Logo

নদী বাঁচাতে ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন এর প্রেস কনফারেন্স

অনিন্দ্য বাংলা
রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা : ব্রহ্মপুত্র নদী বাঁচাতে এবং চলমান খনন কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে  আজ ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে সচেতনমহলসহ প্রেস ও প্রিন্ট মিডিয়ার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করার পাশাপাশি আবুল কালাম আল আজাদ আরও বলেন, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র বেশ কিছু জায়গায় একাধিক ধারায় প্রবাহিত। খনন করা হচ্ছে একটি ধারা আর খননের বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে অন্যান্য ধারা। এটা পরিষ্কার নদী হত্যা। প্রকল্পটি তৈরি করার সময় নদী বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে কি না, কোনও স্টাডি করা হয়েছে কি না সেটা কাজের ধরণ দেখে বোঝা যায়।
সারাদেশে হাজার হাজর খাল নদী খননের কাজ পাচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা কোথাও কোথাও কোনও কাজ না করেই পুরো টাকা লোপাট করছে। দেখার কেউ নাই।
তিনি আরও বলেন, তিস্তা সহ প্রায় সবগুলো নদীর উজানে ভারত বাঁধ তৈরি করার কারণে নদীগুলো বিপণ্ন। দেশে ভুমিদস্যুরা নদী দখল করছে, দূষণ করছে। নদীকে বাঁচাতে এই মুহুর্তে আমাদের সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নাই। ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্পটিকে পুনর্বিবেচনা করে নদীর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
জনাকীর্ণ এই সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আরও বক্তব্য রাখেন লেখক গবেষক শাহ নুরুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক মাহমুদ বাবু।

ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের লিখিত বক্তব্য:

বন নদী জলাশয় দখল-দূষণ মুক্ত করতে হবে
ব্রহ্মপুত্র খননের নামে খাল বানানো বন্ধ করো

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
‌ব্রহ্মপুত্র পৃথিবীর অন্যতম নদী, প্রাণপ্রবাহ। ব্রহ্মপুত্র পাড়ে গড়ে ওঠেছে প্রাচীনতম জনপদ। এই বঙ্গভূমির উত্থানের অন্যতম যোজনা ব্রহ্মপুত্রের পলি। যুগেযুগে ব্রহ্মপুত্র প্রবাহ মানুষের সহায় হয়েছে। আজ ব্রহ্মপুত্রের পুরানা ধারাটি বিপণ্ন, মৃতপ্রায়। ১৮৮৫ সালে আনুমানিক ৮.৮ মাত্রার এবং ১৮৯৭ সালে আনুমানিক ৮.৮ মাত্রার এবং ১৭৬২ সালে আনুমানিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের কারণে ব্রহ্মপুত্র তার গতিপথ পাল্টে মুল ধারাটি যমুনা দিয়ে প্রবাহিত করে।
‌মানুষের দখল ও দূষণে জর্জরিত ব্রহ্মপুত্রকে সুরক্ষা দেওয়া এই বদ্বীপবাসীর প্রাণের দাবি।
‌এমতাবস্থায়, বিগত ২০১৯ সালে শুরু হওয়া ব্রহ্মপুত্রকে খনন করার লক্ষ্যে ২,৭৬৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জামালপুরের পোলালাকান্দি থেকে গাজীপুরের টোক পর্যন্ত ২২৭ কিলোমিটার নদী খননের কাজ চলছে। শুষ্ক মৌসুমে ১০০ মিটার প্রস্থ এবং ১০ ফুট গভীরতা থাকার কথা বলা হচ্ছে।
এ জন্য প্রয়োজনীয় উচ্ছেদের কাজও করা হবে বলা হয়েছিল। খননকাজ শেষে আরো তিনবছর দেখভাল করার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু, আমরা পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করছি যে, এখনও পরিষ্কারভাবে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে স্থায়ী সীমানাপিলার বসানো হয়নি। দখলদারি উচ্ছেদ করা হয়নি। বেশ কয়েকটি শহর পৌরসভা সিটি কর্পোরেশন নদী দূষণ করে যাচ্ছে। হাজার হাজার হাজর কলকারখানা টিটিপি ছাড়াই চলছে, কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এতে নদী বিষাক্ত হচ্ছে। নদীতে থাকা অজস্র প্রাণ হারিয়ে যাচ্ছে। দখল ও দূষণ মোকাবেলার কার্যকর উদ্যোগ নাই। দখল-দূষণ জারি রেখে নদীকে বাঁচানো কীভাবে সম্ভব?

আরও উদ্বেগজনক জনক বিষয় হলো- বিশাল একটি নদীকে ১০০ মিটারের খালে পরিণত করার চেষ্টা। নদী খননের বালু রাখা হচ্ছে নদীর বুকেই। চলতি বর্ষায় অধিকাংশ উত্তোলিত বালু নদীতেই ফিরে গেছে। বাদবাকি বালুর স্তুপের উপর নতুন করে দখলদারি কায়েমের লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে। এখনও বর্ষায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ধারায় যে পরিমাণ পানি আসে তা এক থেকে দুই কিলোমিটার জায়গা দাবি করে।
১০০ মিটারের সংকীর্ণতা কি নদীর স্বতঃস্ফূর্ত প্রবাহের জন্য নতুন বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না?

কাজেই আমাদের সুনির্দিষ্ট দাবি:
১) খননের নামে ব্রহ্মপুত্রকে খালে পরিণত করা চলবেনা।
২) নদীর বুককে দখলমুক্ত করার জন্য সকল ধরণের স্থাপনা অনতিবিলম্বে উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক গতিধারা ফিরিয়ে আনতে হবে।
৩) কলকারখানা এবং বিভিন্ন শহর জনপদের বিষাক্ত বর্জ্য, আবর্জনা নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে।
৪) ১৯৫০ সনের প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী দেশের সমস্ত নদী খালবিল জলাশয়ের জায়গা চিহ্নিত করে স্থায়ী সীমানাপিলার বসাতে হবে।
৫) প্রাণ-প্রকৃতির শত্রু প্লাস্টিক প্যানা নিষিদ্ধ করতে হবে।
৬) নদী খালকে সংকীর্ণ করে পুরানো ধাঁচের নদী হন্তারক ব্রীজ কালভার্ট স্থাপন থেকে বের হয়ে প্রয়োজনে ঝুলন্ত ব্রীজ তৈরি করতে হবে।
৭) সমস্ত নদীখালের গতিরোধকারী বাঁধ অপসারণ করে স্বাভাবিক জলপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

আমরা আশা করি, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হবে।