Logo

রম্য গল্প।। লাভ ইন করোনা : রাজীব উল আহাসান

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, এপ্রিল ১০, ২০২০
  • শেয়ার করুন

আমি সুমি, গৃহবধূ । আমার শাশুড়ী আম্মা হঠাৎ গর্ভবতী হয়ে গেলেন। কথা নাই বার্তা নাই গর্ভবতী হয়ে গেলেন। চারিদিকে ছিঃ ছিঃ পড়ে গেল! কি কেলেংকারী অবস্থা।

বাসার পরিস্থিতি থমথমে। আমার জামাই মনমরা হয়ে বসে আছে। একদিনেই বেচারার চুল অর্ধেক পেঁকে গেছে। আমি গিয়ে আর একটু খুঁচিয়ে দিয়ে এলাম। বললাম, আমার একটা দেবর লাগবে গো। যদি দেবর না হয়, তাহলে আব্বাকে আবার ট্রাই করতে বলবা কিন্তু!
আমার জামাই হুংকার ছাড়ে- কি বললা ?

আমি দৌড়ে পালিয়ে বাঁচি।

কিন্তু পালিয়ে আর যাবো কোথায়? করোনার কারনে তিন মাস লকডাউনে ছিলাম। ঘরের বাইরে যেতে পারি নি। ভেবেছিলাম করোনা শেষ। এখন একটু এদিক – সেদিক ঘুরতে যাবো। তখনি এই খবর। শাশুড়ী আম্মা প্রেগন্যান্ট!

সেদিন রাতে আমার বড় বোনের ফোন এলো। বড় আপা বলেন, – এসব কি শুনছি সুমি? তোর শাশুড়ী নাকি প্রেগন্যান্ট?

আমি বললাম,
– যা শুনেছো, ঠিক শুনেছো আপা। উনার আড়াই মাস চলছে।

আমার কথা শুনে বড় আপা সুর করে বললেন ছি-ছি-ছি-ছি।

আমি রেগে বললাম,
– এতে ছিঃ ছিঃ করার কি আছে আপা? আমার শ্বশুর এখনো জীবিত আছেন,সুস্থ আছেন, তাই না?

বড় আপা এবার হাসি দিয়ে বললেন,
– তা ঠিক আছে। কিন্তু করোনার দিনগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা ছিল না?

–হুম, তা তো ছিলোই!

–ইস, তোর শশুর – শাশুড়ী যদি এই দিন কয়টা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতো! হি হি হি….

–হাসবে না আপা। আমার শ্বশুরের বয়স কতই আর হয়েছে! সবে এলপিআরে গেলেন। আরে, এ বয়সে তো আর্নল্ড শোয়ার্জনিগার হলিউডে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। আর আমার শাশুড়ীর মাত্র পঁয়তাল্লিশ চলে। বম্বের নায়িকা রেখার মত ফিগার। তাহলে এত হাসাহাসি করছো কেন?

বড় আপা হাসতে হাসতে প্রসঙ্গ পাল্টায়।
–তোর শশুর‍ যে এরকম রোমান্টিক তা কিন্তু আমি আগেই জানতাম।

আমি বললাম,
– তুমি কিভাবে জানলে?

–উনাকে দেখেই বোঝা যায়! সেদিন যখন তোর মেয়ের বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলাম, তখন কেমন ড্যাব-ড্যাব করে তাকিয়েছিল।

–কার দিকে তাকিয়ে ছিল? তোমার দিকে?

–আরে আমার দিকে তাকাবে কেন? চোখ গালিয়ে দিব না? তাকিয়েছিল আমার বুয়ার দিকে! বুয়া আমাকে বলেছে!

আপার কথা শুনে আমার গা জ্বলে গেল। আমি রাগ সামলে বলি,
– ধুর আপা। তুমি না! আমার শ্বশুরমশাই হাজী মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলবে না।

–ইস্ , দরদ কত!

–উনি যদি তেমন হতেন তাহলে আমার শাশুড়ী আম্মা প্রেগন্যান্ট হতেন না। প্রেগন্যান্ট হতো আমাদের কাজের বুয়া হামিদার মা, বুঝলে! এই বলে আমি ফোন কেটে দিলাম।

অপমানে আমার হাত পা কাঁপছে। কিছুক্ষণ পর আমার আম্মার ফোন এলো। আম্মাও সেই একই সুরে কথা বলছেন। ছি ছি ছি ছি। কি সর্বনাশ! কি সর্বনাশ!

