অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক : দেশের বৃহত্তম জেলা ময়মনসিংহ , বিভাগের মর্যাদা পেয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর হওয়া এর কর্ম পরিধি বেড়েছে অনেকগুণে। বেড়েছে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের কার্যক্রম। সম্প্রতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাঝে বিভিন্ন কারণে সাপ-লুডু খেলা শুরু হয়েছে। পাল্টা-পাল্টি দুষছেন একে অপরকে।
গত বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠানের বিরুদ্ধে পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যরা (২০ জনের মধ্যে ১৭ জন) অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অশালীন আচরণ, আত্বীয়করণ এবং প্রকল্প গ্রহণে একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন সদস্যরা। ১৭ জন সদস্য স্বাক্ষরিত এ অনাস্থা প্রস্তাব গত ৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হয়।
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সদস্যরা বিষয়টি সবাইকে অবগত করেন। প্যানেল চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন মন্তার নেতৃত্বে জেলা পরিষদের ৯ সদস্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জেলা পরিষদের সদস্যরা অভিযোগে উল্লেখ করেন, চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান প্রথম সভা থেকেই সদস্যদের প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভাব প্রদর্শন করছেন। সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারীভাবে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিষদের নিজস্ব স্থাপনায় একই প্রকল্পে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিবছর বরাদ্দ দিয়ে পরিষদের আর্থিক ক্ষতি করেছেন। ব্যক্তিস্বার্থে প্রথম থেকেই তিনি জেলার একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে অন্য এলাকাকে বঞ্চিত করেছেন। জেলা পরিষদসহ বহু কাজে আত্মীয়স্বজনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। শুরু থেকেই ঠিকাদার ও প্রকল্প কমিটির সভাপতির কাছ থেকে উন্নয়ন বরাদ্দের ওপর ১২ শতাংশ হারে ঘুষ নিচ্ছেন চেয়ারম্যান। তার এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সদস্যরা একাধিকবার প্রতিবাদ করলে তিনি সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরিবর্তন হননি। গত ১৭ আগস্ট পরিষদের এক সভায় চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাচারীভাবে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিতে থাকলে সদস্যরা প্রতিবাদ করেন। এতে চেয়ারম্যান সভাস্থল ত্যাগ করে আর ফেরেননি।
সদস্যদর সংবাদ সম্মেলনের বিপক্ষে চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান শনিবার ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। সম্মেলনে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্প গ্রহণ করে জিনিস কিনে দেওয়ার বিধান; কিন্তু সদস্যরা নগদ টাকা দাবি করেন। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পসমূহ সম্পর্কে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের অবগত করার বিষয়েও আপত্তি রয়েছে সদস্যদের। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। সদস্যদের সঙ্গে চলমান সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও তা হয়নি। তাকে হেনস্তা করার জন্য এমনটি করা হচ্ছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে প্রতিটি অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট বলে অভিহিত করেন।
তিনি আরো বলেন, জেলা পরিষদের প্রায় ৬শ প্রকল্প রয়েছে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি কোথাও কোন দূর্নীতি হয়নি। কেউ তা প্রমাণ করতে পারবে না। তিনি আরো বলেন,আমি সবচেয়ে বেশী ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এরপর থেকেই আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সকল প্রশ্নের উত্তর উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে উপস্হাপন করেন। তিনি বলেন, শহরের পাটগুদাম মন্দির ভাঙ্গা নিয়ে একটি মহল নোংরা রাজনীতি করছে। ঐ মন্দিরে আমি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।
একটি প্রকল্পে বারবার অর্থ বরাদ্ধ নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, জেলা পরিষদের ডাকবাংলা ৪২শতাংশ জায়গার উপর নির্মিত। দীর্ঘদিনের ডাকবাংলা নির্মানে ৪৫ লাখ টাকা দরকার। পূর্বের চেয়ারম্যান এড. জহিরুল হক খোকা ৩০ লাখ টাকা রেখে গেছেন। আমার সময় ১২ লাখ টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। এখানে স্বচ্ছতার কোন অভাব নেই।
মুজিব বর্ষের জন্য মেম্বারদের একটি প্রকল্প তৈরীর জন্য বলা হলে উনারা ৭কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহন করেন । কেক কাটা অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিজন সদস্য ২ লাখ টাকা করে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তাদেরকে ১লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১৫ ই আগস্ট উপলক্ষে জেলা পরিষদ কাচারী মসজিদ মাদ্রাসার এতিমদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেছে।
তিনি স্বজন প্রীতির অভিযোগকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেন। জেলা পরিষদে লটারির মাধ্যমে টেন্ডারের কাজ বন্টন হয়। এখানে গোপনীয়তার কিছু নেই। তারাকান্দায় একটি দুতলা মার্কেট নির্মান করে ২৫ লক্ষ টাকা সাশ্রয় করে জেলা পরিষদের ফান্ডে জমা করেছি।
সবার শেষে তিনি বলেন, আজ আমি তৃপ্ত। সংবাদ সন্মলেন উপলক্ষে আমি আমার সাড়ে তিন বছরের উন্নয়ন তুলে ধরতে পেরেছি। আমার জীবনে এটা শ্রেষ্ঠ সময় বলে উল্লেখ করেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান।
এদিকে জেলা পরিষদের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে মন্ত্যবের ঝড় বইছে। ফেসবুক সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশিত কিন্তু মন্তব্য তুলে ধরা হলো-
মতামত লিখুন :