Logo

চীন-আমেরিকা ঠাণ্ডা লড়াই ‘বিপাকে ভারত’

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, জুন ২২, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক : বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাক্স বলেছেন আমেরিকা ও চীনের মধ্যে একটা শীতল যুদ্ধ যেভাবে ঘনিয়ে উঠছে সেটা করোনাভাইরাসের চেয়ে বিশ্বের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন মহামারির পর নেতৃত্ববিহীন এক বিশ্বে বিশাল একটা টালমাটাল পরিস্থিতির দিকে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। খবর বিবিসি বাংলার
তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন দুই পরাশক্তির মধ্যে মতভেদ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলবে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক জেফ্রি স্যাক্স আমেরিকা ও চীনের মধ্যে এই বৈরিতার জন্য আমেরিকান প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকা বিভাজন সৃষ্টিকারী একটা শক্তি, সহাযোগিতার নয়।
চীনের সাথে নতুন করে একটা শীতল যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে আমেরিকা। এটা যদি কাজ করে, যদি এটাই তাদের লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে আমরা কখনই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে যাব না। বরং এর থেকে আরও গভীর মতবিরোধের পরিস্থিতি এবং আসলেই বিশাল একটা বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হবে।
উত্তেজনা বাড়ছে
স্যাক্স এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এমন এক সময়ে যখন চীন ও আমেরিকার মধ্যে শুধু বাণিজ্য নিয়ে নয়, বরং অনেক বিষয়ে উত্তেজনা বাড়ছে।
এ সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি আইনে সই করেছেন যাতে চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম নিপীড়নের জন্য দায়ী চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা আরোপকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার একটা উপায় হিসাবে চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে উৎসাহিত করেছে বলে তিনি মনে করেন।
ট্রাম্প প্রশাসন চীনা কোম্পানিগুলোকেও তার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছেন, বিশেষ করে চীনের বিশাল টেলিযোগাযোগ সংস্থা হুয়াওয়ে। আমেরিকান প্রশাসনের বক্তব্য চীন আমেরিকার ভোক্তাদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য এই সংস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে। চীনা কর্তৃপক্ষ এবং হুয়াওয়ে এই দাবি অস্বীকার করেছে
তবে চীন এবং হুয়াওয়ের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই কঠোর মনোভাব তার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবার জিতে আসার একটা রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে- অন্তত তার সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের যে নতুন বই নিয়ে এখন তুমুল আলোড়ন চলছে- তাতে বোল্টন তেমনটাই উল্লেখ করেছেন।
অধ্যাপক স্যাক্সও এ বিষয়ে একমত যে, হুয়াওয়েকে লক্ষ্য করে আমেরিকা শুধু সাদাসিধে নিরাপত্তা উদ্বেগ থেকে কড়া কড়া মন্তব্য করেনি। ব্যাপারটা অত সহজ নয়।
আমেরিকা ফাইভ-জি প্রযুক্তির দৌড়ে হেরে গেছে, নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তির একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হল ফাইভ জি। আর এক্ষেত্রে হুয়াওয়ে ক্রমশই বিশ্ব বাজার দখল করে নিয়েছে।
অধ্যাপক জেফ্রি স্যাক্স বলেন, আমার মতে, হুয়াওয়ে বিশ্বের জন্য একটা হুমকি- আমেরিকার এই বক্তব্য বানোয়াট। আমেরিকা তার মিত্রদেশগুলোকে এটা বোঝাতে উঠেপড়ে লেগেছিল, যাতে তারা হুয়াওয়ের সাথে সবরকম সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়।
উত্তেজনার চরম পর্যায়
তবে চীন শুধু যে আমেরিকার সাথেই সংঘাতে জড়িয়েছে তা নয়।
এখন ভারত চীন সীমান্তেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে মারত্মক সীমান্ত সংঘাতে অন্তত বিশ জন ভারতীয় সৈন্য মারা গেছে।
চীন ইতোমধ্যেই পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলংকা এবং নেপালে বড় বড় অর্থকরী প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা করছে। আর এই সবগুলো দেশই ভারতের প্রতিবেশি রাষ্ট্র। চীন যেভাবে ওই অঞ্চলে তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, যেটা পাকিস্তানকে বাদ দিলে একসময় ভারতেরই কুক্ষিগত ছিল, সেটা অবশ্যই ভারতের জন্য আশংকার।
স্যাক্স স্বীকার করছেন যে, এশিয়ায় ভারতের প্রতিবেশি দেশগুলোর জন্যও চীনের এই উত্থান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে, যদি না তারা এই আশংকা দূর করার চেষ্টা করে যে, তারা শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতার পথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাইছে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, এমন একটা সত্যিকার আশংকা দূর করার জন্য চীন উদ্যোগ নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি কিনা- আমি বলব হ্যাঁ।
আসলে বিষয়টা কিন্তু পুরো চীনের হাতে। চীন যদি সহযোগিতা করে, চীন যদি কূটনীতি, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং বহুপাক্ষিকতায় অংশগ্রহণ করে, অন্য কথায়- চীন যেহেতু খুবই শক্তিশালী একটা রাষ্ট্র এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে আগ্রহী একটা শক্তি হিসাবে চীন নিজেকে দেখে- আমার মনে হয়- এশিয়ার জন্য সেটা একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে আসবে।