Logo

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অজানা তথ্য !

অনিন্দ্য বাংলা
শনিবার, জুলাই ৩, ২০২১
  • শেয়ার করুন

ভিকারুননিসা নুন স্কুল ঢাকার বেইলি রোডে অবস্থিত বাংলাদেশে মেয়েদের একটি স্বনামধন্য স্কুল। ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্থানের পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের (বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশ) গভর্নর ফিরোজ খান নুনের সহধর্মিনী ভিকার উন নিসা নূন ঢাকায় মেয়েদের একটি আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরু করার লক্ষ্যে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন ও তার নামানুসারেই স্কুলটির নামকরণ করা হয়েছে। ভিকারুননিসা স্কুলের সাথে ক্ষেত্রবিশেষে উপমহাদেশের ইতিহাসের সংযোগ রয়েছে। এটি এখন বাংলাদেশের নামকরা স্কুলগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে।

স্কুলটির নামের উৎস জন্মসূত্রে অস্ট্রিয়ান মহিলা ভিকারুননিসা নুন। ১৯৪৫ সালে ফিরোজ খান নুনের সাথে বিবাহে আবদ্ধ হওয়ার সূত্রে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তার পূর্ববর্তী নাম ভিক্টোরিয়া পরিবর্তন করে ভিকারুননিসা নুন নাম গ্রহণ করেছিলেন।[২] নুন পরিবার সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন ভাবে তাদের অবদানের অংশ হিসেবে ১৯৫১ সালে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার সমসাময়িক সময়ে শিক্ষা বিস্তার ও প্রসারে অবদান হিসেবে নুন পরিবার একটি তহবিল গঠন করেন যা থেকে উচ্চশিক্ষা লাভে আগ্রহী তৎকালীন পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে গমনের জন্য বৃত্তিসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দান করা হত। অবশ্য এই তহবিল ভিকারুননিসা নুন স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলনা।

ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ, প্রধান শাখা, ১/এ, নিউ বেইলি রোড, ঢাকা – ১০০০। গেট নং – ১।

স্কুলটির কার্যক্রম মূলত এর প্রধান শাখা বেইলি রোডকে কেন্দ্র করে ঘটে থাকে। তবে একই প্রশাসনের অধীনে স্বতন্ত্র আরও তিনটি শাখা গড়ে তোলা হয়েছে যেগুলো রাজধানীর ধানমন্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। সর্বমোট চারটি শাখা মিলিয়ে প্রায় ২৪০০০ এর অধিক ছাত্রী ভিকারুননিসা নূন স্কুলে নিয়মিতভাবে শিক্ষালাভ করে থাকে।

পাঠদানের পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য ভিকারুননিসা নুন স্কুল বিখ্যাত। স্কুলটির ছাত্রীদের অংশগ্রহণে এখানে বেশ অনেকগুলি ক্লাব বা সংঘ গড়ে তোলা হয়েছে যেগুলোতে পরিবেশ গবেষণা, বিজ্ঞানচর্চা, বিতর্ক ইত্যাদি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়। এই ক্লাবগুলো স্কুলের অভ্যন্তরীণ সহ বিভিন্ন আন্তঃপ্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা আয়োজন করে থাকে। ক্লাবগুলো অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েও স্কুলের জন্য সম্মান বয়ে এনে থাকে।

এখানকার যে ক্লাব রয়েছে সবগুলই বেশ সক্রিয়। এবং তারা প্রতিবছরই পাঠ্যক্রমের বাইরের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করে সাফল্য লাভ করছে।

স্কুলটির একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার রয়েছে যেখানে বিভিন্ন বিষয়াবলীর উপর লেখকের বইসহ নানাবিধ প্রকাশনা সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রকাশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্বভাবে প্রকাশিত ম্যাগাজিন সহ বহিঃর্বিশ্বের বিভিন্ন প্রকাশনা। প্রতিষ্ঠানটিতে আধুনিক সরঞ্জামমন্ডিত একটি সুসজ্জিত কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে।

আরো পড়ুন :যে ১০ টি লক্ষণ থাকলে প্রেমিকাকে বিয়ে করা যায়!

