Logo

‘সত্যি সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ’

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, এপ্রিল ২৪, ২০২০
  • শেয়ার করুন

‘সত্যি সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ’
কবি আসাদুল্লাহ

যারা শুধুই বিনোদন দেয় আর জুয়াখেলার পথ প্রশস্ত করে এবং ব্যক্তিগত বিত্ত ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে পুঁজিবাদকে হৃষ্টপুষ্ট করে তারা তারকা! যেমন, ক্রিকেটার। আমি জানি আমার এরূপ কথায় ক্রিকেটপ্রেমীরা হোঁচট খাবেন,খুব নাখোশ হবেন, ক্ষুব্ধ হবেন। হতেই পারেন। ক্রিকেটঅন্ত প্রাণ আপনাদের।

আমরা আবেগে তাড়িত হই।প্রকৃত বাস্তবতা অনুধাবন করি না, অন্তত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এটি অপ্রিয় হলেও সত্য। আজকের বিশ্বে ক্রিকেট আর ক্যাসিনোতে মৌলিক পার্থক্য কতোটুকু? একটি সংগোপনে খেলা হয়, আরেকটি খোলা মাঠে। একটি প্রকাশ্য জুয়া, আরেকটি অপ্রকাশ্য। এদেশের আর্ত মানবতার কল্যাণে, সরাসরি যদি বলি তাহলে বলতে হয় মানব সেবায় অথবা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে ক্রিকেট কী, কতোটুকু ভূমিকা রাখছে? এরূপ প্রশ্ন হয়তো অযৌক্তিক, তাদের কাছে- যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী। রাস্ট্র ক্রিকেট নামের প্রমোদে যে প্রনোদনা দেয়, তার সিকিভাগ প্রনোদনা সরাসরি জনহিতকর কাজে যারা নিয়োজিত তাদের দিলে মানবতা কোথাও উবু হয়ে পড়ে থাকবে না, একথা সংশয়হীন বলা যায়।

আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান, আমি নস্যি। আমি বিনোদনের বিরোধিতা করছি না। তবে খেয়াল রাখা উচিত সেই বিনোদন যেনো জীবনের নির্মম বাস্তবতাকে অতিক্রম করে উচ্চকিত হয়ে না যায়, যেনো উজ্জ্বল হয়ে না যায়।

আজকের দেশের সভ্যতাসহ বিশ্বসভ্যতা হুমকির মুখে। অগুনতি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। অর্ধাহারে, কেউ কেউ হয়তো অনাহারেও। আমরা আর কতোজনের খোঁজ রাখি। মাতা তার মাথার চুল কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন সন্তানের মুখে আহারের যোগান দেয়ার জন্যে। সর্বত্র ত্রাহি ত্রাহি অবস্হা। এমন কালেও যখন দেখি ক্রিকেটের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গবেষণা, আতংকিত আলোচনা তখন বিস্মিত হই। ওমর খৈয়ামে পড়েছিলাম-‘ উষর মরুর ধুসর বুকে বিশাল যদি শহর গড়ো/তারচেয়ে যে অনেক বড় একটি জীবন সফল করো।’
বিনোদন থাকুক। অবশ্যই কদর্যমুক্ত। জীবনের অংশ হয়ে, অনিবার্য হয়ে নয়।

সিনেমায় যারা নর্তন কুর্দন করে ভালগারিজম আর ভায়োলেন্স ছড়িয়ে দেয় তারাও তারকা।

একজন ডাক্তার জীবনকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়ে মানব সেবায় নিয়োজিত থাকলেও, এমন কী সেবা দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করলেও তারকা হয় না! শিক্ষকদের সিংহভাগ নিষ্ঠা আর আন্তরিকায় ছাত্র বা ছাত্রীকে ক্রমে ক্রমে মানুষে রূপান্তরিত করলেও তারকা খেতাব জুটে না তার কপালে!
একজন আদর্শ পুলিশ মানুষের জীবন রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে তুল্লেও তারকা হয় না, হতে পারে না! আছে আরো অনেক পেশার মানুষ। যারা মানবতাকে বিপন্নদশা থেকে উদ্ধারের জন্যে, সভ্যতাকে শতদলে বিকশিত করার জন্যে উচ্চমার্গীয় জীবনবোধ লালন করেন এবং নিয়তো সবখানে সেই বোধ ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করেন, তারাও তারকা হয় না। বলতেই হয় ‘সত্যি সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ’!