বর্তমান প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ত্রুমবধমান কিশোর অপরাধের কারণ বিশেষণ করে সম্ভাব্য প্রতিকার খুঁজে বের করা এবং জাতির সামনে এ লক্ষ্যে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা। যাতে করে আমাদের কিশোর-কিশোরীদের জনসম্পদে পরিণত হওয়ার পথে অপার সম্ভাবনার পথটি রুদ্ধ হয়ে না যায়।প্রবন্ধের শুরততে দেশের পত্রিকামতরে প্রকাশিত কিশোর অপরাধের কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এরপর যথাক্রমে কিশোরের বয়স, অপরাধ কি? কিশোর অপরাধ কি?, কিশোর কিশোরীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, পরিবর্তনে সামাজিক প্রতিত্রিুয়া নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হয়েছে। অতঃপর কিশোর অপরাধের বিভাগ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এরপরে কিশোর অপরাধের কারণসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং এটি প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে। পরিশেষে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে একটি ‘সুপারিশমালা’ পেশ করা হয়েছে।
১৯৯৪ সালে ইলিশিয়াম ভবনে স্কুল বন্ধুদের দ্বারা ১০ম শ্রেণীর ছাত্র ঈশা (১৫) হত্যাকান্ড ঘটে। গ্রেফতার হয় ঈশার বন্ধু প্রিন্সসহ ৫ কিশোর। খুন হওয়ার পূর্বপর্যমত কিশোরটি বন্ধু-বান্ধব নিয়ে নীল ছবি দেখছিল। এ ঘটনায় দেশবাসী সতম্ভিত হয়ে পড়েন। অথচ এ ঈশাই মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তার মাকে বারবার আর্তনাদ করে বলছিল ‘মা তুমি চাকুরী ছেড়ে দাও, আমি একা বাসায় থাকতে পারছি না’।
বিভিন্ন জাতীয় ~~দনিকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক ও নিকট অতীতের আরও কিছু অবাক করা ঘটনাঃ
(দৈনিক আমাদের সময়, ৩০.১১.২০০৮)
হত্যাকান্ডের অভিযোগে ধৃত কিশোরদের স্বীকারোত্তিুতে জানা যায়, নিহত বাবু গত ৫ই জুলাই পাট গুদাম হাফিজিয়া মাদ্রাসা হইতে হেফজ সম্পূর্ণ করায় তাহার পিতা তাহাকে একটি সাইকেল কিনিয়া দেয়। বাবু সাইকেল লইয়া রাসতায় বাহির হইলে তাহার সহপাঠী কোতয়ালী থানার চর নিখলিয়ার হামিদুল ইসলাম চালানোর জন্য বাবুর নিকট সাইকেলটি চায়। বাবু সাইকেল না দেওয়ায় উভয়ের
মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাবু হামিদুলকে চপেটাঘাত করে। হামিদুল তাহার বন্ধু কোতওয়ালী থানার মড়াখোলার অাবদুল জলিলের পুত্র আবদুর রহমান ওরফে মুন্নাকে ঘটনা অবহিত করে এবং বাবুকে মারিয়া ফেলার সিদ্ধামত নেওয়া হয়। গত ১২ই জুলাই রাত্রি সাড়ে আটটায় তাহারা এক বাড়ীতে কোরান খতমের দাওয়াতের কথা বলিয়া একই সাইকেলে তিনজন রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে পাওয়ার হাউজের দেওয়ালের পার্শ্বে হামিদুল অতর্কিতে বাবুকে ঝাপটাইয়া ধরিয়া মাটিতে ফেলিয়া দিয়া দুইজন মিলিয়া দা দিয়া তাহাকে জবাই করিয়া ফেলিয়া রাখে। ঘটনার পর হামিদুল ও মুন্না সাইকেলযোগে চলিয়া যায়। (~~দনিক ইত্তফাক, তাং ২৮|০৭|১৯৯৬ খ্রি)।গ. পকেটমার আরিফ হোসেন (১৬)। বয়সে কিশোর হলেও কাজে সে ভয়ঙ্কর। চার বছরে শতাধিক মোবাইল ফোন সেট চুরির অভিজ্ঞতা আছে তার। সুযোগ পেলে অসেএর মুখে পণবন্দী করেও পথচারীদের ফোন ও টাকা লুটে নেয়। এসব অপরাধে এ পর্যমত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে চারবার। তবে কিশোর হওয়ার সুবাদেই বারবার ছাড়া পেয়ে যায়। আরিফ ও তার সহযোগী কিশোর অপরাধী রাজ্জাক মূলত বাস বা জনবহুল সহানে পকেট মারে। প্রতিপক্ষ তাদের থেকে দুর্বল হলে তখন পকেটমার থেকে তারা ছিনতাইকারীতে পরিণত হয়। তাদের টার্গেট মূলত জনসাধারণের পকেটে থাকা মোবাইল সেট ও মানিব্যাগ। পকেটমার হিসেবে দুজনই খুব দক্ষ। পকেট কেটে এ পর্যমত এক থেকে দেড়শটি মোবাইল ছিনতাই করেছে। ছিনতাইকৃত মোবাইল বিত্রিু করে গুলিসতান স্টেডিয়াম মার্কেটের মফিজ ভাই, নজু ভাইসহ অনেকের কাছে। তবে বয়সে ছোট হওয়ার কারণে ন্যায্যমূল্য পায় না তারা। সে জানায়, নোকিয়া এন সিরিজের একটি মোবাইল আনতে পারলে তাদের মাত্র ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা দেয়া হয়। বেশি টাকা চাইলে বড় ভাইয়েরা পুলিশে দেয়ার ভয় দেখায়। এ পর্যমত বিভিন্ন অপরাধে আরিফ চারবার পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। তবে বয়স কম থাকায় প্রতিবারই সে বেরিয়ে এসেছে। সে জানায়, আগে ছাড়া পেলেও এবার মনে হয় পাব না।
অপরাধের সঙ্গে বয়সের সম্পর্কটি খুব গুরতত্বপূর্ণ। কারণ, বয়সের তারতম্য অনুযায়ী সাধারণ অপরাধী ও কিশোর অপরাধীদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়।
তবে সুনির্দিষ্টভাবে কত বছর বয়সসীমা পর্যমত অপরাধ কিশোর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে তা নির্ভর করে সে দেশের অপরাধ আইনের ওপর। কোন কোন সমাজে এটি আঠার বছর এবং কোন কোন সমাজে আরও বেশি। তবে কোন সমাজেই একুশ বছরের বেশি বয়স হলে কিশোরের পর্যায়ে সহান দেয়া হয় না।
‘জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯’ এর প্রসতাবনা ও অনুচ্ছেদ-১ এর মর্ম অনুসারে, ভ্রম্নণ সৃষ্টির সময় থেকে ১৮ বছরের নিচে প্রতিটি মানব সমতানই শিশু। যদি না শিশুর জন্য প্রযোজ্য আইনের আওতায় ১৮ বৎসরের আগে শিশুকে সাবালক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশে শিশু -কিশোর অধিকার এবং এ সংত্রুামত আইনগুলো একটি একক সংবিধিতে অমতর্ভুত্তু নেই। এগুলো বিভিন্ন আইন ও সংবিধিতে লিপিবদ্ধ আছে। যেমনঃ
বাংলাদেশ দন্ডবিধি, ১৮৬০ঃ ধারা – ৮৩ অনুযায়ী, ৯-১২ বছর বয়স্ক কোন ব্যত্তিু অপরাধ করলে তাকে তখনই অপরাধ বলা যাবে, যখন এটা প্রমাণিত হবে যে, সে পরিণত বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মতো আচরণ করেছে অর্থাৎ সে স্বীয় আচরণের প্রকৃতি ও পরিণতি বিচার করতে সমর্থ। এ আইনের ২৬১ ধারা অনুযায়ী, কোন ব্যত্তিু কর্তৃক অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া ১৬ বছরের কম বয়স্ক কোন মেয়ে এবং ১৪ বছরের নিচে কোনো ছেলেকে ছিনিয়ে নিলে তা শিশু অপরাধ বলে গণ্য হবে।
চুত্তিু আইন, ১৮৭২ঃ ১৮ বছরের কম বয়স্ক কোনো ব্যত্তিু চুত্তিু করতে পারবে না এই আইনে, ১৮ বছরের কম বয়স্ক ব্যত্তিুকে শিশু বলা হয়েছে।
সাবালকত্ব আইন, ১৮৭৫ঃ ধারা-৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের কোন অধিবাসীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া অবধি তাকে নাবালক বলে ধরা হয়েছে। তবে আদালত কর্তৃক অভিভাবক নিযুত্তু হয়ে থাকলে বয়স হবে ২১ বছর। দেবত্বের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়।বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯ঃ এ আইন অনুসারে ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচে যে কেউ শিশু হিসেবে গণ্য।
মোটর যান আইন, ১৯৩৯ঃ এ আইনে ১৮ বছর বয়সের নিচে কোনো ব্যত্তিুকে গাড়ি এবং ২০ বছরের নিচে কোন ব্যত্তিুকে ভারী যান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।
মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯৬১ঃ এ আইনের ধারা ১২ (১) (ক) অনুযায়ী, সাবালকত্বের বয়স ১৬ বছর নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৬৯ঃ বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ১৩ বছরের নিচের কোনো মেয়ে এবং ১৬ বছরের নিচে কোনো ছেলের জন্য এ আইন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
দি বাংলাদেশ শিশু একাডেমী অর্ডিন্যানস, ১৯৭৬ঃ এ আইনে সরাসরি বয়সের কোন উল্লেখ না থাকলেও শিশু একাডেমীর যাবতীয় কর্মকান্ড সর্বোচ্চ ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীগণের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে।
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ঃ এ আইনের ধারা ২ (৮) অনুযায়ী কিশোর অর্থ ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করেছেন কিমও ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করেন নি এমন কোন ব্যত্তিু।
সংক্ষেপে অপরাধ বলতে বোঝায়, এমন কোন সমাজবিরোধী বেআইনী কাজ যা ক্ষতিকর হওয়ার কারণে পরিত্যাজ্য। এ ধরনের কাজ যাদের দ্বারা সংঘটিত হয় সমাজ বিজ্ঞানীরা তাদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করে থাকেন।
যে ব্যত্তিুর মধ্যে সুপার ইগোর ভূমিকা প্রবল সে ব্যত্তিু সহজে অপরাধকর্মে লিপ্ত হতে পারে না। পক্ষামতরে, যে ব্যত্তিুর ব্যত্তিুত্বে ইগো ও সুপার ইগো, ইডের ওপর প্রভাব বিসতার করতে অক্ষম সে ব্যত্তিু ইড কর্তৃক তাড়িত হয়ে খুব সহজেই অপরাধকর্মে লিপ্ত হবে।
মানব জীবনে কৈশোর কালটি নানা প্রতিকূল প্রতিবন্ধকতার মাঝ দিয়ে পার হয়। স্কুল পেরতনো বয়সটাই হলো উড়ু উড়ু চঞ্চল। বাধা না মানার বয়স। এ বয়সে বন্ধু খুঁজতে থাকে সে। পেয়েও যায়। বন্ধুকে ঘিরে যা সত্য না তাও ভাবতে থাকে। কখনও সে মধুর স্বপেণ আনন্দে বিভোর থাকে। আবার কখনও বিভিন্ন জটিল সমস্যার কারণে বিষণ্ণতায় ভোগে। এ ত্রুামিতলগ্ণে তার মাঝে এসে ভর করে অসিহরতা, রোমান্টিসিজম, এডভানচারিজম ও হিরোইজম। এ সব চিমতার মাঝে যেমন আছে ভাল লাগা তেমনই অাছে নিরব পতনের পদধ্বনি।
সংক্ষেপে যে সমসত কাজ প্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা সংঘটিত হলে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় সে ধরনের প্রচলিত আইন ভঙ্গকারী কাজ অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত হলে সেটিকে কিশোর অপরাধ বলা হয়। অন্য কথায়, অসদাচরণ অথবা অপরাধের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংসহা বা বিচারালয়ে আনীত কিশোরকে কিশোর অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যদিও অনেকক্ষেত্রে বলা হয় যে, আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যসত কিশোররাই হচ্ছে কিশোর অপরাধী। কিমও আদালতের অপরাধ নিরতপণ পদ্ধতি ও রায় দেশ ও সমাজ ভেদে বিভিন্ন ধরনের হয়। তাই বলা যেতে পারে যে, কোন কিশোর অপরাধী কি- না তা নির্ভর করে তার মাতাপিতা, প্রতিবেশী, সমাজ, আইন প্রয়োগকারী সংসহা এবং সর্বোপরি আদালতের বিচারকের মনোভাবের ওপর।
ক. যার বৃত্তি, আচরণ, পরিবেশ অথবা সংগীতদল তার নিজস্ব কল্যাণের পথে ক্ষতিকর;
খ. যে অবাধ্য, কিংবা যে তার মাতাপিতা বা অভিভাবকের নিয়মএণের বাইরে চলে যায়;
