Logo

টিনএজ কন্যাদের জন্য সেরা ৭টি টিপস !

অনিন্দ্য বাংলা
রবিবার, অক্টোবর ১০, ২০২১
  • শেয়ার করুন

 অনলাইন ডেস্ক :   টিনএজ সময়টা সন্তানের জন্য অনেক নাজুক একটা সময়। এই সময়ে যেমন ভুল করার সম্ভাবনা থাকে তেমনি এই সময়ে সে শেখেও বেশি। আপনি আশেপাশে কিংবা আপনার ছোটবেলা খেয়াল করলেই দেখবেন টিনএজ সময়টা কীভাবে আপনার জীবনে প্রভাব রেখেছে। মূলত টিনএজ সময়টার পরই আপনার সন্তান বাইরের পৃথিবীর সাথে পরিচিত হতে শুরু করবে। সেজন্য জীবনবোধ সম্পর্কে তাকে টিনএজে থাকা অবস্থায় ধারণা দিতে হবে। আপনার পুত্র সন্তানের পাশাপাশি আপনার কন্যা সন্তানের জন্যও এই সময়টা একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ। টিনএজ সময়টাতেই বাইরের পৃথিবীর বাস্তবতার সাথে নিজেকে মানিয়ে একজন মানবিক, আত্মবিশ্বাসি ও সফল মানুষ হওয়ার জীবনবোধ সম্পর্কে আপনার সন্তানকে ধারণা দিতে হবে।

১. নিজেকে মূল্য দেয়া
আপনার পরিবার, আমাদের সমাজ ও সর্বোপরি পৃথিবীর জন্য আপনার কন্যা সন্তান কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তো আপনি জানেন। যদি জানেন তাহলে এই বিষয়টা আপনার সন্তানকেও জানান। আমাদের সমাজের বাস্তবতায় হয়তো কখনো কখনো মেয়েরা নিজেদের ছোট ভাবতে পারে। আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে তার গুরুত্ব সম্পর্কে তাকে এমনভাবে বোঝানো যেন তার মধ্যে এমন ভাবনা কখনো না আসে। আর যদি কখনো কখনো চলেও তাহলে তাকে তার মূল্য সম্পর্কে সচেতন করে এই ধরণের ভাবনা থেকে বের করে আনুন। পৃথিবীকে সুন্দর করতে নারীদের অবদান সম্পর্কেও আপনি তাকে জানাতে পারেন। তাকে নিজের মূল্য বোঝতে শেখান ও নিজেকে ভালোবাসতে শেখান।

২. নিজের অনূভূতি শেয়ার করা
সন্তানকে অনুভূতি শেয়ার করার কথা বলার আগে মনে রাখবেন, সন্তান তখনই তার অনুভূতি শেয়ারে আগ্রহ পাবে যখন আপনার মাঝে তার অনুভূতি শোনার আগ্রহ থাকবে। এই সময়টাতে তার মনোজগতে অনেক পরিবর্তন আসবে! তার মাঝে নানা প্রশ্ন জন্ম নিবে ও অনেক কিছুর প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। সেগুলো যে সবসময় পজেটিভ থাকবে তা না, এই সময়ে অনেক নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতিও আগ্রহ বাড়তে পারে। এই সময়ে তার সাথে বন্ধুভাবাপন্ন আচরণ করুন ও তার পজেটিভ, নেগেটিভ সকল অনুভূতি যেন আপনার সাথে শেয়ার করে এই বিষয়টা নিশ্চিত করুন। তার সবকিছু আপনি শুনতে আগ্রহী ও তাকে সাপোর্ট দিতে আগ্রহী তাকে এমন সাহস দিয়ে রাখুন। ফলে তার অনুভূতিগুলো জেনে তাকে আপনি সঠিক দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতে পারবেন।

৩. বাইরের সৌন্দর্যের চেয়ে মনের সৌন্দর্য বড়
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, এখানে বাইরের সৌন্দর্য, বাইরের চাকচিক্য দেখানোর জন্য সবাই প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এবং বলাই বাহুল্য এই সংখ্যাটায় টিনএজ মেয়েরাই বেশি। বাইরের চাকচিক্য দেখাতে গিয়ে, নিজেকে ফেমাস করতে গিয়ে অনেকেই ভুল পথে পা বাড়ায়। আপনার সন্তানকে শেখান, বাইরের সৌন্দর্যের চেয়ে মনের সৌন্দর্য, আত্মবিশ্বাস, মানবিকতা, জানার পরিসর বাড়ানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাইরের চাকচিক্যের জন্য হয়তো সাময়িক কিছু জনপ্রিয়তা ও বন্ধু বান্ধব পাবে কিন্তু আত্মবিশ্বাসী, ব্যক্তিত্ববান ও সচ্চরিত্র না হলে কখনোই দীর্ঘমেয়াদী সফলতা আসবে না। আপনার সন্তানকে দেখতে আকর্ষনীয় না হয়েও পৃথিবী জয় করা নারীদের উদাহরণ দিতে পারেন।

