বগুড়ার ধুনট উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মোহন্তের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৭৮টি ঘর নির্মাণের টাকা আত্মসাৎ ও গৃহহীনের কাছ থেকে ঘর বরাদ্দের নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সূত্রমতে, সঞ্জয় কুমার মোহন্ত প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ‘মুজিব শতবর্ষের উপহার’ হিসেবে ধুনটে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৩৯৯টি ঘর নির্মাণের জন্য ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে ২৬১টি ঘরের সুবিধাভোগীর নামের তালিকা পাওয়া গেলেও, বাকি ৭৮টি ঘরের তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের তদারকিতে সহায়তা করার জন্য দায়িত্বরত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উজ্জ্বল কুমার ঘোষেরও অভিযোগ উঠেছে, তিনি এই দুর্নীতিতে সহায়তা করেছেন।
ইউএনও সঞ্জয় কুমার মোহন্তে বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে চাঁদাবাজি করেছেন। ধুনট উপজেলা ইটভাটার মালিকদের অভিযোগ, সঞ্জয় কুমার তাদের কাছে ইট ও বালু সরবরাহের জন্য টাকা নিয়েছেন, কিন্তু পরিশোধ করেননি।
ঘর নির্মাণের কাজের বাস্তবতা নিয়ে সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল আলীম জানিয়েছেন, ইউএনও একাই পুরো কাজ পরিচালনা করেছিলেন এবং তাকে কাগজপত্রে সই করতে বাধ্য করা হয়। অন্যদিকে, ধুনট সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ঘর নির্মাণের বরাদ্দ ও বরাদ্দপ্রাপ্তদের তালিকায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
বগুড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন বলেন, সঞ্জয় কুমারের বিরুদ্ধে ৭৮টি ঘর নির্মাণ না করেই টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, তবে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এদিকে, প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ঘরের মান নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। সুবিধাভোগীরা জানাচ্ছেন, ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহৃত হয়েছে, যার ফলে ঘরগুলো প্রথম বছরেই ভেঙে পড়েছে।
এই ঘটনার বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজ জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, সঞ্জয় কুমার মোহন্ত তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, ‘বরাদ্দ অনুযায়ী ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।’
এদিকে, বর্তমান ইউএনও খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্নীতির ঘটনার তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।