Logo

পর্যটন ব্যবসায় ধস !

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, মার্চ ২৭, ২০২০
  • শেয়ার করুন

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব ধরনের ব্যবসায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। সমগ্র অর্থনীতি যেমন বাধাগ্রস্ত তেমনি বিশ্ব পর্যটন প্রায় স্থবির। করোনা মোকাবেলায় লন্ডন থেকে শুরু করে নিউইয়র্ক, প্যারিস- সবখানেই হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিমান পরিবহন অনেকটা বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দা শুরু হয়ে গেছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলায় পর্যটনে ক্ষতি হয়েছিল ৭৭০ কোটি মার্কিন ডলার, অন্যদিকে ২০০২ সালে সার্স ভাইরাসের প্রভাবে পর্যটনে লোকসান হয়েছিল ৮২০ কোটি ডলার এবং ২০২০ সালে করোনাভাইরাসে পর্যটনে ৩ হাজার কোটি ডলার লোকসানের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৯ সালে ৮৪০ কোটি মানুষ বিশ্ব ভ্রমণ করেছে। স্পেনে ভ্রমণ করেছে ১ কোটি ৮০ লাখ, চীনে ১৪ কোটি ৩০ লাখ ও ভারতে প্রায় ১০ কোটি ৫০ লাখ। বিশ্বব্যাপী হোটেল, রেস্তোরাঁ ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হোটেল বুকিং প্রায় শতভাগ কমেছে। কানাডাতে এ সময় হোটেল বুকিং কমেছে ৯৪ শতাংশ, ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে কমেছে ৯০ শতাংশ, আয়ারল্যান্ডে ৮৬, যুক্তরাষ্ট্রে ৮৪ এবং যুক্তরাজ্যে ৮২ শতাংশ।

ভাইরাসের আতঙ্কে মাটিতে নেমে এসেছে এয়ারলাইনস বা এভিয়েশন শিল্প খাত। কেন না, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ ভ্রমণ স্থগিত রেখেছে। পর্যটন খাত বড় ধরনের বিপদে আছে। মানুষ সফর কম করছে বলে অনেক এয়ারলাইনস এখন আর আকাশে উড়ছে না। বিমান পরিবহনে চীন, হংকং ও তাইওয়ান সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে। আবার একই অঞ্চলের বড় অর্থনীতির দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থাও নাজুক। তাদের ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে আছে। আবার দূরের দেশগুলোর মধ্যে কানাডা তাদের ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে ৫৮ শতাংশ এবং রাশিয়া ৬৭ শতাংশ। এক মাসে চীনের ফ্লাইট বন্ধ হয়েছে ৯১ শতাংশ, তাইওয়ানের ৯০ দশমিক ৬, হংকংয়ে ৮৬ দশমিক ৪, ভিয়েতনামে ৮৫ দশমিক ৯, থাইল্যান্ডে ৭৬ দশমিক ৯, মালয়েশিয়ায় ৭৫ দশমিক ২, জাপানে ৭৪ দশমিক ৬, দক্ষিণ কোরিয়ার ৬৯ দশমিক ৩, কানাডার ৫৮ দশমিক ২ এবং কম্বোডিয়ার ফ্লাইট বন্ধ ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। থাইল্যান্ডে মোট পর্যটকের ৩০ শতাংশ চীনা পর্যটক। থাইল্যান্ড ট্যুরিজম অথরিটি সূত্র অনুযায়ী থাইল্যান্ডে পর্যটন থেকে ৩০৫ কোটি ডলার আয় কমতে পারে।

ভিয়েতনামে ৫০৯ কোটি ডলার, ইন্দোনিশায় পর্যটন দ্বীপ বালিতে ২০ হাজার হোটেল বুকিং বাতিল করা হয়েছে বিধায় ৪০০ কোটি ডলার লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ (আইএটিএ) সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানায়, ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন কমে গেছে ২০ শতাংশের বেশি। আইএটিএ’র ধারণা ছিল এ বছরও বিমানের যাত্রী চাহিদা বাড়বে। তবে সেই বক্তব্য সংশোধন করে তারা জানিয়েছে, এক দশকের মধ্যে অর্থাৎ ২০০৮-০৯ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পর থেকে প্রথমবারের মতো এ বছর যাত্রী পরিবহন কমছে। তাই খরচ কমাতে বড় উড়োজাহাজের পরিবর্তে ছোট উড়োজাহাজ দিয়ে যাত্রী বহন করছিল বিমান সংস্থাগুলো। কিন্তু তাতেও লোকসানের বোঝা কমাতে পারছে না। তাই ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়েছে সংস্থাগুলো। বাতিল করা হয়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব প্যাকেজ ট্যুর।

আইএটিএ’র এই সতর্ক বাণীর সত্যতা এরই মধ্যে অনুভব করতে শুরু করেছে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান। অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা কান্তাস এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, করোনা সংকটে এই আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ভাগে তাদের কর-পূর্ব মুনাফা দশ কোটি মার্কিন ডলার কম হতে পারে। এছাড়া এয়ার ফ্রান্স- কেএলএম জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে ফেব্রুয়ারি

থেকে এপ্রিলের মধ্যে তাদের আয় ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার কমে যাবে। আইএটিএ’র মহাপরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আলেকজাঁদ্র দ্য জুনিয়াক বলেন, কোভিড-১৯’র (করোনাভাইরাসে সৃষ্ট রোগ) কারণে চাহিদার তীব্র মন্দায় বিমান সংস্থাগুলোতে- বিশেষ করে চীনা বাজারের সংস্পর্শে আসাদের ওপর অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে। ২০২০ সাল এয়ারলাইনগুলোর জন্য ‘খুব কঠিন একটি বছর’ হতে চলেছে বলেও জানান তিনি।