Logo

বিদায়ের বিষাদ! : শফিকুর রহমান

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, অক্টোবর ৮, ২০২১
  • শেয়ার করুন

বিদায়ের বিষাদ! : শফিকুর রহমান

(জনাব ফারুক আহমেদ এর বিদায় লগ্নে উত্তরবিহীন হাজারো প্রশ্ন, বিজয়ের পথে ছুটে চলা)
বিদায়ের সুরে আসলেই  এত বিষাদ!
সে জন্যই কি ‘সজল করুণ নয়ন’
আমরা যে চাই হাসিমুখে বিদায় নিতে, বিদায় দিতে। কারো চোখের পানিতে বিদায়ের পথটি ভিজে কর্দমাক্ত হয়ে উঠুক, তা যে চাই না। সে জন্যই কি আকুতি- ‘মোছ আঁখি, দুয়ার খোল, দাও বিদায়’। কখনো বিদায় দিই, কখনো বিদায় নিই। একটি বিদায় পেছনে ফেলে যায় কত প্রিয় মুখ, কত চেনা চেহারা! কত নীরব দৃষ্টি, কত কথা! কত হাসি-গান, কত স্মৃতি!
 বিদায়ের পর শুরু হয় আরেক নবতর যাত্রা?
জীবনভর কত বিদায়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয় আমাদের! শৈশবকে বিদায় দিয়ে কৈশোরে পৌঁছাই; কৈশোরকে বিদায় দিয়ে যৌবনে। যৌবন বিদায় হলে প্রৌঢ়ত্ব, আর প্রৌঢ়ত্বকে বিদায় জানিয়ে আসে বার্ধক্য। সবশেষে অনিবার্যভাবেই এই ইহজীবনকে বিদায় জানিয়ে না-দেখা কোনো অনন্ত জগতের পথে যাত্রা! যে জগৎ থেকে ফিরে এসে কেউ কখনো জানায়নি- কী আছে ওই পারে। তাই ‘ফিরিবার পথ নাহি, দূর হতে যদি দেখ চাহি, পারিবে না চিনিতে আমায়, হে বন্ধু বিদায়”।
 প্রাত্যহিক বিদায় এক রকম, দূরের যাত্রার বিদায় আরেক রকম। সব বিদায় তো আবার প্রকাশ্যেও ঘটে না। কিছু অপ্রকাশ্যে। কিছু বিদায় সম্ভাষণ, আড়ম্বর আর আনুষ্ঠানিকতায় পূর্ণ। আবার কিছু বিদায় ঘটে সবার চোখের আড়ালে, একান্তে, গোপনে। যেখানে হয়তো মুখ ফুটে বিদায় বলার সুযোগটাও থাকে না। এমনকি যাকে বিদায় দিলাম, তার জন্য শোক করারও অবকাশ থাকে না। বুকের মধ্যে নীরবে তার কবর রচনা করে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা চলতে থাকে অবিরাম। কারণে-অকারণে মনের মধ্যে উদয় হয়ে সে বুঝিয়ে দেয়- চোখের আড়াল হলেও আসলে বিদায় নেয়নি সে।
 আমার প্রিয় সহকর্মী জনাব ফারুক আহম্মেদ,  জেলা গোয়েন্দা শাখা, ময়মনসিংহ হতে অফিসার ইনচার্জ, গফরগাঁও থানা, ময়মনসিংহ হিসেবে পদায়ন হয়। তাকে বিদায় বেলার অনুভূতি জানাতে এ কথাগুলো আমার অজান্তেই কলমে লিখেছি। আরো কত শত কোমল মিষ্টি সুখস্মৃতি আর অনুভুতি ভাষান্তরিত করতে পারিনি। জনাব ফারুক আহমেদ তো আমার অজান্তেই মিশে আছে আমার মনের গহন গহিন গোপন কোণে। স্বল্প সময়ে আমরা রচনা করেছি শত-শত উপাখ্যান। রাত দিনের ক্লান্তিহীন দুর্গম বন্দুর ঝঞ্জাড় পথ পেছনে ফেলে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার কথাগুলো বলতেই আমি আপ্লুত।
এক জায়গার শিকড় তো উপড়ানো হয় সম্ভবনাময়  চারাগাছ কে  ভিন্ন উর্বর  জায়গায় রোপণ করার উদ্দেশ্যে। যেন সে বেড়ে ওঠে ফুলে ফলে আর চারদিক মোহিত করে সুগন্ধি তে। যেখানে সে হয়তো নিজের ডালপালা আরো বিস্তৃত করবে; ফুলে-ফলে সমৃদ্ধ হবে। তাই বিদায়ের এই রীতিসম্মত কান্নার পরও সে জানে, বিদায়ী অতিথির প্রিয়জনরা, তার স্বজনেরা জানে, জনাব ফারুক আহমেদ এর জন্য অপেক্ষা করে আছে নতুন স্বপ্ন, নতুন দায়িত্ব, নতুন রোমাঞ্চ, নতুন রাজ্যের রাজত্ব। ফলে এই বিদায় আমাদের জন্য বেদনার চেয়ে বেশি আনন্দের। দুঃখের চেয়ে বেশি সুখের। বিরহ বিচ্ছেদের চেয়ে মিলনের।
