Logo

মিলি রায়ের কবিতা

অনিন্দ্য বাংলা
রবিবার, অক্টোবর ১০, ২০২১
  • শেয়ার করুন

মিলি রায়ের

৪টি কবিতা

১।

বসন্ত রোদ দিন
কোথাও একটা শরনাগত বা আত্মসমর্পণের
নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে,
ব্যাধের বাঁশিতে বাজছে হারানো সুর।
অবয়বহীন দুঃখগুলো কেমন জড়িয়ে আছে
পাতলা সরের মতো।
প্রেমে পড়লে এমনি বোধহয় হয়
মন আদায় করে নেয় তার ন্যায্য প্রাপ্য।
বহুকাল, বহুদিন,বহুরাত্রি শেষে মরু হয়ে যাওয়া আবেগে
জল সিঞ্চন করলো যেন আশ্চর্য নীলকণ্ঠ পাখি
সীতা ভোলানো হরিণের মতো কিছু ঘটছে লুব্ধমনে।
প্রতিটা বর্ষা শেষে কেমন
আদুরে হয়ে যায় নদী
ছলাৎ ছলাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে পাড়ের বুকে।
তেমনি একটু একটু করে সবুজ পাতায়
ভরে যেতে পারতো গাছটা
আবার একটু একটু করে ঝরেও যেতে পারতো
কি আশ্চর্য! তেমন কিছুই ঘটলো না
আদিগন্ত তোলপাড় করে শুধু ভেসে যাচ্ছিল
ভাঙ্গনের মোহনায়।
মগ্ন চৈতন্যে জেগে উঠছিল বসন্ত রোদ দিন।
মনের জমি শূন্য পড়ে থাকলে
একটু একটু করে আগাছা জন্মায় তাতে
মহুয়া মাতাল নেশার মতো নেমে আসে জ্বর
মুক্তির খোঁজে মেলেনা তখন, গাণিতিক সমীকরণ।
উত্তাল সাগরের কিনারায় বসে
কজনই বা মাপতে পারে নিজেকে!
————————————

২।

কবিতার প্রহরে
তুমি আজ ক্যানভাস
মাছরাঙার মসৃন পালকের মতো
আজ আঁকবো তোমায় আমি,
মেহেদীর সবুজ নিংড়ানো কমলা ভালোবাসায়
ভিজবে সময় নন্দিত ব্যঞ্জনায়।
অ্যাক্রিলিক,প্যাস্টেল আর জলরঙের ছোঁয়ায়
ত্রিমাত্রিক কথা বলবে প্রণয়ের প্রহর।
উপেক্ষিত অবয়বহীন রঙগুলোকে বাঙ্ময় করে তুলবো
দেবো নিশ্চিত আকার, মৃদু উষ্ণতায়।
প্রথাগত নিঁখুত রেখার ছাপ নয়
প্রতিকৃতি আর প্রকৃতির মিশেলে
মূর্ত বিমূর্ত ক্যানভাস রাঙাবো আজ।
সাগরের ঢেউ লঙ্ঘন করে যাবে বিপদসীমা
মুঠো মুঠো রঙের ছোপে
মিশিয়ে দেবো নক্ষত্রের গুঁড়ো,
ধ্রুপদী ছন্দে ভেঙে দেবো অনিশ্চিত অস্তিত্বের
অন্তহীন ঘুম।
শব্দহীন মৌনতায় ছুঁয়ে যাবো কল্পিত শীর্ষ চূড়ো।
পরকীয়া ওই দেহখানিতে
স্বতোৎসারনের মতো বেজে উঠবে
বিটোফেনের নাইনথ সিম্ফনি
হেসে উঠবে লিওনার্দোর মোনালিসা
অধর রুধির পানে, হবে শোনিত স্নাতা
রঙ,রেখার রসায়নে পাল্টে যাবে অবয়ব
যেভাবে পাল্টে যায় পাথর চাপা সফেদ ঘাস
নিজেকে ফাঁকি দিয়েই নাহয় পান করবো
খানিকটা মহুয়ার নির্যাস!
সব কবিতাই ভীষণ একাগ্রতা প্রার্থনা করে।
————————————-

