দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে সরকার। বিশেষ করে, অবিভক্ত যৌথ মালিকানাধীন (এজমালি) সম্পত্তির দখল, নামজারি ও মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে কঠোর নিয়ম চালু করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সদ্য প্রকাশিত পরিপত্র অনুযায়ী, এখন থেকে পারস্পরিক সম্মতি ছাড়া কোনো ওয়ারিশ এককভাবে নিজের নামে নামজারি করতে পারবেন না।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, যদি কোনো পরিবারের ওয়ারিশগণ সম্পত্তি ভাগ না করেন, তাহলে তাদের সবার নামে যৌথ খতিয়ান প্রস্তুত করা হবে। এ খতিয়ানে কার কতটুকু অংশ তা উল্লেখ থাকবে না। সব ওয়ারিশকে সমানভাবে মালিকানায় দেখানো হবে। একক দখল কিংবা দাগ ধরে মালিকানা দাবি করে খতিয়ান সংশোধনের প্রচেষ্টা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের প্রক্রিয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনার ফলে প্রতারণা, জালিয়াতি, ভূয়া দলিল এবং অবৈধ খতিয়ান সংশোধনের ঘটনা কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে, এক বা একাধিক ওয়ারিশ অন্যদের অজ্ঞাতসারে দলিল তৈরি করে কিংবা সালিশের মাধ্যমে নিজের নামে খতিয়ান করে নিতেন। এতে সৃষ্টি হতো দীর্ঘমেয়াদি পারিবারিক কলহ ও মামলা-মোকদ্দমা।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যদি কেউ সম্পত্তি ভাগ করতে চান, তবে একটি লিখিত বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। দলিলে কে কোন অংশে কতটুকু সম্পত্তি ভোগ করবেন তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এই দলিলের ভিত্তিতে আলাদা খতিয়ান করে নামজারি করা যাবে।
যদি বোঝাপড়ার মাধ্যমে বণ্টন না হয়, তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন থেকে ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করে সকল ওয়ারিশের নামে একটি যৌথ খতিয়ান প্রস্তুত করেই সম্পত্তি ভোগ করতে হবে।
ভূমি অফিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন যৌথ খতিয়ান তৈরিতে কোনো গড়িমসি না করে এবং অযথা আবেদন বাতিল না করে। কোনো কর্মকর্তা নিয়ম ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকার মনে করে, এই নতুন ব্যবস্থায় ভূমি মালিকদের হয়রানি কমবে, আদালতের মামলা-মোকদ্দমা হ্রাস পাবে এবং প্রতারক চক্রের তৎপরতা রোধ হবে। নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে—ভূমি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করার।