বিদায়, বরং সাময়িক, তাই তাতে সাময়িক বেদনার সাথে গৌরব ও প্রাপ্তির আশাটুকুও মিশে থাকে। এ বিদায় অল্প দিনের জন্য হলেও বড় পরিসরে ফিরে আশার নতুন অপেক্ষা। স্বজনেরা জানেন, বিদায়ের নির্দিষ্ট সময় পরে থাকবে তার সফল প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষা। বিজয়ীর বেশে আবার তাকে স্বাগত জানানোর জন্যই এই বিদায়। প্রিয়জনকে আমরা হয়তো কখনোই বিদায় দিতে চাই না। পারলে কলিজার ভেতর, অন্তরের গহিনে তাকে বেঁধে রাখি।  প্রিয় মানুষরাও তো জীবন শূন্য করে দিয়ে বিদায় নেয়। তাদের অভাবে আমাদের জীবন মুহূর্তের জন্য নীরব-নিথর, নিস্তব্ধ হয়ে পরে।
 বিদায় অনুভুতিতে যত ভিন্নতা থাকুক না কেন,  তাতে থাকে প্রিয়জনের বিষাদ আর বিচ্ছেদের সুর। আজ আমার প্রিয়জনের  বিদায় সভ্যতার কল্যানে, সেবার ব্রত নিয়ে নতুন সংস্কৃতি বিনির্মানে; তাই বিদায় মানেই সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। একটা বিদায় হয়তো আরেকটি নতুন কিছুকে প্রতিস্থাপন করার জন্যই দরকারি। বিদায়ের দায় একটাই। সেটা হলো পুরনো জায়গা ছেড়ে নতুন কোথাও গিয়ে আলো ছড়ানো; পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
পেছনে কারো জলে ভরা চক্ষু থাকবেই। নিজের চোখও হয়তো ছল ছল করবে জলে; পা সরবে না সামনে, তবু যেতে হবে, নতুনের তরে। মা-বাবা ভাই-বোন স্ত্রী-সন্তানের বিদায়ের বীরত্বে পেয়েছি আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে আনা স্বাধীন ভূখন্ড সোনার বাংলাদেশ; সৃষ্টিলগ্নের পৃথিবী তার প্রস্তরযুগ
কে বিদায় দিয়ে সেজেছে বিচিত্র এই মায়াবী রূপে; কোথাও বরফের এন্টারটিকা, কোথাও গ্রীষ্ম প্রধান আরাবীয়ান অঞ্চল, কোথাও চিরসবুজ শ্যামলিমা আ্যমাজন, কোথাও তপ্ত বালুকাময় সাহারা, কোথাও আল্পস হিমালয়ের চুড়া, কোথাও প্রশান্ত মহাসাগরের ম্যারিয়ানাট্টেঞ্জ; সবকিছুই বিদায়ের ফসল। দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবী অনাগত ভবিষ্যতে হয়ত নতুন অচিন্ত অদেখা আরো কত রূপধারণ করবে! তখন এই দিব্যচোখে দেখা আবহমান কালের অস্তিমজ্জা ও হৃদয়ে ধারন করা রূপ সৌন্দর্য ও বিদায় নেবে। তাই মনের সবটুকু ভালোবাসা উজার করে বলবো এ বিদায় হোক সফল ও কল্যানময়।
আজ নতুন পদ অলংকৃত করতে যাওয়া আমার প্রিয় সহকর্মী জনাব ফারুক আহমেদ কে বিদায় দেয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। একজন দক্ষ  যোগ্য কর্মোদ্দীপ্ত সহকর্মী কে দায়িত্বপুর্ন ও সম্মানিত জায়গায় পদায়ন করায় বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের সুযোগ্য অভিভাবক, মাননীয় পুলিশ সুপার, জনাব মোহাঃ আহমার উজ্জামান পিপিএম-সেবা, মহোদয়কে। স্যারের নির্মোহ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ও জনস্বার্থে দায়িত্বপুর্ন জায়গার জন্য সঠিক অফিসার নির্বাচনী দক্ষতা ও দুরদর্শিতা বরাবরই ময়মনসিংহ জেলা পুলিশকে অনুপ্রাণিত করে। এই পদায়ন একজন নির্ভীক, আত্মপ্রত্যয়ী, চৌকস ও  পেশাদারিত্বের গুনে পরিপূর্ণ মানুষকে অভিভাবকের পক্ষ হতে জনস্বার্থে স্বীকৃতি দেয়া।
 এ যাত্রা হোক বিজয়ের।  শুভকামনা সারাক্ষণ।
#প্রিয় মানুষ বিজয়ের রথে দুরে চলে যাওয়ার অনুভূতি #