Logo

মুক্তমত : বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদ কেন বাড়ছে?

অনিন্দ্য বাংলা
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

সত্য হল, এখন নারী বুঝতে শিখেছে শিক্ষার জোরে। যে আলো থেকে তারা যুগ যুগ বঞ্চিত ছিল সেই আলোয় তাঁদের চলার পথ সমুজ্জ্বল হয়েছে। তাঁরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখেছে, আত্মনির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে শিখেছে। নিজের ভাল টা বুঝতে শিখেছে। আগে যেই চেতনাকে নারী ছাই চাপা দিয়ে রাখত সেই চেতনাই আজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। এ কখনোই বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে না। আমি বিবাহ বিচ্ছেদের কিছু কারণ উল্লেখ করছি এবং সাথেই কিছু পরামর্শ যুক্ত করে দিচ্ছি।

যৌতুকের অভিশাপ থেকে আমরা বের হতে পারি নি। এখনো প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে যৌতুক দেয়া নেয়া হয়। নাম পরিবর্তন করে যৌতুক গিফট হয়ে গেছে। ধনী, উচ্চ বিত্ত থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালার কন্যার বিয়েতেও গিফট দিতে হয় কন্যার পিতাদের। মেয়েটি হয় প্রত্যাশিত গিফট না দিতে পেরে স্বামীর মার খেতে খেতে একসময় আত্ম হত্যা করে, কিংবা পালিয়ে বাচে অথবা ডিভোর্সি হয়। যৌতুক নেয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, গিফট নিতে দোষ কি!

আগে থেকে চেনা জানা না হলে অর্থাৎ এরেঞ্জড ম্যারেজ হলে অবশ্যই পরস্পরের খুটি নাটি (যা এখন গোপন রেখে ভবিষ্যতে কোনভাবে জেনে গেলে বিপদ হবে)সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। নইলে এ কারণেও বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। উপরোক্ত দুটি কারণই বর্তমানে ।

ব্যক্তির স্বতন্ত্র মতামত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। একজন যদি অন্যজনের উপর অন্যায় ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে চায় বা মতামত চাপিয়ে দিতে চায় সে ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক বা সংসারের পরিণতি ভাল হয় না। সুতরাং, সংসার জীবনে সুখী হতে হলে পরস্পরের মতামতের গুরুত্ব দেয়াটা অবশ্য কর্তব্য।

সম্পর্কে বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করা খুব গুরুত্ব পূর্ণ। সংগীকে ভালবাসুন, বিশ্বস্ত থাকুন। প্রতিটি নারীই মায়াবতী সে বাইরে শক্ত খোলসে মোড়া হলেও তাই। তাই আপনি যাই দেবেন সে আপনাকে সহস্রগুনে ফেরত দেবে। সুতরাং ঘৃণার সহস্র গুন নয় ভালবাসার সহস্র গুন ই বোধ করি শ্রেয়।

স্বামী-স্ত্রী একজন অপর জনের জীবন সঙ্গী । তাই আচরণ কর্তা সুলভ না হয়ে যদি বন্ধু সুলভ হয় সংসার সুখের হয়। এছাড়াও এক জন অন্য জনের কাজে সহযোগিতা করার মনোভাব থাকা চাই। আচ্ছা ছোট্ট একটা উদাহারণ দিই, ধরে নিলাম আপনি একজন চাকরিজীবী পুরুষ। আপনি সকালে নাস্তা করে কাঁধে দুপুরের খাবার ঝুলিয়ে বের হয়ে গেলেন অফিসের জন্য। সারাদিনে অফিসে বস এর ঝাড়ি , কাজের চাপ সব সামলে সুমলে বাড়ি এলেন। আপনার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিল আপনার সহধর্মিণী। টিভি অন করে টিভি দেখতে বসে গেলেন কিংবা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। আপনি ভীষণ ক্লান্ত বোধ করছেন।
ইন্টারনেটের যুগে আমরা অধিকাংশরাই প্রযুক্তির হাতের পুতুল হয়ে গেছি। প্রতিটি জিনিসের ই ভাল এবং খারাপ দুটো দিক আছে। আমাদের ভাল টা গ্রহণ করতে হবে খারাপ টা বর্জন করতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা ইন্টারনেটে ব্যয় না করে আপনার পরিবার কে সময় দিন।

এই বার মুদ্রার উল্টো পিঠটার দিকে নজর দিই আমরা। আপনার স্ত্রীর সকাল শুরু হয় আপনার আগে। আপনাকে ডেকে তুলে আপনার নাস্তা, দুপুরের খাবার, আপনার হাতের কাছে এটা ওটা এগিয়ে দিয়ে আপনাকে অফিসের জন্য প্রস্তুত করে দেন। এরপর সারা দিন তাঁর কাটে ঘর দোর পরিপাটি করতে, সাথে সন্তানের পরিচর্যা কিংবা পরিবারের অন্যান্য দের দেখা শুনা করে। অথবা সে যদি চাকুরীজীবী হয়, তাকে ঘর, সংসার এর সাথে অফিস সামলাতে হয় আবার ফিরে রাতের খাবার ব্যবস্থাও করতে হয়।

তারপরেও হয়তো তরকারিতে নুন কম হয়েছে বলে আপনার রাগও তাঁকে হজম করতে হয়। সে ঘুমুতে যায় আপনার পরে এঁটো থালা বাসন গুলো গুছিয়ে আপনার মশারিটা গুজে দিয়ে। আবার সেই একঘেয়ে সকাল শুরু হয়। এই ভাবে সম্পর্কে একটা এক ঘেয়েমি, বিরক্তি কিংবা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। চিত্র টা কিন্তু অন্য রকম ও হতে পারত!

যেমন ধরুন, আপনিও তাঁর সাথে সকালে উঠে গেলেন। প্রতিদিন না হোক অন্তত ছুটির দিন টাতে । রান্নায় এবং ঘরের কাজে তাঁকে সাহায্য করলেন। তাঁর কাজ যেমন দ্রুত শেষ হবে,দুজনের এক সাথে কিছুক্ষন সময় কাটানোও হবে। সেই সাথে বেচে যাওয়া সময়টুকু নষ্ট করবেন কেন, কাছে কোথাও ঘুরে আসুন কিংবা গল্প করুন। আজকাল, আমরা কেউ গল্প করি না, যতটুকু সময় পাই মোবাইলের স্ক্রিনের আলোটা মুখের সামনে ধরে বসে থাকি। এ যেন এক বিশাল স্বচ্ছ অথচ কঠিন বাঁধার দেয়াল।

কাজ টা কিন্তু সহজ। কিন্তু কি এক বিশাল আলসেমি, লোক লজ্জা আর অনীহা যেন জড়িয়ে রেখেছে আমাদের। আমরা চাই ই না এ দেয়াল ভাংগতে। ভাবি চলুক না যেভাবে যাচ্ছে দিন, যাক। এই দীর্ঘসুত্রিতা একসময় এক ঘেয়েমি বিরক্তি কিংবা কষ্টের অবসান ঘটাতে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত ও গড়ায়।

সমাধান কিন্তু আমাদের হাতের নাগালেই। একটু সহানুভূতি, একটু উৎসাহ কিংবা প্রেরনা , সামান্য ভাল ব্যবহার কিন্তু আপনার সংসার টাকে সুখের স্বর্গ করে তুলতে পারে। সব ভালবাসা গুলোই পরিণতি পাক । ভাল থাকুক সম্পর্ক গুলো। বটবৃক্ষের মত শিকড় ছড়িয়ে বিশাল হোক ভালবাসা।

-নেট থেকে সংগৃহীত।।