গ. ইচ্ছাকৃতভাবে যে স্কুল পালায় কিংবা সেখানকার নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এবং
ঘ. যে রাষ্ট্রিক আইন বা পৌর বিধি বহির্ভূত কাজ করে।
৬| কৈশোরের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনসমূহ
একটি শিশু জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালে উপনীত হলে ছেলে মেয়েদের মধ্যে সাধারণত দুরকম পরিবর্তন দেখা দেয় -শারীরিক ও মানসিক।
আমাদের দেশে সাধারণত পুরতষের দেহে যৌবন পরিলক্ষিত হয় ১৬-১৮ বছর বয়সের মধ্যে। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে পুরতষের দেহে যৌবন আসে ১৮-২০ বছরের মধ্যে। কৈশোর জীবনে পুরতষের দেহে নিচের লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয়ঃ
এন্ডোত্রিুন গ্রমিহগুলো পুংহরমোন নিঃসরণ করতে শুরত করে;
স্বরভঙ্গ ও কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন ঘটে বা ভারী হয়ে উঠে;
দেহ পেশীবহুল, পুষ্ট ও বলিষ্ঠ হয়;
হিপের চেয়ে কাঁধ বেশী বাড়ে;
গোঁফ, দাড়ির রেখা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠে;
শরীরের বিশেষ সহান সমূহে লোম বেড়ে উঠে; ইত্যাদি।
কৈশোর জীবনে দৈহিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মনের মাঝেও নানা ধরনের পরিবর্তন দোলা দিতে থাকে, যা বহন করে তার স্বাভাবিক দেহ ও যৌবন বোধ।
যেমন-
কিশোরী বা যৌবনবতী নারীর প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়া;
একটু লাজুক লাজুক ভাব;
নারী সঙ্গের চেয়ে পুরুষ সঙ্গ আকাঙ্ক্ষিত কিন্তু লজ্জায় তা প্রকাশ করতে না পারা,
যৌন ও নর-নারী সম্পর্ক বিষয়ক প্রকাশনা পড়তে ও ছায়াছবি দেখতে ভাল লাগা;
নিঃসঙ্গতায় স্বমেহন (Masturbation) করা,
স্বপ্নদোষ (Nocturnal emission) হওয়া;
কল্পনা করতে ভাল লাগা ইত্যাদি।
আমাদের দেশে নারী বয়ঃপ্রাপ্তা হয় ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সে। কোন কোন ক্ষেত্রে এর ব্যতিত্রুমও দেখা যায়। পাশ্চাত্যে এটি ঘটে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে, তবে এতেও ব্যতিত্রুম পরিলক্ষিত হয়।
যৌবনে পুরতষের মত নারীরও শারীরিক পরিবর্তন হয়, তবে পুরতষের চেয়ে নারীর শারীরিক পরিবর্তন একটু ভিন্ন ধরনের।
যেমন-
নারী দেহের এন্ডোত্রিুন গ্রমিহ থেকে সএী হরমোন নিঃসরণ হয়,
গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে নারীসুলভ হয়ে উঠে,
ঋতুস্রাব আরম্ভ হয়,
দেহ মেদ বহুল, চামড়া পেলব ও মসৃণ হয়,
শরীরের বিশেষ স্থানসমূহ উন্নত ও ভারী হয়ে উঠে,
শরীরের বিশেষ স্থানে মসৃণ কেশ দেখা দেয়, ইত্যাদি।
বয়ঃপ্রাপ্তির সাথে সাথে নারী- মনেও নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। অবশ্য এগুলো তার দেহ ও যৌবন বোধের স্বাভাবিক পরিচয় এবং এটি প্রতিটি নারীর জীবনে আসবেই।
এগুলো হলো-
এ সময়ে যুবকদের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় ও নারীসঙ্গের চেয়ে পুরতষসঙ্গ বেশি আকাঙ্ক্ষিত বলে অনুভূত হয়,
পুরতষের সামনে প্রকাশ্যে বের হতে লজ্জাবোধও করে,
নর-নারী সম্পর্কিত প্রেম কাহিনী, উপন্যাস পড়তে অধিক ভাল লাগে,
কল্পনায় সুন্দর ও সুঠাম পুরতষকে ধ্যান করে,
কোন আদর্শ মানুষের সন্ধান পেলে তার সঙ্গ কামনা করে,
নিঃসঙ্গ অবসহায় স্বমেহন করতে পারে,
স্বপেণ কাঙ্ক্ষিত মানুষকে দেখে ও পুলক অনুভব করে ইত্যাদি।
ক. স্বাধীনতা ও সত্রিুয়তার চাহিদা ( Need for freedom and activity)x
এ বয়সে কিশোর-কিশোরীরা সর্ব ব্যাপারে স্বাধীন হতে চায়। তার আত্মসম্মানবোধ মনে প্রচন্ড আত্ম -বিশ্বাস সৃষ্টি করে। দায়িত্ব বহন করার, নিজের মত প্রকাশ করার, দশের মধ্যে একজন হবার প্রবল আকাঙ্ক্ষা তার মধ্যে দেখা দেয়। তখন সে সদা কর্মমুখর থাকে। তার এ স্বাধীনতা ও সত্রিুয়তাবোধ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
বয়ঃসন্ধিকালে সমাজ চেতনার বিকাশ খুব গভীর হয়। আত্মসম্মান ও মর্যাদাবোধ তাকে সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে। গৃহের বন্ধন অপেক্ষা বাইরের আহবান তাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। সে তখন বৃহত্তর সমাজ জীবনে ভাবের দোসর খোঁজে, সঙ্গীসাথীদের সাথে মেলামেশার সুযোগ গ্রহণ করে, অপরিচিতের মধ্যে আত্মীয়তা অনুসন্ধান করে।
এ বয়সে আরেকটি চাহিদা হলো নিজেকে প্রকাশ করা। আবেগপ্রবণ হওয়ায় বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে তারা নিজেদের মূল্যবোধকে সমাজের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। সমাজের অন্যান্য ব্যত্তিু তাদের এ কর্মের মূল্য দেবে এটাই তারা বিশেষভাবে চায়। এ চাহিদার তৃপ্তি ব্যত্তিুসত্তার সুষম বিকাশের পক্ষে অপরিহার্য। এ চাহিদা পূরণ না হলে তারা দুর্বলচেতা, আত্মবিশ্বাসহীন ও নিষিত্রুয় হয়। পড়াশুনা, খেলাধূলা, গান-বাজনা, অভিনয়, অংকন, কবিতা লেখা, পত্র মিতালী, ডায়েরী লেখা এবং অন্যান্য কাজের মাধ্যমে তারা আত্মপ্রকাশ করে।
আত্মপ্রকাশের চাহিদা থেকেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ইচ্ছা জাগে। তারা ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে চিমতা-ভাবনা শুরত করে। পরনির্ভর না হয়ে স্বাধীন জীবন যাপনের প্রবল ইচ্ছা বয়ঃসন্ধিকালে দেখা দেয়। নিজের পায়ে দাঁড়াবার এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপণ দেখে। ভবিষ্যতে কোন ধরনের পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করবে সে চিমতা সে করে। উপযুত্তু পেশা নির্বাচনে মাতাপিতা ও শিক্ষকের সহায়তা এ বয়সে বিশেষভাবে প্রয়োজন।
এ বয়সে মানসিক বিকাশ পূর্ণতা লাভ করে। ফলে কৌতূহলপ্রিয়তা, অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা তাদের মধ্যে দেখা দেয়। নতুন কিছু জানতে চায়, শিখতে চায়, অসীম কৌতূহলে বিশ্বের জ্ঞান-ভান্ডার আহরণ করার তাকিদ অনুভব করে। এ স্বতঃস্ফূর্ত জ্ঞানের আকাঙ্ক্ষাকে যদি মাতা-পিতা, শিক্ষক, অভিভাবকবৃন্দ সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারেন তবে এ ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যৎ জীবনে, কর্মক্ষেত্রে ও সমাজে সাফল্য লাভ করতে পারে।
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে নীতিবোধ জাগ্রত হয়। ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত বোধ সে মন ষনলখ ঊভসভল্ড খলষু ভব্লঝষ ঐযঅিভ্লষষ খবঝলখ ব£ভধলযবলফষ লববপ্লব্ধ ভযছবষ খলষু ঢ়লবলঝষ ষ£ভধ-ব£ভধ, ইপহ-লযবফ ধ্বষ ভযলযখলখ ব্বংব ষ্পুঁ ভব্লঝ ব£ভধ ভযলষবফ£ ষখবব খবঝ খষলস ধ্বষ ল্লব অভষবফ্লযবফ ঢ়্রভস্ন য়ুঁ
প্রাত্যহিক জীবনের কার্যত্রুম এ বয়সের ছেলেমেয়েদের একঘেঁয়ে এবং বিরত্তিুকর মনে হয়। তারা চায় নতুন নতুন চমকপ্রদ ও অভিনব বিষয়ের মাধ্যমে আনন্দ পেতে। তারা চায় দল বেঁধে পিকনিক করতে অথবা সিনেমা দেখতে। শিক্ষককে ফাঁকি দিয়ে পাঠশালা পলায়ন, রাতের অন্ধকারে পাড়া-প্রতিবেশীর বাগানের ফল চুরি করা, সিগারেট বা মাদকদ্রব্য চেখে দেখা, ইত্যাদি কাজে তাদের অসীম আগ্রহ ও নিষ্ঠা দেখা যায়। মাদকাসত্তুদের কেইস হিষ্ট্রি থেকে জানা যায় প্রথম মাদকদ্রব্য সেবনের অভিজ্ঞতা তাদের হয়েছে সহযোগী বন্ধুদের পরামর্শে এ্যাডভেঞ্চার করতে যেয়েই এবং পরবর্তীতে ড্রাগস এর মরণ ফাঁদে তারা জড়িয়ে পড়েছে।
বেশীর ভাগ কিশোর-কিশোরীর মনে নিজেদের কর্মক্ষমতা, পরিবারে, দলে অথবা স্কুলে তার অবসহান এবং নৈতিক মূল্যবোধ এর সমন্বয়ে নানারকম মানসিক দ্বন্দেবর সৃষ্টি হয়। এ দ্বন্দেবর টানাপোড়নে তারা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে অসহায় বোধ করে। এ বয়সের চাহিদাগুলোর পাশাপাশি শাসিত পাওয়ার ভয়ও তাদের মনে কাজ করে। ফলে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
ট. ইধণ্ট-ভভষভছভধষ ছবভয়পব (Need for self identity)ী
এ বয়সের ছেলেমেয়েদের নিজ সম্পর্কে ধারণা পাকাপোত্তু হয়। তারা Gender appropriate behaviour- এর মাধ্যমে নিজের পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এরিকসন এ সতরে Identity vs.role diffusion এ দ্বন্দেবর কথা বলেছেন। এ বয়সের ছেলেমেয়েরা সমাজে তাদের সহান ও ভূমিকা নিয়ে চিমতা করে এবং যাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, উদ্যম ও স্বাধীনভাব অর্জিত হয়, তারা নিজেদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধনাত্মক পরিচিতি লাভ করে। অবণ্ঠভপ্লখ, ভবঝ ঢ়ড্ডভ্লখ- অদ্বভস্ন ফবষত্ব ন্বখলস অলবখ ঢ়লঁ আত্মসংযম হারিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে। কিশোর-কিশোরীরা এ বয়সে মাতা-পিতার ও সমাজের মূল্যবোধকে তীক্ষ্ণভাবে যাচাই করে আত্ম- পরিচিতি গড়ে তোলে।
বয়ঃসন্ধিক্ষণে মানব জীবনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন তীব্র প্রতিত্রিুয়ার জন্ম দেয়।
কৈশোরে পা দেয়ার পর থেকে কিশোর- কিশোরীরা ভাবতে শুরত করে যে, তারা আর ছোটটি নেই, আবার ঠিক বড়ও হতে পারে নি। কারণ, পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ তাদের ছোট হিসেবে দেখে। এ বয়সে মা-বাবার কাছ থেকে সমতান যেন সরে যেতে থাকে। ছেলের সাথে মায়ের, বাবার সাথে মেয়ের মানসিক দূরত্ব বাড়তে থাকে। ছেলে-মেয়ের আলাদা শোবার ঘর করে দেন বাবা-মা। হঠাৎ করেই ছেলে অথবা মেয়ে একা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে একজন কিশোর মনে করে, সে ছোট ও বড়র মাঝামাঝি এক অচেনা জগতের বাসিন্দা। তার তখন কোন কিছুই ভাল লাগে না, কোন কিছুতেই যেন মন ভরে না।
…….. বিশেষত, তের চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মত পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। শোভাও নাই, কোন কাজেও লাগে না। সেণহও উদ্রেক করে না, তাহার সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নহে। তাহার মুখে আধো আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগলভতা। হঠাৎ কাপড় চোপড়ের পরিমাণ রক্ষা না করিয়া বেমানান রদপে বাড়িয়া উঠে; লোকে সেটা তাহার একটা কুশ্রী স্পর্ধাস্বরদপ জ্ঞান করে।
তাহার শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা সহসা চলিয়া যায়, লোকে সেজন্য তাহাকে মনে মনে অপরাধ না দিয়া থাকিতে পারে না।
শৈশব এবং যৌবনের অনেক দোষ মাপ করা যায়, কিমও এই সময়ের কোন স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রতটিও যেন অসহ্য বোধ হয়।
