Logo

নামায সফলতার হাতিয়ার।। মুহা. নেয়ামতুল্লাহ রশিদী

অনিন্দ্য বাংলা
শনিবার, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ হতে অন্যতম একটি হচ্ছে নামায। নামাজ বেহেশতের চাবি। মুমিনদের দু‘জানে সাফল্যের অন্যতম এক হাতিয়ার। সুখ-শান্তি ও অনাবিল প্রশান্তির চিরস্থায়ী ঠিকানায় পৌঁছানোর মাধ্যম নামায। মানুষকে সব ধরনের বেহায়াপনা-অশ্লীলতা হতে বিরত রাখে এই নামাযে। সৎ, নিষ্ঠা ও ভালো কাজের প্রতি আহবান করে নামায। কুরআন কারীমে মোট বিরাশিটি আয়াত নামায সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে, এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে তাদের পালনকর্তার নিকট। তাদের নেই কোনো শঙ্কা এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ সূরা বাকারাহ—আয়াত: ২২৭।
অন্য জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বলেন, ‘আর তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সঙ্গে, যারা অবনত হয়।’ সূরা বাকারা—আয়াত: ৪৩
হযরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাম স্বীয় রবের কাছে প্রার্থনা করে বলেছেন, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে গণ্য করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের রব আমার দুয়া কবূল করুন।’ সূরা ইবরাহিম—আয়াত: ৪০
ঠিক তদ্রুপভাবে হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও একইভাবে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন নামাযের আদেশ করেছেন, হে রাসূল! আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামায প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিন এবং নিজেও এর উপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে রিযিক চাই না; বরং আমি আপনাকে রিযিক দিই। আর আল্লাহ ভীরুতার পরিণাম শুভ।’ সূরা ত্বহা—আয়াত ১৩২
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম হাদীস শরীফে বলেন, ‘নামায ধর্মের খুঁটি, যে ব্যক্তি নামায ঠিকমত আদায় করল, সে ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করল। আর যে ব্যক্তি নামায ঠিকমত আদায় করল না, সে দীনের খুঁটিকে বিনষ্ট করল।’ বায়হাকী: ২৮০৭
কুরআনের আলোকে:
কুরআনে কারীমে নামাযের ফযিলত সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, নামায কায়েম কর দীনের দু‘অংশে (ফজর যোহর প্রথমাংশে আর দ্বিতীয়াংশে আসর) আর রাতের প্রথমাংশে (মাগরিব -ইশা)। ‘নিশ্চয় নেক কাজসমূহ পাপকে দূর করে দেয়।’ সূরা হুদ—আয়াত: ১১৪
অন্যত্রে বলেন, ‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যায় করে, তারাই প্রকৃত মুমিন, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক।’ সূরা আনফাল— আয়াত: ৩-৪
আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন অন্য জায়গায় স্পষ্ট ভাষায় বলেন, নিশ্চয় নামাযই বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে। আল্লা’র স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ, তোমরা যা কর আল্লাহ তা তিনি জানেন।’ সূরা আনকাবুত—আয়াত: ৪৫
হাদিসের আলোকে—
যারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, তাদের আমলনামায় কোনো গোনাহ থাকবে না। নামায বান্দার আমলনামা থেকে গোনাহগুলোকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেয়। হযরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা বলতো, যদি তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি নহর থাকে যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? সাহাবারা উত্তরে বললেন: না, কোনো ময়লাই অবশিষ্ট থাকবে না। অতঃপর রাসূল সা: বললেন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত এমনই। এর বিনিময়ে আল্লাহ পাক নামাযীর সব গোনাহ মাফ করে দেন।’ (বোখারি:৫০৩)।
নামায আদায়ের ক্ষেত্রে অবহেলা করলে, আখিরাতে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। হযরত নাওফেল ইবনে মুয়াবিয়া রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, ‘যার এক ওয়াক্ত নামায ছুটে গেল তার যেন ঘরবাড়ি, পরিবার-পরিজন ও ধন-দৌলত সবকিছু ছিনিয়ে নেয়া হলো।’ (ইবনে হিব্বান-৪:৩৩০ পৃ.)।
 নামাযের গুরুত্ব এতটাই যে, মুসলমান ও অন্য ধর্মের লোকদের মধ্যে পার্থক্যই হলো নামায। হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, ‘মানুষের শিরক এবং কুফরের মধ্যে পার্থক্য নামায ছেড়ে দেয়া।’ (মুসলিম:২৪৭)।
 অন্যত্রে  হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: নামাযী ব্যক্তিকে পাঁচটি পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি গুরুত্ব সহকারে নামায আদায় করবে—আল্লাহ তাআলা তাকে পাঁচটি পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।
১—রুজি-রোজগার ও জীবনের সংকীর্ণতা হতে তাকে মুক্ত করবেন।
২—তার উপর থেকে কবরের আজাব উঠিয়ে নেবেন।
৩—আমলনামা ডান হাতে দিবেন।
৪—পুলসিরাত বিদ্যুৎ গতিতে পার হয়ে যাবে।
৫—বিনা হিসেবে বেহেশতে প্রবেশ করবে।
অন্য জায়গায় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নামায বেহেস্তের চাবি। এবং তিনি আরো বলেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামায সম্পর্কে হিসেব নেয়া হবে। যদি যথাযথভাবে নামায আদায় করে থাকে তবে সে কামিয়াবী ও সফলতা অর্জন করবে, আর যদি নামায যথাযথভাবে নামায আদায় না করে, থাকে তাহলে সে ব্যর্থ ও বিপর্যস্ত হবে।
মুহা. নেয়ামতুল্লাহ রশিদী, মারকাযে ইমাম বুখারি রহঃ ইসালামী আইন ও গবেষণা বিভাগ
উত্তর বাড্ডা, গুলশান ঢাকা।