Logo

সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান সংগ্রহ শুরু করেছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, মে ১৮, ২০২০
  • শেয়ার করুন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন।  ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জ জেলায় অভ্যন্তরীণ বোরো ফসল (ধান) সংগ্রহের আওতায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে ৩২,৬৬৪ মে:টন। জেলার যাচাইকৃত প্রকৃত কৃষকগণের মধ্য থেকে উন্মুক্ত লটারীর মাধ্যমে বাছাইকৃত সর্বমোট ২১,০৫৭ জন কৃষক সরাসারি সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্য গুদামগুলোতে নিজস্ব ধান সরবরাহ করতে পারবেন।

জেলা প্রশাসন, সুনামগঞ্জ; উপজেলা প্রশাসন (সকল), সুনামগঞ্জ; খাদ্য বিভাগ, সুনামগঞ্জ; এবং কৃষি বিভাগ, সুনামগঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সাথে এই তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রম এবং কৃষক বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তালিকা প্রস্তুতি থেকে শুরু করে লটারীর মাধ্যমে কৃষকদের নাম বাছাই পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কৃষকগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রথম ধাপে বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যে মোট ১১টি (এগার) উপজেলায় ৯৪,৬৮৯ (চুরান্নবই হাজার ছয়শত উননব্বই) জন প্রকৃত কৃষকের তালিকা হালনাগাদপূর্বক সংশ্লিষ্ট উপজেলাসমূহের ওয়েব পোর্টালে আপলোড করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ধান সংগ্রহের জন্য উন্মুক্ত লটারীর মাধ্যমে ১১টি উপজেলায় বাছাইকৃত ২১,০৫৭ জন কৃষকের তালিকা উপজেলা ওয়েব পোর্টালে আপলোড করা হয়েছে। সকলের অবগতির জন্য নিচে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ওয়েব পোর্টালের লিংকসমূহ সংযুক্ত করা হলোঃ-

১। সুনামগঞ্জ সদরঃ-
 লিংকসমূহ-
 http://sadar.sunamganj.gov.bd/…/3c241531-60d8-4b1f-b353-b8…/
 http://sadar.sunamganj.gov.bd/…/84b3637f-3a55-4dbd-9130-59…/
২। দক্ষিণ সুনামগঞ্জঃ-
 লিংকসমূহ-
 http://southsunamganj.sunamganj.gov.bd/…/646b7d30-dd92-41e…/
 http://southsunamganj.sunamganj.gov.bd/…/cc8425f2-a240-447…/
3। ধর্মপাশাঃ-
 http://dharmapasha.sunamganj.gov.bd/…/d5188eeb-ee97-4736-8…/
 http://dharmapasha.sunamganj.gov.bd/…/d5188eeb-ee97-4736-8…/
৪। দোয়ারাবাজারঃ-
 লিংকসমূহ-
 http://dowarabazar.sunamganj.gov.bd/…/ffa277d9-8f0d-4237-b7…
 http://dowarabazar.sunamganj.gov.bd/…/2c24f329-f36b-4b93-a…/
৫। দিরাইঃ-
 লিংকসমূহ-
 http://derai.sunamganj.gov.bd/…/4057410e-0253-4ee3-913c-9b4…
 http://derai.sunamganj.gov.bd/…/b9501924-5585-409c-ba50-8e…/

উল্লেখ্য যে এ বছর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনা ও উদ্যেগে হাওরের শতভাগ ফসল সঠিভাবে সময়মত কাটা ও মাড়াই করা সম্ভ হয়েছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের সংবাদটিচ পড়ুন।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :  বোরো ধান উৎপাদনের সবচেয়ে বড় অঞ্চল সুনামগঞ্জ । স্থানীয় খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে আরো দুই তৃতীয়াংশ উদ্ধৃত্ত থাকে সুনামগঞ্জের হাওরের ধান। এই একমাত্র ফসল যার উৎপাদনের উপর নির্ভর করতে হয় সমগ্র জেলাবাসীর। কিন্তু প্রকৃতির বিপর্যয়ের কারণে সবসময় পুরো ধান ঘরে তোলা সম্ভব হয় না। তাই এবার বোরো ফসল দ্রুত ঘরে তুলতে কৃষকদের সাথে মাঠে নেমেছেন সুনামগঞ্জের চৌকস জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ ।