সেও সর্বদা মনে মনে বুঝিতে পারে, পৃথিবীর কোথাও সে ঠিক খাপ খাইতেছে না; এইজন্য আপনার অসিতত্ব সম্বন্ধে সর্বদা লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী হইয়া থাকে। অথচ এই বয়সেই সেণহের জন্য কিঞ্চিৎ অতিরিত্তু কাতরতা মনে জন্মায়। এই সময়ে যদি সে কোন সহদদয় ব্যত্তিুর নিকট হইতে সেণহ কিংবা সখ্য লাভ করিতে পারে, তবে তাহার নিকট আত্মবিত্রুীত হইয়া থাকে।
কিমও তাহাকে সেণহ করিতে কেহ সাহস করে না, কারণ সেটা সাধারণে প্রশ্রয় বলিয়া মনে করে। সুতরাং তাহার চেহারা এবং ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মত হইয়া যায়। (‘গল্পগুচ্ছ’)।
কিশোর অপরাধীদেরকে কয়েকটি প্রধান ভাগে বিভত্তু করা যায়। এখানে কয়েকটি মূল বিভাগের উল্লেখ করা হলোঃ
ক. দুর্বোধ্য মনষষ্ক
ইংরেজীতে এদের ‘Problem boy’ বলা যায়। অনেক কিশোর তারা কী চায় তা তারা নিজেরাই জানে না। লক্ষ্যবসতু সম্বন্ধে তাদের নিজস্ব কোনও ধারণা নেই। তাই কোনও কাজই তাদের মনঃপূত হয় না। তারা বারে বারে একটি কাজ বা পাঠ ছেড়ে অন্য কাজ বা পাঠ গ্রহণ করে। পরক্ষণেই তারা বুঝে যে, এটিও তাদের মনপূত নয়।
গ. আত্রুমণাত্মক (Aggresive)
এ কিশোর সদাব্যসত ও একরোখা হয়, তারা লক্ষ্য ও পথ পরিবর্তন করতে চায় না। সব কিছুই ওদের তাৎক্ষণিক চাই। ঈপ্সিত লক্ষ্য সম্বন্ধে তাদের স্পষ্ট ধারণা থাকে। কিমও ওদের সকলে বিনা বাধায় ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারে না। কাউকে কাউকে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। ওই বাধাবিঘণ অতিত্রুম করতে অসমর্থ হলে তাদের ভাবাবেগ রতদ্ধ হয়। অবরতদ্ধ ভাবাবেগ নৈরাশ্যের সৃষ্টি করে। এ নৈরাশ্য হতে দু শ্রেণীর আত্রুমণাত্মক কিশোরের উদ্ভব হয় – পরঘাতী ও আত্মঘাতী।
গ. বিকল্প -পমহী
এরদপ কিশোরদের লক্ষ্যসহল খুব উঁচু বা খুব নিচু নয়। বাধা পেলে তারা বিকল্প লক্ষ্য কিংবা পথ খুঁজে নেয়। সাধ্যাতীত লক্ষ্যবসতুকে এরা এড়িয়ে চলে। এদের আকাঙ্ক্ষা সীমিত। নিজেদের সীমিত ক্ষেত্রে এরা প্রায়ই সফল হয়। এ সফলতা তাদের ভয়শূন্য করে। ব্যর্থতাও এদের নিকট গুরতত্বপূর্ণ না। এটা তারা সহজভাবে গ্রহণ করে। এদের নিকট ভাবাবেগ অপেক্ষা যুত্তিু বুদ্ধিই প্রধান। অভিজ্ঞতা দ্বারা সমস্যার গুরতত্ব কমিয়ে আনে। বয়স্ক লোকদের মত এদের ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস আছে।
অস্বভাবী কিশোরগণ নানারদপ অমতর্দ্বন্দেব ভোগে। প্রশমিত মনোজট্ (Comple) – এর কারণ হতে পারে। কেউ বিচ্ছিন্ন-মনা (Split-up mind) রোগে ভোগে। কারো মধ্যে দ্বৈত বা বহু ব্যত্তিুত্ব দেখা যায়।
‘সিনেমায় কিংবা থিয়েটারে যাব’ কিংবা ‘ভাত বা রতটি কোন্টি গ্রহণীয়’ – এরদপ সামান্য অমতর্দ্বন্দব ক্ষতিকর না। এ দুটি তাদের নিকট সমান প্রিয় হতে পারে। কিমও গুরততর অমতর্দ্বন্দব বেদনাদায়ক। তাদের মধ্যে বহু হেতুহীন ভয় ও ত্রেুাধ দেখা যায়। মাঝে মাঝে এরা বিমর্ষ হয়ে উঠে। কিমও এর কারণ বুঝতে পারে না। কোনোও কিছুতে মনোনিবেশে অক্ষম হয়। এরা ধৈর্যহীন ও বিস্ফোরণশীল হয়ে থাকে।
অপরাধমুখী কিশোরদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা কিছু বেশি থাকে। সুযোগ ও সুবিধা পেলে অপকর্ম করার জন্য তারা সদা উন্মুখ। এদের মধ্যে লোভী কিশোরদের মতো প্রতিহিংসাপরায়ণ কিশোরও থাকে। এদের অপরাধ প্রতিরোধ সম্পর্কীয় সণায়ু অত্যমত দুর্বল। সামান্য প্রলোভন বা ত্রেুাধ এদের প্রদমিত অপ-স্পৃহাকে বহির্গত করে। ওদের কেউ কেউ যৌনজ ও অযৌনজ এবং কেউ সম্পত্তির বিরতদ্ধে অপরাধ করে। এরা স্বার্থপর হয় ও লাভালাভ বোঝে । এরা ভবিষ্যৎ জ্ঞানহীন ও আশু ফল প্রয়াসী।
দুর্বলচিত্ত কিশোরদের বুদ্ধিমত্তা বয়সের তুলনায় কম থাকে। এটিকে চিত্তদৌর্বল্য বলা হয়। এরা সরলমনা ও বিশ্বাসী হয। কিছু বিষয়ে অভিযোগমুখর হলেও এরা প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়ে কৃতজ্ঞতা ও কর্তব্য বোধ দেখায়। এরা সহজেই অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এদের ভুল বোঝানো ও ভুল বিশ্বাস করানো সহজ। ভিটামিন, প্রোটিন খাদ্য ও হরমোনের ঘাটতি পূরণ এদের নিরাময় করে। বয়সের সাথে ওদের অনেকেরই বুদ্ধি দ্রত বেড়ে পূর্বক্ষতি পূরণ করে।
মধ্যবর্তী কালে ওদের প্রতি কিছু বেশি লক্ষ্য রাখা সহ উৎপীড়কদের হাত থেকে ওদের রক্ষা করার প্রয়োজন হয়। অবশ্য বহু সরলমন কিশোরের সাধারণ বুদ্ধি প্রখর হয়। তবে উন্মাদ ও নির্বোধদের জন্য স্বতমএ মানসিক ও দৈহিক চিকিৎসার প্রয়োজন।
এ শ্রেণীর বালক অতি মাত্রায় নেতৃত্ব অভিলাষী হয়ে থাকে। এদের কেউ কেউ এজন্য নিজেদের মধ্যে মারপিট পর্যমত করেছে। কিমও এদের সকলের মধ্যে নেতৃত্বের উপযুত্তু গুণ থাকে না। এদের মধ্যে কিছু শামিত প্রিয় কিংবা দুর্বল দেহী কিশোর থাকে। এরা নেতা হওয়ার সহজ পমহাসমূহ বেছে নেয়।
কিশোর অপরাধীদের মাঝে নিমেণাত্তু বৈশিষ্ট্য সমূহ লক্ষ্য করা যায়।
ক| স্বাসহ্যগত বৈশিষ্ট্যঃ নিরেট দেহী, সুসংবদ্ধ, পেশী বহুল।
খ| মানসিক বৈশিষ্ট্যঃ অসিহর, ধৈর্যহীন, ভাবুকতা।
গ| কর্মশত্তিুগত বৈশিষ্ট্যঃ মাত্রাহীনতা, আত্রুমণাত্মক, নাশকতাপ্রিয়।
ঘ| আচরণগত বৈশিষ্ট্যঃ শত্রততা, বেপরোয়া, বিঘণসৃষ্টিকারী, সন্দিগ্ধ, জেদী,অধিকার বিলাসী, দুঃসাহসিক, সংস্কার বিহীন মন ও আনুগত্যহীন।
ঙ| মনসতাত্তিবক বৈশিষ্ট্যঃ জবরদসিত স্বভাব, নেতৃত্ববিলাসী, সফলতার জন্য অন্যায় পমহা গ্রহণ, নিষ্ঠুরতা, নির্দয়ভাব, স্বার্থপরতা।
১১| কিশোর অপরাধের কারণ
১১.১. মনসতাত্তিবক কারণ
ক. বয়ঃসন্ধিপ্রাপ্ত ছেলে মেয়েদের মধ্যে সহনশীলতার অভাব খুব প্রকট হয়ে উঠে। এ সংকটের অন্যতম কারণ অপরিণত আবেগের বৃদ্ধি।
মনসতত্তেবর পরিভাষায়, অপরিণত মনসতাত্তিবক উন্নতি মানে সুসহ আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত বৃদ্ধি ঘটতে না দেওয়া। সহনশীলতা ব্যাপারটা সৃষ্টি হয় আবেগ থেকে। সেই স্বতস্ফূর্ত আবেগে যদি বাধা আসে, তাহলে সহনশীলতার অভাব ঘটতে বাধ্য। এই মনসতাত্তিবক বিপর্যয়ই কৈশোরের অনেক বিতন্ডার মূল।
এমনিতেই বয়ঃসন্ধির সময় হরমোন এবং শারীরিক পরিবর্তনের জন্য ছেলেমেয়েদের মধ্যে সংকট দেখা যায়, এ সঙ্কট এতটাই মারাত্মক হয়ে ওঠে যে, তখন কোনও ব্যর্থতা দেখা দিলে তারা তা সহ্য করতে পারে না। সহ্য না করতে পেরে তারা ভেতরে ভেতরে নানাভাবে অপরাধী হয়ে উঠে। আবার কেউ কেউ এক ধরনের পলায়নপর মনোবৃত্তির আশ্রয় নেয়। শেষ পর্যমত আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া ছাড়া তাদের আর কোন রাসতা থাকে না। এটি যেমন পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে ঘটে থাকে, তেমনটা ঘটে থাকে প্রেম বা অন্য কিছুর ক্ষেত্রেও।
গ. কোনও কোনও ছেলেমেয়ে এ বয়সে Pathological lier হয়ে যায়। তারা মিথ্যের মধ্যেই থাকতে শুরত করে। মিথ্যে আর সত্যের মাঝে ভেদরেখাটা তাদের সামনে ত্রুমশ মুছে যায়। অবাসতব বা রোমান্টিক স্বপণ দেখতে শুরত করে তারা। মাতা-পিতার সঙ্গে যত বেশি মানসিক বিভেদ, বাড়িতে যত অশামিত বাড়তে থাকে, ততই এ মিথ্যাচারও বাড়তে থাকে। পলাতকী মনোভাব (Escapism) থেকে এ মিথ্যা বিশ্বাস, মিথ্যা কথার ব্যাপারটা আসে। এ বয়সে ছেলেমেয়েরা একটু বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। মাতা-পিতার মধ্যে কোনও রকম টেনশন থাকলে, নিঃসঙ্গ বা Neglected বোধ করলে ছেলেমেয়েরা বয়ঃসন্ধিতে খুব বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। অসম্ভব জেদি, রাগী, একগুয়য়ে, সন্দেহপ্রবণ হয়ে এমন একটা পর্যায়ে তারা ত্রুমশ চলে যায় যে, শেষ পর্যমত জীবনবিমুখ হয়ে পড়ে। সব রকম আনন্দ, স্পৃহা, উৎসাহ থেকে দূরে চলে যায় এবং একেবারে খেতে চায় না। খিদেই পায় না এবং এদের শেষপর্যমত বাঁচানো যায় না। বয়ঃসন্ধির এ মানসিক রোগকে বলে, ‘Anorexia nervosa’। যারা এতদূর যায় না তাদের অনেকেই বিষণ্ণতায় (Depression) ভোগে।
চ। অতি অল্পবয়স থেকেই কিশোরকে একটা যামিএক রতটিনের মধ্যে বেঁধে ফেলার চেষ্টা চলে। সে যেন-কোন এক উপকরণ বা কাঁচামাল। ওই যামিএক রতটিনের মধ্যে তাকে ত্রুমশ বড় করে তোলা হয়। সে যখন বন্ধুদের সাথে খেলছে, তখন হয়তো তাকে টেনে হিঁচড়ে অঙ্ক কষানোর জন্য টিচারের কাছে বসিয়ে দেওয়া হল। পড়ানো শেষ না হতেই সাঁতারের সময় হয়ে যায়। তখনই আবার দৌড়। এরপর নাচগানের ক্লাস আছে। ড্রইং শেখা রয়েছে। কিমও বাসতব সত্য হচ্ছে, এ সব যামিএকতা ওদের ভাল লাগে না। এ ধরনের যামিএকতায় তারা মরিয়া হয়ে পড়ে। ফলে পড়াশুনাটা স্বাভাবিক ভাবে হয় না, পুরোটাই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়। ‘নাও এবার এটা মুখস্থ কর’ — এ মনোভাবে মসিতষ্কের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এমন কি বাড়ির গন্ডি ছাড়িয়ে গেলেও দৃশ্য একই পদ্ধতি। সেখানেও রয়েছে সেই যামিএকতা।স্কুলে গিয়েও একই পদ্ধতির শিকার হয়।
জ. বাবা মায়েদের কৃত্রিম ব্যবহারও কিশোরারা বেশ বুঝতে পারে। সারাদিনের ধকল সামলে বাবা মায়েরা নিতামত অনীহা সত্তেবও যখন ছেলেমেয়েদের সঙ্গ দেন হাসিমুখে রাজ্যের ক্লামিত নিয়ে, তখন সে বুঝতে পারে বাবা কিংবা মায়েরা ক্লামিত, বিরত্তিু সত্তেবও মুখে উৎসাহের ভান করছেন। তাদের সংবেদনশীল মন এ ব্যাপারটা বুঝতে পারে এবং ত্রুমশ বাবা মায়েদের মেকি ব্যবহারে দু পক্ষের মাঝে দূরত্ব ~~তরী হয়ে যায় নিজেরই অজ্ঞাতসারে। ফলে পরীক্ষায় খারাপ ফল বা প্রেমে ব্যর্থ হলে বাবা-মায়ের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারে না। অন্যদিকে ব্যর্থতা মেনে নিতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়।
কিশোরদের অপরাধী হওয়ার নেপথ্যে কিছু স্বভাবগত কারণও রয়েছে। বিশেষত নিমেণাত্তু কয়েকটি স্বভাব ওদের অপরাধী হওয়ার সূচনা ঘটায়। যেমন-
সৃষ্টি জগতের প্রতি নির্দয় ব্যবহার, অতিরিত্তু অবাধ্যতা, স্কুল- পলায়ন, দেরীতে ঘরে ফেরা, বেঢপ ও মলিন পোশাক পরিধান, শারীরিক অপরিচ্ছন্নতা, অকর্তিত কেশ, দুঃসাহসিকতা, এ্যাডভেঞ্চার প্রিয়তা, অতি মাত্রায় ছায়াছবি প্রিয়তা ইত্যাদি।
নিমেণাত্তু প্রকার মাতাপিতার সমতানগণ কিশোর অপরাধী হয়ে থাকেঃ
ক| সংসারত্যাগী বা পলাতক মাতাপিতাঃ এরা সমতানদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবসহা না করে পলাতক হয়েছেন। সমতান এদের অপত্য সেণহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