৪. আমরা সবাই সমান
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় কখনো কখনো তার মনে হতে পারে সে একটা পুরুষের সমান হতে পারবে না। এটা একটা ভুল ধারণা। কারণ মানুষ বড় হয় যোগ্যতায়, লিঙ্গের বিচারে নয়। আমাদের দেশসহ বিশ্বের প্রতিটা প্রান্তে এখন মেয়েরা পুরুষের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করছে। আপনার কন্যা সন্তানকে বলুন, মেয়ে হিসেবে সে মোটেও পিছিয়ে নেই। বরং যোগ্যতা বলে সে পুরুষকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। সফল নারীদের উদাহরণ টানতে পারেন এখানেও। কিন্তু মাথায় রাখা উচিত সে যেন অন্য সবকিছুর পাশাপাশি পুরুষকেও সম্মান করতে শেখে। কারণ একজন মানবিক ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ সবাইকে ও সব মতকে সম্মান করতে জানে।

৫.মেকআপ অতি জরুরী নয়
সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে-মেয়েদের মুখে ব্রণ উঠে। তখন তারা হয়তো মেকআপের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে পারে। এই সময়টাতে তাকে ধারণা দিন যে, বয়ঃসন্ধিকালে মুখে ব্র্ন ওঠা জীবনেরই একটা অংশ। এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ত্বকের ব্রন ও ব্রনের দাগ সেরে যাবে। একটা নির্দিষ্ট বয়সের আগে মেকআপ ব্যবহার করা ত্বকের জন্য উল্টো ক্ষতিকর। তাছাড়া ভারী মেকআপ সবসময় ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। কারণ ভারী মেকাপের মাধ্যমে বিষাক্ত ক্যামিক্যাল সরাসরি আমাদের ত্বকে চলে যায়।

৬.ব্যর্থতা জীবনেরই একটা অংশ
পরীক্ষায় ফেল, কোন কারণে তাকে বকাঝকা করা ইত্যাদি অনেক কারণে টিনএজ মেয়েরা বড় কোন আক্রমণাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার দিকে খেয়াল করলেই এমন অনেক কিছুই চোখে পড়বে। ব্যর্থতা যে জীবনেরই একটা অংশ এই শিক্ষাটা তাকে দিতে হবে। তার ব্যর্থতায় তার পাশে থাকুন। তাকে তার ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করুন। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই সফলতার দিকে আগ্রসর হওয়া যায় এই শিক্ষাটা তাকে ছোট থেকেই দিন। এর ফলে সে তার সামনের জীবনে হতাশ না হয়ে সফলতার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

৭. খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করা
আমরা সবাই বন্ধু বানাতে পছন্দ করি। এই সময়টাতে স্কুল ও অন্যান্য সবকিছু মিলিয়ে ছেলে-মেয়েদের অনেক বন্ধু তৈরি হয়। তার সব বন্ধুই যে ভালো তা কিন্তু না। কিছু বন্ধু থাকে যাদের খারাপ অভ্যাস থাকে। এই সময়টাতে নতুন ও নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি তাদের আগ্রহ থাকে অনেক, এবং নিজের অজান্তেই ঘটতে পারে আপত্তিকর কোন ঘটনা। হয়তো আপনি তার সেই সকল বন্ধুদের কথা কখনোই জানবেন না। সেজন্য খারাপ সঙ্গ ও ভালো সঙ্গের মানদন্ড তাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিন ও খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে বলুন। সে হয়তো আপনার কথাকে তেমন পাত্তা নাও দিতে পারে। কিন্তু আপনার তাকে বুঝিয়ে যেতে হবে খারাপ সঙ্গ কেনো ক্ষতিকর!

টিনএজ সময়টা অনেকটা জীবণের সূর্যোদয়ের মতো। এই সময়ের শিক্ষাই মূলত একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পেলে। মূলত এই সময়টাই ঠিক করে দেয় একজন মানুষের জীবনবোধ কেমন হবে! সেজন্য আপনার সন্তানকে সফল ও মানবিক করে গড়ে তোলার জন্য জীবনবোধের এই শিক্ষাগুলো তাকে এই সময়টাতেই দিন। আপনি হয়তো তাকে শিক্ষাটা দিতে পারবেন কিন্তু তাকে সবসময় মনিটর করা আপনার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। এজন্য আপনি বিশ্বাস করেন সে খারাপ কিছু করবে না, তার ভেতরে এমন একটা বোধ তৈরি করুন। এটা অনেকটা তার দায়িত্ব তার কাঁধে দিয়ে দেয়ার মতো। সে যখন বুঝতে পারবে তার প্রতি আপনার বিশ্বাস রক্ষা করার দায়িত্বটাও তার আশা করা যায় সে সেটা ঠিকভাবেই রক্ষা করবে।