Logo

ডুবে যাওয়া লঞ্চে শতাধিক যাত্রী ছিল, ৫ লাশ উদ্ধার

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, এপ্রিল ৫, ২০২১
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক: রাজধানী থেকে মুন্সিগঞ্জে যাতায়াতের জন্য বহু মানুষ লঞ্চযাত্রাকেই বেছে নেন। রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে ছেড়ে আসা এমভি রাবিত আল হাসান নামের ছোট দোতলা লঞ্চটিতে ওঠা যাত্রীদের বেশির ভাগই মুন্সিগঞ্জ সদরের বাসিন্দা। নির্মিতব্য তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু কাছে লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে মানুষ জড়ো হন মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডুবে যাওয়া লঞ্চটির পাঁচ নারী যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

ডুবে যাওয়া লঞ্চটি থেকে বেঁচে ফেরা কয়েকজনকে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক শায়ের আহমেদ (২৫) বলেন, রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেলে ইন্টার্নশিপ চলছে তাঁর। তাঁর বাড়ি মুন্সিগঞ্জ শহরের খালইস্ট এলাকায়। প্রতিদিনই হাসপাতালের ডিউটি শেষে বাসে নারায়ণগঞ্জে, সেখান থেকে লঞ্চে মুন্সিগঞ্জ আসেন। লঞ্চে নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে ৪৫ মিনিটের মতো সময় লাগে। রোববার সন্ধ্যায় তিনি রাবিত আল হাসান নামের ছোট লঞ্চটিতে ওঠেন। নৌযানটি মুক্তারপুর সেতুর কাছে এলে পেছন থেকে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। এতে লঞ্চটি কাত হয়ে যায়। চিকিৎসক শায়ের আহমেদ ত্বরিত সিদ্ধান্তে প্যান্ট, জামা, জুতা খুলে নদীতে ঝাঁপ দেন। এরপর সেখানে নির্মাণাধীন সেতুর পিলার ধরে কিছুক্ষণ ভেসে ছিলেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।

বেঁচে ফেরা শায়ের আহমেদ বলেন, অন্য দিন লঞ্চে ৫০ থেকে ৬০ জন যাত্রী থাকে। তবে রোববার সন্ধ্যার ওই লঞ্চে শতাধিক যাত্রী ছিলেন। লকডাউনের কারণে অনেকে মুন্সিগঞ্জের গ্রামে ফিরছিলেন।

মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটের ইজারাদার দিল মোহাম্মদ কোম্পানি জানালেন, লঞ্চটিতে অন্য দিনের তুলনায় যাত্রী বেশি ছিল। তিনি বলেন, অন্য দিন লঞ্চে যাত্রী কিছুটা কম থাকে। রোববার সেই তুলনায় যাত্রী বেশিই ছিল। লঞ্চটি ঠিকঠাকই আসছিল। পেছন থেকে বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যায়। লঞ্চের যাত্রীদের অধিকাংশই মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা।

লঞ্চের বেঁচে ফেরা যাত্রী মো. মারুফ (১৭) জানায়, সে নারায়ণগঞ্জের মাছের আড়তে কাজ করে। লকডাউনের কারণে বরিশালের স্বরূপকাঠিতে গ্রামের বাড়ি ফেরার জন্য বড় লঞ্চ ধরতে মুন্সিগঞ্জে যাচ্ছিল সে। সন্ধ্যা ছয়টার কিছু আগে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে ছাড়ে রাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি। সোয়া ছয়টার দিকে লঞ্চটি নির্মিতব্য তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছে পৌঁছায়। এ সময় পেছন থেকে বড় একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। দোতলা লঞ্চটির নিচতলায় ছিল মারুফ। বাল্কহেডের ধাক্কায় লঞ্চটি কাত হয়ে গেলে মারুফ জানালা দিয়ে বের হয়। ধাক্কার পর নৌযানটি আধা মিনিটের মতো ভেসে ছিল, ততক্ষণ সে লঞ্চের ওপরই দাঁড়িয়েছিল। তখন লঞ্চের ভেতর থেকে অনেকেই তার পা জড়িয়ে ধরেন। কোনো রকমে পা ছাড়িয়ে সে নির্মাণাধীন সেতুর পিলার ধরে ভেসে থাকে। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়। চোখের সামনে বহু মানুষকে তলিয়ে যেতে দেখে আক্ষেপ করছিল এই কিশোর।

মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে স্বজনদের খোঁজে এসেছেন বহু মানুষ। নদীর তীরে বসে আহাজারি করছিলেন তাঁরা। তাঁদের একজন মিনু বেগম (৬০)। তিনি বলেন, তাঁর পুত্রবধূ বিথি আক্তার (২৫), নাতনি আরিফা (১ বছর) ও বিথির মা ওয়াকিদা বেগম (৫০) ওই লঞ্চে ছিলেন। দুর্ঘটনার পর থেকে তাঁদের সবার ফোন বন্ধ। শিশু আরিফাকে ডাক্তার দেখাতে নারায়ণগঞ্জের পপুলারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে সবাই নিখোঁজ।

বিপাশা সরকার খুঁজছিলেন স্বামী লোকনাথ দাসকে (৩৮)। বিপাশা বলেন, লোকনাথ মুন্সিগঞ্জের একটি স্বর্ণের দোকানে কাজ করেন। দুপুরের দিকে কাজে নারায়ণগঞ্জে যান লোকনাথ। পাঁচটার পর জানান তিনি লঞ্চে মুন্সিগঞ্জ ফিরছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে লোকনাথের ফোন বন্ধ। এরপর কেবলই আহাজারি করছিলেন বিপাশা।

নাজমা বেগম খুঁজছিলেন খালা বেবি বেগম (৫০) ও খালু সোলায়মানকে (৬০)। তাঁদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদরের চরডুমুরিয়া এলাকায়। সোলায়মানের ফুসফুস ক্যানসার। তিন দিন আগে তাঁকে কেমোথেরাপি দিতে ঢাকায় নেওয়া হয়। থেরাপি শেষে রোববার বাড়ি ফিরছিলেন। মেয়ে তাঁকে বন্দর থেকে লঞ্চে উঠিয়ে নাজমা বেগমকে ফোন করে দেন। এর অল্প কিছুক্ষণ পরেই নাজমা বেগমকে তাঁর খালাতো বোন ফোন করে জানান যে লঞ্চটি ডুবে গেছে।

লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পরপরই ঝড়–বৃষ্টি শুরু হয়। এ কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়েছে বলে জানালেন মুক্তারপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক কবির হোসেন। তিনি বলেন, হতাহত বা নিখোঁজ ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে তাঁরাও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাননি।