Logo

বসন্ত কথন : সফিকুল ইসলাম

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২
  • শেয়ার করুন

বসন্ত কথন

…………….সফিকুল ইসলাম 
প্রিয়জনের খোঁপায় হলুদ ফুলের বাঁধুনি পড়াতে পারিনি তবুও এসেছে হৃদয় জাগানো ফাগুন। বাসন্তী রঙের শাড়ি পাঞ্জাবি পড়ে হয়ত দুজন হাতধরে বেড়াতে পারিনি, তাও লেগেছে চিরল সবুজ পত্রপল্লবে দক্ষিনা বায়ু। তারপরও কোকিল তো থেমে নেই, তার চিরচেনা সুরের মুর্চনায় জাগিয়ে তুলছে প্রকৃতিকে।   ফাগুনের ছোঁয়ায় আগুন রঙে এসেছে ভিতরে বাহিরে পাগলপারা বসন্ত। ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত। মাঘের শেষ বেলায় এসে বেশকিছু দিন শীতল হাওয়ার পাশাপাশি খানিকটা বাসন্তি উষ্ণতাও টের পাওয়া যাচ্ছিল। শীতল হাওয়ার সাথে উষ্ণতার পরশ তাই যেন কানে চুপিচুপি এসে বলে যায়-
দখিন দুয়ার খোলো,
আমি আসছি।
বসন্ত মানেই প্রকৃতির উষ্ণ ছোঁয়া। ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে, হরেক রঙে মন মাতিয়ে তিনি এলেন! ষড়ঋতুর বাংলায় মহাড়ম্বরে ঋতুরাজের আনুষ্ঠানিক আগমন ঘটেছে। কবির ভাষা ধার করে তাই এখন কণ্ঠে গীত হোক
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
 আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো।
বসন্ত মানেই উৎসব। বসন্তের মাতাল হাওয়ায় হৃদয়দল তো অবশ্যই খুলেছে। বসন্তের এই মাতাল সমীরণ উৎসবের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে চারিদিকে। এ উপলক্ষে প্রকৃতি এখন যেমন সাজসাজ রব, তেমনি জনমনেও আজ বসন্তের অনুপম আভা।
 ‘ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে,
তারে আজ থামায় কে রে…
এমন সব গানের মধ্য দিয়ে কেউ গুনগুন করে, কেউবা সরবে গেয়ে য়ায। বাসন্তী রঙের বাহারে উচ্ছ্বল চারদিক। প্রেমিক-প্রেমিকারা মেতে উঠল দিনভর বসন্ত বিহারে।
বসন্তে তারুণ্য ফিরে পায় গোটা প্রকৃতি। একইভাবে বসন্তে তারুণ্যও জেগে ওঠে। বসন্ত ভালোবাসা আর দ্রোহ জাগায় তরুণদের মনে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের দিকে তাকালে অন্তত তাই-ই মনে হয়। ১৯৫২ সালে এমন এক বসন্তেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে ছাত্র-জনতা জেগে উঠেছিল প্রবল ভালোবাসা আর প্রচণ্ড দ্রোহে। মহান মুক্তি সংগ্রামের গৌরবের সৌরভের “১৯৭১” এর পালে তপ্ত হাওয়া আছড়ে পড়ে বাঙ্গালিরা দেশমাতৃকার জন্য আত্মত্যাগে মরিয়া হয়ে উঠেছিল এঋতুতেই। ফাগুনের পলাশ-শিমুলের সঙ্গে দ্রোহী তারুণ্যের সেই যে সন্ধি হলো, আজও তা থামেনি। তাই প্রতিবছর ফাগুনের আগুন নিয়ে বসন্ত জাগে আর জেগে ওঠে তরুণ-তরুণীরা। বসন্তে আজও তারা দ্রোহের কথা বলে। বলে ভালোবাসার কথা।
‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও,
যাও গো এবার যাবার আগে…
প্রিয়জনদের জীবন ভরে উঠুক বাসন্তী সমীরণে।।