সঠিক সময়ে, নির্বিঘ্নে দ্রুত পাকাধান ঘরে তুলতে বিস্তর পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি কৃষকদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে কাস্তে হাতে  মাঠে নেমেছেন খোট জেলাপ্রশাসক। শুধু তাই নয়, রাতেও ধানকাটায় উৎসাহ দিতে কৃষকদের পাশে রয়েছেন সুনামগঞ্জের হাওর জেলা প্রশাসক। ২৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের জলভাঙ্গা হাওরে এক কৃষকের ধান কেটে দেন প্রশাসনের স্থানীয় এই শীর্ষ কর্তা।

করোনাকালে আসন্ন খাদ্যসংকটের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি একাধিক ভিডিও কনফারেন্সে যেকোনো মূল্যেই হাওরের ফসল কাটার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশাসনকে। এই আহ্বানের প্রেক্ষিতে এক সময় হাওরে ধান কাটতে আসা উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিকদের বিশেষ ব্যবস্থায় এবার হাওরে নিয়ে আসা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে গাড়িতে করে নিয়ে এসে তাদেরকে স্থানীয়ভাবে শারীরিক তাপমাত্রা মেপে হাওরাঞ্চলের স্কুলে রাত যাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসন আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই হাওরের ধান বন্যার মুখে পড়ার আগে কেটে তুলতে সর্বাত্নক প্রস্তুতি নিয়েছে। এছাড়া গত তিন দিন ধরে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জেলার বিভিন্ন হাওরে ঘুরে ধানকাটা তদারকিসহ কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছেন। স্থানীয় মসজিদগুলো থেকেও শ্রমিকদের মাইকিং প্রচারণার মাধ্যমে ধান কাটার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এরপরও হাওরে শ্রমিক সংকট রয়ে গেছে বলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও কৃষকরা জানিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের দুই লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির বেশিরভাগ ধানই এখন পাকা। গত এক সপ্তাহ ধরে হাওরে বিআর ২৮ ধান কাটা শুরু হয়েছে। এই সপ্তাহেই বিআর ২৯ সহ অন্যান্য ধান পাকবে। এক সপ্তাহ আগ থেকেই সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, সিলেট, গাইবান্দাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত আট হাজার ৯৭৫ জন ক্ষেতমজুর ধান কাটতে সুনামগঞ্জে এসেছেন। এছাড়া স্থানীয় শ্রমিকসহ স্বেচ্ছাসেবীরাও হাওরে ধান কাটছেন। সরকারি ভর্তুকিকৃত ৯২টি কম্বাইন হার্ভেস্টর ও ১২৮টি রিপার মেশিন দিয়েও হাওর এলাকার উঁচু এলাকার জমির ধান কাটা হচ্ছে। এই মেশিনে নিচু এলাকার জমির ধান কাটা যায় না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ পর্যন্ত ধর্মপাশা উপজেলায় দুই হাজার ৬৫০ জন শ্রমিক, শাল্লায় ৭৫০ জন, দিরাইয়ে তিন হাজার ১২০জন, জামালগঞ্জে এক হাজার ২০০ জন এবং জগন্নাথপুরে এক হাজার ২৫৫ জন শ্রমিক এসে ধান কাটা শুরু করেছেন। তবে এখনো সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার এবং ছাতক উপজেলায় বাইরের কোনো শ্রমিক আসেনি। এই উপজেলাগুলোতে স্থানীয় শ্রমিক এবং স্বেচ্ছাসেবীরাই এখন পর্যন্ত ধান কাটছেন। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ নেতাদেরকেও বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটতে দেখা গেছে।

করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যপী এক সংকট দেখা দিয়েছে। WHO এর ভবিষ্যৎ বাণী অনুযায়ী বিশ্বের ৩ কোটি মানুষ এই সংকটে খাদ্যাভাবে মৃত্যবরণ করতে পারেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে অনেক পূর্বেই এ বিষয়ে অনুধাবন করতে পেরে দেশবাসীর উদ্যেশে প্রদত্ত ৩১ দফা বক্তব্যের মধ্যে তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিতে খাদ্য শস্য, সবজি এবং ফলমূল আবাদের বিষয়ে সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। দেশের খাদ্যচাহিদা মেটাতে সুনামগঞ্জ জেলার উৎপাদিত ধানের গুরুত্ব সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্যক অবগত আছেন এবং তার সুচিন্তিত নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে যেকোনো রকম সম্ভাব্য দূর্যোগের পূর্বেই নিরাপদে ধান ঘরে তোলার জন্য সরকার তৎপর রয়েছে।