রাজধানীর সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ। সারাদেশের সবাই একেনামেই চেনেন। কিন্তু অনেকেরই অজানা ভিকারুন্নেসা নুন কে? প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পেছনে তার অবদানে কী? কীভাবে সেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ।

ভিকার উন নিসা নূন ছিলেন পাকিস্তানের সপ্তম প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুনের স্ত্রী। পেশাগত দিক দিয়ে তিনি সমাজকর্মী ছিলেন। জন্মগতভাবে ছিলেন অস্ট্রিয়ান। ১৯২০ সালের জুলাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তখন তার নাম রাখা হয়েছিলো ভিক্টোরিয়া।

তার স্বামী ফিরোজ খান ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। এর আগে ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত পাঞ্জাবের মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) গভর্নর ছিলেন। আর ১৯৩৬ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।

বিয়ের পরে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ভিকার উন নিসা। তার নাম ভিক্টোরিয়া থেকে রাখা হয় ভিকার উন নিসা। ফিরোজ খান নুন ইন্ডিয়ান ভাইসরয়ের মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করে দিল্লী ত্যাগ করেন এবং লাহোর চলে যান। তখন ভিকার উন নিসা পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবির্ভূত হন।

পরে পাঞ্জাব প্রোভিন্সিয়াল সাব কমিটির সদস্য হন। সেখানে সিভিল ডিসঅবিডেন্স আন্দোলনের সময় তিনবার গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৪৭ সালে জনগণ স্থানান্তর হওয়ার ফলে উদ্বাস্তুদের জন্য নিজেকে যুক্ত করেন তিনি। বিভিন্ন উদ্বাস্তু ক্যাম্প ও কমিটির জন্য সহযোগিতা করেন। সে সময় রাওয়ালপিন্ডিতে ভিকার উন নিসা কলেজ ফর উইম্যান নামে কলেজ স্থাপনে সাহায্য করেন তিনি।

১৯৫২ সালে ভিকার উন নিসা নূন ঢাকায় মেয়েদের জন্য আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরুর লক্ষ্যে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নামানুসারেই স্কুলটির নামকরণ করা হয়েছে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল। এর সাথে ক্ষেত্রবিশেষে উপমহাদেশের ইতিহাসের সংযোগ রয়েছে। সেটিই বর্তমানে মেয়েদের জন্য দেশের একটি নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

স্বামীর মৃত্যুর পরেও সমাজ সেবামূলক কাজ চালিয়ে যান ভিকার উন নিসা। তিনি অল্প সময়ের জন্য পাকিস্তানের পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ফেডারেল মন্ত্রীও ছিলেন। দীর্ঘ অসুস্থতার পর ভিকার উন নিসা ২০০০ সালের ১৬ জানুয়ারি ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর আমন্ত্রণে ফিরোজ খানের সঙ্গী হয়েছেন তিনি। পিআইএর বিশেষ বিমানে তাঁরা নয়াদিল্লি যান। সিঁড়ির কয়েক ধাপ থাকতেই কীভাবে যেন বেগম নূনের একটি জুতা নিচে পড়ে যায়। সিকিউরিটির কেউ নন, বরং সিঁড়ির নিচ থেকে বেগম নূনের জুতাটি স্বয়ং জওহরলাল নেহেরু তুলে আনেন। সবাইকে হতবাক করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জুতাটি বেগম নূনের পায়ে পরিয়ে দিতে এগিয়ে যান। ধারণা করা যায়, নেহরু ও নূন উভয়ের অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারণেই এই বিরল ঘটনার জন্ম।

তার প্রতিষ্ঠিত ঢাকার বিদ্যালয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার হয়েছে, এখনও চলছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর নামে স্বাধীন বাংলাদেশে বিদ্যালয় থাকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক কথা হয়েছে। মাঝেমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে দেখা যায়। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে ভিকারুননিসার নামটি শিক্ষার্থীদের কাছে আবেগ-গর্বের নামই বলা যায়।

আরো দেখুন :কাঁচা আম দিয়ে কচুর শাক রান্নার এক অন্যরকম রেসেপি !

ছবিঃ ফিরোজ খান নুন ও ভিকার-উন-নেসা নুন। 

ছবির উৎসঃ ফটো আর্কাইভ অব পাকিস্তান। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং ফেসবুক।