আমি বলি আম্মা,
– মানুষকে ছিঃ ছিঃ বলার আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেন?

–কি বললি? নিজের দিকে তাকাবো মানে?

–মানে পরিষ্কার আম্মা। আমরা তিন ভাইবোন পিঠাপিঠি ছিলাম। তিন সন্তান নিয়ে তোমাদের সুখের সংসার ছিল। তাহলে চার নম্বর সন্তান পাপ্পুর জন্ম হলো কেন?

–মানে?

— মানে আমার সাথে পাপ্পুর বয়সের ব্যবধান কত জানো? পনের বছর ব্যবধান। এতদিন পর বেবী নিলা। তখন তোমার লজ্জা করে নাই?

আমার কথা শুনে আম্মা “থ” হয়ে গেলেন। আম্মার সাথে মনকষাকষি করে আমি ফোন রেখে দিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম পরিচিত কারো ফোন ধরবো না।

তবে ফোন না ধরলেও খুব একটা লাভ হলো না। ছুটা বুয়া এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে,
– আম্মায় নাকি পোয়াতি হইছে?

আমি রাগিরাগি চোখে তাকালাম বুয়ার দিকে। কিন্তু বুয়া আমার চাহনিকে পাত্তা দিল না।

বুয়া বললো,
– আমি আগেই সন্দেহ করছিলাম এরকম কিছু হবে। তিনটা মাস ধরে আম্মার পিছনে পিছনে খালুজানরে বেজায় ঘুরতে দেখছি। পুরুষ মানুষ বাইরে বাইরে ঘুরবে। বাজার হাট করবে। তা না! সারাটা দিন ঘরে বসা। আর….

আমি বুয়াকে ধমক দিই। যা বোঝ না তা নিয়ে কথা বল কেন? তিন মাস করোনার কারনে শ্বশুর আব্বা হোম কোয়ারান্টাইনে ছিলেন, জানো না?

আমার ধমক খেয়ে বুয়া রান্নাঘরে চলে গেল।

ধমক-ধামক দিয়ে ঘরের পরিবেশ কন্ট্রোল করতে পারলেও বাইরে কন্ট্রোল করা যাচ্ছিল না। প্রতিবেশিদের কানাঘুষাকে খুব একটা দমিয়ে রাখতে পারছিলাম না।

পরদিন সন্ধ্যায় রফিক ভাই এলো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে। রফিক ভাই আমাদের প্রতিবেশি। তিনি পেশায় ডাক্তার। আমার ননদ কুলসুমের সাথে প্রেম। বিবাহ আসন্ন।

আমি দরজা খুলে তাকে ড্রইংরুমে বসালাম। কুলসুমকে বললাম
– যাও ড্রইংরুমে। রফিক ভাই এসেছেন, তার সাথে গল্পগুজব কর।

আমার ননদ বললো সে নাকি রফিক ভাইকে মুখ দেখাতে পারবে না।

কি আর করা, নাস্তা নিয়ে আমিই গেলাম ডইং রুমে। রফিক ভাই একগাল হেসে বললেন,
– খালাম্মাকে দেখতে এলাম (আসলে উনি এসেছেন কুলসুমকে দেখতে)। এসময় তো বমিবমি ভাব হয় খুব। খালাম্মার কি বমি বেশি, নাকি একটু কমেছে?

আমি মনে মনে বলি,
আপনিতো ভাই গাইনির ডাক্তার না। আপনি হলেন চর্ম রোগের ডাক্তার। আপনি আর কি বুঝবেন?

রফিক ভাই একটা আচারের বয়াম আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। এটা খলাম্মার জন্য এনেছি ভাবী!আমার মা বানিয়েছেন। এ সময় নাকি টক খেতে ইচ্ছে করে সবার।

আমি আচারের বয়াম হাতে নিই। মনে মনে বলি, ভালোইতো মজা নিচ্ছেন রফিক ভাই। হাতি গর্তে পড়লে নাকি চামচিকাও লাথি মারে!

