ওপেন মেসেজ মুক্তমত

শিমুর সুর মিলেছে বেসুরায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনিন্দ্যবাংলা

প্রকাশ : ১৯-১-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫১৫০

নুহাশ হুমায়ূনের সিরিজ ‘পেট কাটা ষ’ বেশ আলোচিত হয়েছিল ২০২২ সালে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর ডিসেম্বরে মুক্তি পায় ‘২ ষ’। ‘বেসুরা’র আগে একে একে মুক্তি পায় ‘ওয়াক্ত’, ‘ভাগ্য ভালো’ ও ‘অন্তরা’ পর্বগুলো। আগের তিনটি পর্বই পছন্দ করেছে দর্শক।

‘বেসুরা’র ট্রেলারে পাওয়া গেছে গল্পের আভাস। পাহাড়ি অঞ্চলের একটি ছোট মেয়ে, যার গলায় কোনো সুর নেই। এই খবর জানতে পেরে তাকে সাজা দেওয়ার পরিকল্পনা করে এলাকার বড় এক সংগীতসাধক। তখনই ভেসে আসে ডাইনির কথা।গল্পে পাহাড়ি নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুমাইয়া শিমু।

“আমাকে প্রথমে নুহাশ হুমায়ূনের প্রডাকশন থেকে একজন ফোন দিয়েছিলেন ‘বেসুরা’য় অভিনয়ের জন্য। কিন্তু ঢাকার বাইরে শুটিং করতে হবে শুনে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। পরে যখন নুহাশ আমাকে পাণ্ডুলিপি পড়ে শোনায়, আমি আগ্রহ বোধ করি।

আমার চরিত্রটিতেও চমক রয়েছে, আমাকে এর আগে এমন চরিত্রে কখনো দেখা যায়নি। অনেকেই ভাবতে পারেন, চরকিতে যেহেতু আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু রেদওয়ান রনি আছেন, তাঁর মাধ্যমেই হয়তো আমার কাছে অফার এসেছে। তাঁরা হয়তো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে পারেন। তবে আমার কাছে নুহাশের পক্ষ থেকেই অফারটা এসেছে”—এভাবেই ‘বেসুরা’য় যুক্ত হওয়ার গল্প শোনালেন সুমাইয়া শিমু।

হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় ‘তৃতীয় নয়ন’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন শিমু।

১৬ বছর পর তাঁর ছেলের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন। নুহাশের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করার অভিজ্ঞতা জানালেন অভিনেত্রী, ‘হুমায়ূন আহমেদ স্যার তাঁর বিভিন্ন বইয়ে নিজের পরিবারের কথা বলেছেন, আমরা যেহেতু তাঁর বই পড়ে বড় হয়েছি, তাই নুহাশ আমাদের কাছে খুবই পরিচিত। স্যারের নির্দেশনায় মাত্র একটি নাটকে অভিনয় করেছিলাম। তাঁর নির্দেশনা দেওয়ার ধরন তখনকার অন্য সব পরিচালকের চেয়ে ভিন্ন ছিল। নুহাশ আবার অন্য রকম, সে নিজের চাহিদাটুকু পুরোপুরি আদায় করে নেয়। তাই বলে শিল্পীর স্বাধীনতা যে থাকে না, তা নয়। প্রথমে শিল্পীকে নিজের পছন্দমতোই অভিনয় করতে বলে, সেটায় সন্তুষ্ট না হলে নিজের মতো করে করার অনুরোধ করে। মানুষ হিসেবে নুহাশ খুবই শান্ত, সেটে যে তার উপস্থিতি আছে এটা একেবারেই বোঝা যায় না। সারাক্ষণ মনিটরের সামনে বসে থাকে। টেকনিক্যাল দিকগুলো নুহাশ খুব ভালো বোঝে, তার দর্শনটাও আলাদা। আমার বিশ্বাস, এ কারণেই নুহাশ একদিন নিজের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য দিয়েই পরিচিতি পাবে।’

‘বেসুরা’র শুটিং হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে, গভীর পাহাড়ি এলাকায় সেট ফেলে। এমন পরিবেশে এবারই প্রথম অভিনয় করলেন শিমু। তাই বেশ রোমাঞ্চ বোধ করেছেন। নুহাশের গোছানো টিম থাকায় কোনো অসুবিধা হয়নি শিমুর।

‘বেসুরা’ দিয়ে প্রথমবার অভিনয়ে এলেন  গায়ক ইসলাম উদ্দিন পালাকার। তাঁকে নিয়েও বললেন শিমু, “তাঁর ‘দেওরা’ গান আমার খুবই পছন্দের। সেখানেও কিন্তু অভিনয়ের সংযোগ ছিল, পালাগানে অভিনয়ের একটা ব্যাপার থাকে। শুটিংয়ে প্রথম দিকে নার্ভাস থাকলেও তিনি ধীরে ধীরে মিশে গেছেন।”