৩।

জন্মছক
ধ্বসে পড়ছে হাওয়া মহল
গ্রীবার সোনালী সবুজে নেমে আসছে হরিতকী বিকেল,
হলদে হয়ে গেছে আধিয়ার জন্মছক।
সময়ের ক্ষিপ্ত ডানায় উড়ে যাওয়ার
কোনো ইচ্ছেই যেন নেই বাড়িটার
দেয়ালের অমসৃণ খাঁজে ইতিউতি এসে
ভিড় জমায় বেওয়ারিশ আলো,
সস্তা পাউডারের মতো খসে পড়ছে অনুভবের পলেস্তারা
প্রমিত দ্বিধায় হরিণ শিশুর মতো লাফিয়ে বাড়ছে বেলা।
অন্ধকার খুঁটে নিচ্ছে আরো গাঢ় অন্ধকার
বালির শরীর থেকে
ব্যঞ্জনাপূর্ণ অবয়বে আঁকিবুঁকি কেটে যায়
অমানিশার ক্ষয়ত্রী চাঁদের আলো।
ঐতিহ্যের তুমুল ভাঙ্গন সত্ত্বেও
আভিজাত্য জানান দিচ্ছে তার প্রাচীন গরিমা
কেউ একজন ছিলো উত্তাল স্বপ্নময় এই ঘরে
উথাল পাথাল ঝড়ে, আগুন পোহানো রাতে
প্রাণের সবটুকু উষ্ণতা নিয়ে।
এখন
পড়ে আছে, ছায়াটুকু কেবল
শিকড়ের আঁতুড়ঘরে।
————————————

৪।

মৃত অক্ষরের বর্ণময় কোলাজ
অজানা রোদ্দুরে পুড়ছে বেহায়া মন
মগজের ভেতর কথা রেখে গেছে চুপিচুপি কেউ
শব্দদের আর ছুঁতে ইচ্ছে করে না এখন।
সুরে ভেজা পংক্তিরা
সাজাতে চায় নিজেকে, কাব্যিক পয়ারে
শিল্প সৃষ্টির মুহূর্তরা ভেঙে ভেঙে যায় মেঘ মল্লারে
অবলুপ্ত প্রেম বাসা বাঁধছে বুকের গভীরে
নীরবতা কি ভাঙে, বান আসলে গাঙে?
বোধ নুয়ে পড়ছে অনাসক্ত অক্ষরের ঘামে
নগ্ন আত্মা ছুঁতে চায় বিষাদের বারতা
শূণ্যসম শীতলতা নিয়ে ভিজছে নীরবতা
শেকল পরাতে চায় বয়সী সময়ের পায়ে
অন্তর্গত রক্ত ধেয়ে চলেছে বিপন্ন বিস্ময়ে।
হিমবাহ গলে নামছে নদী নীরব অহংকারে
ভাসতে চায়, ভাসাতে চায়
অভিমানে অর্গল দেয়া প্রচ্ছন্ন আবেগে।
হারাতে চায়,
বর্ণময় কোলাজের তটরেখা ধরে,
অনিবার্য অতলে।
জানি এতোটা আবেগী হতে নেই
অনেকটা পথ হেঁটে এসে
পায়ের নীচে জড়িয়ে গেছে শিকড়।
আমি শুধু ডানা ভাঙা পাখি
সন্ধ্যার অন্ধকার মেখে
ছুঁতে চাই নবজন্মের শিখর।
ছিঁড়ে গেলে আত্ম নিয়ন্ত্রণের সুতো
কতোটা ভাঙন বয়ে বেড়াবে
মৃত অক্ষর!