২৬ এপ্রিল হতে ৩০ এপ্রিলে তারিখে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আগাম বন্যা পূর্বাভাসের ভিত্তিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার অতি জরুরি ভিত্তিতে হাওরে পেকে যাওয়া সকল ধান এপ্রিল মাসেই ঘরে তোলার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে মাঠে ঝাপিয়ে পড়েছে জেলা প্রশাসন। বিভাগীয় কমিশনার সিলেট বিভাগ, সিলেট নিজে সুনামগঞ্জ জেলার কর্মকর্তাগণকে নিয়ে সুনামগঞ্জে মাঠ পর্যায়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার হাওর সমূহের ধান কাটার কাজ তত্ত্বাবধান করেন এবং সরাসরি কৃষকদেরকে সহজে, দ্রুততম সময়ে  ধান কাটার পদ্ধতি নিয়ে সকলের সাথে মতবিনিময় করেন।

সুনামগঞ্জের নন্দিত জেলাপ্রশাসক  ধান কাটা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট জেলার সকলকে নিয়ে একটি নির্দেশনামূলক সভা করেন এবং বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের খাদ্যচাহিদা যোগানে সুনামগঞ্জের ধানের গুরুত্ব বিষয়ে সকল উপলব্ধি করান। সুনামগঞ্জের প্রতিটি হাওরের ফসল নিরাপদে কৃষকের ঘরে তুলে দেয়াকে তিনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনা করে, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে মাঠে যাওয়ার অনুরোধ জানান।

জেলার আনসার, কর্মক্ষম ছাত্র-শিক্ষক, পরিবহন শ্রমিক, মৎস্যজীবী, বারকি শ্রমিক, পাথর-বালু মহাল শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট-হোটেল শ্রমিক, কলকারখানার কর্মহীন শ্রমজীবী সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে সুনামগঞ্জ জেলায় প্রত্যাগত বিশাল জনসমষ্টি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধান কাটার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ফলে ৬ দিনের মাঝে ধান কাটা, মাড়াই ও প্রক্রিয়াজাতকরণের শ্রমিকে সংখ্যা ৩০৫৯২ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৪৪৫৬ এ উন্নীত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃক সাত এপ্রিল ২০২০  তারিখে সুনামগঞ্জে দ্রুত  ধান  কাটার সমস্যা সমাধানে প্রদত্ত ৪০ টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার সহ মোট ১১০ টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ১১৮ টি রিপার মেশিন মাঠে কাজ ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলার মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যগণ এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের নির্দেশনা অনুযায়ী ধান কাটার কাজ তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। একই সাথে সুনামগঞ্জের হাওরে প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৪৫ টি পিআইসি এর মাধ্যমে নির্মিত ৬৩৩ কি।মি। ফসল রক্ষা বাঁধ এবং ১৩৫ টি ক্লোজার সার্বক্ষণিক নজরদারি এবং তত্ত্বাবধানের মধ্যে রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রেখে তাদের সকল অসুবিধা সমাধান করছেন। নিরাপদে ধান উত্তোলনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য “কাটলে হাওরের ধান, মিলবে ত্রাণ” শিরোনামে কৃষকদের মাঝে বরাদ্দকৃত ৯০ টন খাদ্য সহায়তা, ১২০০০ এর অধিক হাত ধোয়ার সাবান, গামছা, মাস্ক, খাদ্য দ্রব্য, ১৫০০ এর অধিক ধান কাটার কাঁচি বিতরণ করছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ। অন্যান্য জেলা হতে আগত কৃষি শ্রমিকগণের যাতায়াত ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে সারা দেশের প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ একযোগে কাজ করছে। হাওরে ধান কাটার জন্য আগত বিভিন্ন জেলার কৃষি শ্রমিকদের থাকার জন্য হাওরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ধান কাটার কাজ তদারকি করছেন সকল সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ।