শিমুর সমসাময়িক প্রায় সবাই এরই মধ্যে ওটিটিতে এসেছেন। শিমু এলেন এবারই। প্রথমবার এই মাধ্যমে অভিনয় করতে কেমন লেগেছে? অভিনেত্রী বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই ওটিটিতে খুব ভালো কাজ হচ্ছে। যেহেতু এর আগেই আমি অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়ি, তাই এত দিন এই মাধ্যমে অভিনয় করা হয়নি। তবে ওটিটির কনটেন্টগুলো দেখেছি। বেশ ভালো কাজ হচ্ছে এই মাধ্যমে। দেখলে বেশ গোছানো ও পরিকল্পনামাফিক মনে হয়। ওটিটিতে প্রথম অভিনয় করতে গিয়ে আমারও সেটাই মনে হয়েছে। অভিজ্ঞতা বেশ ভালো।’

পরিচালক নুহাশ হুমায়ূনের মতে, ‘বেসুরা’ একটি মিউজিক্যাল কনটেন্ট, চরিত্রগুলো সংলাপ বলেছে সুরে-ছন্দে। সুমাইয়া শিমুসহ অন্যান্য অভিনয়শিল্পীর কাছেও ব্যাপারটা বেশ অভিনব লেগেছে। অভিনয় করেছেন এরফান মৃধা শিবলু, বাবলু বোস, বীণা দাশ প্রমুখ। প্রীতম হাসানের সংগীতে দুটি গানও রয়েছে।

সম্প্রতি ‘টেন মিনিটস স্কুল’-এর একটি বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে সুমাইয়া শিমুকে। বেশ প্রশংসিতও হয়েছে। ‘সব সময় হয়তো হয় না, তবে চেষ্টা করি এমন কিছুতে যুক্ত থাকার, যেটা সমাজকে একটা বার্তা দেবে। এই বিজ্ঞাপনটাও সেই লক্ষ্যেই করা। প্রচারের পর থেকে বেশ প্রশংসা শুনছি’, বিজ্ঞাপনচিত্রটি প্রসঙ্গে বললেন শিমু।

১৯৯৯ সালে অরণ্য আনোয়ার পরিচালিত ‘এখানে আতর পাওয়া যায়’ নাটকে ছোট্ট একটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় শুরু করেছিলেন সুমাইয়া শিমু। ‘ইত্যাদি’তে সেলিম চৌধুরীর ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ গানে মডেল হয়ে আলোচিত হন, পাশাপাশি বাপ্পা মজুমদারের ‘পরী’ গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘অন্যফুল’ নাটকে অভিনয় করেও নজর কাড়েন। এরপর ‘হাউজফুল’, ‘স্বপ্নচূড়া’, ‘মহানগর’, ‘ললিতা’ ধারাবাহিকগুলো দিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। অভিনয় করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’ চলচ্চিত্রেও। ২৫ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ার, সেই শিমু এখন অভিনয়ে নিয়মিত নন। আগের সেই লাইট- ক্যামেরা-অ্যাকশনের আলো-ঝলমলে দিনগুলো মিস করেন শিমু?

অভিনেত্রী বলেন, ‘আসলে জীবন যখন যেমন, আমি সেটাই উপভোগ করি। যেহেতু আমি একজন অভিনেত্রী, অভিনয় তো অবশ্যই মিস করি। তবে আমি বাস্তবতাটা মেনে নিয়েই চলি। একসময় আমি অভিনয়ের ব্যস্ততা উপভোগ করেছি, এখনকার জীবনটাও উপভোগ করছি। আমি চাইলেও আগের মতো সব চরিত্রে অভিনয় করতে পারব না। আমি মনে করি, সময়কে যাঁরা মেনে নেন জীবনে তাঁরা সেভাবে হতাশায় ভোগেন না।’ 

যমজ সন্তানের জননী সুমাইয়া শিমু এখন মাতৃত্বের জীবন বেশ উপভোগ করছেন। গত এক-দেড় বছরে ব্যক্তিগত জীবনে বেশি ব্যস্ততা থাকায় নাটক তেমন একটা দেখা হয়নি তাঁর। তাই এ সময়ের নাটকের মান নিয়ে কিছুই বলতে পারছেন না। তবে এটাও জানালেন, পাণ্ডুলিপি পছন্দ হলে নাটকে অভিনয় করতে এখন আর আপত্তি নেই তাঁর।