Logo

রাজীব উল আহসান এর ছোট গল্প : লাথি

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, অক্টোবর ১৯, ২০২০
  • শেয়ার করুন

ছোটগল্প

লাথি : রাজীব উল আহসান 

আচমকা আমার কোমর বরাবর একটা লাথি এসে লাগলো। লাথির চোটে আমি উঠানে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। কপাল গিয়ে ঠেকলো খটখটে উঠানের মাটিতে। আমার মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। রক্তের নোনা স্বাদে বুঝলাম আমার ঠোঁট কেটে গেছে।
লাথি দিয়েছে আমার স্বামী। সে  আমার চুলের মুঠি ধরে টান দিয়ে আবার তুলে নিল। আমি আবার টলতে টলতে সোজা হয়ে দাড়ালাম। এবার কয়েকটা থাপ্পড় এসে আমার গালে আঁছড়ে পড়লো।
আমার স্বামী অন্যের ক্ষেতে কামলাখাটে। তার কামলাখাটা শক্ত হাত লোহার চেয়েও শক্ত। সেই শক্ত হাতের থাপ্পড় আমার নাক মুখে এসে আশ্রয় নিল। এবার আমার নাক ফেঁটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে এল। আমার মাথা প্রচন্ডভাবে ঘুরছে। চোখ দুটোতেও অন্ধকার দেখছি। কানদুটো যেন চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। কানের ভেতর শুধু একটানা ভোঁ ভোঁ আওয়াজ হচ্ছে। বানার নদীতে যখন স্টিমার যায় তখন যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমন শব্দ। ভোঁ ভোঁ ভোঁ। এ শব্দ আমার খুব পরিচিত। আমার স্বামীর ঘরের পাশেই বানার নদী। প্রতিদিন এ শব্দ শুনি আমি। এ শব্দ আমার ভুল হবার কাথা নয়!
মাথার প্রচন্ড দুলুনিতে আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। কেটে ফেলা কলাগাছের মত হুড়মুড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। আমার নাকের রক্তে খটখটে উঠানের মাটি ভিজে যেত লাগলো। মাটিতে উবু হয়ে
আমি আবার আমার স্বামীর  প্রতীক্ষায় ছিলাম। এই বুঝি আমাকে আবার টেনে তুলে! এই বুঝি আবার চুলের মুঠিতে টান পড়ে! এই বুঝি আবার লাথি এসে লাগে আমার কোমরে।
কিন্তু না।
আমার এলোমেলো চুলে শক্ত হাতের টান পড়ে না। কিম্বা জানোয়ারের শক্তি নিয়ে কোমরে লাথি বসায় না। আমি কিছুটা অবাক হই! এমনতো হবার কথা না? উঠানে উবু হয়ে শুয়ে শুয়ে আমি ভাবতে থাকি।
আমার স্বামী আমার হাত তিনেক দুরে বসে আছে। মনে হয় সে হাঁপিয়ে গেছে। তার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হচ্ছে। সেই শব্দ আমার কানে আসছে।
আহারে বেচারা!
এমন মন্দ কপাল তার। বউ পিটিয়েও  সুখ নেই! আমার এমন শীর্ন শরীরে মারপিট করেও আরাম কোথায়? যেখানেই মারছে সেখানেই শক্ত হাড়-হাড্ডি বাধা দিচ্ছে প্রবল আক্রোশে। মনের জ্বালা মিটছে না আমার স্বামীর। তাই রাগে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে আর ফনাতোলা সাপের মত ফোঁসফোঁস করছে।
তবে এই ফাঁকে সে একটু জিরিয়েও নিচ্ছে বোধ হয়। ক্ষেতে কাজ করার সময় যখন প্রচন্ড হাপিয়ে যায়, তখন গাছের ছায়ায় বসে কিছুটা জিরিয়ে নেয়। জিরাতে জিরাতে একটা বিড়ি টানে। বিড়ি টানলে নাকি তার ক্লান্তি দুর হয়!
আমার স্বামী এমনিতে বিড়ি খায়। কিন্তু মন যখন ভালো থাকে তখন অল্প দামের সিগারেট খায়। চার বছর একসাথে থেকে তাই আমি বিড়ি আর সিগারেটের সুক্ষ্ম ঘ্রাণ আলাদা করতে পারি। আজ সে সিগারেট জ্বালিয়েছে। তার মানে আজ তার মন ভালো আছে। সিগারেটের সুক্ষ্ম  গন্ধ আমার নাকে এসে লাগছে। সিগারেটের গন্ধে আমার ক্লান্তি দুর হয়ে যাচ্ছে।
উঠানে শুয়ে আবার আমার স্বামীর আক্রমনের অপেক্ষায় আছি। আপেক্ষা করছি আর লম্বা লম্বা শ্বাস তুলে হাপাচ্ছি। বিকেলের নরম রোদ এসে আমার শরীরে লাগছে। কিন্তু আমার অপেক্ষা আর শেষ হচ্ছে না।
ঠিক তখনি বড় ঘর থেকে আমার শ্বাশুড়ির গলা শুনতে পেলাম।
‘ মাগীর শুধু মুকে মুকে তর্ক। ময়-মুরুব্বি মানে না। তুই আজকে একটা বিহিত করবি আইজল। বাঞ্জা বউয়ের কত্ত বড় সাহস! আমার মুকে মুকে কতা কয়’?
মরা বিকেলের মরা আলোয় আমার শাশুড়ীর কথাগুলো কেমন যেন ঝাপসা মনে হয়। নিজেকে নিজের কাছেই বড় বিভ্রান্ত মনে হয়? শাশুড়ী না হয় আমার স্বামীকে আবার বিয়ের কথা বলেছে। আমাকে তালাক দিতে বলেছে! তাই বলে কি আমার এভাবে তর্ক করা উচিৎ হয়েছে?
খানিক বাদে আবার উত্তরের ঘর থেকে কে যেন চেচিয়ে উঠে। চোখ বন্ধ করেও বুঝতে পারি আমার বড় জা’র গলা। আহ্লাদী গলায় বলে, কেমন পুরুষ তুমি আইজল, বাঞ্জা বউটার আগা নিবার পারো না? আমিওতো এই বাড়ীর বউ! কই, আমি কোনদিন উচু গলায় কথা বলছি! শুনছো আমার উচু গলা কোনদিন’?
হায়রে উচু গলা! বিশ ত্রিশ হাত দুরে থেকেই আমার জা’র নিচু গলায় বলা কথায় আমার কানের পর্দার অবস্থা নাজুক হয়ে আসে!
আমার শাশুড়ী আর জা’য়ের কথা শুনে আমার স্বামীর শরীরে আবার আগুন লাগে। ঋজু হয়ে বসে থাকা আমার কোমরে আবার একটা লাথি বসায় আমার স্বামি আইজল। আমি আবার মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এরপর আবার লাথি।
আবার লাথি।
আমার মাথায়, কপালে, পেটে……।
লাথি
লাথি
লাথি
এরপর আমি মনে হয় জ্ঞান হারিয়েছিলাম। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি উঠানেই পড়ে আছি।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। অন্ধকার উঠানে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলাম। অথচ সবাই আমাকে ফেলে যার যার মত চলে গেছে। অনেক কষ্টে আমি উঠে বসলাম।  শরীরে এতটুকু শক্তি আর অবশিষ্ট নেই আমার। তবে কেন যেন আমার একটুও কান্না পেল না। নাকি কান্না সব শুকিয়ে গেছে? কে জানে?
অন্ধকার উঠানে শুয়ে আমার দাদির কথা মনে হচ্ছিলো। এরকম অন্ধকার সন্ধ্যায় আব্বার হাতে মার খেয়ে অন্ধকার উঠানে বসে থাকতাম। রাতের আধারে সন্ধ্যা মিলিয়ে অন্ধকার হয়ে যেত। অন্ধকারে আমাকে কেও খোঁজ নিতে আসতো না। ভয়ে শিউরে যেতাম আমি। রাত বাড়ার সাথে সাথে ভয় কেটে যেত আমার। তবে একা একা লাগতো। যখন জোনাক পোঁকাগুলো সন্ধ্যামালতির ঝাড়ে আলো জ্বালতো তখন ভয় কেটে যেতো আমার। রাত আরো বাড়লে জোনাকগুলো ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে যেত বোধহয়। আমি আবার একা হয়ে যেতাম। খালি পেটে একা একা উঠানের কোনায় পড়ে থাকতাম আমি। রাত একটু বাড়লে বাবা আর ছোট আম্মা বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়তো। তার কিছুক্ষন পর দাদি বাইরে বেরিয়ে আসতো। আমার কানে দাদির ফিসফিস কন্ঠ এসে তাগাদা দিত, “ঘরে আয় নুরি। সৎ মায়ের সংসারে এত তেজ ক্যেন তর”?
খালি পেটে দাদির বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়তাম আমি। তেল চিটচিটে বালিসে আধাশোয়া হয়ে দাদি আমাকে সান্ত্বনা দিতো। কখোনোবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিত।
দাদি নিজের মনেই আমাকে গল্প বলে যেত। গল্পের ছলে একটা কথা প্রায়ই একটা কথা বলতো,
‘ছেরির কপালে লাত্থি ছাড়া আর কি আছে? লাত্তি খায়েই তর জন্ম’।
আমি দাদির গলা ধরে আশ্র‍য় খুঁজমাত। দাদি বলতো, “গলা ছাড় নুরি। এই গরমের মদ্দে গায়ে গা লাগাবিনা হারামজাদি”।
আমি দাদির গা বাঁচিয়ে একটু দূরে সরে যেতাম। দাদিই আবার কাছে টেনে নিতেন। কানের কাছে ফিসফিস করে দাদি বলতেন,
–‘জিদ কমা নূরি। বেশি জিদ ভালা না। জিদ আছিলো তর মায়ের। মাগি জিদের জন্য জীবন দিল। তবু জিদ আর আর’।
দাদি আমার কানের কাছে নিজের মনেই গল্প বলে যেতেন।  এক গল্প’যে কতবার শুনেছি তার হিসেব নেই। তবু শুনতে খারাপ লাগে না। আমি গল্প শোনার জন্য কান খাড়া করি।
প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে দাদি বলতে শুরু করতেন, শেন তাইলে।
‘তর আব্বায় গেছিল ক্ষতে ধান কাটতে। দুপুরের ততা রইদে ধান কাটা কি যেনতেন কাম? তুই নিজেই বল নুরি। এটা কি সহজ কর্ম?
দাদির প্রশ্নে আমি চুপচাপ থাকি। ভাবি, তাইতো! ধান কাটা অনেক কঠিন কাজ। তার উপর কত গরম। গরমে কি পুরুষ মানুষের মাথা ঠিক থাকে!
দাদি আমার জবাবের অপেক্ষা করেন না। আবার বলতে শুরু করেন,
‘বাজান আমার দুপুর বেলা ধান কাইটা ঘরে ফিরে। ঘরে আইসা দেহে রান্দন হয় নাই। পেটে তার ক্ষুধা। সেই সকালের পান্তা কি দুপুর পর্যন্ত পেটে থাকে’?
‘না’।
‘রাগের মাতায় তর মায়েরে দু’চারটা কথা না হয় বলছে। তা সে বলতেই পারে। তুই কি বলস? বলতে পারে না’?
দাদির প্রশ্নে আমি আবার চুপ থাকি। আমার মতামত না পেয়েও দাদি দমে যান না।
দাদি আবার বলেন, ‘একশোবার পারে। সারাদিন পুলা আমার রোইদের মদ্দে কামলা দিসে। মাথা কি আর ঠিক ছিল? তুই  মুখে মুখে ঝগড়া করতে গেলি কেন’?
গল্পের এ পর্যায়ে দাদি খানিক বিরতি নিতেন। কোনদিন হয়তো এক টুকরো পান আর সুপারি মুখে দিতেন। আবার কোনদিন হয়তো খিলাল দিয়ে দাঁত খুঁচাতেন।
দাদির নিরবতায় আমিও অনেক কিছুই ভাবতে পারতাম। মনে মনে দাদির প্রশ্নের উত্তর সাজাতাম। তাইতো, মা কেন বাবার রাগের জবাব দিতে গেল? বাবা সারাদিন কষ্ট করে মাঠ থেকে এসেছেন। না হয় বাবা দু’চারটা কথা বলেছেন। তাই বলে জবাব দিতে হবে! মায়ের উপর খুব রাগ হতো আমার। আফসোস হতো, ইস মা যদি সেদিন রাগ না করতো! তাহলে আমি আজ মায়ের বুকে ঘুমাতে পারতাম। আমার রাগগুলো একপর্যায়ে অভিমানে রুপ নিত। জল জমা চোখে অন্ধকার রাতগুলো কেমন যেন ঝাঁপসা মনে হতো। ঠিক তখন দাদি আবার গল্প বলা শুরু করতেন।
‘তারপর শোন কি হইলো!
আমি কান খাড়া করি। যদিও আমি জানি দাদি কি বলবেন। গল্পটা আমার মুখস্ত। তবে গল্পের এ পর্যায়ে এসে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা। বারবার মনে হতো, ইস গল্পের এ অংশটুকু যদি না থাকতো। যদি না থাকতো এ অংশটুকু!
কিন্তু দাদি থামেন না। দাদিকে যানে গল্প বলার ভুত ভর করেছে। বিশেষ করে এ অংশটায় দাদি যেন সবচেয়ে বেশি মজা পান। গলার স্বর আর একটু উচু করে আমার মনোযোগ পরীক্ষা করেন।
‘ ঝিম মারলি কেন নুরি? হুনতাছস, নাকি ঘুমাইলি?
আমি গলা খাকাড়ি দিয়ে বোঝাই আমি জেগে আছি।
দাদি বোধহয় তাতেও আশ্বস্ত হয় না। আমার পুরো মনযোগ আকর্ষন করতে চান। দাদি বলেন, ‘তারপর বল তো কি হইলো’?
‘কি হইলো দাদি’?
‘আর কি হইবো? রোইদে কাম কইরা পুলার আমার মাথা গরম অবস্থা। তার উপর তর মায়ের চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শুইনা পুরুষ মাইনষের মাথা ঠিক থাকে? রাগের মাথায় তর মায়ের কমোরে লাত্তি মারলো তর বাপ।  চিৎ হইয়া উঠানে গিয়া পড়লো তর মা। হি হি হি। খটখটা উঠানে তুই বাইরায়া আইলি তর মায়ের পেট থেইকা। তর মায়ে ছিল আট মাসের পোয়াতি। উঠানে তর কান্দন শুইনা সবাই জরো হইলো’!
এই লাত্তিতে পোয়াতি খালাস। দশ গেরামের মানুষ তরে দেকতে আইলো। সবার মুখে মুখে এক কথা। এক লাত্থিতে বাচ্চা খালাস এই কথা কেও কোনদিন শুনছে? শুনে নাই।
গল্পের এ পর্যায়ে দাদির মুখ হাসিহাসি। আর একটা পান মুখেদেন দাদি।
আমার জন্মের গল্পের আড়ালে আম্মার মৃত্যুর গল্প চাপা পড়ে। দাদির গল্পে আম্মার মৃত্যু ঠায় পায় না। আমার জন্মের দুই ঘন্টা পরে আম্মা মারা যায়। এ ঘটনা দাদিকে এতটুকু আঁচড় কাটে না।
দাদিকে আঁচড় কাটে আমার জন্ম। লাথি খেয়ে বাচ্চা খালাস। লাথি খেয়েই যার জন্ম তার জীবনে লাথি খাওয়া ছাড়া আর উপায় কি?
