Logo

মদনে হত্যা মামলার আসামিদের বাড়িতে হামলা- ভাঙচুর, আতঙ্ক বিরাজমান

অনিন্দ্য বাংলা
রবিবার, মে ৩১, ২০২০
  • শেয়ার করুন

নেত্রকোনা ও মদন প্রতিনিধি : নেত্রকোনার মদন উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের গাবরতলা গ্রামের আঙ্গুর মিয়া হত্যা মামলার আসামিদের বাড়ি ঘরে দফায় দফায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। অর্ধশতাধিক ঘর মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। প্রতিপক্ষের হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রামটি পুরুষ শুণ্য হয়ে পড়েছে। রাত নামলেই গাবরতলা গ্রামে মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জেলার মদন উপজেলার গাবরতলা গ্রামের বাড়ির সামনে পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে গত ১৫ এপ্রিল সকালে আঙ্গুর মিয়ার ছেলে সজিবের সাথে একই গ্রামের এখলাছ মিয়ার ছেলে জাকির হোসেনের ঝগড়া হয়। এরই জের ধরে ওইদিন দুপুরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে আঙ্গুর মিয়াসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০জন আহত হয়। গুরুতর আহত আঙ্গুর মিয়াকে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নেয়া হয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ঢাকা নেয়ার পথে আঙ্গুর মিয়া মারা যান। মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌছলে শুরু হয় ভাঙচুর।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই সাখের আহমেদ ঝুনু বাদী হয়ে ১৭ এপ্রিল ফারুক, মুখলেছ মিয়া, সাদ্দামসহ ৫০জনের নাম উল্লেখ ও ৩০- ৩৫জন অজ্ঞাত আসামি কওে মদন থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর বাদী পক্ষের লোকজন গ্রামের আলী আহাম্মদ, নূর মিয়া, কবীর হোসেন, আনোয়ার হোসেন, এখলাছ মিয়া, হরমুজ আলী, মরতুজ আলী, মোখলেছ মিয়া, তৌহিদ মিয়াসহ আসামি পক্ষের মানুষের অর্ধশতাধিক কাঁচা ও আধাপাকা বসত ঘর ভাঙচুর করে। হামলাকারী ঘরের আসবাবপত্র, টিন, খাট, ধান চাল, সেচ যন্ত্র, নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এমনকি টিউবওয়েল গরু, গরু ছাগলও বাদ যায়নি হামলাকারীদের হাত থেকে। পরে হামলা ও মারধরের ঘটনায় আল আমীন বাদী হয়ে ১০ মে ফরদুল ইসলাম, সাকের আহম্মেদ ঝানুসহ ৩১জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৩০- ৩৫জনের বিরুদ্ধে মদন থানায় মামলা করেন। এতে নিহত ঝানু মিয়ার পক্ষের লোকজন আরও ক্ষিপ্ত হয়। তারা বেপরোয়া হয়ে হত্যা মামলার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও হামলা চালায় এবং ভাঙচুর করে। গত শুক্রবার রাতে আসামিদেও আত্মীয় একই গ্রামের ডা. আওলাদ হোসেন, সেনা সদস্য শামীম, পুলিশের সাব ইন্সেপেক্টও সামছুল হকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আধাপাকা ঘর ভাঙচুর করে নগদ টাকা ও আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। লুটপাটের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রুক্তন খার স্ত্রী আঙ্গুরা বাদী হয়ে ফরদুল ইসলাম, সাকের আহম্মেদ ঝানুসহ ৪১জনের নাম উল্লেখ ও ৩০-৩৫জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঈদের আগে শুক্রবার ও শনিবার অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার আসামি জুয়েল মিয়া ও এলাই মিয়াকে কেন্দুয়া থেকে গ্রেপ্তার এবং লুন্টিত মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় শনিবার বিকেলে স্বপন ও সেকুল মিয়াকে আটক এবং টেলাগাড়ি ও মালামাল জব্দ করে। ঘটনার পর থেকে গাবরতলা গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

নিহতের ভাই আঞ্জু মিয়া বলেন, আমাদের সাথে গ্রামের কারও সম্পর্ক খারাপ ছিল না। সবাই মিলে মিশে বসবাস করছিল। হঠাৎ করে এই হত্যার ঘটনা করে। ওরা পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। মনের ক্ষোভে কিছু মানুষ ভাঙচুর করেছে। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।

মদন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রমিজুল হক বলেন, হত্যাকান্ডের পর এলাকার পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠে। নিহতের পক্ষের লোকজন আসামি পক্ষের বেশ কিছু বাড়িঘর ভাঙচুর করে। ভাঙচুরের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এলাকায় নিয়মিত পুলিশ টহল রয়েছে। উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। এরই মধ্যে হত্যা মামলার দুইজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী জানান, মদনে গাবরতলা গ্রামে এব ক্যক্তি নিহত হওয়ার পর সার্কেল এএসপিকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনায় দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দায়ি ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য মদন থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।