এদিকে ঘটনার তিন দিন পর থেকে শ্বশুর আব্বা হাওয়া।
রাতে শুনলাম আব্বা নাকি চিল্লায় গেছেন। তবে যেন তেন চিল্লায় না! তিন চিল্লা। তিন চিল্লা মানে চার মাস।

আমি মনে মনে বলি, চিল্লায় যাবেন খুব ভালো কথা। সারাজীবন চিল্লাতেই কাটান। কোন সমস্যা নাই। আরো যদি মাস তিনেক আগে যেতেন তাহলে আর আজকের দিন দেখতে হয় না শ্বশুর আব্বা!

পরদিন সাকালে আমার ভাই এলো। আম্মা পাঠিয়েছেন তাকে। বোয়াল মাছের ঝোল আর কবুতরের মাংস রান্না করে দিয়েছেন। পোয়াতির জন্য নাকি খুব উপাদেয়!

আমার ভাই বললো,
– আপা তালই সাহেব কোথায়? উনাকে তো দেখছিনা?
বললাম,
– উনি চিল্লায় গেছেন।
আমার কথা শুনে সে হো হো করে হেসে উঠলো। বললো,
– যাক সুন্দর একটা নিউজ পাওয়া গেল।
আমার ভাই স্থানীয় পত্রিকার ছোটখাট সাংবাদিক। কিছু হলেই নিউজ খুঁজে বেড়ায়।

আমি বললাম,
– নিউজ মানে?

সে বললো,
– চমৎকার একটা নিউজ হবে কিন্তু আপা। নিউজের হেডিং হবে “গৃহবধূর সর্বনাশ করে বৃদ্ধ লাপাত্তা”। হাজার হাজার লাইক আর শেয়ার হবে আপা। এজন্য অবশ্য তালই সাব আর মাওই মা’র ছবি হলে ভালো হয়। প্লিজ একটু যদি যোগাড় করে দিতে!

এ কথা শুনে আমি আমার ভাইকে ঝেটিয়ে বিদায় করলাম। বলে কিনা নিউজ করবে?

কিন্তু যার জন্য এত যুদ্ধ করছি সেই শাশুড়ী আম্মা যেন মহাখুশি। তার আচার আচরনে কিশোরী কিশোরী ভাব ফুটে উঠেছে। হাত ভর্তি চুড়ি পড়েছে। হালকা লিপস্টিক দিয়েছে। আলমারি খুলে মেরুন কালারের একটা শাড়ি পড়েছে। একটু আগে এসে নির্লজ্জের মত বললেন,
– বউ ঘরে তেতুল-টেতুল কিছু আছে?

আমি খুব লজ্জা পেলাম। এক বয়াম আচার আম্মার টেবিলে রেখে আসলাম।
একটু পর দেখি হাতের তালুতে আচার নিয়ে চাটতে চাটতে রান্না ঘরে এসেছেন। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন,
– একটু লবণ দাও তো। আচারে লবনের একটু কমতি আছে।

আমি লবণ দিতেই ফিক করে হেসে চলে গেলেন। আমি আর হাসি আটকে রাখতে পারলাম না। নতুন বউ যখন পোয়াতি হয় তখন যেমন আচরণ করে আম্মাও তেমন আচরণ করছেন। আম্মার এ অবস্থা দেখে বুয়া বলে,
– ছি ছি ছি ছি। একটুও লজ্জা নাই। এত বেশরম মানুষ হয়?

আমি বলি,
– বেশরমের কি দেখলা হামিদার মা?

আমার কথা শুনে বুয়া আরো তেজী হয়। বলে,
– এই বয়সে পেট হইছে তবু একটুও লজ্জা নাই। আমার হইলে ফাঁস নিতাম। এই মুখ আর মাইনষেরে দেখাইতাম না। আল্লার কসম।

বুয়ার কথায় আমি হেসে ফেললাম।

পরদিন বিকেলে সুপার শপে গেলাম। উদ্দেশ্য আম্মার জন্য মাদার হরলিক্স আনবো।

শপে গিয়ে দুই প্যাকেট মাদার হরলিক্স হাতে নিলাম। প্যাকেট নিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে এসে দাঁড়ালাম। দেখা হলো নুসরাত আপার সাথে। নুসরাত আপার মেয়ে জারিন আর আমার মেয়ে তিথি ক্লাসমেট। তারা একই স্কুলে নার্সারিতে পড়ে।

নুসরাত আপার সাথে এককথা দু’কথার পর তার চোখ আমার হাতে রাখা মাদার হরলিক্সের প্যাকেটে আটকে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকানো হাসি দিয়ে বলেলেন, আলহামদুলিল্লাহ আপা। কিন্তু সুসংবাদ জানালেন না তো?

