Logo

কোয়ারেনটাইন সমাচার!

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, এপ্রিল ৩, ২০২০
  • শেয়ার করুন

কোয়ারেনটাইন সমাচার
মাজহারুল ইসলাম জুয়েল
—————-
হঠাৎ করেই ময়মনসিংহ থেকে বন্ধু শামীমের ফোন। জানতে চাইলাম, তার কোয়ারেনটাইন জীবন কেমন কাটছে।
– আর বলো না গুরু, খুব দুঃসহ লাগছে সবকিছু! ব্যবসা-বাণিজ্য নেই, কোথাও যাবার জোগার নেই; উপরি যন্ত্রণা হিসেবে বউয়ের ঘ্যানঘ্যানি তো আছেই! 🙁
– বউ আবার কি করলো?
– সে অনেক কথা। অল্পতে বলা যাবে না। বউ বশীকরণের সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে! রণে ভঙ্গ দিয়েছি অনেক কাল! আচ্ছা গুরু, শুনেছি অসুখ-বিসুখে মানুষের পাপ মোচন হয়। এমন কোন দলিল আছে, যেখানে বলা আছে, বউয়ের যন্ত্রণা সহ্য করার মধ্য দিয়েও পাপ মার্জনা হবে?
– হ্যা তুই তো সেটা জানতে চাইবিই; জীবনে তো আর কম পাপ করিস নি! ^_^
– আরে ধুর ধুর, তুমি কী যে বল!
– তুই কি মনে করিস, আমরা সেদিনের কথা ভুলে গেছি?
– কোন দিনের কথা?
– যেদিন সুমী তোকে ওষ্ঠা মেরে চলে গিয়েছিল? সুমীর সাথে তোর নটঘটের কাহিনী আমাদের মধ্যে কে না জানে? ^_^
– কম বয়সে ওসব সবাই একটু-আধটু করেই। 😉

ফ্ল্যাশব্যাক
—————
নিজের পড়ার ঘরে সুমীকে নিয়ে চুটিয়ে প্রেম করছে শামীম। সেটা ফটিকের নজর এড়ায়নি। ফটিকের ধর্ম হচ্ছে, সে সৌজন্যবোধের ধার ধারে না একেবারেই। কোন রকম নক-টক না করেই সরাসরি শামীমের ঘরে ঢুকে গেল। শামীম-সুমী কিছুটা অপ্রস্তুত।
– কিরে শামীম, তোর টিউশনির খবর কি?
– হঠাৎ জানতে চাচ্ছিস যে?
– রুমকির খরব কি?
– রুমকি! কোন রুমকি?
– সুমীর সামনে ভাব নিচ্ছিস? তুই যে সেদিন তোর ছাত্রী রুমকির হাত ধরেছিলি, এটা সুমীকে বলে দেবো? ?
এটা বলেই ফটিকের ভোঁ দৌড়! কাম যা সারার তাতেই সেরে গেছে! শামীম যেন বিস্ফোরিত আগ্নেয়গিরির সামনে; এক দলা লাভা এসে শামীমের মুখে লেপ্টে পড়েছে! :'(
– আশা করি, ফটিক ভাই যা বলে গেল তা অস্বীকার করবে না। সুমী জানতে চাইল। 🙁
– তুমি ফটিককে চিন না? ও সাক্ষাৎ শয়তানের চেলা!
– ফটিক ভাইকে যেমন হোক চিনি; তোকে তো হাড়ে হাড়ে চিনি! সুমী ‘তুমি’ থেকে ‘তুই’তে নামল! :-/
– তুমি ভুল বুঝচ্ছো সুমী!
– আজ তোকে সঠিকটাই বুঝবো! শুন লম্পট, আজকের পরে তুই যদি আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিস আমি… আমি… তোর নামে মুরগি পুষবো! :-/ এই বলে সুমী হন হন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল! শামীম পেছন থেকে বাংলা সিনেমার নায়কের মতো ডায়লগ দিচ্ছে, সুমী যেয়ো না। শুনে যাও, পুষবেই যদি তাহলে ময়না টিয়া নয় কেন? মুরগিই কেন?

ফ্ল্যাশব্যাক থেকে ফিরে
——————————–
গেলো তো গেল, সুমী আর এলো না! সুমী এখন অন্যের ঘরে দুই সন্তানের জননী। আমি শামীমকে বললাম, এইসব নয়ছয় কারবার করার পরেও তুই কি মনে করিস সনদপত্র পাবি?
– সনদপত্র! কিসের সনদপত্র?
– পরপারে পার পেতেও নাকি স্ত্রীর সনদপত্র খুব জরুরি! অর্থাৎ বিচারদিনে স্ত্রী যদি স্বামীকে ভালো মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সেটা নাজাতের জন্য সহায়ক হতে পারে। ^_^
– তুমি চিন্তা করো না গুরু, আমি সসনদপত্র পেয়ে যাবো। ?
– আমি তোর চিন্তা করবো কেন, আমি নিজের জন্য চিন্তা করি। 🙁

পাঠকের অবগতির জন্য বলা দরকার, শামীমের বউটা সত্যিই ভালো মানুষ, খুব সরল, পানির মতো সহজ! তার এই গুণই হয়ত শামীমের ত্রাণের কারণ হতে পারে। ^_^

এবার নিজের কথা বলি। তিন দিন অফিস, তিন দিন ছুটি; এভাবেই চলছে আমার কোয়ারেনটাইন জীবন। এখন চলছে ছুটিপর্ব। ঘরে নামাজ পড়ে পড়ে মন ভরছিল না। ঠিক করলাম, মাগরিবে মসজিদে যাবো। ঘর থেকে বের হবার সময় বউ বাজারের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল, এগুলো নিয়ে আসবে। আর হ্যা, ময়লার ঝুড়িটা নিয়ে যাও। :-/
– যাচ্ছি ইবাদত করতে, তুমি ধরিয়ে দিলে ময়লার ঝুড়ি! এটা কেমন বিবেচনা বল? 🙁
– আমার বিবেচনা ছিল বলেই আজ তুমি সংসারী। তা নাহলে হতে সন্ন্যাসী। আমার শ্বশুর নিতান্ত ভালো মানুষ ছিলেন; তাঁর দোয়াতেই হয়ত তোমার কপালে বউ জুটেছে। সেটাও সৌভাগ্যক্রমে আমার মত কেউ! 😉
– এক কথায় কত কথা শুনিয়ে দিলে! স্বীকৃতি পাই না বলেই তোমার কাজ করে দিতে উৎসাহ পাই না। 🙁
– আহা, তুমি যেন আমার কত কাজ করে দাও!
– তবুও রাগ করে বলবে না- থাক, ময়লার ঝুড়ি নেয়ার দরকার নেই! 🙁
– সেটা বলতে পারি, যদি কথা দাও আমি যে নাস্তা বানাচ্ছি সেটাতে তুমি ভাগ বসাবে না। ^_^

আর কথা না বাড়িয়ে ময়লার ঝুড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। প্রথমত পেটে ক্ষুধা লেগেছে; দ্বিতীয়ত বিচারদিনে আমারও তো সনদপত্রের প্রয়োজন হবে! ^_^

আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় দুর্যোগে এ জাতীয় লেখায় অনেকেই হয়ত নাখোশ হবেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, রণ এবং রমণী এই দুই ক্ষেত্রে কৌশলের বিকল্প নেই। বেঁচে না থাকলে যুদ্ধটা করবেন কেমন করে! আর বেঁচে থাকার জন্য দু’টো জিনিস খুব দরকার, খাদ্য এবং বিনোদন। ?

মা-বোনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এই প্রকোপ হয়ত দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আল্লাহ্ চাইলে গরম এবং আর্দ্রতা হয়ত সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। পুরুষ মানুষ এমনিতেও বেশি সময় ধরে ঘরে থাকতে চায় না। এই দুর্দিনে তাদের একটু ঠাঁই দিন; প্রথমে ঘরে তারপর আপনার হৃদয়ে! ?

০১.০৪.২০২০