খ| অপরাধী মাতাপিতাঃ এরা সমতানকে পাপের মধ্যে রেখে বড় করেন। কখনওবা সমতানের সহায়তায় পাপ করেন।
গ| অপকর্মে সহায়ক মাতাপিতাঃ এরা সমতানের অপরাধস্পৃহায় উৎসাহ দেন।
ঘ| অসচ্চরিত্র মাতাপিতাঃ তারা নির্বিচারে সমতানের সামনেই নানা অসামাজিক কাজ করেন ও কথা বলেন।
ঙ| অযোগ্য মাতাপিতাঃ এরা সমতানকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় ও ~~নতিক শিক্ষা দানে অমনোযোগী বা অপারগ।
আধুনিককালে শহরগুলোতে দেখা যায় যে, মা-বাবা উভয়ে ঘরের বাইরে কাজ করছেন। ফলে সমতান-সমওতি তাদের উপযুত্তু সেণহ-শাসন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা আচরণে বিদ্রোহধর্মী হয়ে যাচ্ছে। এমনটিও দেখা যায় যে,মৃত্যু বা বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে কোন কোন কিশোর মা অথবা বাবাকে হারাচ্ছে। এ কারণেও কিশোরদের স্বাভাবিক ব্যত্তিুত্ব বিকাশে সমস্যা দেখা দেয় এবং তারা অসংলগ্ণ আচরণ তথা সমাজবিরোধী কাজকর্মে লিপ্ত হয়। অধিকমও পারিবারিক পরিমন্ডলে কোন শিশু-কিশোর যদি সর্বদা ঝগড়া বিবাদ, ব্যত্তিুত্বের সংঘাত এবং অপরাধমূলক ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে তাহলে তাদের পক্ষে সহসা কিশোর অপরাধী হয়ে উঠা অসম্ভব নয়।
দারিদ্র যে অপরাধের জন্য দায়ী তা বলাই বাহুল্য। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারে কিশোর – কিশোরী তার নিত্য দিনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়। ফলে তার মধ্যে কিশোর অপরাধমূলক আচরণ সৃষ্টি হতে পারে । এ কারণে এরা ছোট-খাটো চুরি বা ছিনতাই-এ অংশ গ্রহণ করে। দারিদ্রের কারণে আত্মহত্যা বা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করতেও বাধ্য হয় অনেক কিশোর-কিশোরী।
দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয় দুই ভাগ্যবিড়ম্বিতা কিশোরীর ঘটনাঃ
আট-নয়দিন আগেও কৃষক জনপদের উদ্দাম কিশোরী ছিল শবমেহের (১১)। দারিদ্র্য ও বয়সের দিকটি ছাড়া শঙ্কা তাহার ছিল না। কোন এক জরিনা তাহাকে ফুসলাইয়া নারায়ণগঞ্জে আনিয়া টানবাজার পতিতালয়ে দুই হাজার টাকায় বিত্রুয় করে। পতিত নগরে বিধ্বংস হয় পল্লীর দারিদ্র্য-প্রপীড়িত স্বপণ- শবমেহের। তিনটি দিন পর মৃত্যুন্মুখ অসাড় দেহে শবমেহেরকে ট্রেনের কামরায় ফেলিয়া পতিতালয়ের লোকেরা চলিয়া যায়। কমলাপুরে সংজ্ঞাহীন শবমেহের ট্রেনে করিয়া আসিয়া পৌঁছিলে লোকজন তাহাকে হাসপাতালে লইয়া আসে। সংজ্ঞা ফিরিয়া পাইবার পর হইতে শবমেহের কাঁদিতেছে। নীরব কান্নার মাঝে মাঝে প্রলাপ কহিয়া উঠে। সে প্রলাপে ধিক্কার কাহার প্রতি, স্পষ্ট বোঝা যাইতেছে না।
(দৈনিক ইত্তেফাক, ০৪.০৪.১৯৮৫।)
শিশুশ্রম নিষিদ্ধ সারাবিশ্বেই। বাংলাদেশও এর ব্যতিত্রুম নয়। তা সত্তেবও ঢাকা মহানগরীর সর্বত্রই শিশুশ্রম আছে। বিদেশীদের হসতক্ষেপে গার্মেন্টস কারখানায় শিশুরা এখন আর কাজ করে না, কিমও বাসে অথবা গ্রামীণ নামক ২২-২৪ সিটের ছোট বাসে এরা কাজ করছে। রামপুরা যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন রতটে এ বাস চলছে। এ ছোট বাসে যে শিশুরা কাজ করে এদের অধিকাংশের বয়স ১০ থেকে ১২ বছর। যে বয়সে মা-বাবার আদরে-আহলাদে এদের স্কুলে যাওয়ার কথা, বিকেলে সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা করার কথা, সে বয়সে এরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা কাজ করছে। মাঝে মাঝে ছোট এ বাসের ভেতরে অথবা হ্যান্ডল ধরে ঘুমিয়ে পড়ে ক্লামত-শ্রামত হয়ে। অন্য দিকে যাত্রীদের দুর্ব্যবহার তো এদের নিত্যদিনের সঙ্গী। একটু আদর, একটু ভালবাসার কাঙাল এ শিশুদের সুযোগ দেয়া হলে এরাই একদিন দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে। দরিদ্র মাতা-পিতার ঘরে জন্ম নেয়াই এদের অপরাধ। জন্ম অপরাধে এদের সাথীরা যাচ্ছে স্কুলে আর এদের বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে ঝুলে রবত ১০-১১টা পর্যমত কাটিয়ে সামান্য পারিশ্রমিক নিয়ে ঘরেফেরা। এ ধরনের হাড়ভাঙা শ্রমের কাজ থেকে এদের সরিয়ে নিয়ে হালকা কাজ দিয়ে লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার কী কেউ নেই?
শিশু-কিশোরদের জন্য চাই উপযুত্তু চিত্তবিনোদনমূলক ব্যবসহা। এজন্য খেলাধুলা, শরীর চর্চা, সঙ্গীত এবং নানাবিধ সুসহ বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠানের ব্যবসহা থাকা প্রয়োজন। এ সবের অভাব শিশু-কিশোরকে যত্রতত্র রাসতা-ঘাটে ঘুরতে ফিরতে এবং ছুটাছুটি করতে দেখা যায়।এ ধরনের বিশৃংখল ঘোরাফেরা কিশোরদের মনে সাময়িক আনন্দ দিলেও বসতুতঃ পক্ষে তা একটি আদর্শ ও সুশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়। আর এ কারণেও কিশোররা অসৎ সঙ্গে মেশে এবং একটি অনিয়মতামিএক পমহার মধ্যে সময় কাটানোর কারণে তাদের চরিত্রে অনিয়ম এবং অসংলগ্ণতার সৃষ্টি হয় এবং পরিণামে তারা হয়ে উঠে অপরাধ প্রবণ।
শিল্পায়নের ফলে নগরায়ন ত্বরান্বিত হয় এবং শিল্প নির্ভর নগর জীবনে কতিপয় সমস্যার উদ্ভব ঘটে। এগুলোর মধ্যে আবাসিক সমস্যা অন্যতম। এর অনিবার্য ফলস্বরদপ বসিতর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং গোটা শহর জনাকীর্ণ হয়ে পড়ে। চরম আবাসিক সংকটের কারণে জনাকীর্ণ এলাকার কিশোরদের চলাফেরা,গল্পগুজব এবং নানা ধরনের মেলামেশা বৃদ্ধি পায়। একদিকে দারিদ্র অন্যদিকে অবাধ ও সারাক্ষণ দলবদ্ধ জীবনযাপন করতে গিয়ে অনেক সময় কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা জাগে। তাদের এই অপরাধ প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে দুঃসাহসিক অভিযান ও কাজকর্মকে কেন্দ্র করে। এ অবসহায় তারা কখনও একাকী আবার কখনও বা ছোট ছোট দল বেয়ধে নানা ধরনের অপরাধ কর্মে লিপ্ত হয়।
কিশোর অপরাধের জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কারণ ছাড়া স্বাসহ্যগত কারণও দায়ী হতে পারে। মানসিক ও সণায়ুরোগ বিশেষজ্ঞগণের মতে, নিমণবর্ণিত বিষয়গুলোর কারণে একটি কিশোরের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কাজ করতে পারে।
১১.৭.১. ‘বার্থট্রমা’ – জন্মের সময় কোন আঘাত পেলে। এটি হতে পারে নীচের কারণগুলোর জন্য-
ক. ফোরসেপ ডেলিভারী,
খ. অবসট্রাকটেড ডেলিভারী,
গ. কর্ড ইনজুরি,
ঘ. অত্যধিক রত্তুপাত,
ঙ. মেকোনিয়াম এ্যাসপিরেশন ও ফিট্যাল ডিসট্রেস।
এছাড়া মায়ের অসুসহতার কারণেও এটি হতে পারে। মা অসুসহ হতে পারেন নিচের কারণে-
ক. নেশাগ্রসহ হলে অথবা মদ, গাঁজা, অত্যধিক ঘুমের ওষুধ সেবন করলে,
খ. উন্মাদগ্রসত্ম বা মানসিক বিকারগ্রসত্ম হলে,
ঘ. ভঢলরবঢ়-£ য়লস,
ঙ. অভষবফভ-যত য়লসু
১১.৭.২. এছাড়া জেনিটিক ইনহেরিটেল- এর কারণে শিশু-কিশোররা অপরাধপ্রবণ হতে পারে –
ক. ক্লোমাজমাল ডিজিস।
খ. এক্স, ওয়াই, ওয়াই, ত্রেুামোজমের শিশু-কিশোররাঃ কয়েদীদের ওপর জরীপে দেখা গেছে যে, এ উপাদানটির কারণে তারা নরহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনে জড়িত হয়েছে,
গ. বর্ডার লাইন পারসোন্যালিটি থাকলে সামান্য কারণে উত্তেজিত ও বদ মেজাজী হতে পারে,
ঘ. শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী (বাতিকগ্রসত মন, দুর্বল দেহ, ভগ্ণ স্বাসহ্য, বিকলাঙ্গতা ইত্যদি) হলে,
ঙ. অস্বাসহ্যকর বা বসিতর ছিন্নমূল হলে।
মা বললেন ‘হ্যাঁ’ কিমও বাবা বললেন ‘না’- একজন কিশোরের এমন বিব্রতকর অবসহায় পড়াকে মনোচিকিৎসকরা বলেন, ‘ডুয়েল ম্যাসেজ এফেক্ট’। ঐলব অযদ্মন্ডব ঐখঝব ভখলহ্বষ-ভখলহ্বষ£ষ ঝবণ্ঠ পবষবত ৎভধখষু ঐলব অযদ্মন্ডবষ ভহখবষ য়লস ষঢ়ঈ যঁঢ়£ ভখলহ্বলষষব ঐখ দ্বন্দেবর আবদ্ধে আটকে পড়ে। তারা বুঝতে পারে না আসলে কোন্টা সত্য বা মিথ্যা। কারণ একই অবসহায় দুটোই সত্য বা মিথ্যে হতে পারে না। তাই সে মানসিক বিপর্যয়ে পড়ে এবং এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে নানা কার্যত্রুম গ্রহণ করে থাকে।
অভিদের স্কুলে বার্ষিক বনভোজন আর বেশিদিন নেই। সবাই খুব হৈ-হুল্লোড় করছে। বন্ধু-বান্ধবরা সবাই মিলে পরিকল্পনা করছে বনভোজনে কী কী করবে। সবকিছু ঠিকঠাক। অভির মনেও দারতণ আনন্দ। এখন শুধু বাবা-মাকে জানানোই বাকি। কিমও সে কাজটা করতে গিয়েই যতকিছু ঘটল। বাবা বলল, বনভোজনে একা যাওয়ার মতো বড় তুমি এখনো হওনি। অনেক আকুতি মিনতি করেও কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে অভি না যাওয়াতেই রাজি হলো।
সাধারণত কিশোর অপেক্ষা কিশোরীরাই এ অবসহার শিকার হয় বেশি। মেয়েদের দ্রতত শারীরিক বৃদ্ধি সেই মেয়েকে শিখিয়ে দেয় যে, সে বড় হয়েছে। কিমও শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে মানসিক বৃদ্ধিও প্রয়োজন। আর এর অভাব থাকলে সেই মেয়ে চিমতা করে যে, সে তেমন একটি বড় হয়নি। তাই তারা মা-বাবার অনুশাসনমূলক বাধা -বিপত্তির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়ে। এতে সে দারতণ বিষণ্ণতায় ভোগে। নিজেকে জগৎ থেকে আলাদা মনে করতে থাকে। এক পর্যায়ে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধামত পর্যমত নিয়ে বসে এবং তাতে সফল হয় অনেকে।
মা-বাবার দুজনের দু’ রকম বাক্য ব্যয়ে সমতান আত্রুামত হয়ে থাকে। যদি ‘না’ বলতে হয় তবে ভালোভাবে যুত্তিুসহকারে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আর যদি হ্যাঁ করেন তাহলেও তা-ই।
সামাজিক অসাম্য, দুঃখ-দুর্দশা, তদারকীর ঘাটতি, অবিচার, আশৈশব দুর্ব্যবহার প্রাপ্তি, কু-সংস্কার ও কুসঙ্গ, প্রাকযৌন অসিহরতা, প্রাক্-যৌন অভিজ্ঞতা, অসময়ে পিউবারটি (Puberty), অপছন্দকর কর্মসহান, অতি আদর বা অনাদর, আর্থিক অসচ্ছলতা বা আর্থিক প্রাচুর্য, অনিদ্রা, পরাশ্রয়, বিমাতা বা দূর আত্মীয়ের গলগ্রহ হওয়া, মাতা বা পিতার মালিকের গৃহে বসবাস, মালিক – তনয় দ্বারা নিগ্রহ ও অবজ্ঞা, অপুষ্টি, ভেজাল আহার, ভযপণ্ঠবস্লঁ ঢ়য়ভ্বড£লপষ ঊলভৎব ঔ ঊভয়বঢ়, প্পজ্জপঞ্জষধ লব ঔ ভযভযফ ভ-পভলধ ল্লব্বঝঠ (complex) ভখলহ্বলষষ ঝবণ্ঠ লবষবধণ্টখ ৎভধখষু
এগুলো কিশোরদের উম্মাদ, নির্বোধ ও অপরাধী করে তোলে যা জীবন প্রভাতে তাদের চরিত্রবান নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার পথে প্রবল প্রতিবন্ধক।