আশা করা যায় এ সকল সমন্বিত উদ্যোগের ফলে হাওড়ের ফসল সকল ধরণের প্রতিবন্ধকতা জয় করে কৃষকের ঘরে তুলে দেয়ার পাশাপাশি দেশের খাদ্যভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে। একইসাথে কৃষকের ধান ন্যায্য মূল্যে বিক্রির লক্ষে এ জেলার মিল মালিক ও ধান ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে এবং খাদ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ জেলার প্রাপ্ত ২৫৮৬৬ মেঃ টন ধান সরাসরি কৃষকের কাছে থেকে নির্ধারিত মূল্যে কেনার লক্ষ্যে সব পর্যায়ে স্বচ্ছ তালিকা তৈরির কার্যক্রম চলমান। যাতে কোন ফড়িয়া বা মধ্যসত্বভোগী মহল কৃষককে ক্ষতিগ্রস্থ করতে না পারে।

ইতিমধ্যে ধান কাটার কাজ তদারকি ও জোরদার করার জন্য জেলা প্রশাসক এ জেলায় ব্যবহৃত কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও রিপার মেশিনে সমূহ ঠিক মতন কাজ করছে কিনা সে বিষয়ে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য কর্মকর্তাগণের মধ্যে বন্টন করেছেন। এছাড়া মেশিনের সৎব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য দিনের পাশাপাশি রাতের বেলা মেশিন নিয়ে ধান কাটা কার্যক্রমের শুভ সূচনা হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমরা জরুরি সভা করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই হাওরের সম্পূর্ণ ধান কেটে তুলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ লক্ষ্যে শ্রমিক নিয়ে আসা, স্থানীয় শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে মাঠে নামানো, স্বেচ্ছাসেবীদের মাঠে নামানোসহ জেলার পেশাজীবী ও শ্রমজীবীদের মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর বাইরের শ্রমিকদের তাপমাত্রা মেপে কাজে যোগদান করানো হচ্ছে। তাছাড়া তারা যাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে ধান কাটেন এবং অবস্থান করেন এ জন্য স্কুলগুলোও খুলে দেয়া হচ্ছে।

প্রকৃতি অনুকুল থাকলে সকলের অক্লান্ত ও সমন্বিত উদ্যোগে এই বছর সময়মত নিরাপদে ধান নিরাপদে কৃষকের ঘরে তুলে দেয়া সম্ভব হবে বলে সুনামগঞ্জের আপামর জনগণ আশাবাদী।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, হাওরের ফসল কাটতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, এ মাসের শেষ দিকে ধেয়ে আসতে পারে আগাম বন্যা।

সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের কৃষক জজ মিয়া বলেন, এবার ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। হাওরে অল্প অল্প পানি জমেছে। এখন ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

আজমান হোসেন নামের এক ‍কৃষক বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর হাওরে শ্রমিকেরা ধান কাটতে আসছে না। হাওরের ধান কাটা হচ্ছে ধীর গতিতে। এভাবে চলতে থাকলে হাওরের ধান কাটা নিয়ে কৃষক সমস্যায় পড়বেন।

খরচার হাওরের পাড়ের কৃষক শামছুল ইসলাম বলেন, হাওরের ২৮ জাতের ধান পুরোপুরি পেকে গেছে। কয়েকদিন পর ২৯ ধান পাকবে। এ অবস্থায় হাওরে ধানকাটার জন্য হাজার হাজার শ্রমিক লাগবে। দ্রুত শ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে।

