Logo

ময়মনসিংহ-নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, জুন ২০, ২০২২
  • শেয়ার করুন

মজিবুর রহমান শেখ মিন্টু :   বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় আকস্মিক বন্যা শুরু হয়েছে।
এতে  অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের সোহাগীপাড়া ও চারুয়াপাড়া গ্রামসহ আরো ৫-৬ টি গ্রামের কিছু অংশ, ঘোষগাঁও ইউনিয়নের ভালুকাপাড়া, জরিপাপাড়া, গলাভাঙা ও বালিগাও গ্রামের কিছু অংশ, বাঘবেড় ইউনিয়নের মেকিয়ারকান্দা,  ডোমঘাটা ও শালকোনা গ্রামের কিছু অংশ বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এখনো পানিবন্দি রয়েছে সদর ইউনিয়নের দর্শা, ধাইরপাড়া, বলরামপুর, গুজিরকান্দি, বাঘড়া ও পঞ্চনন্দপুর গ্রাম। এছাড়া পুড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের দুধনই, কাশিনাথপুর, চন্ডারচর, বতিহালা, কালিনগর, গুপিনপুর, ধলাুয়াকান্দা, হরিন্দরা, আঙ্গুরাকান্দা, রায়কান্দুলিয়া, বহরভিটা, পুর্ব বতিহালা, রাউতি, বেতগাছিয়া, চরেরভিটা, কাউয়াকান্না,  পুটিয়ারকান্দা,মদনপুর,টিগুরিয়া,রাজদেওমা, গুইঙ্গাজুড়ি ও পুড়াকান্দুলিয়াসহ প্রায় ২০ টি গ্রাম।

উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়নে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ ও নেতাই নদীর পাড় ভেঙে এই বন্যার সৃষ্টি হয়; ধোবাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফৌজিয়া নাজনীন এতথ‍্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ভারী বর্ষণের কারণে ঘোষগাঁও নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ ও নেতাই নদীর পাড় ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। তিনি আরও জানান, পানিবন্দিদের জন্য স্থানীয়ভাবে শুকনো খাবার সহায়তা করা হচ্ছে এবং নতুন সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে ১০ টন চাল ও দুই লাখ টাকা সাহায্য চাওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে নেত্রকোণা জেলা সদর, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা ও মোহনগঞ্জ উপজেলায় বিস্তীর্ণ জনপদ তলিয়ে গেছে। ভারী ঢলে এসব এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদর বা ময়মনসিংহের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। মোহনগঞ্জ উপজেলায় বিস্তীর্ণ জনপদ তলিয়ে গেছে। নেত্রকোণার প্রধান নদী সোমেশ্বরী, কংস, ধনু, উব্দাখালিসহ ছোট-বড় সব নদ- নদীর পানি বাড়ছে। উব্দাখালি নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নেত্রকোণা সদর উপজেলার মেদনী, কেগাতী, ঠাকুরাকোনা, মৌগাতী ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০টি গ্রামে বাড়িঘর, সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বারহাট্টার সিংধা, বাউসী, রায়পুর, আসমা, দুর্গাপুর পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছে। দুর্গাপুর পৌর সদরে কোমরসমান পানি, মোহনগঞ্জের সাত ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টার। ওইসব এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

কলমাকান্দা উপজেলার চানপুর, নদীপাড়, পশ্চিমবাজার, পূর্ববাজার, কলেজ রোডসহ বিভিন্ন এলাকা এখন হাঁটুপানির নিচে। রংছাতী ইউনিয়নে ব্রিজের এপ্রোচ সড়ক ভেঙে গেছে। বেতগড়া এলাকায় পাহাড়ি টিলা ধসে গেছে। তিন সহস্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বাড়িঘর, দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। উপজেলার সঙ্গে সব ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। চাল, শুকনো খাবার ও নগদ টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। গবাদি পশু রাখার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বন্যা কবলিত কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন করে চাল ও নগদ দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গবাদি পশুকে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে শুকনো খাবারসহ ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এরমধ্যে সিলেটের ৮০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে আগামী দুই দিনের মধ্যে জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনাসহ ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী এলাকা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

তথ্য মতে, সারাদেশের ১০৯টি নদী পর্যবেক্ষণ করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এরমধ্যে ৯৫টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীগুলোর পানি আরও বাড়তে পারে। কারণ ভারতের বৃষ্টি পানি দেশের কুড়িগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা থেকে প্রবেশে করে আরও এগিয়ে আসছে।

এর ফলে জামালপুর, বগুড়া, শেরপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারি, পাবনা, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভিবাজার, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ইত্যাদি এলাকা প্লাবিত হওয়ার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে বর্তমানে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার, নীলফামারী রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। নদীর পানি বাড়তে থাকায় এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে আরও ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। গত তিনদিনে এখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আসামে বৃষ্টি হতে পারে অন্তত ৩০০ মিলিমিটার। এসব এলাকার বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রাম দিয়ে নেমে আসবে।

মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত বন্যা বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতির আশা দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা।