Logo

লিচু চাষে ভাগ্য ফিরেছে, জামালপুরে কৃষকের মুখে হাসি

অনিন্দ্য বাংলা
শনিবার, জুন ৫, ২০২১
  • শেয়ার করুন

মাহবুবুর রহমান রবিন, জামালপুর প্রতিনিধি : লিচুর বাম্পার ফলন ও দাম ভালো থাকায় জামালপুরে চাষী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে, ফিরেছে তাদের ভাগ্য। হাট বাজারে এখন  বিভিন্ন লিচুতে বাজার সয়লাব। তবে চাহিদাও বেশ। জেলার ফলের বাজার রসে ভরা মিষ্টি সুস্বাদু লিচুতে ভরে গেছে অনাবৃষ্টিতে লিচুর একটু ক্ষতি হলেও ফলন আর বাজারে দাম ভালো থাকায় লাভবান চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, জামালপুর জেলায় ৭টি উপজেলা রয়েছে। তবে সব উপজেলাতে লিচুর চাষ হয় না। সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ জেলার দুই-একটি উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় বানিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ হয়।
এছাড়াও বাড়ির চারপাশে লিচুর গাছ লাগিয়ে নিজেদের চাহিদা পূরন করে এ জেলার মানুষ। জেলায় এবার ২শ ৯০হেক্টর জমিতে চায়না-১, চায়না-২, চায়না-৩, চায়না-২বোল্ডার, বোম্বে, মোজাফ্ফরী ও দেশী জাতের লিচুর চাষ হয়েছে। জামালপুর জেলার লিচু রসালো, মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশ জুড়ে চাহিদা রয়েছে।
এ লিচু জেলার চাহিদা পূরন করে বড় বড় শহরের বাজারগুলোতেও জায়গা করে নিয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের লিচুর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে লাভবান হচ্ছে লিচু চাষি ও পাইকেররা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় বানিজ্যিকভাবে লিচু চাষের আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের।
সরেজমিনে সদর উপজেলার বাঁশচড়া, শ্রীপুর ও শাহবাজপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, লিচু গাছে ঝোঁকায় ঝোঁকায় লিচু ঝুলে আছে। লিচুর ভারে গাছের ডাল মাটিতে নুয়ে পড়েছে। অনেক বাগানে খুঁটি দিয়ে লিচু গাছের ডাল উপরের দিকে তুলে দেয়া হয়েছে। অনাবৃষ্টি আর খড়ার কারনে লিচুর আকার একটু ছোট হয়েছে।
আর শেষ সময়ের কাল বৈশাখী ঝড়ে লিচুর কিছু ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতিটুকু না হলে বাগান মালিকরা আরো অনেক বেশি লাভবান হতেন। তবে ফলন ও বাজারে দাম ভাল থাকায় লাভের মুখ দেখছে বাগান মালিকরা। এ জেলার লিচু মিষ্টি রসালো সুস্বাদু হওয়ায় দেশ জুড়ে চাহিদা রয়েছে। এ জেলার সদর উপজেলার শ্রীপুর, বাঁশচড়া, শাহবাজপুর ইউনিয়নসহ মেলান্দহ উপজেলায় লিচু চাষ চাষ হয়ে থাকে।
তবে এ জেলায় চায়না-১, চায়না-২, চায়না-৩ ও চায়না-২ বোল্ডার, মোজাফ্ফরী ও দেশীয় জাতের লিচুর চাষ বেশী হয়ে থাকে। ধরন ভেদে লিচু ৬শ থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারনে ফলের আকার ছোট হলেও ফলন ভাল হয়েছে। তবে শেষ সময়ে কাল বৈশাখী ঝড়ে ডাল ভেঙ্গে ও লিচু ঝড়ে পড়ে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে।
তবে ফলন ও বাজারে দাম ভাল থাকায় চাষি ও পাইকের উভয়ের লাভ হয়েছে। অনাবৃষ্টি আর কাল বৈশাখী ঝড়ে লিচুর ক্ষতি না হলে চাষি ও পাইকেরের আরো বেশি লাভ হতো। তবে কম খরচে বেশি লাভের কারনে কষকের লিচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
বাঁশচড়া বটতলা এলাকার বাগান মালিক লাল চাঁন মিয়া জানান, ১বিঘা জমিতে লিচুর লাগিয়েছে। এ বাগানে চার জাতের লিচু রয়েছে। গাছে মুকুল আসার সময় পাইকেরের কাছে ৫০হাজার টাকায় বাগান বিক্রি করছে। তার বাগানে গত বছরের চেয়ে বেশি লিচু হয়েছে। অনাবৃষ্টির কারনে আকার একটু ছোট হয়েছে। তবে ফলন আর দাম থাকায় লাভ ভালোই হবে।
বাঁশচড়া বটতলা এলাকার বাগান মালিক মো.খলিলুর রহমান জানান, ২বিঘা জমিতে চায়না-১, চায়না-২, চায়না-৩ ও মোজাফ্ফরী এ ৪জাতের লিচু লাগানো হয়েছে। মুকুল আসার পরে তিনি বাগান ১লাখ টাকায় ফল পাইকেরের কাছে বিক্রি করছে। ২বিঘা জমিতে অন্য ফসল করে এত টাকা পাওয়া যেত না। তবে বাগান কেনার পর থেকে পাইকের গাছের পরিচর্চা করেছে। খরচও করেছে ভালোই। তবে যে ফলন হয়েছে আর বাজারে যে দাম রয়েছে তাতে খরচ বাদ দিয়ে পাইকেরের ভালোই লাভ হবে। এবার লিচুতে কৃষক ও পাইকের উভয়েই লাভবান হয়েছে।
বাঁশচড়া বটতলা এলাকার বাগান মালিক মো.আব্দুল হামিদ জানান, চায়না-২, চায়না-৩, চায়না-২বোল্ডার ও দেশি জাতের ১২০টি গাছ রয়েছে বাগানে। লিচু গাছে মুকুল আসার পরে ১লাখ ২০হাজার টাকায় বাগান বিক্রি করেছে। এ বাগানের লিচু ৫বছর থেকে বিক্রি হয়ে আসছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় তার লিচু চাষে আগ্রহও বেড়েছে।
জামালপুর পৌর শহরের তমালতলা মোড়ের খুচরা ফল বিক্রেতা মো. শরিফ মিয়া জানান, এখন ফলের মৌসুম। বাজারে হরেক রকম ফল পাওয়া যায়। তবে এখন লিচুর ভরা মৌসুম। বাজারে লিচুর আমদানি বেশি, বিক্রিয় হচ্ছে বেশি। লাভের পরিমান কম, তবে বিক্রি বেশি হওয়ায় খুচরা ব্যাবসায়ীরা লাভবান।
জামালপুর পৌর শহরের বড় মসজিদ রোড এলাকার খুচরা ফল বিক্রেতা সাহেব আলী জানান, ফলের বাজারে এখন লিচুর চাহিদা অনেক বেশি। লিচু ছোট-বড় সকলের পছন্দের ফল। বাজারে বিভিন্ন জাতের ও ধরনের লিচু পাওয়া যায়। ধরন ভেদে লিচু ৬শ থেকে ২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পৌর শহরের তমালতলা মোড়ের খুচরা ফল ব্যবসায়ী মো.মধু মিয়া জানান,বাগান মালিকের কাছ থেকে পাইকেররা গাছে মুকুল আসার সময় বাগান কিনে নেয়। পরে তাদের কাছ থেকে নিয়ে খুচরা বিক্রি করে খুচরা বিক্রেতারা। এবার বাজারে লিচুর চাহিদা ভাল হওয়ায় লাভ হচ্ছে।
জামালপুর পৌর শহরের ডাকপাড়া এলাকার পাইকেরি ফল বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম জানান, লিচু গাছে মুকুল আসার সময় বাগান কিনে নিয়ে তা পরিচর্যা করে বাজারে বিক্রির উপযোগী করে তুলতে হয়েছে। এবার ফলন ভাল হয়েছে। তবে আকার একটু ছোট হয়েছে। পাইকারী বিক্রিতে লাভ কম। বাজারে লিচুর চাহিদা ও দাম ভাল। এ মৌসুমে ফল ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখছে।
জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জাকিয়া সুলতানা জানান, এ জেলায় ২শ ৯০হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে দামও ভাল রয়েছে। এবার লিচু বিক্রি করে বাগানের মালিক ও পাইকের উভয়েই লাভবান হয়েছে। এ অঞ্চলের লিচু চাষিদের লিচু বাগানে সবজি চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।