নাজিম উদ্দিন জানান, এ বছর করোনাভাইরাসের ভয়ে অন্যান্য জেলা থেকে শ্রমিকরা ধান কাটতে না আসায় ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কৃষক জবান আলীর মতে, এ বছর হাওরের পানি দেরিতে নামায় বোরো আবাদ একমাস দেরি হয়েছে এ কারণে ধান পুরোপুরি ধান পাকতে অনেক বিলম্ব হচ্ছে।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওর এলাকার শ্রমিকের সংকট নতুন কোনো সমস্যা নয়। হাওরের ধান কাটতে আরও বেশি ধান কাটার মেশিন এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় অন্য জেলা থেকে শ্রমিক আনার দাবি জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, “ভারতের মেঘালয়, আসাম ত্রিপুরা ও বরাক অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এ কারণে জেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটা, খাসিয়ামারা, চলতিসহ সকল নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢল নামবে। চলতি মাসের ২৫ তারিখ থেকে ভারী বর্ষণের সঙ্গে ব্যাপক পাহাড়ি ঢল নেমে আসতে পারে তাই দ্রুত ফসল কাটা উচিত।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন,  “হাওরের ১০ ভাগ জমির ধান পেকে গেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরো ধানকাটা শুরু হবে। এখন ২৮ ধান পাকছে। আগামী সপ্তাহে ২৯ জাতের ধান পাকতে শুরু করবে। এখন পর্যন্ত ধান কাটার জন্য কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। তবে  হাওরের সব ফসল পাকতে ও কাটতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে।”

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, “ফসল কাটার শ্রমিকের সংকট দূর করতে  প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাওরে অনেক শ্রমিক ধান কাটছেন।”

আরো পড়ুন-

ভর্তুকি মূল্যে ১০০ কোটি টাকার হারভেস্টার ও রিপার কৃষকদের মাঝে বিতরণ 

কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, এমপি আজ বুধবার সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় হাওরে কৃষক ও শ্রমিকদের ধান কাটায় উৎসাহ দিতে এবং বোরো ধান কাটার অগ্রগতি দেখতে পরিদর্শন করেন।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ডুংরিয়ায় পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেন, এ সময়টা বোরো ধান কাটার মৌসুম। আমাদের সারা বছরের মোট চাল উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি যোগান দেয় বোরো ধান। সেজন্য, শুধু হাওর নয়, সারা দেশের ফসল সুষ্ঠুভাবে ঘরে তোলা জরুরি। এটি করতে পারলে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, করোনার বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও হাওরের বোরো ধান কাটার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা এসে ধান কাটছেন। পাশাপাশি হাওরের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ধান কাটা যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশে হাওরের কৃষক যাতে সহজে যন্ত্রপাতি কিনতে পারে সেজন্য যন্ত্রের দামের ৩০% দেয় কৃষক এবং ৭০% দেয় সরকার । একই সাথে, দেশের অন্য এলাকা থেকে হাওরের আগাম বোরো ধান কাটার জন্য কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে ইতোমধ্যে হাওরের ৬৫% বোরো ধান কৃষক ঘরে তুলতে পেরেছে। সুনামগঞ্জসহ অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ৭৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে।

এসময় কৃষিমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রী নতুন ২টি হারভেস্টার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করে অতিসম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ১০০ কোটি টাকার ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন । সারাদেশে ধান কাটা সহজতর করতে মোট ২০০ (আগের ১০০ ও প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ১০০) কোটি টাকার মাধ্যমে প্রায় ১৩০০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৯৩৪টি রিপার, ২২টি রাইস ট্রান্সপ্লানটারসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের কাছে সম্প্রতি পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য এবং কৃষি খাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। এই দুটি খাত একে অপরের পরিপূরক। স্বাস্থ্য ও কৃষি ছাড়া বাঁচা যাবে না। সেজন্য আগামী বাজেটে কৃষি খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানো হবে। যাতে করে কৃষিকে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।

পরে কৃষিমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রী কৃষকদের মাঝে সাবান, মাস্ক, গামছা ও লুঙ্গি বিতরণ করেন। এসময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার সব সময় কৃষক ও শ্রমিকদের পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি কাজের সময় বজ্রপাতে কেউ মারা গেলে তাঁর ত্রাণ তহবিল থেকে ১ লাখ টাকা করে অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।  এসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষার সাথে কৃষি কাজ চালিয়ে যেতে কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে মন্ত্রী আহ্বান জানান। যাতে করে করোনা পরিস্থিতিতেও কৃষি উৎপাদন অব্যাহত থাকে। কেউ অসুস্থ বা করোনাক্রান্ত হলে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতাও প্রদান করা হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বার বার কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

পরিদর্শনের সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, মুহিবর রহমান মানিক, মহিলা সংসদ সদস্য শামিমা শাহরিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ,পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বিপিএম এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মাদ সফর উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।