আগেই বলা হয়েছে যে, মানব জীবনের একটি গুরতত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অধ্যায় হলো কৈশোরকাল। এটি এমন এক সময় যখন একজন ব্যত্তিু বয়স ও বুদ্ধি- এ উভয় দিক থেকে ত্রুমশ এগিয়ে যেতে থাকে বটে, তবে যথার্থ অর্থে বয়সী তথা প্রাপ্তবয়স্ক ও বুদ্ধিমান হয়ে উঠে না। প্রাকৃতিকভাবে জীবনের এ সন্ধিক্ষণটি হয় স্বাপিণক ও কৌতুহলোদ্দীপক। এ সময়ে সে জানতে চায়, জানাতে চায়। জানতে ও জানাতে গিয়ে যদি বাধাগ্রসত হয় বা হোচট খায় তাহলে সে মূক ও বিমূঢ় হয়ে পড়ে, বিভ্রামিত তাকে অপরাধী করে তোলে, নিয়ে যায় সর্বনাশার অতল গহবরে। অন্যদিকে যদি সে অবলীলায় জানতে পারে, জানাতে পারে, উত্তর পায়, মানসিক আশ্রয় ও অবলম্বন পায়, নৈতিক দীক্ষা ও প্রেরণা পায় তাহলে তার অগ্রগতি-অগ্রযাত্রাও হয়ে উঠে অনিবার্যভাবে সুন্দর, শাশ্বত ও সাবলীল।
সুতরাং কিশোর অপরাধীরা পেশাদার অপরাধীদের সঙ্গে কীভাবে যুত্তু হচ্ছে তা অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিকারমূলক ব্যবসহা গ্রহণ প্রয়োজন। এজন্য সবার আগে দরকার গ্রাম কিংবা শহর, পাড়া কিংবা মহল্লায় সর্বত্র ভাল পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষিত সজ্জন ও অভিভাবক শ্রেণীর সম্মিলিত প্রয়াস। অধ্যয়ন, সৃজনশীলতা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করাও জরতরী। পরিবার, সমাজ ও স্কুলের পরিবেশ হওয়া দরকার আনন্দময় ও প্রণোদনাপূর্ণ।
শিশু-কিশোরদের কাদামাটির সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। শিল্পী কাদামাটিকে যেভাবে রদপ দিতে চান, সে রদপেই গড়ে তুলতে পারেন। বসতুত, শিশু-কিশোররা কাদামাটির মতোই কোমল। পরিবার ও সমাজ-জীবনের পরিপার্শ্বের মধ্যে তারা বেড়ে ওঠে। সভ্যতার প্রথম সোপানই হলো পরিবার সংগঠন। দয়া, মায়া, প্রেম, ভালবাসা অপরের প্রতি সৌজন্যবোধ, সহনশীলতা, সত্যবাদিতা প্রভৃতি হদদয়বৃত্তিগুলোর বিকাশের উপযুত্তু শিক্ষালয় হচ্ছে পরিবার। পরিবারকে বলা যায়, মানব জীবনের প্রধান বুনিয়াদ।
এ প্রসঙ্গে নিমেণ কয়েকটি দিকের প্রতি অালোকপাত করা হলঃ-
ক| নিয়মএণঃ শিশু-কিশোরদের এমন শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা তাদের কার্যকলাপ একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নিবদ্ধ রাখে এবং ‘সীমার বাইরের কাজ করলে তা অন্যায়ের পর্যায়ে পড়বে’ – এ বোধ তৈরী হয়।
খ| বোধজ্ঞানঃ শিশু-কিশোরদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট নৈতিক মানের সৃষ্টি করতে হবে। স্বাভাবিক উচিত, অনুচিত, ভালমন্দের সাধারণ প্রভেদ তাকে বুঝতে দিতে হবে।
গ| সাহায্যঃ মাতাপিতাকে প্রত্যেক শিশু-কিশোরের আসহা ভাজন হতে হবে। সমতানেরা যাতে নিজের ও অন্যের উপকার করবার মানসিকতা অর্জন করতে পারে তার জন্য তাকে সাহায্য করতে হবে।
ঘ| বিশ্বাসঃ কাকে বিশ্বাস করা উচিত এবং কাকে বিশ্বাস করা অনুচিত এসব সম্বন্ধে তাকে অবহিত করা প্রয়োজন।
ঙ| স্বাধীনতাঃ একটি নিদিষ্ট গন্ডির মধ্যে কিশোরদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন এবং অপরিহার্য না হলে তাদের কোন কাজের প্রতিবন্ধক হওয়া অনুচিত।
চ| ভালবাসাঃ কিশোররা যেন অনুভব করে যে, তাদের প্রতি তাদের মাতা-পিতার অসীম ভালবাসা ও গভীর দরদ রয়েছে এবং এ ভালোবাসায় আছে তাদের প্রতি তাঁদের মাতাপিতার ‘সমতা-নীতি’।
ছ| প্রশংসাঃ কিশোরদের প্রতিটি সুন্দর ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে এবং প্রশংসা করতে হবে। তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া দরকার, তবেই তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্ম নেবে। মাতা- পিতার বলা উচিত ‘আমি জানি এটা তুমি করতে পারবে।’ তারপর হয়তো বলা হলো, ‘জানতাম, তুমি পারবে ইত্যাদি।’ কোনও সাফল্যই অভিনন্দন জানানোর জন্য ক্ষুদ্র নয়। কখনও কাজে সফল না হলে সমালোচনা করতে হবে, তবে প্রশংসাসহ। ছেলে যদি ফুটবল খেলতে গিয়ে গোল করতে না পারে, তাহলে তাকে বলা উচিত, ‘তুমি যেভাবে ড্রিব্ল (dribble) করলে তা অসাধারণ ছিল। কালকে আর একটু ভাল করে প্র্যাকটিস কোরো।’ এভাবে তাদের ছোটখাট সাফল্যকে মূল্য না দিলে তাদের জীবনে দ্বন্দব ঘিরে আসবে। কোনো লক্ষ্যেই পৌঁছতে পারবে না ওরা। পায়ের নিগ্ধচ জমি নড়বড়ে হয়ে যাবে।
জ| রক্ষা কার্যঃ কিশোররা যেন বিশ্বাস করে যে, মাতা-পিতা তাদের বিপদের বান্ধব, সর্বোপরি সবসময়ের অকৃত্রিম রক্ষাকবচ।
ঝ| নিরাপত্তাঃ কিশোররা যেন উপলব্ধি করে যে, তাদের ঘর তাদের জন্য সর্বোত্তম আশ্রয় ও সর্বাপেক্ষা নিরাপদ সহান।
ঞ| সংযমঃ ব্যবহার, কাজকর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ে কতটা পর্যমত এগুনো উচিত, কী পরিমাণে একটি কাজ করা উচিত, কখন ও কেন একটি কাজ পরিহার করা উচিত – ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাথমিক পরিমিতিবোধ ও তৎসম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান তাকে দিতে হবে।
ট. প্রশেণাত্তর দানঃ শিশু-কিশোরদের প্রতিটি প্রশেণর সদুত্তর দেয়া উচিত। জার্মান শিক্ষাবিদ Friedrich Froebel (১৭৮২-১৮৫২) এর একটি উপদেশ প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন;
“ হে শিশুর পিতা, শিশুর প্রতি কঠোর হয়ো না। তার পুন পুনঃ প্রশণবাণে অসিহরতা প্রকাশ করো না। প্রতিটি কঠোর শব্দের আঘাত তার জীবন ফুলের পাপড়ি নষ্ট করে দেয়। জীবন তরতর শাখা বিনষ্ট করে ফেলে।”
ঠ. আবিষ্কার করতে দেয়াঃ একবার এক ঘন বৃষ্টির পর একটি কিশোর বাবার কাছে দৌড়ে এলো-, ‘দ্যাখো বাবা, কী সুন্দর পাথর’, বাবা তো কোনও পাত্তাই দিলেন না, বরং রাগ করলেন, ‘কী সব সময় যে কাদা ঘাঁটো!’ কিশোরটির মুখ শুকিয়ে গেল।
বাবা যদি ছেলের এ প্রয়াসকে অভিনন্দন জানিয়ে বলতেন, ‘বাঃ, কী সুন্দর! কোথা থেকে পেলে? আরও ভাল পেতে পারতে ’ ইত্যাদি। তাহলে ছেলেটি আরও উৎসাহিত হতো। নতুন কিছু করার আনন্দ পেত, জীবনে বৃহত্তর ক্ষেত্রে এগোনোর সুবিধে হতো।
ড. সমতানের স্বপণ সম্বন্ধে জানাঃ মাতা-পিতা দেখলেন তাদের কিশোর ছেলেটি খেলোয়াড় হতে চায়। কিংবা কিশোরী মেয়েটি হতে চায় বিমানের পাইলট যা মাতাপিতার অপছন্দ। এক্ষেত্রে ওদেরকে ভৎর্সনা করার আগে পুরো ব্যাপারটি ভালভাবে জানা প্রয়োজন। তাই ওদের পছন্দের পেশার খোঁজখবর নিতে হবে, সেগুলোর ভবিষ্যৎ জানতে হবে। মাতাপিতার অপছন্দ হলেও ওদের পছন্দকে গুরতত্ব দিয়ে পুরো ব্যাপারটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিচার করতে হবে।
কিশোর- কিশোরীরা দিবসের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ধরে বিদ্যালয়ে অবসহান করে। বিদ্যালয়ের রীতিনীতি, আচার-শৃঙ্খলা, শিক্ষক- শিক্ষিকাদের ব্যবহার, দৃষ্টিভঙ্গি, সিলেবাস -কারিকুলাম ইত্যাদি কিশোর-কিশোরীদের মানস গঠনে গভীর প্রভাব ফেলে। একটি বিদ্যালয়ের রীতিনীতি -আচার শৃঙ্খলায় যদি সভ্যতা, ভব্যতা, নিয়মানুবর্তিতা, সমতা ইত্যাদিসহ নানামুখী সুসহ্য সংস্কৃতির নিয়ত চর্চা ও প্রাত্যহিক অনুশীলন ঘটে তাহলে কিশোর-কিশোরীরা ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হতে বাধ্য। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অতীব গুরতত্বপূর্ণ। তাঁদের চরিত্র -মাধুয,র্ চিমতা-চেতনা, আচার-ব্যবহার, রতচি-লেহাজ, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি দ্বারা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে। সুতরাং শিক্ষক যদি চরিত্রবান না হন, সুন্দর স্বভাবের অধিকারী না হন, সমতা ও সমদর্শিতার গুণে গুণান্বিত হয়ে না উঠেন, সর্বোপরি শিক্ষার্থীর মনোরাজ্যে একটি নির্মল আসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন তাহলে তয়বর ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁর কাছ থেকে নিছক পাঠ্য পুসতকের বাইরে জীবন গঠনের কোন দীক্ষা লাভ করতে পারবে না।
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মানসিকতার যে আমূল পরিবর্তন হয়, সে বিষয়ে সমাজের বেশির ভাগ মানুষ তেমন সচেতন থাকেন না। এ বয়সের ছেলেমেয়েরা নিজেদের কল্পনার একটা জগৎ তৈরী করে ফেলে। নিজেকে বিরাট বোদ্ধা ভেবে বিভিন্ন মতামত দেয়, সিদ্ধামত নেয়। দেখা যায়, এদের মতামতকে সচরাচর মা-বাবারা বিশেষ গুরতত্ব দেন না, আত্মীয়-স্বজনদের কাছেও তারা তখন না বড়, না ছোট। এ সময় যারা খুব চাপা প্রকৃতির হয়,তাদের মনের ওপর চাপ পড়ে বেশি। কারণ নিজের কাল্পনিক জগতের ওপরে বাসতব জীবনের ধাক্কা ওরা সহ্য করতে পারে না। ফলে আচমকা ব্যর্থতার গ্লানি সইতে না পারায় চরম হতাশা জাগে তাদের মনে। তীব্র মনোবেদনায় জ্বলে-পুড়ে একাকার হয়। বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পায় না বলে আত্মহত্যা করে বসে। এটি প্রত্যেকটি ছেলেমেয়ের ক্ষেত্রেই ঘটে। কেউ সেই সময়টা বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতায় কাটিয়ে উঠতে পারে, কেউ পারে না। যারা পারে না তাদের মধ্যে দেখা দেয় মানসিক অবসাদ। যার চূড়ামত প্রকাশ ঘটে আত্মহত্যায়।
বিশ্বস্বাসহ্য সংসহার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর কেবল ৪০ লাখ কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যার চেষ্টা করে (Attempt Suicide)। দেশে দেশে এ বয়সে আত্মহত্যার হারে তারতম্য দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার পেছনে অনেক কারণ জড়িত রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, আত্মহননের অনুভূতি ও ডিপ্রেশনের উপসর্গের মাঝে মিল রয়েছে। কিশোর-কিশোরীর নিচের উপসর্গ গুলোর প্রতি মাতাপিতাকে নজর রাখতে হবেঃ
ক. ঘুম ও খাওয়ার অভ্যাস বদলে যাওয়া। শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
খ. দৈনন্দিন জীবনযাত্রা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করা, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও আলাদা থাকা।
গ. প্রতিদিনের কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা এবং উৎসাহে ভাটা পড়া।
ঘ. সহিংস প্রতিত্রিুয়া, বিদ্রোহী আচরণ, ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতা, আত্রুমণাত্মক ভঙ্গিমায় ঘনিষ্ঠজনের প্রতি ছুটে আসা ইত্যাদি।
ঙ. মাদকের নেশায় জড়িয়ে যাওয়া।
চ. চোখে পড়ার মতো ব্যত্তিুত্বের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন। কথা বলা বা চলা ফেরায় অস্বাভাবিক গতি, হয় খুব দ্রতত অথবা ধীরে।
ছ. সব সময় মানসিক অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ বা বিরত্তিুভাব নিয়ে থাকা, মনোযোগের ঘাটতি, স্কুলে দক্ষতায় পছিয়ে যাওয়া।
জ. আবেগের সঙ্গে সম্পর্কিত দৈহিক উপসর্গ যেমন- মাথাব্যথা, পেটব্যথা, অবসাদ ইত্যাদি নিয়ে সব সময় সেঁটে থাকা।