আমি কিছু বলার আগেই আপা আবার বললেন, এবার একটা ছেলে চাই ভাবি। এক মেয়ে এক ছেলে দারুন কম্বিনেশন হবে কিন্তু!

আমি কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না। এত লোকের সামনে কিভাবে বলি যে,আমি না আমার শাশুড়ি আম্মা প্রেগন্যান্ট!

তাই আমি চোখ বুজে নুসরাত আপার টিটকারি হজম করে যাচ্ছি। আমার চোখে শুধু আমার শ্বশুর আর শাশুড়ি আম্মার চেহারা ভেসে উঠে। আর তাদের করোনাময় তিন মাসের খেরোখাতা। আহা।

তবে নুসরাত আপার কথা শুনে আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আসলে মানুষ চায় কি আর খোদা করে কি!

এই সময়ে প্রেগন্যান্ট থাকার কথা ছিল আমার। করোনার দিনগুলোতে আমরা বাবুর জন্য ট্রাই করেছিলাম। দুই আড়াই মাস থেকে আমার পিড়িয়ড বন্ধ। যদিও আমার পিরিয়ডের কোন আগা-মাথা নাই। তবুও ভাবলাম সুখবর আছে বোধ হয়! তাই সেদিন গেলাম ডাক্তার মাজেদা আপার কাছে। মাজেদা আপা আমার বড় আপার বান্ধবী। তাই বিশেষ খাতির যত্ন করে।

আমার সাথে শাশুড়ী আম্মাকেও নিয়ে গেলাম। আম্মার শরীরটাও ইদানিং ভালো যাচ্ছিলো না।হাত পা ম্যাজম্যাজ করে, ব্যাথা। উদ্দেশ্য আম্মাকেও ডাক্তার দেখাবো।

আমাদের দুজনকে মাজেদা আপা যত্ন নিয়ে দেখলেন। কিছু টেস্ট ফেস্ট করতে দিলেন। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার মাজেদা আপা জানালেন,
– আমার শাশুড়ী আম্মা প্রেগন্যান্ট।

আমরা তো হতভম্ব। এই হলো ঘটনা।

আজ এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরলাম। বাসায় এসেই আম্মার রুমে গেলাম। রফিক ভায়ের দেয়া আচারের বয়াম প্রায় খালি করে ফেলেছেন আম্মা। শাশুড়ী আম্মা বললেন, – বউমা আজ আমার চেকাপের ডেট। মনে আছে?

–জি আম্মা।

–সন্ধ্যায় আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেও।
আমি বললাম,
– আচ্ছা আম্মা, নিয়ে যাব।

সন্ধ্যায় আমরা বউ-শাশুড়ী গেলাম ক্লিনিকে। ডাক্তার মাজেদা আপার মুখ হাসিহাসি। আজ আম্মাকে আলট্রাসনোগ্রাম করতে দিলেন।

আমি আমার শাশুড়ী আম্মাকে নিয়ে গেলাম আলট্রাসাউন্ড রুমে। আলট্রাসাউন্ড করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে আবার এলাম মাজেদা আপার রুমে। রিপোর্ট দেখে মাজেদা আপার চেহারা কেমন যেন হয়ে গেল।

আমাকে বললেন
– সুমি তোমার শরীর কেমন? ঔষধগুলো খাচ্ছো?

–জি আপা খাচ্ছি।

এসময় মাজেদা আপা একটা কাগজে খসখস করে কিছু টেস্ট লিখে দিলেন। বললেন,
– তুমি গিয়ে স্যাম্পল দিয়ে আসো। খালাম্মা এখানেই বসুক কিছুক্ষণ।

সব টেস্ট করার পর চমৎকার একটা ঘটনা ঘটলো। আমি আম্মাকে নিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে বাসায় এসে পৌঁছলাম।
বাসায় ঢুকেই আমি আমার জামাইকে খুঁজতে লাগলাম।

হাপাতে হাপাতে জামাইকে গিয়ে বললাম
– একটা দারুন খবর আছে রিয়াদ!

