Logo

বিয়ের দাবিতে টানা ১৯ ঘণ্টা অনশন করে হাসপাতালে তরুণী

অনিন্দ্য বাংলা
বৃহস্পতিবার, জুলাই ২, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মুর্শিবাদকুরা গ্রামে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে টানা ১৯ ঘণ্টা অনশন করে নাজমিন বেগম (১৮) নামে এক তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বুধবার বিকেল ৩টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পর্যন্ত তিনি প্রেমিকের বাড়িতে টানা ১৯ ঘণ্টা অনশন করেন। পরে স্থানীয় লোকজন ও গ্রাম পুলিশ তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে নাজমিন বেগম প্রেমিক কালন মিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল উঠেপড়ে লেগেছে।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের মুর্শিবাদকুরা গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে কালন মিয়া প্রায়ই পাশের খুটাউরা গ্রামের তাজ উদ্দিনের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন। সেই সুবাধেই তাজ উদ্দিনের মেয়ে নাজমিন বেগমের সঙ্গে প্রায় ৬-৭ মাস পূর্বে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে কালন মিয়া নাজমিনের বাবার মুঠোফোনে কল দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৩১ মার্চ নাজমিনের বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। এই সুযোগে রাতে কালন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নাজমিনকে ধর্ষণ করেন। এরপর থেকে মেয়েটি বিয়ের জন্য কালনকে চাপ দিলে তিনি নানা টালবাহানা শুরু করে। একপর্যায়ে তিনি নাজমিনকে বিয়ে করবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরে নাজমিন বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানালে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজনকে জানান। এরপর তারা বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ্বাস দেন। গত ১৫ মে দুই পরিবারের অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজন সালিশ বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত হয়, প্রেমিক কালন তাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ঘরে তুলে নেবেন। এরপর দুদিন সময় চেয়ে নেন কালন মিয়া ও তার পরিবার। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে কালন মিয়া ও তার পরিবার নানা টালবাহানা শুরু  করে উল্টো নাজমিন ও তার বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া শুরু করেন। এই অবস্থায় ন্যায়বিচার চেয়ে গত ৮ জুন নাজমিন বেগম তালিমপুর ইউনিয়ন গ্রাম আদালতে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ জুন তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান দুইপক্ষের লোকজনকে ডেকে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু কালনের পরিবার না মানায় শেষ পর্যন্ত তা আর সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে নাজমিন বুধবার বিকেল ৩টায় প্রেমিক কালন মিয়ার বাড়িতে অবস্থান নেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাজমিন বেগম বলেন, ‘কালনের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে আমার প্রেমের সর্ম্পক রয়েছে। সে আমাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। আমি বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় সে নানা টালবাহানা শুরু করেছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও পরে বিয়েতে রাজি হয়নি। শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টিও এখন অস্বীকার করছে। তাই আামি বাধ্য হয়ে তার (প্রেমিক) বাড়িতে অবস্থান নেই। সে সময় তার আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে মারধর করেছেন। তার বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইছেন। মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। এখন যদি সে (প্রেমিক) আমাকে বিয়ে না করে তবে আমি তার বাড়িতেই আত্মহত্যা করবো।’

তালিমপুর ইউপির চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস জানান, উভয় পক্ষের কথা শুনে তারা বিষয়টি মিমাংসার উদ্যোগ নেন। বিষয়টি আপোস করার জন্য উভয়পক্ষই রাজি হন। কালন মিয়া নাজমিনকে স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা দেবেন বলে তিনদিন সময় নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কালনের পরিবার না মানায় তা আর সমাধান হয়নি।  বুধবার বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে নাজমিনের অবস্থানের ও আত্মহত্যার হুমকির খবর পেয়ে রাতে তিনি দুইজন গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে পাহারা দিয়েছেন, যাতে মেয়েটি কোন দুর্ঘটনা না ঘটায়। সকালে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুনেছি নাজমিন বেগম এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।