ঝ. আনন্দময় কাজে আনন্দ খুঁজে না পাওয়া।
ঞ. প্রশংসা বা পুরস্কার কোনটিই সহ্য না করা।
ট. সব সময় নিজের খারাপ দিক নিয়ে কথা বলা, নিজেকে খারাপ ভাবা, অনুভূতির ঘুরপাকে নিজেকে আটকে ফেলা।
ঠ. আত্মহত্যার ব্যাপারে মৌখিক সংকেত দেওয়া যেমন- ‘তোমাদের আর বেশি জ্বালাব না। আর বেশি দিন নেই আমি’ ইত্যাদি।
ড. নিজের প্রিয় সব কিছুতেই অনীহা, গুরতত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলা।
ঢ. বিষাদের একটি সময়ের পর আচমকা খুশি হয়ে ওঠা।
ণ. মনোরোগের বিভিন্ন উপসর্গ, যেমন, দৃষ্টিভ্রম (Hallucination) ও উদ্ভট চিমতার গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাওয়া।
কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে ধর্মীয় সংস্কৃতির অনুশীলনের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কেননা মানুষের শুধু শারীরিক সত্তা নয়, তার একটি মানস ও মনন রয়েছে। এ মনন বা মানসের বিকাশ দরকার এবং সেটা কেবল বসতুগত নয়। এ মানস বিকাশ ধর্মের দ্বারা সম্ভব। ধর্ম মানব জীবনকে পরিপূর্ণ ও সৌন্দর্যমন্ডিত করে এবং ধর্ম হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ভিত্তি।
এক কথায় মানব জীবনে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, নৈতিকতা – অনৈতিকতা ইত্যাদি বিচার-বিবেচনার এক সাবলীল ও সুষ্ঠু নির্ণায়ক নীতি বা বন্ধন হলো ধর্ম।
পৃথিবী সৃষ্টির শুরত থেকে যুগে যুগে যত ধর্ম এসেছে, যত ধর্মগুরত এসেছেন সবাই অন্যায়ের বিপক্ষে ন্যায়ের ও মানবতার জয়গান গেয়েছেন। সততা, সাধুতা, সেবা, সংযম, সৌজন্য, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, সদাচার, দয়া, ক্ষমা, প্রেম, পরোপকার, পরমতসহিষ·ুতা, বিনয়, বদান্যতা ইত্যাদি সব-ধর্মেরই সার কথা। সব ধর্মই তার প্রতিটি অনুসারীকে শৈশব-কৈশোর থেকে সৎপথে চলার, সুন্দরভাবে বাঁচার, সরলপথ অনুসরণ করার তাভকদ দিয়েছে।
সুতরাং আশৈশব স্বধর্মের বিশুদ্ধ চর্চা ও যথাযথ অনুশীলন ব্যত্তিুর অপরাধস্পৃহা অবদমন সহ আত্মশুদ্ধির জন্য সহায়ক।
সমতানদেরকে সঠিক প্রতিপালনের ওপর বিশেষ গুরতত্বারোপ করেছে ইসলাম । এ প্রসঙ্গে ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে – “প্রথম সাত বছর তাকে (সমতানকে) মুত্তু রাখ, দ্বিতীয় সাত বছর তাকে শিষ্টাচার (আদব) শিক্ষা দাও এবং তৃতীয় সাত বছর তার সাথে গভীর সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোল।”
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা) বলেছেনঃ
“পিতার ওপর পুত্রের যেরদপ অধিকার আছে পুত্রের ওপরও পিতার তদ্রদপ অধিকার আছে। পিতার অধিকার হলো পুত্র শুধু আল্লাহ্কে অমান্য করার আদেশ ব্যতীত তাঁর সকল আদেশ মেনে চলবে এবং পুত্রের অধিকার হলো পিতা তার একটি সুন্দর নাম রাখবে, তাকে উত্তম প্রশিক্ষণ দেবে এবং কুরআন শিক্ষা দেবে।” (‘নাহজ্ আল বালাঘা’)
ইসলাম অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তাকে অংকুরে বিনষ্ট করতে চায়। এ কারণে ইসলামী শরিয়ত মানুষের নৈতিক সুরক্ষার্থে নিমণলিখিত কর্মসূচী, বিধান ও মূলনীতির মাধ্যমে ব্যত্তিুর চারদিকে সুদৃঢ় ও দুর্ভেদ্য প্রাচীর তুলে দেয়, যার বিশুদ্ধ চর্চা তাকে পাপের দিকে আকর্ষণ ও পদঙ্খলন থেকে নিয়ত রক্ষা করতে সহায়ক হয়।
ক. ইসলাম আশৈশব ব্যত্তিুর সংশোধন, ব্যত্তিুর মন পবিত্র ও পরিশুদ্ধকরণ এবং তাকে সুন্দর ও নির্মলভাবে লালন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত মহান চরিত্রে বিভূষিত করে তোলে। তার হদদয়ে ঈমানের বীজ বপন করে তাকে কল্যাণমুখী বানিয়ে তার মধ্যে অপরাধ ও বিপর্যয় বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করে দিতে চায়। আর প্রকৃত সঠিক ঈমান ও একনিষ্ঠ দৃঢ় প্রত্যয়-ই হচ্ছে সুদৃঢ় দুর্ভেদ্য দুর্গ এবং নির্লজ্জতা ও নিষিদ্ধ কাজ অবলম্বনের বিরতদ্ধে এক শত্তু প্রতিরোধ। কেননা সে নিঃসন্দেহে জানে ও বিশ্বাস করে যে, সে যা কিছুই করছে, আল্লাহপাক সে বিষয়ে পুরোপুরি অবহিত আছেন।
খ. ইসলাম নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে দূরে রাখার জন্য খারাপ পরিণতির ভয় প্রদর্শন করে। সে খারাপ পরিণতি মানুষের সম্মুখে ভয়াবহরদপে চিত্রিত করে পেশ করা হয়েছে। যা স্বভাবতই মানব মনে এমন তীব্র ভীতির সঞ্চার করে যে, সে কিছুতেই সেই খারাপ কাজের দিকে পা বাড়াতে সাহস করে না।
গ. ইসলাম শরীয়তী বিধি বিধানের মাধ্যমে সকল ভাল কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা, পারস্পরিক কল্যাণ কামনা, সৎ কাজে আদেশ- অসৎ কাজে নিষেধ, ধৈর্য অবলম্বনের উপদেশ এবং সকল পাপ, সীমালংঘনমূলক কাজ, অন্যায়, যুল্ম ও বিপর্যয় প্রতিরোধের নির্দেশ দেয়।
ঘ. ইসলাম যখন কোন কাজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, তখন সেই কাজের সুযোগ করে দেয় বা অনিবার্য করে তোলে যেসব পথ, তা- ও সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেয়, সেই উপায়, পথ ও পমহাকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যেসব প্রাথমিক অবসহা ও কর্মকান্ড সেসব নিষিদ্ধ কাজকে সহজ করে দেয়, সেগুলোও সাথে সাথে নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
ঙ. ইসলাম যখন কোন জিনিস বা কাজ নিষিদ্ধ করে, তখন তদসহলে একটা বৈধ- কাজের পমহাও বাতলে দেয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ নিষিদ্ধ কাজটি পরিহার করে বৈধ কাজটির দ্বারা তার প্রয়োজন পূরণ করতক।
চ. মানুষের মন পবিত্রকরণ, আত্মা বিশুদ্ধকরণ এবং তাদেরকে পাপ ও অভিশপ্ত কাজে জড়িত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য ইসলামে অবশ্য পালনীয় দুটি ইবাদাত সর্বজন পরিচিত, মৌলিক এবং ব্যাপক প্রভাবশালী ইসলামী জীবনে সর্বাধিক গুরতত্বের অধিকারী। এ দুটি ইবাদাত হলো – সালাত ও সাওম। মূলত এ দুটি ইবাদাতই বিশেষ প্রশিক্ষণ স্বরদপ। যার চূড়ামত ও সর্বোচ্চ লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে সকল প্রকার হীনতা-নিচতা থেকে মুত্তু করে কেবল এক আল্লাহর অনুগত বান্দাহ্ বানানো।
সালাতঃ সালাত মহান আল্লাহর সাথে তাঁর বান্দাহ্র এবং বান্দাহ্র সাথে তার মাবুদের প্রেমময়, গভীর ও পবিত্র সর্ম্পক সহাপনের মাধ্যমে মানব হদদয়ে আল্লাহর ভয় এবং আল্লাহ্র কাছে সম্পূর্ণরদপে আত্মসমর্পণের ভাবধারার সৃষ্টি করে।
পবিত্র কোরআনের সূরা ত্বোয়াহা-র ১৩২ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, “আপনি (হে রাসূল!) আপনার পরিবারের লোকদের নামাযের আদেশ দিন”।
আবু দাউদ শরীফে নামায অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, “ তোমাদের সমতানকে সাত বছর বয়সে নামা য পড়ার নির্দেশ দাও। ”
সালাতে মানবদেহের প্রায় সবকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়োজিত হয়। দিন-রাত্রির চব্বিশ ঘন্টায় পাঁচবারের সালাত অাল্লাহ তা’আলা বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে সব মানুষের ওপর ফরয করেছেন। এরই মাধ্যমে বান্দাহ্ ও আল্লাহর মাঝে সহায়ী সর্ম্পক সহাপিত হয়। দুনিয়ার কোন মোহ সে সম্পর্ককে দুর্বল বা ছিন্ন করতে পারে না। বান্দাহ্ তখন ভুলে না যে, তার ওপর আল্লাহর হক সর্বাগ্রে এবং তাঁর ফরমানসমূহ কাজে পরিণত করেই মহামহিমের সেই অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব। মোদ্দা কথা, সারাদিনের কোন মুহূর্তেও মহান আল্লাহ্কে ভুলে না যাওয়াই পাঁচ ওয়াত্তু সালাতের বড় সুফল ও মহামূল্যবান প্রাপ্তি। এরদপ অবসহায় কোন অপরাধজনক কাজে অংশগ্রহণ করা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ কারণেই সালাত সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলার ঘোষণা হচ্ছেঃ
“নিশ্চয়ই সালাত মানুষকে সর্বপ্রকারের নির্লজ্জ ও ঘৃণ্য কাজ-কর্ম থেকে বিরত রাখে”।
– সূরা আনকাবুতঃ ৪৫।
সাওমঃ রমযানের মাসব্যাপী সিয়ামের প্রশিক্ষণমূলক অবদান অত্যমত সূক্ষ্ণ, ব্যাপক ও গভীর। সিয়াম মানব মনের যাবতীয় কুপ্রবৃত্তির ওপর শত্তু লাগাম লাগিয়ে দেয় এবং রোযাদারকে যাবতীয় অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। অপরাধ যে ধরনের ও যে প্রকৃতিরই হোক, তা হদদয়ের কামনা, বাসনা, লোভ ও লালসা থেকে উৎসারিত হয়। আর এর উৎসে তিনটি প্রবল শত্তিু নিহিত থাকে। প্রথম, লোভ-লালসা; দ্বিতীয়, যৌন স্পৃহা ও কু-প্রবৃত্তি এবং তৃতীয় হচ্ছে, অহমিকা-দাম্ভিকতা বোধ। সাওগ্ধমর প্রবল প্রশিক্ষণমূলক প্রভাব রয়েছে এ তিনটি শত্তিুর ওপর।
এভাবে আল ইসলামের উপর্যুত্তু মূলনীতি ও বিধানাবলীর আলোকে মানব জীবনকে শৈশব-কৈশোর হতে সকল প্রকার অনাচার, পাপ ও পংকিলতা থেকে মুত্তু করা গেলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অপরাধজনক কাজ থেকে দূরে সরে থাকবে। ইসলামের এ বিধানসমূহ প্রতিটি মানব সমতানকে সেই লক্ষ্যে ত্রুমশ প্রসতুত করে তোলে।
বয়ঃসন্ধিকালে দেহে বিকাশ ঘটে সেকেন্ডারি যৌন ~~বশিষ্ট্যের। বিকাশের এ সময়টা অত্যমত গুরতত্বপূর্ণ। আগেই বলা হয়েছে যে, এ সময় কিশোর-কিশোরীরা তাদের বন্ধু -বান্ধবদের দ্বারা বেশি মাত্রায় প্রভাবিত হয় এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে।
কিশোর-কিশোরীদের মানসিক বিকাশের স্বার্থে মা-বাবা ও অন্যান্য অভিভাবকদের এ ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীর সাহায্যে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এ সময় কিশোর-কিশোরীরা অনেক কিছুই জানতে চায়। তারা শুধু নিজ দেহের পরিবর্তন নিয়ে উৎসাহিত হয় না, বিপরীত লিঙ্গের মাঝে যে পরিবর্তন হচ্ছে সে সম্পর্কেও কৌতুহলী হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা দেখতে পেয়েছেন যে, যখন কিশোর-কিশোরীরা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আলাপ-আলোচনায় নিমগ্ণ থাকে তখন তারা যৌনতা নিয়েও কথা বলছে। শুধু কথা বলা না। এভাবে অনেক সময় তারা আবেগ ও যৌনতা বিকাশের ভুল পথে পা বাড়ায়।
এভাবে ~~কশোরে ছেলে মেয়ে উভয়কে পরিশীলিতভাবে ‘প্রাইমারী সেক্স এডুকেশন’ দেয়া হলে তারা অনেক অযাচিত শারীরিক বা মানসিক ভুল বা ক্ষতি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।
কিশোর অপরাধ থেকে কোন দেশ বা সমাজ মুত্তু নয়। এটিকে একটি রোগ বলে বিবেচনা করা হয়। একাদশ পোপ ইতালির রোমে কিশোর অপরাধ সংশোধনের জন্য সেন্ট মাইকেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতেও এ সমস্যার অসিতত্ব ছিলো।
