নিয়ে আসতে পারেন। তো কারো যদি কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার সুযোগ হয় এটাকে নিজের সৌভাগ্য মনে করে আনন্দিতচিত্তে কোয়ারেন্টাইন পালন করে নতুন সুস্থ-সবল মানুষ হিসেবে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেন।

বাঙালির সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আর আমাদের বাঙালিদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। আট বছরের বালকের যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, তা ইউরোপ এবং আমেরিকার ২৫ বছরের যুবকেরও সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নাই। কারণ আমরা নরমাল পানিতে গোসল করি। ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করি। আর তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অনেকে এক মাস দুই মাসেও গোসল করে না। যার ফলে তাদের দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কখনও গড়ে ওঠে না। যে কারণে তাদের দেশগুলোতে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ এত বেশি। সেই তুলনায় আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ অনেক কম।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত যিনিই হোন, তার সেবার প্রয়োজনে আমরা আছিআর যে-কোনো পরিস্থিতি আসুক, আমরা সবসময় সেবার জন্যে আছি। এবং করোনা-আক্রান্ত যিনিই হোন, যদি কেউ হন, তার যে-কোনো ধরনের সেবা প্রয়োজন- মানসিক সাপোর্ট, বাস্তব সাপোর্ট এবং আত্মিক সাপোর্ট- সেটার জন্যে আমরা সবসময় আছি। কোয়ান্টাম সবসময় তার পাশে আছে। এবং যে-কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সেইভাবেই সবসময় আগেও যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছি, এখনও আমরা মানুষের পাশে থাকব।

#তথ্যসূএ_কোয়ান্টাম_ফাউন্ডেশন