সকল খবর ভূমি বিষয়ক খবর

দেওয়ানি আইন সংশোধন, নিষ্পত্তি হবে দ্রুত

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ২-৬-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৩৭

বাংলাদেশের দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী সংস্কারের সূচনা ঘটেছে। বহুল প্রতীক্ষিত সিভিল প্রসিডিউর কোড (CPC) সংশোধনী বিল গত ৬ মে জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসেই নতুন আইনের পূর্ণাঙ্গ প্রজ্ঞাপন জারি হতে যাচ্ছে। এই সংশোধনের মাধ্যমে দেওয়ানি মামলাগুলোর দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির পথ সুগম হবে বলে মনে করছেন বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও বিচারকরা।

নতুন আইনে সবচেয়ে আলোচিত পরিবর্তন হলো সময় চাওয়ার সুযোগ সীমিত করা। আগে বাদী ও বিবাদী পক্ষ বারবার সময় চেয়ে মামলার অগ্রগতি থামিয়ে দিতে পারত। সংশোধিত আইনে এখন থেকে উভয় পক্ষ সর্বোচ্চ দু’বার করে মোট চারবার সময় চাইতে পারবে। এতে করে মামলার অকারণ বিলম্ব অনেকটাই রোধ হবে।

একই সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে সমন পাঠানোর পদ্ধতিতেও আনা হয়েছে বড় পরিবর্তন। ডাকযোগের পাশাপাশি ই-মেইল, মোবাইল এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সমন পাঠানো যাবে। এর ফলে সমনের বিলম্ব কমে আসবে এবং মামলার কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা সম্ভব হবে।

সংশোধিত আইনে আরও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে বিবাদীপক্ষের জবাব দাখিল ও রায়ের পরবর্তী প্রক্রিয়া নিয়েও। এখন থেকে বিবাদীপক্ষ আদালতে জবাব জমা দিলে তা ‘পঠিত’ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং মামলাটি সরাসরি পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হবে। আগে যেখানে বারবার শুনানি করে সময়ক্ষেপণ হতো, নতুন নিয়মে সেই দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগ আর থাকবে না।

এছাড়া রায়ের পর সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে ‘ডিগ্রি জারির মামলা’ করতে হতো, যা এখন আর লাগবে না। আদালত রায় ঘোষণার পরই প্রয়োজনীয় খরচ আদায় করে সরকারি বাহিনী পাঠিয়ে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেবে। স্থানীয়দের অবহিত করতে ওই সম্পত্তিতে লাল পতাকা টাঙানো হবে।

এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী মোঃ আমিনুল ইসলাম চৌধুরী সোহাগ বলেন, “এই সংস্কার কেবল মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমাবে না, বরং বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনবে। আমরা আধুনিক ও দ্রুততর ন্যায়বিচারের দিকে এগোচ্ছি, যা সময়ের দাবি।”

আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন আইন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী ও আদালত কর্মচারীদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সংশোধিত CPC-এর পূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় একটি নতুন যুগের সূচনা হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।