তবে কিশোর অপরাধ সংশোধনের ধারণাটি গত শতকের। সভ্য সমাজ ত্রুমশ বুঝতে পারলেন যে, কিশোর অপরাধ যতটা না শাসিতমূলক, তার চেয়েও বেশি সংশোধনমূলক।
১৯৭৪ সালে শিশু-কিশোরদের জন্যে ‘চিল্ড্রেন এ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়ণ করা হয়। ১৯৭৬ সালে ‘চিল্ড্রেন্স রতলস, ১৯৭৬’ জারী করে প্রথমতঃ ঢাকা জিলা এবং পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে সমগ্র বাংলাদেশকে এ আইনের আওতায় আনা হয়। ‘শিশু আইন, ১৯৭৪’ এবং ‘শিশু বিধি, ১৯৭৬’ র ভিত্তিতে ১৯৭৮ সালের ১লা জুন তারিখে ঢাকার অদূরে টংগীতে ২০০ আসন বিশিষ্ট জাতীয় কিশোর অপরাধ সংশোধনী প্রতিষ্ঠান (বর্তমান নাম, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র) সহাপন করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো, অপরাধী কিশোরদের কারাগারে অপরাপর বয়স্ক, দাগী অপরাধী ও অন্যান্য খারাপ পরিবেশ থেকে দূরে রেখে শাসিতর পরিবর্তে সংশোধন এবং অপরাধ প্রবণ, উচ্ছৃঙ্খল ও অভিভাবক কর্তৃক নিয়মএণ বহির্ভূত কিশোরদের চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। এ প্রতিষ্ঠানটি কিশোর আদালত, কিশোর হাজত, কিশোর সংশোধনী কেন্দ্র এ তিন ভাগে বিভত্তু। এর পর ১৯৯৬ সালে কিশোর অপরাধ দমন ও নিয়মএণের আশা নিয়ে সরকার যশোর শহরের অদূরে পুলেরহাট নামক সহানে আরও একটি ‘কিশোর সংশোধনী প্রতিষ্ঠান’ চালু করেছেন। তাছাড়া গাজীপুরের কোনাবাড়িতে রয়েছে একটি ‘কিশোরী সংশোধনী কেন্দ্র’। এটি সহাপিত হয় ১৯৮২ সনে।
অভাব অনটন, পারিবারিক ও সামাজিক বঞ্চনা, অবহেলা আর অনাদরে গৃহত্যাগী কিশোর-কিশোরীরা শহরে এসে হয় ভবঘুরে বা টোকাই। ভবঘুরেদের পুনর্বাসনকল্পে ১৯৪৩ সালে কলকাতায় ভবঘুরে আইন জারি হয়। বাংলাদেশে এ আইন প্রবর্তিত হয় ১৯৫৩ সালে। এরপর ১৯৬২ সালে গাজীপুরের পুবাইলে এবং ময়মনসিংহের ধলায় দুটি ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭৭ সালে দেশের বিভিন্ন সহানে আরো ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এগুলো হলোঃ ঢাকার মীরপুর, গাজীপুরের কাশিমপুর, নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও মানিকগঞ্জের বেতিলে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আসন খালি হয়ে গেলেই পুলিশের মাধ্যমে ভবঘুরেদের আটক করা হয়। প্রথমে তাদেরকে মীরপুর ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়। এখানে সামারী কোর্ট বসে। স্পেশাল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত পরিচালনা করেন। শুনানির পর আবাস-সহলহীন,পরিচয়হীনদের রেখে দেয়া হয় ভবঘুরে আশ্রমে। অন্যদের অর্থাৎ যারা নাম, ঠিকানা যথাযথভাবে বলতে পারে তাদেরকে ফেরৎ দেয়া হয় অভিভাবক অথবা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে। আশ্রয় কেন্দ্রে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যমত পড়াশুনাও করানো হয়। এখানে আশ্রিতদের বেশীর ভাগই ১২-২৫ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী।
অপরাধী কিশোরদের সংশোধনার্থে প্রণীত শিশু আইন, ১৯৭৪ এর কয়েকটি গুরতত্বপূর্ণ ধারা উল্লেখ করা প্রয়োজন। এ আইনে বলা হয়েছেঃ
ধারা–৬– বয়স্ক অপরাধীদের সাথে কিশোর অপরাধীর বিচার একত্রে হবে নাঃ
1. ফৌজদারী কার্যবিধির ২৩৯ ধারা অথবা বর্তমানে বলবৎ অন্য কোন আইনে যাই থাকুক না কেন কোন বয়স্ক অপরাধীর সাথে একত্রে কোন কিশোর অপরাধীর বিচার করা যাবে না।
2. যদি কোন শিশু ফৌজদারী কার্যবিধির ২৩৯ ধারায় বা বর্তমানে বলবৎ অন্য কোন আইনে অপরাধী হয় তবে আমল গ্রহণকারী আদালত শিশু এবং বয়স্ক ব্যত্তিুর বিচার পৃথকভাবে করার নির্দেশ দেবেন।
ধারা — ৪৯– জামিনে মুত্তিু প্রদান করা না হলে সেক্ষেত্রে করণীয়ঃ
1. যেক্ষেত্রে আপাতঃ দৃষ্টিতে ১৬ বৎসরের কম বয়স্ক শিশুকে ৪৮ ধারা অনুযায়ী জামিনে মুত্তিু না দেয়া হয় সেক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তু শিশুকে আদালতে হাজির করার পূর্ব পর্যমত রিমান্ড হোম বা নিরাপদ হেফাজতে রাখবেন।
2. আদালত উত্তু শিশুকে জামিনে মুত্তিু না দিলে রিমান্ড হোম বা নিরাপদ হেফাজতে রাখার জন্য আদেশ দেবেন।
1. অন্য কোন আইনে যাই থাকুক না কেন, কোন শিশুকে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা কারাদন্ড প্রদান করা যাবে নাঃ
তবে শর্ত থাকে যে, আদালত যদি মনে করেন যে, শিশুটি এতই অপরাধ করেছে যে অত্র বিধানে
শাসিত যথেষ্ট নয় অথবা যদি আদালত সমওষ্ট হন যে, শিশুটি এত দুর্দামত ও লম্পট চরিত্রের যে তাকে
কোন সংশোধনাগারে রাখা যথোপযুত্তু নয়, তাহলে আদালত শিশুটিকে কারাদন্ড প্রদান করতে
পারেন অথবা আদালত যেরদপ মনে করেন সেরদপ জায়গায় আটক থাকার আদেশ প্রদান করতে
পারেনঃ
তবে শর্ত থাকে যে, যে মেয়াদের জন্য তাকে দন্ডিত করা যেত তার চেয়ে বেংশ সময়ের জন্য
তাকে আটকাধীন রাখা যাবে নাঃ
তবে আরো শর্ত থাকে যে, এরদপ আটকাবসহার যে কোন সময় আদালত উপযুত্তু মনে করলে এরদপ
আটক রাখার পরিবর্তে ১৮ (আঠার) বৎসর বয়স অতিত্রুামত হওয়া পর্যমত কোন সংশোধনাগারে
রাখার আদেশ প্রদান করতে পারেন।
2. কিশোর অপরাধীকে তার কারাদন্ড ভোগকালীন সময়ে বয়স্ক কয়েদীদের সাথে একত্রে আটক রাখা যাবে না।
ধারা–৫২– সংশোধনাগারে আটক রাখাঃ
কোন শিশু যদি মৃত্যুদন্ডে, যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধে দন্ডিত হয়, তাহলে আদালত উত্তু শিশুকে সংশোধনাগারে আটক রাখার আদেশ প্রদান করতে পারবেন, তবে এ আটকের মেয়াদ ২ (দুই) বৎসরের কম ও ১০ (দশ) বৎসরের বেংশ হবে না এবংকোনত্রুমেই শিশুর বয়স ১৮ (আঠার) বৎসর অতিত্রুম করতে পারবেনা।
ধারা — ৫৩– কিশোর অপরাধীকে অব্যাহতি প্রদান বা যথোপযুত্তু হেফাজতে রাখাঃ
1. আদালত উপযুত্তু মনে করলে কোন শিশু অপরাধীকে ৫২ ধারা অনুযায়ী কিশোর সংশোধনাগারে
আটক থাকার আদেশের পরিবর্তে নিমেণ বর্ণিত নির্দেশ প্রদান করতে পারেন-
ক. যথাযথ সতকদ করে অব্যাহতি, অথবা
খ. জামানতসহ বা ব্যতীত সর্বোচ্চ ৩ (তিন) বৎসরের সদাচরণের মুচলেক্ব গ্রহণ পূর্বক শিশুটির পিতামাতা
বা অভিভাবক বা বয়স্ক আত্মীয় বা তাদের কোন যোগ্যতম ব্যত্তিুর হেফাজতে দিতে পারেন এবং
আদালত আরো নির্দেশ প্রদান করতে পারেন যে, শিশুটি প্রবেশন অফিসারের তত্তবাবধানে থাকবে।
2. যদি আদালত প্রবেশন অফিসার বা অন্য কোন মাধ্যমে সংবাদ পান যে, শিশুটি সদাচরণে ব্যর্থ হচ্ছে তখন আদালত তা তদমত করে সমওষ্ট হলে প্রবেশনের বাকী মেয়াদ কোন সংশোধনাগারে আটক রাখার নির্দেশ প্রদান করতে পারেন।
ধারা — ৬৫ — পলাতক শিশুর প্রতি পুলিশের কার্যত্রুমঃ
বর্তমানে বলবৎ অন্য কোন আইনে যাই থাকুক না কেন, কোন পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় সংশোধনাগার হতে বা কোন তত্তবাবধায়কের নিকট হতে পলাতক কোন শিশুকে গ্রেফতার করতে পারবেন এবং এরদপ শিশুর বিরতদ্ধে কোন অপরাধ রেকর্ড না করে বা তাকে অভিযুত্তু না করে উত্তু শিশু বা কিশোর অপরাধীকে সংশোনাগারে বা তত্তবাবধায়কের নিকট পুনরায় প্রেরণ করবেন এবং কোন শিশু বা কিশোর অপরাধী এরদপ পলাতক হবার কারণে কোন অপরাধ করে নি বলে ধরে নেয়া হবে।
ধারা – ৩৪- শিশু ও কিশোর নিয়োগে বাধা-নিষেধ ।-
(১) কোন পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে কোন শিশুকে নিয়োগ করা যাইবে না বা কাজ করিতে দেওয়া যাইবে না।
(২) কোন পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে কোন কিশোরকে নিয়োগ করা যাইবে না বা কাজ করিতে দেওয়া যাইবে
না। যদি না —
(ক) বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে একজন রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক তাহাকে প্রদত্ত সক্ষমতা প্রত্যয়নপত্র মালিকের হেফাজতে থাকে।
(খ) কাজে নিয়োজিত থাকাকালে তিনি উত্তু প্রত্যয়ন পত্রের উল্লেখ সম্বলিত একটি টোকেন বহন করেন।
ধারা-৩৯- কতিপয় কাজে কিশোর নিয়োগে বাধাঃ কোন প্রতিষ্ঠানের যমএপাতি চালু অবসহায় উহা পরিষ্কারের জন্য, উহাতে তেল প্রদানের জন্য বা উহাকে সুবিন্যসত করার জন্য বা উত্তু চালু যমএপাতির ঘুর্ণৎয়মান অংশগুলির মাঝখানে অথবা সিহর এবং ঘুর্ণায়মান অংশগুলির মাঝখানে কোন কিশোরকে কাজ করিতে অনুমতি দেওয়া যাইবে না।
ধারা- ৪০- বিপজ্জনক যমএপাতির কাজে কিশোর নিয়োগঃ
(১) কোন কিশোর যমএপাতির কোন কাজ করিবেন না, যদি না –
(ক) তাহাকে উত্তু যমএপাতি সংত্রুামত বিপদ সম্পর্কে এবং এই ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন
সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে ওয়াকেবহাল করানো হয়,
এবং
(খ) তিনি যমএপাতিতে কাজ করার জন্য যথেষ্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন, অথবা তিনি যমএপাতি সংত্রুামত অভিজ্ঞ এবং পুরোপুরি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যত্তিুর তত্বাবধানে কাজ করেন।
ধারা – ৪১- কিশোরের কর্ম-ঘন্টাঃ
(৩) কোন কিশোরকে কোন প্রতিষ্ঠানে সন্ধ্যা ৭ঃ০০ ঘটিকা হইতে সকাল ৭ঃ০০ ঘটিকার মধ্যবর্তী সময়ে কোন কাজ করিতে দেওয়া যাইবে না।
ধারা – ৪২- ভূগর্ভে এবং পানির ংনচে কিশোরের নিয়োগ নিষেধঃ
কোন কিশোরকে ভূগর্ভে বা পানির ংনচে কোন কাজে নিয়োগ করা যাইবে না।
প্রথমত শিশু আইন, ১৯৭৪ এর ধারাগুলো পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, কিশোর আদালত সাধারণত কোনো শাসিত প্রদান না করে মূলত কিশোরদেরকে সংশোধনের ব্যবসহা করেন। কিমও আমাদের দেশের কিশোর সংশোধনাগারের সংখ্যা হাতে গুণা কয়েকটি মাত্র। যা প্রয়োজনের তুলনায় নেহায়েত অপ্রতুল। অন্যদিকে দেশের কারাগারগুলোর বাসতব অবসহা উল্টো। সেখানে শিশু-কিশোর অপরাধীদেরকে সাধারণ কয়েদীদের সাথে রাখা হয়। যার পরিণতি হয়ে উঠে ভয়াবহ।
হাইকোর্ট ২০০৩ সালের ৯ এপ্রিল এক আদেশে কিশোর অপরাধীদেরকে সাধারণ কয়েদীদের সাথে না রাখা সহ পৃথক হোমের ব্যবসহা করার জন্য নির্দেশ দেন। কিমও এ নির্দেশনাটি কার্যকর হয় নি। ফলে যেসব কিশোর অপরাধী কারাগারে থাকছে তারা সংশোধনের সুযোগ তো পাচ্ছেই না বরং বয়স্ক অপরাধীদের সংস্পর্শে এসে আরও দাগী অপরাধীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে আমাদের দেশের কল-কারখানা মিল-ফ্যাক্টরীগুলোতে বাছ-বিচারহীন ভাবে নিয়োগ করা হচ্ছে কিশোর কিশোরীদের। এসব কিশোর কিশোরী কাজ করার জন্য শারীরিক ভাবে সক্ষম কী না – সে বিষয়ে কোন চিকিৎসকের নিকট থেকে সনদপত্র গ্রহণের গরজ বোধ করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে| কিশোর কিশোরীদের এমন সব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা হয় যা শ্রম আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। শুধু তাই না, তাদেরকে দিয়ে গভীর রাত পর্যমতও কাজ করানো হয়ে থাকে। আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, অনেক কিশোরী রাত ১০টা পর্যমত কাজ করে বিধ্বসত দেহ ও মন নিয়ে ঘরে ফিরছেন।