দাদির এই গল্প শুনতে শুনতেই যেন আমি বুঝে গেছি মানুষের লাথি খেয়েই আমার জীবন পার করতে হবে।
আজ উঠানে অন্ধকারে শুয়ে এসব ভাবছি। দাদির কথাগুলোই বারবার সত্য বলে মনে হচ্ছে। দাদির কন্ঠ বারবার কানে বাজছে। লাথি খেয়েই তর জন্ম…
এসময় বড় ঘর থেকে আবার শাশুড়ী আম্মার কথা শুনতে পেলাম, ‘বাঞ্জা মাগিডারে তুই কাইল বাপের বাড়ি পাঠাবি। তালাক দিবি। সামনের সপ্তায় তর নতুন বউ আনমু’।
আমি বুঝলাম তালাক অনিবার্য। আর প্রতিবাদ করে লাভ নেই। বাঁজা মেয়ের কি’বা অধিকার আছে শ্বশুর বাড়িতে!
কিন্তু আমি যাবো কোথায়? আমার শ্বশুড়ি যে বললেন আমাকে বাপের বাড়ি পাঠাবেন। আমি মনে মনে হাসি। হি হি হি। বাপের বাড়ি? আমার বাপের বাড়ি আছে?
আম্মার কথা আমার খুব মনে পড়ছে। আমি শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে এলাম।
অন্ধকার রাতে হাটিছি। হাটতে হাটতে বানার নদীর কাছে এসে পৌঁছলাম। নদীর উপর নতুন ব্রিজ। ব্রিজের উপরে উঠে নিচে তাকাতেই দেখি বানার নদি নতুন বানের পানিতে ফুলে উঠেছে। পানিতে চাঁদের আলো পড়ে টলমল করছে। জ্যোৎস্নাভেঁজা পানির আঁচলে লুকাতে ইচ্ছে করছে আমার। এ আঁচল যেন আমার মায়ের।
পায়ে পায়ে আমি ব্রিজের রেলিং এ উঠলাম। বানার নদির পানি যেন আমাকে হাত ইশারায় ডাকছে।
আয় আয় আয়।
আমি চোখ বন্ধ করে ঝাপ দিতে গেলাম। ঠিক তখনি আমি চমকে উঠলাম। আমার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে এলো। এরকম ভাবে আমি কখনো চমকাইনি!
আমার পেটে কিসের যেন আঘাত টের পেলেম। একটা লাথি আমার তলপেটে এসে লাগলো।
লাথিটা মৃদু অথচ স্পষ্ট। আলতো অথচ মায়াময়।
ছোট পায়ের এই অপরিচিত লাথি খেয়ে আমি যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমার পেটে আমার সন্তান! তাহলে আমি বা’জা নই? গত ক’মাস ধরে আমার রক্ত আসেনি সেটাও মনে পড়ে গেল আমার। তাহলে!
প্রচন্ড সুখে আমার মন ছুয়ে গেলে। এই সুখানুভূতি শেষ না হতেই আবার লাথি।
আবার লাথি।
আবার…..
আমি ব্রিজের রেলিং থেকে নেমে এলাম। চার বছর ধরে অপেক্ষা করেছি এ লাথির জন্য। মনে মনে বলি, দে সোনা মানিক দে, আরো লাথি দে।
আরো লাথি দে।
আরো….
আমার দুচোখ ভরে জল এলো। অনেক দিন হলো লাথি খেয়ে চোখে পানি আসেনি। আজ এলো।
বানার নদির মত আমার চোখে আজ বান ডেকেছে যেন।
——–
গল্পঃ লাথি
রাজীব উল আহসান
রচনাকালঃ ৩.৯.২০