Logo

সাংবাদিক নির্মল সেনের ৯০ তম জন্মদিন আজ

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, আগস্ট ৩, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক: সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা জগতের উজ্জল নক্ষত্র নির্মল সেনের ৯০ তম জন্মদিন আজ। বিশিষ্ট এ সাংবাদিক, কলামিষ্ট, বাম রাজনীতির পুরোধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নির্মল সেন ১৯৩০ সালের ৩ আগষ্ট গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
এ উপলক্ষে আজ নির্মল সেন স্মৃতি সংসদ ও নির্মল সেন স্কুল এ্যান্ড মহিলা কলেজের পক্ষ থেকে নির্মল আলোচনাসভাসহ গ্রামের বাড়ীতে প্রতিকৃতিতে মাল্যদানসহ নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নির্মল সেনের বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত ও মাতার নাম লাবন্য প্রভা সেন গুপ্ত। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নির্মল সেন ছিলেন পঞ্চম। ১৯৪৬ সালে নির্মল সেনের পিতা মাতা অন্য ভাই বোনদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতা চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুন্ঠ ভালবাসার কারণে তিনি এদেশে থেকে যান। নির্মল সেন বড় হয়েছেন ঝালকাঠি জেলায় তার পিসির (ফুফু) বাড়িতে। পিসির বাড়িতে যাওয়ার আগে নির্মল সেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে এক বছর লেখাপড়া করেন। ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ ও এমএ পাস করেন।
নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের মাধ্যমে স্কুল জীবন থেকে। কলেজ জীবনে তিনি অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরএসপিতে যোগ দেন। দীর্ঘদিন শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সভাপতি ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে।
দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সাংবাদিকতার মধ্যে দিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিকতার জীবন শুরু করেন ১৯৫৯ সালে। তার পর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের যথেষ্ট সুনাম রযেছে। তার লেখা ‘পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’, ‘মানুষ সমাজ রাষ্ট্র’, ‘বার্লিন থেকে মষ্কো’, ‘মা জন্মভূমি’, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ ‘আমার জীবনে ৭১-এর যুদ্ধ’ ও ‘আমার জবানবন্ধি’ উল্লেখযোগ্য।
নির্মল সেন ২০০৩ সালে ব্রেন ষ্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় আওয়ামীলীগসহ ১১ দল সাড়ে চার লাখ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকারে থাকা অবস্থায় পাঁচ লাখ ও বিভিন্ন পেশাজিবী সংগঠন তার চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা দেয়। ওই টাকা দিয়ে তাকে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেধ থ্রি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কিন্তু ৫৯ দিন চিকিৎসার পর টাকা না থাকায় চিকিৎসা শেষ না করেই তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়।
২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাতে হঠাৎ করে ঠান্ডা ও উচ্চরক্ত চাপের কারনে নির্মল সেন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরদিন ২২ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে হাসপাতালে লাইফ সার্পোটে রাখা হয়। ১৮ দিন চিকিৎসার পর ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারী সন্ধ্যায় নির্মল সেন মারা যান। মৃত্যুর আগে নির্মল সেন তার দেহ পিজি হাসপাতালে দান করে যান।