০১| সমন্বিত ভূমিকা গ্রহণঃ কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে মাতা-পিতা, অভিভাবক, শিক্ষক, রাজনীতিক সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবার, বিদ্যালয়, সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্র সবাইকে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। সুসহ কিশোর – মানস ও মনন গঠনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্ব স্ব সহান থেকে সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে।
০৫| সুশিক্ষক নিয়োগদানঃ শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানসিক শত্তিু-সামর্থ্য- চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা কার্যত্রুম পরিচালনা করবেন। শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক দুর্বলতার কারণ সমূহ অবগত হয়ে শিক্ষক এর প্রতিকারের ব্যবসহা করবেন এবং শিক্ষার্থীর অধীত বিষয় সমূহে অর্জিত জ্ঞানের পরিমাপ করবেন। শিক্ষকদের আদর-যতণ, মায়া-মমতা ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনে নিরাপত্তা বোধ জাগ্রত করে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগদান এবং বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সহ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে শিশু-কিশোরদের মানসিকতা অনুধাবন করার মত বিষয় অমতর্ভুত্তু করা।
০৬| পাঠ্যত্রুম ও শিক্ষা ব্যবসহায় সংস্কার সাধনঃ শিক্ষার্থীদের বয়স, সামর্থ্য ও অভিরতচির প্রতি লক্ষ্য রেখে পাঠ্য পুসতক প্রণয়ন করা প্রয়োজন। মাধ্যমিক সতর পর্যমত ~~বষম্যহীন ও সমন্বিত একমুখী শিক্ষা ব্যবসহা চালু করতে হবে।
০৭| আত্মহত্যা রোধঃ আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রাথমিক অবসহায় ঝুঁকি নির্ণয় পূর্বক চিকিৎসা করতে হবে। ডিপ্রেশন শনাত্তু করা সম্ভব হলে চিকিৎসা সহজ হতে পারে। এক্ষেত্রে মনোচিকিৎসকের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের সহজ-নাগাল থেকে কীটনাশক দ্রব্যাদি দূরে রাখতে হবে। চারপাশে এমন কিছু যথাসম্ভব না রাখা যা আত্মহননে সাহায্য করে।
০৮. সংবেদনশীল মনোভাব প্রদর্শনঃ যে কোন সমস্যার ওপর তাদের কথা ধৈর্য, আমতরিকতা ও গুরতত্বের সাথে মন দিয়ে শুনতে হবে এবং সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের সাথে এমনভাবে কথা বলতে হবে যাতে সে মনে করে তার কাজে বড়দের সমর্থন ও সহানুভূতি আছে। কথায় কথায় তাদের সাথে ঝগড়া বা তাঁকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
০৯. ‘প্রাইমারী সেক্স এডুকেশন’ প্রদানঃ ~~কশোরে ছেলে মেয়ে উভয়কে পরিশীলিতভাবে ‘প্রাইমারী সেক্স এডুকেশন’ দিতে হবে। এতে তারা অনেক অযাচিত শারীরিক বা মানসিক ভুল বা ক্ষতি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।
১০. টিনএজ-ত্রুাইসিস বিষয়ে কাউন্সেলিংঃ ক্ষেত্রবিশেষে টিনএজ-ত্রুাইসিস বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী বা মনোচিকিৎসকগণের দ্বারা পরিচালিত কাউন্সেলিং সার্ভিসে কিশোর-কিশোরীদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে সমস্যা মুকাবিলায় মনোবল সঞ্চয় করানো যেতে পারে।
১১. কিশোর সংশোধনাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি করাঃ সরকারী ও বেসরকারী উভয় উদ্যোগে কিশোর সংশোধনাগারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সংশোধনাগার গুলোকে সত্যিকার অর্থে কিশোর -বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেখানে কিশোর- কিশোরীদের আত্মিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচী ও প্রশিক্ষণের ব্যবসহা থাকতে হবে। একদল দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রশিক্ষকের মাধ্যমে কিছু দিন পর পর সংশোধনাগারে আনীত কিশোর-কিশোরীদের উন্নতি -অগ্রগতি যাচাই পূর্বক তদনুযায়ী পরবর্তী ব্যবসহা নিতে হবে।
১২| শ্রম পরিদর্শন দপ্তরের তদারকীঃ কলকারখানাসমূহে সরকারের শ্রম পরিদর্শন দপ্তরের আমতরিক তদারকী জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে কিশোর কিশোরীদের নিয়োগ ও কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে শ্রম আইনের বিধান সমূহ প্রতিপালন করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. কিশোর আইন রিফর্ম সেল গঠনঃ বয়সের নিরিখে কিশোরের একটি একক আইনানুগ সংজ্ঞা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কিশোরদের জন্য প্রণীত আইন সমূহকে আরও প্রাক্টিক্যাল ও কার্যকর করে তোলার লক্ষ্যে বিচারপতি, অাইনজীবী, শিক্ষক, মনোবিজ্ঞানী, পুলিশ কর্মকর্তা ও কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে কাজ করছেন এমন সব এন,জি,ও -র প্রতিনিধি সমন্বয়ে জাতীয় ল’ কমিশনের আওতায় ও আইন মমএণালয়ের সহযোগিতায় একটি ‘কিশোর আইন রিফর্ম সেল’ গঠন করা যায় কী না ভেবে দেখা যেতে পারে।
১৪. আদর্শ ও উদাহরণ সহাপনঃ সর্বোপরি সমাজের সকল সতরের অভিভাবক ও বয়োজ্যেষ্ঠগণকে সর্বক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের সামনে কথা ও কাজের সমন্বয়ে আদর্শ সহাপন করতে হবে।
আমাদের কিশোর-কিশোরীরা আমাদের গর্বের ধন, আমাদের সম্পদ। এরাই আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দেবে, এরাই হবে জাতির কর্ণধার। জাতির ভবিষ্যৎ উন্নতি-অগ্রগতি এদের ওপরই নির্ভর করছে। সুতরাং, ~~কশোর থেকে ওদেরকে সৎ ও চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, গড়ে তুলতে হবে সুনাগরিক হিসেবে, আলোকিত মানুষ হিসেবে। এ লক্ষ্যে উপরের সুপারিশমালার আলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাসতবায়ন করা আশু প্রয়োজন। এভাবেই ত্রুমশ অপরাধ ও অপরাধীদের রাহুগ্রাস থেকে কিশোর-কিশোরীদেরকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। সম্ভব ওদেরকে প্রকৃত জনসম্পদে পরিণত করা। অন্যায় ও অবক্ষয়ের নাগপাশ থেকে মুত্তু হয়ে সোনালী ভোরের রত্তিুম আভায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক আমাদের নতুন প্রজন্ম — এই – ই হোক সবার সম্মিলিত প্রত্যাশা।
গ্রন্পথঞ্জিঃ
০১| ডক্টর মোহাম্মদ সাদেক, ‘অপরাধ ও সংশোধন’,
০২| গাজী শামছুর রহমান, ‘অপরাধ বিজ্ঞান’,
০৩| ডঃ পঞ্চানন ঘোষাল, ‘অপরাধ-তত্তব’,
০৪| হামজা হোসেন, ‘অপরাধ বিজ্ঞান’, ফেব্রতয়ারী, ১৯৮৭
০৫| ডঃ সুকুমার বসু, ‘অপরাধ ও অপরাধী’,
০৬| মওলানা আঃ রহীম, ‘অপরাধ প্রতিরোধে ইসলাম’,
০৭| আহমদুল্যাহ মিয়া ও এ এস এম আতীকুর রহমান। কিশোর অপরাধ সংশোধনী প্রতিষ্ঠান থেকে মুত্তিুপ্রাপ্ত কিশোরদের বর্তমান অবসহান উপর জরিপ। ঢাকাঃ সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৮। পৃঃ ৬
০৮| মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ‘আত্মহত্যায় আর্থ-সামাজিক ও মনসতাত্তিবক কারণ’, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৯৮।
০৯| এডভোকেট সাহিদা বেগম, ‘পতিতা আইন’ (The Suppression of Immoral Traffic Act, 1933) খোশরোজ কিতাব মহল, ঢাকা, ২০০৫।
১০| রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, ‘শিক্ষা,’ বিশ্বভারতী-গ্রমহনবিভাগ, কলকাতা, আশ্বিন, ১৩৯৭।
১১| মোহাঃ আবদুস সালাম, ‘অপরাধ, শাসিত, সংশোধনীমূলক প্রবেশন এবং মুত্তিুপ্রাপ্ত কয়েদীর সংশোধনমূলক কার্যত্রুম’, আলীগড় লাইব্রেরী, ঢাকা, আগষ্ট, ১৯৮৯।
১২। ষযয£ লঔপম্প ঢ়ড্ডভ্বভপধ, ‘ষ্পয় যণ্ঠযঢ়বঁ যবফণ্ঠ ভখলহ্বষ£ষব’, যবস্বিলপহ লভয়স্ব ভভষড়প ভ-খবভহধ, অলূবযষ, ১৯৯২ু
১৩| মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও মোঃ শাওকাত ফারতক, ‘শিক্ষা ব্যবসহা’, আহমদ পাবলিশিং হাউস, মে,১৯৯৮।
১৪| ভত্তিু প্রসাদ মল্লিক, ‘অপরাধ জগতের ভাষা ও শব্দকোষ’, দেজ পাবলিশিং, কলকাতা, ১৯৯৩।
১৫| সি ডি আই জার্নাল, ৪র্থ বর্ষ, ১ম সংখ্যা, ১৯৯২, শামিতবাগ, ঢাকা।
১৬| আলী ইবনে আবি তালিব, ‘নাহজ্ আল বালাঘা’ র্যামন পাবলিশার্স, ঢাকা, ২০০০
১৭| আনু মাহমুদঃ বাজেটঃ পরিকল্পনা- দারিদ্র বিমোচন, হককানী পাবলিশার্স, ফেব্রতয়ারী, ১৯৯৮,
১৮| Morales A., Yvonne F. And P.R. Munford. The Juvenile Justice System and Minorities. Social Work, Boston: Allyn and Bacon INC,1986 Pp.391-3
১৯| Tappa Paul, Juvenile Deliquency. New York: Mc Graw Hill Book Company, INC. 1949.p-17.
২০| Ahmed, Salahuddin. Studies in Juvenile Delinquency and Crime in East Pakistan. Dhaka: College of Social Welfare and Research Center, 1966. P. 19
২১| Mia Ahmadullah. Criminal, Propensity of Youth: Prevention and Suppression. The Detective.Vol.II No. 1Janurary 12. 1988 Dhaka pp 4647
২২| See. Ahmadullah, A.K. Social Factors of Juvenile Offence in East Pakistan. College of Socialwelfare and Rescarch Center. 1964; Mohammad Afsaruddin.
২৩| Juvenile Deliquency in East Pakistan. Social Science Research Project. Dhaka University. 1965.
২৪| Govt. of Bangladesh. The Children Act No. XXXIX of 1974; Rules vide notification date.11 March 1976 framed under the Children Rules 1976.
২৫| Mohammad Afsaruddin, Juvenile Delinquency in Bangladesh, D.U., 1993.
২৬| Kelvin Seifert & Robert J. Hoffnung, ‘Child and Adolescent Development’,
২৭| Zaria Rahman khan & H.K. Arefeen, ‘The Situation of Child Prostitutes in Bangladesh.’, Centre For Social Studies, Dhaka, 1990.
২৮| ‘Understanding Your School- Age Child’, Alexandria, Virginia.
২৯| Abdul Matin : ‘ The Children’s Law of Bangladesh’ February, 1993, Dhaka.
৩০| E. Durkheim, “ The Elimentary forms of Religious Life”, p.47
মতামত লিখুন :