আমার জামাই চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বললো
– কি খবর? কি হয়েছে তোমার?

–আমার পেটে তোমার বাবু আছে।

–মানে!!!

–হুম। আমি প্রেগন্যান্ট। এই দেখো আমার রিপোর্ট।

রিপোর্ট দেখে আমার জামাইতো মহাখুশি। মাথা চুলকে বললো,
– বাচ্চার বয়স দেখি তিন মাস। তাহলে আগের টেস্টে নেগেটিভ আসলো কেন?

এই প্রশ্ন শুনে আমি হো হো করে হেসে দিলাম। হাসি থামিয়ে বললাম,
– আর একটা খবর আছে কিন্তু!

–কি খবর?

আমি মুখ নামিয়ে ফিসফিস করে বললাম,
– আম্মা কিন্তু প্রেগন্যান্ট না।

–না মানে? বল কি?

–হুম।

— কিভাবে? গত রিপোর্টে যে দেখালো প্রেগন্যান্ট!

আমি মুচকি হাসি দিলাম। আসলে প্রথম যেদিন আম্মাকে নিয়ে গেলাম সেদিন আমাদের দুজনের কিছু টেস্ট দিয়েছিল।রিসিট কেটেছিলাম একসাথে। কিন্তু স্যাম্পল জমা রাখার জায়গা একসাথেই। তখনই নাকি উল্টাপাল্টা হয়েছিল।

–কি বলছো এসব?

— হুম। আম্মার সাথে আমার স্যাম্পল চেঞ্জ হয়েছিলো।

—হুম। ব্যাটাদের নামে মানহানি মামলা করা উচিত।
– সবার আগে বাবাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসো।বেচারা লজ্জা পেয়ে মসজিদে মসজিদে ঘুরছে।

আমাদের কথা শেষ হতে না হতেই শাশুড়ী আম্মা ঢুকলেন। আম্মা বললেন,
– না। তোমার বাবাকে বলার দরকার নেই। সে থাকুক তার মত।

— কেন আম্মা?

— যে মানুষ বউ বাচ্চার দায়িত্ব ফেলে পালিয়ে যায় তাকে আর খবর দিয়ে আনার দরকার নাই।

আম্মার চোখ একটু ভিজে ওঠলো।

কিন্তু দুদিন পর আমার শ্বশুর বাসায় এসে হাজির। কিন্তু আমি ভাবি, আব্বা খবর পেল কিভাবে? পরে শুনি আম্মাই নাকি আব্বাকে খবর দিয়ে এনেছেন।

আরো দুদিন পর দুপুর বেলায় সবাই খাচ্ছি। হঠাৎ বারান্দায় কে যেন কাঁদছে। আমরা সবাই দৌঁড়ে বারান্দায় আসি।

এসে দেখি ছুটা বুয়া হামিদার মা কাঁদছে। গত চার দিন হলো বুয়া কাজে আসে নাই। বুয়াকে দেখে চেনা যাচ্ছে না। চেহারা খুব বিধ্বস্ত।

আমি বুয়ার মাথায় হাত দিয়ে জানতে চাইলাম,
– কি হয়েছে বুয়া?

আমার কথা শুনে বুয়া আরো কঁকিয়ে কেঁদে উঠলো।

–খালা গো খালা আমার সর্বনাশ হইছে গো। করলা (করোনা) আমারে সর্বনাশ কইরা দিয়া গেছে।

–আহা কি হয়েছে আগে বলবে তো?

—আমি পোয়াতি গো খালা। পেটে আমার চার মাসের সন্তান।

হামিদার মার কান্না শুনে আমরা মুচকি হাসতে থাকি।

শুধু আম্মা এসে বললেন,
– তোমার স্বামী কই গো হামিদার মা? ঘরে আছে? নাকি পালিয়ে চিল্লায় গেছে?

এ কথা শুনে বাবা কাশতে কাশতে ভেতরে চলে গেলেন।

বিদ্র: গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক।

 

# রাজীব উল আহাসান।। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট