Logo

জীবনভর বিনামূল্যে রেশন, প্রতিশ্রুতি নেত্রীর

অনিন্দ্য বাংলা
বুধবার, জুলাই ২২, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক : নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: টাকা ছড়িয়ে রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচিত সরকার ভাঙার খেলা শুরু করেছে বিজেপি। একই ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাতেও। আর তাতে যোগ দিয়েছে সিপিএমের কিছু ‘কমরেড’। শহিদ দিবসে সেই চক্রান্ত প্রতিহত করে বিজেপিকে রাজ্য থেকে উচ্ছেদের অঙ্গীকার করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাফ জানালেন, বাংলা শাসন গুজরাত করবে না। কোনও বহিরাগতও নয়। বাংলা শাসন করবে বাংলার মানুষ। আর সেই বাংলার মানুষের জন্য আগামী দিনে আরও পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর তাঁর সরকার। ২১ জুলাইয়ের ‘ভার্চুয়াল’ মঞ্চ থেকে সেই প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরলে রাজ্যের ১০ কোটির বেশি মানুষকে আজীবন বিনামূল্যে রেশন আর চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে যাবে তৃণমূল সরকার। আর জয়ের পরে আগামী বছরের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশও ‘ঐতিহাসিক’ হবে বলে আগাম ঘোষণা করছেন তিনি।
করোনার কারণে এবার জোড়াফুল শিবিরের বার্ষিক ‘শহিদ তর্পণ’ সমাবেশ করা যায়নি ধর্মতলায়। পরিবর্তে মঙ্গলবার কালীঘাটের এক ‘ভার্চুয়াল’ সভার মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি বুথে কর্মী-সমর্থকদের কাছে পৌঁছেছেন মমতা। সেই সভা-মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমোর অভিযোগ, মধ্যপ্রদেশের পর এখন রাজস্থানে টাকা ছড়িয়ে সরকার ভাঙার খেলা শুরু করেছে বিজেপি। এক দাদা, এক ভাই আর সিপিএমের পুরনো কমরেডদের নিয়ে সেই একই চক্রান্তের সূচনা হয়েছে বাংলায়। দিল্লির সরকারও সেই ষড়যন্ত্রের অংশীদার। এসব বরদাস্ত করব না! মানবিকতা দিয়েই বিজেপির চক্রান্তের বদলা নেবে বাংলা।
নির্বাচিত সরকার হাতানোর এই খেলা নিয়ে আক্ষেপও গোপন করেননি মমতা। বলেছেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে সব দখল করার চেষ্টা চলছে। একের পর এক কালা কানুন জারি করা হচ্ছে। হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে রাজ্যের অধিকারে। প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি গুজরাতই দেশের সব রাজ্য চালাবে? তাহলে তো নির্বাচন আর নির্বাচিত সরকার, কোনটারই দরকার নেই! এক দেশ, একটা রাজনৈতিক দলই থাকুক। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে দিক তাহলে। পরক্ষণেই তাঁর হুঁশিয়ারি, এই চেষ্টা যেভাবেই হোক রুখবেন তিনি। চাঁচাছোলা গলায় তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, দেশের অর্থনীতি, গণতন্ত্র, রাজনীতি—সব শেষ করেছে বিজেপি। দেশের সর্বনাশ করেছে। কিন্তু এত দম্ভ ভালো নয়। ৩৪ বছরের জগদ্দল পাথর সিপিএমকে হটিয়েছি, বিজেপি তো তুচ্ছ।
বিপর্যয় পর্বে রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে তৃণমূল সরকার। খাদ্যসাথী প্রকল্পে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন আরও একধাপ এগিয়ে তিনি আগামী দিনে রাজ্যবাসীকে সারা জীবন বিনামূল্যে রেশন আর চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। পাশাপাশি বিপর্যয় পর্বেও গোটা দেশের নিরিখে বাংলায় বেকারত্ব কমার চাপা গর্বও উঠে এসেছে মমতার গলায়। ঘোষণা করেছেন, ক্ষমতায় ফিরলে আরও পরিকল্পিতভাবে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যকে রূপায়ণ করাই হবে তাঁর সরকারের প্রধান কাজ।
বিজেপিকে নিয়ে মানুষের মোহভঙ্গের কথাও সর্বসমক্ষে তুলে ধরেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কটাক্ষের সুরে জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটের পর মানুষ বুঝেছেন, বিজেপিকে ভোট দিলে কী হয়! ভাটপাড়া হয়, নৈহাটি হয়, বনগাঁ আর বাগদা হয়। কয়েকটা আসন জিতেই লম্ফঝম্ফ শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। কী ভাষা—এনকাউন্টার করে দেব, দাঙ্গা লাগাও, আগুন লাগাও, ভাঙচুর কর, পুলিসকে মারো… আরও কত কী! রাজ্যের বিজেপি নেতাদের নাম না করে তাচ্ছিল্যের সুরে বলেছেন, ‘চিরকাল বাংলায় রয়েছি, কোনওদিন তো এদের দেখিনি! কে জানে কোথায় এদের রাজনৈতিক জন্ম?’
একথা বলার পরই ফের গলা চড়িয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বলেছেন, সব চক্রান্তের জবাব দেবে বাংলার মানুষ। অধিকার কেউ যেচে দেয় না, অধিকার কেড়ে নিতে হয়। বিজেপি দেখবে, কীভাবে গণতান্ত্রিক পন্থায় জয় ছিনিয়ে আনতে হয়। শুধু তাই নয়, সিপিএম, কংগ্রেস আর বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে কৌশলী বার্তাও দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, সিপিএম, কংগ্রেস আর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসুন। এখানে শাসন করার লোক আছে, শোষণ করার নেই।
শুধু কেন্দ্রের শাসকদলের হাতে নয়, সরকারিভাবেও বাংলা যে আক্রান্ত, সেই বার্তাও এদিন দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। ক্ষোভের সুরে বলেছেন, দিল্লি থেকে রোজ বাংলাকে অপমান, অসম্মান, লাঞ্ছনা আর গঞ্জনা দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বঞ্চনা এবং এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানো। তাঁর আরও আশঙ্কা, ‘আমি আজ বলছি, জানি কাল থেকে অত্যাচার বাড়বে। তবে আমি ভয় পাই না। সারা জীবন বোমা, গুলি আর বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছি।’ নাম না করে দৃপ্ত ভঙ্গিতে গেরুয়া শিবিরের জন্য মমতার স্পষ্ট বার্তা, জানবেন, জখম বাঘ বেশি ভয়ঙ্কর।