Logo

সোমেশ্বরীর পানিতে আতঙ্কে নিম্নাঞ্চলের মানুষ

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, জুন ১৩, ২০২২
  • শেয়ার করুন

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : টানা দুই দিনে অতিবৃষ্টি ও সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আতঙ্কে রয়েছে কুল্লাগড়া, গাঁওকান্দিয়া ও সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ।

এ নিয়ে, সোমবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও তা এখনো ও বিপদসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রাতে আরো পানি বৃদ্ধি পেলে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ সময় নদীতে থাকা বালু উত্তোলনকারী কিছু ড্রেজার ভেসে গেছে, উজান থেকে পানি নামতে থাকলে অন্যান্য এলাকার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, মাছের ঘের, ফসলের মাঠ সহ সবজি বাগান গুলো তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে আতঙ্কে রয়েছে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ। নদীর পাড় ভাঙ্গা অব্যাহত থাকায়, কুল্লাগড়া, কামারখালী, ইসলামপুর, বিজয়পুর, ভবনীপুর, দাহাপাড়া, বন্ধউষান এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। অপরদিকে টানা বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের বেড়েছে ভোগান্তি। রিকশা ও ঠেলাগাড়ী চালানো সহ খেটে খাওয়া মানুষদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে পড়েছে একেবারেই। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চল গুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক কর্মচারী মাইকেল প্রদীপ বাউল বলেন, সোমেশ্বরী নদীর ধরনটাই এই রকম। তবে নদীতে যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে যদি রাতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তাহলে এলাকা প্লাবিত হয়ে আগাম বন্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, সোমেশ্বরী নদীর পানির বিপদ সীমার স্কেল হচ্ছে ১২.৬৫। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১.৩৩ অব্যাহত রয়েছে। রাতে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী পানি বাড়তে থাকলে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ইতোমধ্যে এলাকা পরিদর্শন করে সকল কে সাবধান করা হয়েছে।

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজীর-উল-আহসান বলেন, পানি বৃদ্ধির খবর পেয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। এলাকায় বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোন প্রকার খাদ্য সমস্যা দেখা দিলে, তা মোকাবেলার জন্য প্রস্তত রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

সোমেশ্বরী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের মেঘালয়ের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলা এবং বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১১৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক সোমেশ্বরী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৮৫।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝর্ণাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি। অবশ্য এক সময় সমগ্র নদীটি সিমসাং নামে পরিচিত ছিল। ৬৮৬ বঙ্গাব্দের মাঘ মাসে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক সিদ্ধপুরুষ অত্রাঞ্চল দখল করে নেয়ার পর থেকে নদীটি সোমেশ্বরী নামে পরিচিতি পায়। মেঘালয় রাজ্যের বাঘমারা বাজার (পূর্ব নাম বঙ বাজার) হয়ে বাংলাদেশের রাণীখং পাহাড়ের কাছ দিয়ে সোমেশ্বরী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

রাণীখং পাহাড়ের পাশ বেয়ে দক্ষিণ দিক বরাবর শিবগঞ্জ বাজারের কাছ দিয়ে সোমেশ্বরী নদী বরাবর পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। সেই পথে কুমুদগঞ্জ বাজার হয়ে কোনাপাড়া গ্রামের সামনে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাকলজোড়া, সিধলি, কলমাকান্দা, মধ্যনগর হয়ে ধনু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে সোমেশ্বরী। সোমেশ্বরীর মূলধারা তার উৎসস্থলে প্রায় বিলুপ্ত। বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য কোন মৌসুমে পানি প্রবাহ থাকে না।

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে পাহাড়ীয়া ঢলে সোমেশ্বরী বরাবর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে নতুন গতিপথের সৃষ্টি করেছে। যা স্থানীয় ভাবে শিবগঞ্জ ঢালা নামে খ্যাত। বর্তমানে এ ধারাটি সোমেশ্বরীর মূল স্রোতধারা। এ স্রোতধারাটি চৈতালি হাওর হয়ে জারিয়া-ঝাঞ্জাইল বাজারের পশ্চিমদিক দিয়ে কংশ নদী সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

১৯৮৮ সালে পাহাড়ীয়া ঢলে আত্রাখালি নদী নামে সোমেশ্বরী নদীর একটি শাখা নদীটির সৃষ্টি হয়। সুসঙ্গ দুর্গাপুর বাজারের উত্তর দিক দিয়ে সোমেশ্বরী নদী থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে আত্রাখালী। কিছু দূর এগিয়ে সোমেশ্বরীর মূলধারা সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আত্রাখালি নদী এখন বেশ খরস্রোতা। আবার সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পর আত্রাখালি থেকে নয়া গাঙ নামের আর একটি স্রোত ধারা উত্তর দিকে সৃষ্টি হয়েছে। আরো ভাটিতে সোমেশ্বরীর শাখা নদীর সৃষ্টি হয়েছে গুনাই, বালিয়া ও খারপাই।