Logo

পরীমনির মামলার প্রধান আসামি নাসির, অমিসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, জুন ১৪, ২০২১
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক: ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমনির করা মামলার প্রধান আসামি নাসির ইউ মাহমুদ, অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে তাঁদের উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার বাকি তিনজন হলেন লিপি, সুমি ও স্নিগ্ধা।

আসামিদের গ্রেপ্তারে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মশিউর রহমান।

পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ।

ডিএমপির (মিডিয়া) অতিরিক্ত উপকমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে মাদকও জব্দ করা হয়েছে।

এর আগে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেছিলেন, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার ঢাকা সার্কেল অফিসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সাভার মডেল থানার ওসির নেতৃত্বে একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পরীমনির করা মামলায় মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিরা অজ্ঞাতনামা।

চিত্রনায়িকা পরীমনি ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ, অমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন। পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পরীমনির মামলার ঘটনাটি ঢাকা জেলা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও (ডিবি) ছায়া তদন্ত করছে।

পরীমনির সাভার থানায় মামলা করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) মো. সোহেল রানা খুদে বার্তায় বলেন, তাঁর বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

পরীমনি গতকাল রোববার রাতে বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের জানান, গত ৮ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে বাইরে বের হন। বন্ধুটি তাঁদের নিয়ে যান আশুলিয়ার একটি ক্লাবে। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজনের সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদেরই একজন হঠাৎ জোর করে তাঁর মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় মারধর করা হয় পরীর সঙ্গে থাকা জিমিকেও।

চিত্রনায়িকা পরীমনির অভিযোগ, ঘটনার পরপরই বনানী থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সে সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তাঁর অভিযোগ রেকর্ড করেননি। বরং সকালে এসে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। এ সময় পুলিশের সাহায্যে পরীমনি হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও আতঙ্কবশত চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। এ ঘটনায় মারাত্মক ভেঙে পড়েছেন পরীমনি। ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

রোববার সন্ধ্যার সময় ফেসবুক পোস্টে পরীমনি অভিযোগ করেন, তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেন পরীমনি।

আরো পড়ুন :

এদিকে পরীমনির বাসায় অবস্থানরত তাঁর মামা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘তিন থানাতেই আমরা লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোন থানা সেটা গ্রহণ করেছে, তা এখনো জানি না। পরীমনি অসুস্থ। তার জ্বর ও বুকে ব্যথা। গলার স্বরও ভেঙে গেছে।’

গতকাল রাতে বনানীর বাসায় সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি বলেন, যেদিন রাতে তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়, সেদিনই ভোরে অভিযোগ জানাতে তিনি বনানী থানায় হাজির হন। কিন্তু ওই মুহূর্তে থানা পরীমনির অভিযোগ না নিয়ে পুলিশ প্রহরায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পরীমনি ভয়ে চিকিৎসা না নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসেন। এরপর চার দিন ধরে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিসহ নানা জায়গায় ধরনা দিয়ে কারও কোনো সহযোগিতা না পেয়ে নিজের কোটি অনুসারীর ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট দিয়ে জানান, তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।

‘আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে’—নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ করেছেন ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা পরীমনি। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেছেন তিনি।পরীমনি লিখেছেন, ‘আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। এই বিচার কোথায় চাইব? কে করবে সঠিক বিচার?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মা’ সম্বোধন করে পরীমনি লিখেছেন, ‘চার দিন ধরে থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধুদের কাউকে পাই না, মা। যাদেরকে পেয়েছি, সবাই বিস্তারিত ঘটনা জেনে “দেখছি” বলে চুপ হয়ে যায়!’

কোথাও প্রতিকার না পেয়ে পরীমনি লিখেছেন, ‘আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা যদি “আমি মেয়ে”, “লোকে কী বলবে” এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারও কী করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো কি চুপ করে থাকতে পারি, মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’

শৈশবে মা হারানোর ঘটনা উল্লেখ করে পরীমনি লিখেছেন, ‘আমার মা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এত দিনে কখনো আমার একমুহূর্ত মাকে খুব দরকার মনে হয়নি। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে, মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার, মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার, মা। মা, আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও, মা।’

আরও পড়ুন-

নাসির জোর করে মদ মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে গায়ে হাত দেন: পরীমনি

নাসির জোর করে মদ মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে গায়ে হাত দেন: পরীমনি 
ছবি: সংগৃহীত

ঢালিউডের আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে।  এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যবসায়ী নাসিরসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  পরীমনির বন্ধু অমিও এই ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ নায়িকার।  ৫ দিন আগে ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা ও হুমকির অভিযোগে আজ মামলা করেছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় এই নায়িকা।

সাভার মডেল থানায় তিনি মামলাটি করেন। মামলায় উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অমিসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।

নায়িকা এজাহারে উল্লেখ করেন, মদ্যপান করতে না চাইলে ১ নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে।  এতে আমার সামনের দাঁত ও ঠোঁটে আঘাত পাই।  ১ নম্বর আসামি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।  আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে।

তিনি আরও বলেন, ১ নম্বর আসামি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ১ নম্বর আসামিকে বাধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করে।  এই সময় আমি ৯৯৯–এ কল করতে গেলে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি টান মেরে ফেলে দেওয়া হয়।  ২ নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ৪ জন ১ নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করেন।

পরিমণি লিখেছেন, ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে পরীমণি, তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, বন্ধু অমি ও বোন বনি দুটি গাড়িতে উত্তরার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। পথে অমি জানান ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। ১২টা ২০ মিনিটের দিকে বোট ক্লাবের সামনে গাড়ি দাঁড় করানো হয়।  কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তারপর ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেন।

পরীমণি মামলার এজাহারে আরও লিখেছেন, অমি অনুরোধ করে এখানের পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো। আমরা বোট ক্লাবে প্রবেশ করে বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট থেকে বের হতেই অভিযুক্ত আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন।

এজাহারে আরও লেখা হয়েছে, আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ আসামি নাসির মদ্যপান করার জন্য জোর করেন। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে নাসির জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন।

প্রসঙ্গত, নড়াইলের মেয়ে শামসুন্নাহার স্মৃতি চলচ্চিত্রে পরীমনি নাম নিয়ে ২০১৫ সালে নামার পর দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ইতোমধ্যে দুই ডজন চলচ্চিত্রে নায়িকার চরিত্র রূপায়ন করেছেন তিনি।

রোববার রাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে এক স্টেটাসের মাধ্যমে এমন অভিযোগ করেন তিনি। তবে শুরুতে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেটা তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি পরীমনি এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

এরপর রাতেই রাজধানীর গুলশানে নিজের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করেন পরিমনি। তার অভিযোগ নাসির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

সংবাদ সম্মেলনে পরিমনি বলেন, ‘একটা কাজে আমার পূর্ব পরিচিত অমি নামে একজনের অনুরোধে তার সঙ্গে আমি উত্তরায় নাসির উদ্দিনের কাছে যাই।

তিনি নিজেকে তখন উত্তরা বোট ক্লাবের সভাপতি বলে পরিচয় দিয়েছেন। সেখানে যাওয়ার পর আমাকে মদ্যপান করতে বলা হয়। আমি সেটা না করলে এরপর আমাকে নির্যাতন করা হয়। ধর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়। এমনকি হত্যা করবেন বলেও হুমকি দেন। ঘটনাটি ঘটেছে চার দিন আগে।’